৯৬৪ বার পঠিত
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদত্যাগ করেছেন। আমাদের দেশে পদ ত্যাগের দৃষ্টান্ত এতই কম যে, এমন ত্যাগে মানুষের মধ্যে দুই ধরণের অনুভূতির সৃষ্টি হয়। এক হলো, পদত্যাগ ইচ্ছাকৃত না চাপে। দুই হলো, রশি টানাটানিতে ফেঁসে গেলেন কিনা।
প্রথমটা ভাবার সঙ্গত কারণও রয়েছে বর্তমান পরিস্থিতিতে। বালিশকান্ড দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের পর্দা উন্মোচন শুরু। ধারাবাহিকতায় পর্দাকান্ড উন্মোচিত হবার পর অন্দরমহলের দৃষ্টি পড়েছে অনেকের। তারপর তো যেখানেই চোখ যায় সেখানেই খুল্লাম খুল্লা। উন্নত দেশগুলোতে এর একটার কিয়দংশই যথেষ্ট ছিলো শুধু পদত্যাগ নয়, বিচারের জন্যও। অন্য সময়ের দুর্নীতি না হয় নজর-আন্দাজ করে গেছেন অনেকেই। কেউ বা ভাগ পেয়ে, কেউ বা ভয়ে চুপ ছিলেন। কিন্তু এই রোগ ও মৃত্যুকালীন সময়েও দুর্নীতি কোনভাবেই সহন ক্ষমতার মধ্যে পড়ে না। মৃত্যুকেও যারা অবৈধ অর্থ উপার্জনের পন্থা বানিয়ে ফেলে তাদের তো ছেড়ে কথা বলা যায় না। ছেড়েও দেয়া যায় না।
এমনিতেই আমাদের সাধ্য সীমিত। সেই সীমিত সাধ্য নিয়েই একটি অসীম দুর্যোগকে সামাল দেয়ার চেষ্টা চলছে। সেই চেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করাটা পাপ। যার শাস্তি অবশ্য প্রাপ্য।
দ্বিতীয়ত, নৈতিক নয় পদত্যাগের কারণ হতে পারে ক্ষমতার রশি টানাটানির ফল। কারণ হিসাবে বলা যায়, এতসব দুর্নীতির খবর গণ ও সামাজিকমাধ্যমে চাউর হবার পরও ক্যামেরার সামনে ডিজি সাহেবের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিলো ‘ডোন্ট কেয়ার’ টাইপের। এন ৯৫ মাস্ক থেকে শুরু করে সব বিষয়ে তিনি ছিলেন অনেকটাই বিন্দাস। এমনকি জবাবদিহিতারও খুব বেশি প্রয়োজন মনে করেননি। অর্থাৎ ধারণা করা যেতে পারে তার একটা ‘পাওয়ার হাউজ’ ছিলো যেখান থেকে তিনি রিচার্জ হতেন। ফলেই বিন্দাস থেকেছেন তিনি। সম্ভবত সেই ‘পাওয়ার হাউজ’ কোন কারণে ফেইল করেছে যার ফলেই তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস করোনা সনদের ফটকাবাজি বিষয়ের খবরে আমাদের উল্লেখ করেছে ‘পুওরেস্ট কান্ট্রি’ হিসেবে। সেই হিসেবেই বলি। ‘পুওরেস্ট কান্ট্রি’গুলোতে দুর্নীতি করতে গেলে খুব সামান্য পর্যায়েও একা করা যায় না। এমন কী এসব দেশে সিনেমা বা ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি করতে গেলেও একটি চেইন মেনটেইন করতে হয়। আর সেই চেইনের মাথাটা অনেক দূরের। সুতরাং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন মহাপরিচালক এত বড় বড় ব্যাপার একা সামাল দিবেন এমন ভাবাটা হবে চিন্তার বন্ধ্যাত্ব। ‘সিন্ডিকেট’ বলে একটা কথা তুলেছিলো জার্মান খবর মাধ্যম ডয়চে ভেলে। কথাটা উড়িয়ে দেবার মতন নয়। প্রতিটা বড় দুর্নীতির পেছনে একটা সিন্ডিকেট কাজ করে। অবস্থান অনুযায়ী স্বাস্থ্য দপ্তরের ডিজি একজন মধ্যমমাপের মানুষ। তার উপরে আরো কয়েকটি ধাপ রয়েছে। সেই ধাপ যতটা উপরে ততটা তার প্রভাব বেশি, দুর্নীতির আওতাটাও বেশি। সিঁড়ির যাত্রা উপরের দিকেই। সুতরাং ‘সিন্ডিকেট’ চিহ্নিত না করা গেলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। বরং পরের জনও বাধ্য হয়েই অগ্রজের পদছাপ অনুসরণ করবেন।
এ ক্ষেত্রে মনে রাখা উচিত দাবার চালের ভুলে মাঝেমধ্যে দু’একটা হাতি-ঘোড়া খোয়া যায়, কিন্তু মূলটা হলো ‘চেক’ কিস্তিমাত। দুর্নীতির কিস্তিমাত করতে হবে। থেমে যাওয়ার উপায় নেই। লক্ষ্য একটাই, দুর্নীতি বন্ধ করা। আর ডিজি’র পদত্যাগ সেই লক্ষ্য পূরণে আশা জাগিয়ে তুলেছে। মনে হচ্ছে দেরিতে হলেও ‘সহি’ কাজের ‘শুরুয়াত’টা তো হয়েছে। ডুবন্ত মানুষের কাছে খড়কুটোই আশার আলো হয়ে দাঁড়ায়।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন