২
২০৪৬ বার পঠিত
ঈশ্বর তাঁহার ল্যাবরেটরিতে নিবিষ্টমনে কাজ করিতেছিলেন। সহসা বাহিরে এক মহা কলরব উত্থিত হইয়া তাঁহার একাগ্রতা মাটি করিয়া দিল। দরজা খুলিয়া সবেগে বাহির হইয়া তিনি দেখিলেন বাহিরে ফেরেস্তাগণ একেবারে মড়াকান্না শুরু করিয়া দিয়াছে।
কোটি কোটি ফেরেস্তাদের ভীড়ের মধ্যে কী ঘটনা ঘটিয়াছে তাহা দেখিতে পাওয়া সহজ নহে। বহুকষ্টে ভিতরে প্রবেশ করিয়া দেখিলেন তাঁহার ছয়শত ডানাওয়ালা গিবরিল ফেরেস্তাকে অন্য কয়েকজন ফেরেস্তা কাঁধে তুলিয়া তাঁহারই দিকে লইয়া আসিতেছে। গিবরিলের এহেন দশা দেখিয়া তিনি আর অপেক্ষা করিতে পারিলেন না। নিজেই এক লাফে তাহার নিকট হাজির হইয়া গেলেন।
নিকটে গিয়া দেখিলেন গিবরিলের ছয়শত ডানার সমস্তই ভগ্ন হইয়া গিয়াছে। হস্তপদের অবস্থাও সেইরূপ। ঈশ্বরকে সম্মুখে দেখিবামাত্র গিবরিল আর্তনাদ সহকারে কহিল- “খোদাবন্দ, সর্বনাশ হইয়া গিয়াছে।”
ঈশ্বর জিজ্ঞাসিলেন- “কী হইয়াছে? সর্বনাশের কিছু ঘটেনাই। তোমাকে সহজেই সুস্থ করিয়া তোলা যাইবে। কিন্তু তোমার এই অবস্থা কীরূপে হইল? কাহার সহিত মারামারি করিয়া আসিলে? আশা করি ডাইনোসরের সহিত কুস্তি করিতে যাওনাই!”
গিবরিল এহেন আশ্বাসবাক্যে আদৌ আনন্দিত হইলনা। আরো জোরে আর্তনাদ করিয়া কহিল- “মহা সর্বনাশ ঘটিয়াছে খোদাবন্দ! ডাইনোসর বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে।”
ঈশ্বরের মস্তক ঘুরিয়া গেল। চিৎকার করিয়া উঠিতে গেলেন কিন্তু গলায় আওয়াজ বাহির হইলনা। কোনোক্রমে বলিলেন, – “এ অসম্ভব!”
গিবরিল তাহার ছয়শত ডানা ঝাপটাইয়া প্রতিবাদ করিতে গেল। কিন্তু নাড়িতে পারিলনা। যথাসম্ভব করুণ কন্ঠে কহিল- “ম্যামথ প্রজাতিও লোপ পাইয়াছে।”
এই সমাচার শুনিয়া ঈশ্বর স্তব্ধ হইয়া গেলেন, মাত্র সাত দিন পূর্বেই তিনি সমস্ত ম্যামথ ও ডাইনোসরের সুসংবাদ পাইয়াছিলেন। এত কম সময়ে তাহারা কিসের আক্রমণে লুপ্ত হইয়া গেল তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারিলেন না। অন্যদিকে এমন ভয়ানক সংবাদে ফেরেস্তাদের দল আবার মড়াকান্না শুরু করিয়া দিল।
কিঞ্চিৎ সামলাইয়া লইবার পর ঈশ্বর তাঁহার আলখাল্লার জেব হইতে অমৃতের বোতল বাহির করিয়া গিবরিলকে কিঞ্চিত পান করাইলেন। অতঃপর তাহাকে আদেশ করিলেন- “বিস্তারিত বর্ণনা করো।”
শরাব পানের ফলে গিবরিলের দৈহিক বেদনার উপসম হইয়াছিল। সে কহিল- “সপ্তাহপূর্বে আপনি যে আদমের সঙ্গিনীকে রাতারাতি গুম করিয়াছিলেন তাহা নিশ্চয় স্মরণে আছে প্রভু?”
ঈশ্বর কহিলেন- “অবশ্যই শ্মরণে আছে। লিলিথ বড়ই অবাধ্য ছিল। আদমের মত অনুগত হইলে তাহাকে এইভাবে মরিতে হইত না। তাহার পরিবর্তনের নিমিত্ত তাহার মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক চিকিৎসা করিতে করিতে আমি ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছিলাম। তথাপি তাহাকে বাধ্য করিয়া তোলা যায়নাই। অবশেষে বিদ্যুতের শক্তি বাড়াইয়া দিতে তাহার মৃত্যু হইয়াছে। তাহার শরীর লইয়াই এখন গবেষণা চালাইতেছি যাহাতে একটি সুবোধ বালিকা নির্মাণ করা যায়।”
গিবরিল রাগতকণ্ঠে কহিল- “আপনি তো তাহার মৃতদেহ লইয়া গবেষণাগারে দ্বার বন্ধ করিয়াছেন। এদিকে আদম আমাকে গলদেশে রজ্জু জড়াইয়া তাহার সঙ্গিনীর সন্ধান জানিতে চায়। তাহাকে বলিলাম লিলিথ ডাইনী হইয়াছে। ডানা মেলিয়া উড়িয়া গিয়াছে। কিন্তু আদম তাহাতে প্রত্যয় করিল না। আপনার শিক্ষার দোষ।”
ঈশ্বর কহিলেন- “হাঁ। তাহাকে কিছু শিক্ষা দিয়াছিলাম বটে। তবে তাহার প্রয়োজনও ছিল তাছাড়া সে নিয়মিত গন্ধম বৃক্ষের ফল ভোজন করে। তাহাতে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সেজন্য ডাইনোসর কেন মরিবে?”
গিবরিল উত্তর করিল- “আমার নিকট সদুত্তর না পাইয়া আদম আপনার নিকট যাইবার উদ্যোগ করিতেছিল। তাহাকে নিরস্ত করার জন্য কহিলাম তাহার লিলিথকে ডাইনোসরে ভক্ষণ করিয়াছে। ইহা শুনিয়া আদম তাহার প্রস্তরনির্মিত মুগুরখানি স্কন্ধে তুলিয়া বাহির হইয়া গেল। বিগত সপ্তদিবসে সে পানাহার ত্যাগ করিয়া সমস্ত ডাইনোসর পিটাইয়া মারিয়াছে। তাহাকে নিবারণ করিতে গিয়া আমার যাহা হইয়াছে তাহা তো আপনি দেখিলেন।”
ঈশ্বর অতিশয় চিন্তিত হইয়া পড়িলেন। আদম চিরকালই অতিশয় সুবোধ বালক। তাহার সঙ্গিনীকে গুম করিয়া ফেলাতে সে যে এতখানি ক্ষেপিয়া উঠিবে তাহা তিনি চিন্তাও করেন নাই। কতখানি ক্ষেপিলে একখানি মুগুর লইয়া সমস্ত ডাইনোসরকুলের সহিত যুদ্ধ করিতে যাইতে পারে! একবার যদি সত্য ঘটনা প্রকাশ পাইয়া যায় তাহা হইলে কী হইবে তাহা চিন্তা করিয়া ঈশ্বরের সমস্ত কেশ কন্টকিত হইয়া উঠিল। তবে চিন্তার মধ্যেও তাঁহার গর্ব হইতে লাগিল। সৃষ্টি একখানা করা গিয়াছে বটে! সমগ্র বিশ্বের উপর প্রভুত্ব করার উপযুক্ত জীব! অবশেষে জিজ্ঞাসিলেন- “কিন্তু ম্যামথেরা কী অপরাধ করিল? তাহারা তো মাংসাহারী নহে!”
গিবরিল হতাসকণ্ঠে কহিল- “সপ্তদিবস পানাহার ত্যাগ করিয়া আদমের বুদ্ধিলোপ হইয়াছে প্রভু। মাংশাহারী এবং শাকাহারীর প্রভেদ সে ভুলিয়া গিয়াছে। কিছুদিন এভাবে চলিলে সেও মারা পড়িবে। আদম প্রজাতিও লুপ্ত হইয়া যাইবে।”
ইহা শুনিয়া ঈশ্বর কিছুক্ষণ মস্তকে হস্তার্পণ করিয়া বসিয়া রহিলেন। তাহার পর আদেশ দিলেন- “অবিলম্বে এক কোটি ফেরেস্তা লইয়া গিয়া আদমকে ধরিয়া আনো। তাহার জন্য এখনই আমি একটি সঙ্গিনী নির্মাণ করিয়া রাখিতেছি। আদমের প্রাক্তন স্মৃতি লুপ্ত করিয়া দেওয়া হইবে। সে মনে করিবে এই সঙ্গিনীই তাহার চিরকাল ছিল। তবে তাহাকে আর গন্ধম ফল ভক্ষণ করতে দেওয়া চলিবে না। তাহাতে স্মৃতি ফিরিয়া আসিবার প্রবল সম্ভাবনা আছে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন
নভেম্বর ১৬, ২০১৫; ২:৩৬ অপরাহ্ন
হাহাহা,
মজার গলপ হয়েছে।
নভেম্বর ১৯, ২০১৫; ৫:৪০ পূর্বাহ্ন
মজা দিতে পেরে ধন্য হলাম।