০
৬০০ বার পঠিত
আমি তখন খুব ছোট, যখন শাস্ত্রীয় নৃত্য অভ্যাস করছি খুব মন দিয়ে৷ শিখছি ভূমিপ্রণাম, গণেশ বন্দনা৷ এত ভালো লাগতো সুর ও ছন্দে সেই গণেশ স্তুতি৷ আজও গণেশ বন্দনার সুরটা গুঞ্জরে আমার মনে, নিভৃতে৷
আমি তো ধর্মমতে মুসলিম, কোরানপাঠের সুর যেমন আমার ভালোলাগে তেমনি গণেশ বন্দনার শাব্দিক উচ্চারণ ও প্রিয়৷ মহালয়ার শিউলী সুরভিত ভোর বা দূর্গাপুজায় যখন মন্দিরের মাইকে ভাসে দূর্গাস্তোত্র, কি ভালোই না লাগে শুনতে৷ যেমন ভালো লাগে শুনতে আযানের ধ্বনি৷ ব্রাহ্মমুহুর্তে যখন চরাচর ব্যপি ধ্বনিত হয় আযানের সুর ঘুম ভেঙ্গে মনে হয় যে আমার মানব জনম সার্থক৷
তেমনি ভোরে যখন আশপাশের কোনো ঘর থেকে ঘন্টাধ্বণি বাজে, বেদগান কি স্তোত্রপাঠ হয় সেটাও শুনতে ভালো লাগে৷ আমি হিন্দু নই বলে কি আমার শুনতে বারণ? নাকি ভিন্ন ধর্মের ভালো কিছু দেখতে নেই, কোনটা?
এই দেশের খুব কম মুসলমান আছেন যার বংশতালিকা খুঁজলে উর্ধ্বতন তৃতীয় না হয় চতুর্থ পুরুষে কেউ হিন্দু নেই৷ পদবী দেখুন, কি বংশতালিকা খুঁজুন, অধিকাংশ মুসলমানই ধর্মান্তরিত নিম্নবর্ণ হিন্দু। সবাই নয় নিশ্চয়ই তবে একটা বড় অংশ তাইই বটে। তবু যেকোনো উৎসবে, পার্বণে উল্টোপাল্টা বক্তব্য কেনো? ব্যবহার্য সামগ্রীর সঙ্গে হিন্দুয়ানি সম্পর্কের ধুঁয়া তোলা কেনো? ডালা কুলা সব হিন্দুর? প্যাঁচা, ইলিশও? তবে আর মুসলমানের রইলো বাকি কি?
এতো সব কূটকচালে না গিয়ে বরং তাদের জানা উচিৎ সনাতন ধর্ম একটা উদার ধর্ম৷ একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী যাকে চলতি কথায় হিন্দু বলা হয়, তার অন্য ধর্মাবলম্বীর সাথে মেলামেশায় তার ধর্ম তাকে আটকায় না, আটকায় যা তা হলো আচার মাত্র৷ ঈদের জামাতের পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যায় নি বলে, কোরবানী আর ঈদের নামাজ পড়া হয়েছে কোনো মন্দির, আশ্রমের মাঠ বা পূজার প্যান্ডেলে৷ যেরকম ছবি ফেসবুকে আপলোড করা নিয়ে ফেসবুকার ভাইগণ চায়ের কাপে প্রায়শ তুলছেন ঝড়৷ এইরকম ঘটনা এই প্রথম না৷ একজন মুসলিম নামাজ পড়ে কেবলামুখী হয়ে, সামনে কোনো বিগ্রহ না থাকলেই হলো৷ নামাজের ভিতর ও বাহিরের যেসব শর্ত আছে, নামাজ সুদ্ধ করতে তা জানেনা বেশীরভাগ মানুষ৷
নিজের ধর্মকে জানুন, জানুন ইতিহাসকে৷ আপনারা না জানলেই তো ইতিহাস বদলে যাবে না৷ এদেশে জোর করে মুসলমান বানানো বা ধর্মান্তরিত যেমন হয়েছে, তেমনই অন্য ধর্মের কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করার ঘটনাও আছে৷ উদাহরণ টানা যাবে ভুরিভুরি। দেশ বিভাগ যেমন সত্য, সত্য মুক্তিযুদ্ধ তেমনি সত্য হিন্দুদের বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়া যা স্বাধীনতার সাতচল্লিশ বছর পরেও বাস্তব!
আবার সেই ছাড়াভিটার তুলশীমঞ্চ না ভেঙ্গে সেখানে কোনো মুসলিম নারীর গলবস্ত্রে সন্ধ্যাপ্রদ্বীপ দেয়াটাও সত্য৷ সেইরকম বাড়িগুলোর পুকুরপাড়ে থাকা ছোট ছোট শিবমন্দিরগুলো রেখে দেয়া এটাও বাস্তব৷ কাশ্মিরে ঘটা কোনো অনভিপ্রেত ঘটনায় তাই আজো আমরা উদ্বেলিত হই, আসানসোলের সেই ইমামের ছেলের মৃত্যু আমাদের নাড়া দেয়। সঙ্গে শিক্ষাও পাই বড় কম নয়। এদেশটা এইরকমই… একে এত সহজে তো বদলানো যাবে না।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন