০
১১৮৭ বার পঠিত
ভারতের গুজরাটের এক এলাকায় ঠাকুর সম্প্রদায় অবিবাহিত নারীদের জন্য মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। আর আমাদের দেশে করেছে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য। ঠাকুররা যেমন উচ্চবর্ণের, তেমনি এই স্কুল আর কলেজটিও উচ্চবর্ণের।
গুজরাটের ওই এলাকার ঠাকুরদের ধারণা অবিবাহিত মেয়েরা মোবাইল ব্যবহার করলে নষ্ট হয়ে যাবে। আইডিয়াল নামক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ধারণাও অনেকটা তাই। মোবাইল ব্যবহারে শিক্ষার্থীরা বিগড়ে যাবে, এমন ধারণাতেই কদিন আগে তারা শিক্ষার্থীদের পাঁচ’শ মোবাইল পুড়িয়ে দিয়েছে।
গুজরাটের ঠাকুর সম্প্রদায়ের নেতা সুরেশ ঠাকুর গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘তাদের এই সিদ্ধান্তের কারণ হলো, মেয়েরা যাতে মোবাইল ফোনে মনোযোগ না দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগ দেয়।’
গুজরাটের ঠাকুর আর আইডিয়ালের পন্ডিতদের ধারণা কিন্তু একই। গুজরাটের এই খবরটি দিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’। আমার আইডিয়ালের খবরটি জানিয়েছে দেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম। দৈনিক আমাদের সময় জানিয়েছে, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. হারুন-আর-রশিদ এমন খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সাথে অভিভাবকরা অভিযোগ করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথাও বলেছেন।
মুশকিল হলো, গুজরাটের প্রত্যন্ত এলাকায় ঠাকুর সম্প্রদায়ের উপর যেমন কথা বলার লোক নেই, তেমনি ঢাকায় আইডিয়ালে বাচ্চাদের পড়াতে হলে তাদের পন্ডিতদের উপর কথা বলার লোক নেই। সম্ভবত সেই কারণেই কোন অভিভাবক অভিযোগ করেননি। কে চায় নিজের ছেলের শিক্ষা-জীবন নিয়ে বাজি ধরতে।
এখানে ‘বাজি’ শব্দটি ব্যবহার করেছি ইচ্ছা করেই। কারণ সবকিছুতেই এখন বাজিকরদের দাপট। দুধে অ্যান্টিবায়োটিক, সীসাসহ ক্ষতিকর পদার্থ, এটা বলতে গিয়েই ঝামেলায় পড়েছেন অধ্যাপক ফারুক। যেন তিনি বাজি লাগিয়েছেন তারটা পরীক্ষা ঠিক না দুধ কোম্পানীগুলোর চাপাবাজি ঠিক। যেহেতু ম্যাচ ফিক্সিংয়ের যুগ তাই মূল বাজিকররা মাঠে নামলেন। কোম্পানীগুলোর পক্ষে তাকে হারিয়ে দিতে চাইলেন।
এই হারিয়ে দেয়া আর হেরে যাওয়ার বাজি চলছে আজ সবখানে। রিফাত হত্যাকান্ডের কথাই ধরুন। সেখানে প্রধান সাক্ষী আসামী বনে গিয়েছে। রিফাতের স্ত্রী মিন্নির কথা বলছি। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে, রিমান্ড চেয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে আদালতে মিন্নির পক্ষে কোন আইনজীবীও দাঁড়াননি।
খ্যাত আইনজীবী শাহদীন মালিক সোজাসাপ্টা জানিয়েছেন, বার কাউন্সিলে অভিযোগ করলে এই না দাঁড়ানোর শাস্তি বা জবাবদিহিতা অবধারিত। গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রতিপক্ষের ভয়ে মিন্নির পক্ষে কোন আইনজীবী দাঁড়াননি।
প্রশ্ন উঠেছে, প্রতিপক্ষ কতটা শক্তিশালী। অর্থাৎ হেরে যাওয়া বাজি জিতে যাবার মতন শক্তিশালী সেই বাজিকর! এমন বাজির ক্ষমতাতো ন্যায়-বিচারের প্রধান অন্তরায়। মানুষের ন্যায়-বিচার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা এমন বাজিকরদের কারণেই। আদালত মানুষের পার্থিব শেষ আস্থার জায়গা। সুতরাং বাজিকরদের বাজির ব্যাপারটা ছোট করে দেখার কোন রাস্তা নেই।
আদালতের প্রতি, ন্যায়-বিচারের প্রতি মানুষ আস্থা হারালে সামাজিক শৃংখলা ভেঙে পড়বে। যার অনেক নমুনাই এখন পরিস্ফুট চারিদিকে। গণপিটুনিতে নিহতের খবর যেমন দিচ্ছে গণমাধ্যমগুলো, তেমনি দিচ্ছে বিচার বহির্ভূত হত্যারকান্ডের খবরও। এসবই সামাজিক শৃংখলা ভেঙে পড়ার স্পষ্ট লক্ষণ। এখনো সময় আছে, ঠাকুর, পন্ডিত আর বাজিকরদের থামান। আর থামানোর দায়িত্ব রাষ্ট্র তথা রাষ্ট্রের পরিচালকদের।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন