০
১১৬০ বার পঠিত
দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে জরুরি সংবাদ হলো নায়িকা সংবাদ। এই যে পরীমনি কাহিনীই ধরা যাক। কতটা গুরুত্বপূর্ণ হলে তসলিমা নাসরিনের মতন ‘মহীয়সী’ তাকে নিয়ে চিন্তা করেন। এই যে হুটহাট সকল রাজনীতিবিদদের পিছে ফিলে নায়িকাগণ সংসদ সদস্য হয়ে যান। কালকে যাকে বিছানায় নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়, আজ তাকে চেয়ারে বসানোর নান্দনিক কোশেস চলে।
আমাদের দুর্ভাগ্য হলো তসলিমা নাসরিনদেরকে আমাদের বুদ্ধিজীবী হিসেবে মানতে হয়, চিন্তকের শ্রেণিতে ফেলতে হয়। আমাদের দেশে তসলিমাদের বলা যায় বাড়বাড়ন্ত। এদের পেটে ভাত না থাক পকেটে বিড়ি থাকা চাই। মূল সমস্যা বাদ দিয়ে কিংবা মূল সমস্যাকে ঢেকে দিতে তারা নায়িকাদের নিয়ে হৈচৈ করে। খেলোয়ারদের নিয়ে কাগজ গরম করে। এমনকি সানি লিওন ও মিয়া খলিফারাও এদের আলোচনা থেকে বাদ যায় না। তাদের সমালোচনায় থাকে হিজাব-নেকাব পরা মেয়েরা। হিজাব-নেকাবই সারাদেশের সর্বনাশ করে দিলো। সংস্কৃতি গেলো গেলো। দেশ যে গেলো ওনিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আধুনিক পোশাকওয়ালা পাপিয়া-সাবরিনারা যে দেশটাকে ফাঁক করে দিলো, সে ব্যাপারে তাদের কোনো কথা নেই। দেশের টাকা লুটে গড়ে উঠা বেগমপাড়ায় কোনো হিজাব বা নেকাবওয়ালী থাকে না, থাকে কথিত প্রগতিশীলরা। মোটিভেশনাল স্পিকারদের কথাই ধরুন। তাদের কেউ কেউ দেশে বড় বড় বাতচিৎ করে পরিবারকে স্যাটেল করে অ্যামেরিকায়। নিজেরা দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে মাঝেমধ্যে দেশে আসেন আদেশ-উপদেশ দিতে। সোশ্যাল মিডিয়ার সেলিব্রেটি হতে। এই ভণ্ডদের নিয়ে তসলিমাদের কোনো কথা নেই। সম্ভবত সমগোত্রীয় বলেই নেই।
বোরকাওয়ালীরা বোরকা ব্যবহার করেন নিজের শরীর ঢাকার জন্য। দেশের তসলিমা গ্রুপ বোরকা-হিজাব-নেকাব ব্যবহার করে দুবৃর্ত্তদের দুর্বৃত্তপনা ঢেকে রাখার জন্য। মূলত বোরকাসহ হিজাব-নেকাবের কাজ হলো আড়াল করা। মূল সমস্যাকে আড়াল করতেই তসলিমারা বোরকা প্রসঙ্গ টানেন। তাদের এই আড়াল প্রক্রিয়ার কারণেই দেশে দেশে ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটে। এরাই মানুষকে বোকা বানায়, সেই বোকা কুমিরের গল্পের মতন। তারা সেই গল্পের ধূর্ত শেয়াল। কুমিরের বাচ্চাদের খেয়ে যারা কুমিরকেই বোকা বানায়। ধরতে গেলে ঠ্যাং আর লাঠির মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
এরা সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলে, অথচ সংস্কৃতি বিষয়টি কী তার সঠিক ইতিবৃত্ত তাদের জানা নেই। অথবা জানলেও বিশেষ উদ্দেশ্যে তা অস্বীকার করে। সংস্কৃতি বিষয়ে বলতে গেলে অর্ধেক কথারই জবাব দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। তারা যা বলেন তার ব্যাখ্যা দেয়াও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আর সে অপারগতার জবাব দেবেন অন্যকে প্রতিক্রিয়াশীল আখ্যা দিয়ে। সাথে ছড়াবেন ঘৃণা। ঘৃণাবাদীতা তাদের একমাত্র উপজীব্য। না হলে, এই যে বিদেশে পশ জীবনযাপন কি সম্ভব হতো? নারীবাদী ও ধর্মবিরোধী তকমা না লাগালে কি তার হিল্লি-দিল্লি ঘুরে বেড়ানোর পয়সা থাকতো? থাকতো না। তবে অবস্থা সবসময় একরকম থাকে না। ধর্মকে বেচে খাওয়ার দিন শেষ। প্রশ্ন করবেন তো, এটা কি বললাম। মূলত এরাই ধর্ম ব্যবসায়ী। ধর্মের বিরোধীতা করেই আজকে এদের এই রমরমা অবস্থা। বাংলাদেশে যারা ধর্ম বিষয়ে কথা বলেন, তাদের পক্ষে তসলিমার মতন হিল্লি-দিল্লি ঘোরা কি সম্ভব? একদম না। সুতরাং ধর্মের পক্ষে বলেই শুধু ধর্ম ব্যবসা হয় না, বিপক্ষে বলেও হয়। কথিত হুজুরদের হেলিকপ্টারে উঠা নিয়ে যারা আলাপ করেন, তারা বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন। এসব মন্দ আক্কেল হুজুররা তসলিমাদের কাউন্টার পার্ট। বানরের পিঠা ভাগের দুই বেড়াল। যারা পিঠা নিয়ে পরস্পর ঝগড়া করে মাঝখানে ভাগের নামে পিঠা খায় চালাক বানর।
সময় বদলাচ্ছে। দেশে নারীবাদীতার নামে, ধর্ম বিরোধীতার নামে যা হয় তা যে স্রেফ বিদ্বেষ এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত তা বুঝতে পারছে মানুষ। যারা সত্যিকার অর্থেই দেশকে ভালোবাসেন। তারাও বুঝতে শুরু করেছেন দেশের মূল সমস্যাটা কী। ফলে তারা এসব বিভেদ আর বিদ্বেষের লক্ষণরেখা পার করতে চাইছেন। পরীমনি বিষয়ক আলাপের আওয়াজ ক্রমেই ফিকে হয়ে আসছে। যারা মানুষকে বোকা কুমির ঠাওরেছেন, তাদেরকেও মানুষেরা ধূর্ত শেয়াল হিসেবেই চিহ্নিত করতে শুরু করেছে। পূর্ব দিগন্তে দেখা যাচ্ছে আলোর রেখা।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন