জেরুজালেমের ওপর ফিলিস্তিনি আরবদের দাবি অতিশয় দূর্বল

4 মতামত পাওয়া গেছে

“জেরুজালেমের ওপর ফিলিস্তিনি আরবদের দাবি অতিশয় দূর্বল,” বেশ, ঐতিহাসিক যে যুক্তিতে লেখক এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন, ঠিক সেই একই যুক্তিতে তো ঢাকা তথা সমগ্র বাংলাদেশের উপরেই মুসলিমদের অধিকারও অতিশয় দুর্বল। কারণ গোটা ভুখণ্ডটাই ছিল সনাতন ভারতীয়দের। ১৯৪৭এর দেশ ভাগের অভিশাপে আজ আামাকে যে আমার চৌদ্দো পুরুষের ভিটে মাটি থেকে উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশের বাইরে জীবন যাপন করতে হচ্ছে সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, তবে আমাকে আমার পূর্বপুরুষের ভিটে মাটি ফিরিয়ে দেওয়া উচিৎ বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের। তাই না? তোফা যুক্তি! ঠিক যে যুক্তিতে বাস্তুচুত ইহুদীদেরকে আবার আরব ভুখণ্ডে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল ব্রিটিশ সরকার! আজকে ১৯৪৭ থেকে ভিটেমাটি ছাড়া কোটি কোটি বাঙালি যদি তাদের চৌদ্দো পুরুষের বাস্তুভিটেতে পুনর্বাসনের দাবি জানায়? বাংলাদেশ সরকার মেনে নেবে তো? আর সেই সব বাস্তুভিটেতে বিগত সাত দশক ধরে বসবাসকারী আজকের বাংলাদেশীরা অম্লান বদনে তাদের অধিকার ছেড়ে দিয়ে সরে যাবে কি বলেন?

শত শত শতাব্দী ধরে বসবাসকারী মুসলিমদের আজকে নিজ ভুখণ্ডে পরবাসী হয়ে থাকাটাই সঠিক? ব্রিটশ বলপূর্বক তাদেরকে বাস্তুভিটে থেকে উচ্ছেদ করে ইহুদীদেরকে উড়িয়ে নিয়ে এসে বসিয়ে দিল। আর মার্কিণ গোলাবারুদে বলীয়ান হয়ে সেই ইহুদীরাই বিগত সাড়ে সাত দশক ব্যপি ফিলিস্তিনিদের উপর অকথ্য অত্যাচার করে চলেছে, তার কোন বিচার হবে না? উল্টে ফিলিস্তিনিদের হাজার বছরের জেরুজালেমের উপর থেকে সব দাবিদাওয়া ছেড়ে দিতে হবে। এটাই ইঙ্গ-মার্কিণ বিধান। আর আমাদেরকে সেই অন্যায় বিধানেরই তাঁবেদারি করতে হবে আজ ইঙ্গ-মার্কিণ নুন খেয়ে? বেশ তো তাই যদি করতে হয়, তবে সোজা কথা, সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়েও মুসলিমরা সরে যাক। নিশ্চয় সৌদ‌ী আরব তাদের কোলে তুলে নেবে!

ইতিহাসের পথ বেয়ে রাজনীতির ঘাতপ্রতিঘাতে দিনে দিনে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমানের যে রূপ দাঁড়ায়, তাকে উল্টিয়ে দিয়ে ঘড়ির কাঁটাকে পিছিয়ে নিয়ে গিয়ে, কত হাজার বছর আগে কে কোথায় ছিল, তাকে সেই জায়গাই ছেড়ে দিতে হবে, এমন কথা যারা প্রচার করে, তাদের উদ্দ্যেশ্য আর যাই হোক সাধু নয়। আর সেই অসাধুদের তাঁবেদারি করাও সুস্থতা নয়। আর একবার সেই অসুস্থতার চর্চা শুরু হলে হাজার হাজার বাবরি মসজিদ ধুলোয় গড়াগড়ি যাবে। সেটা যাদের কাছেই কাম্য হোক কোন সুস্থ মানুষের কাছে কাম্য হতে পারে না কখনোই।

    ১৯৪৭-এ ভারত বিভক্তির সাথে ফিলিস্তিন বিভক্তির তুলনা টানাটা খুবই যুক্তিযুক্ত। উদার মানবিক মনের কেউই মনে করে না যে একটা বিদেশী আদর্শের ভিত্তিতে মুসলিমদের ভিন্ন দেশ দাবী এবং সে লক্ষ্যে হিন্দুদের বিরুদ্ধে গণহারে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার পন্থা গ্রহণ করা যৌক্তিক ও ন্যায্য ছিল। ভারত বিভক্তিকে যৌক্তিক দাবী করলে ফিলিস্তিন বিভক্তি কোন অংশেই কম যৌক্তিক ছিল না। গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হচ্ছে — ভারতের আদিবাসী হিন্দুরা সে অন্যায় বিভক্তি মেনে নিলেও মুসলমানরা কিন্তু তাতেও ক্ষান্ত হয় নি। তারা কাশ্মীরকে কেড়ে নিতে সেই শুরু থেকেই যুদ্ধ ও সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। কাশ্মীর সফল হলে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম প্রাধান্যের অংশ বিভাজিত করা। এবং তা একে একে চলতেই থাকবে।
    তবে ভারত বিভক্তির সাথে বেশী মিল উঃ ও দঃ কোরিয়ার বিভক্তি কিংবা চীন ও তাইওয়ান বিভক্তি। উভয় ক্ষেত্রেই একটা ভিন দেশীয় সহিংস ও গণহত্যামূলক আদর্শের কারণে বিভক্তি ঘটে।
    তবে ভারত ও ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে যে বিষয়টি বেশী প্রাসঙ্গিক সেটি হচ্ছে ইংরেজ ও মুসলিম দখলদারিত্ব। মুসলমানরা ফিলিস্তিনে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন চালিয়ে দখল ও রাজত্ব চালিয়েছে প্রায় ১৪’শ বছর। ইংরেজরা বাংলা দখল করে রাজত্ব চালিয়েছে ২শ বছর। সে হিসেবে মুসলমানরা বড় সাম্রাজ্যবাদী। ছোট সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদেরকে আমরা দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছি। ইংরেজরা প্রত্যেক ইঞ্চি জায়গা আমাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। সেখানে ইহুদীদের আদি বাসভূম ফিলিস্তিনের ছোট একটা অংশে (১২%) ইহুদীদের জন্য একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের প্রস্তাব খুব একটা অন্যায় ছিল না। অবশ্য এটাও বিবেচ্য যে, ইউরোপে, বিশেষত জার্মানীতে, ১৮৭০-এর দশকে কমিউনিস্টরা (উইলেম মা’র প্রমুখ) জগন্য ইহুদী বিদ্বেষী প্রচারণা শুরু করলে তারা আদি বাসভূমে ফিরে আসা শুরু করে। এসময় মুসলিম বিশ্বে টিকে থাকা সামান্য ইহুদীদের উপর অত্যাচার বেড়ে গেলে তারাও ফিলিস্তিনে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে, যেমন উত্তর আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলো থেকে। তবে ফিলিস্তিন ভেঙ্গে আলাদা ইহুদী রাষ্ট্র বানানো তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। ১৮৯০-এর দশকে ইহুদীদেরকে ফিলিস্তিন থেকে উৎখাত করতে মুসলমানরা নির্মম সহিংসতা শুরু করলে ইহুদীদের জন্য আলাদা বাসভূমের ব্যাপারটি ধীরে ধীরে চাঙ্গা হয়ে উঠে।
    সম্প্রতি প্রায় ১৫-২০ লাখ মুসলমান শরনার্থীর ভেগ ধরে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছে। ইউরোপের উপর মুসলমানদের কোনই দাবী দাওয়া নেই। বরং ইসলামের জন্মের প্রায় শুরু (৬৫২ সাল) থেকেই মুসলমানরা ইউরোপের উপর আক্রমণ, গণহত্যা, দখলদারিত্ব, সাম্রাজ্যবাদ চালিয়েছে। সে ১৫-২০ লাখ মুসলমানকে ইউরোপ থেকে বিতাড়িত করা কি ঠিক হবে? বিশেষত যদি তারা শান্তি ও সম্প্রীতিতে বসবাস করতে চায় ইউরোপে। সেটা অন্যায় হলে ৫ লাখ ইহুদী শরনার্থীকে ফিলিস্তিন থেকে বিতাড়িত করার জন্য মুসলমানদের সহিংস প্রচেষ্টা আরও বেশী অন্যায় ছিল।

    @শ্রীশুভ্র মহাশয়, আপনার মন্তব্যের সাথে মোটেই সহমত পোষণ করা সম্ভব নয়। কারণ এই মন্তব্য কোন বিচারেই যৌক্তিক হতে পারেনা। বিশ্ব-রাজনীতির জ্ঞান থাকলে এমন মন্তব্য আপনি করতে পারতেন না। বাংলাদেশ থেকে ভারতবর্ষে এক্সাইল হওয়া হিন্দুদের উদাহরণ টেনে আপনি যা বলেছেন তা শিশুতোষ ধারণা। বাংলাদেশ থেকে ভারতে এক্সাইল হওয়া হিন্দুদের যদি সুপার পাওয়ার থাকতো তাহলে আর ভারতে এক্সাইল হয়ে বসে থাকতোনা কেউ। সুপার পাওয়ারের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ঠিক ঠিকই স্বভূম বাংলাদেশে থাকতো তারা। ইসরায়েল আজ সুপার পাওয়ার হয়েছে বলেই তারা কিন্তু তাদের হারানো ভূমি পূনর্দখল নিতে পেরেছে। এখানে অন্য কোনো যুক্তিই টিকবে না, ক্ষমতা ও সামর্থই মূল।

      ইসরাইলকে অনেকে মহাশক্তিধর পরাশক্তি মনে করে। বাস্তবতা সে রকম ইঙ্গিত দেয় না। নইলে তাদের পিতৃভূমি, তথা রাজা ডেভিড-এর রাজ্য — যার অন্তর্ভুক্ত ছিল আজকের জর্ডান (৮০%), ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড (গাজা ও পশ্চিম তীর) এবং ইসরাইল — তার পুরোটাই তারা পুনর্দখল করে নিতো।


আপনার মতামত দিন

আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।