০
৮২৭ বার পঠিত
পাওলো ফ্রেইরি ক্রমেই প্রাসঙ্গিক শুধু না আবশ্যিক হয়ে উঠছেন আমাদের জন্যে। মনের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে আমাদের পাওলো ফ্রেইরির দ্বারস্থ হতে হবে। না হলে উপায় নেই। মনের দাসত্ব ক্রমেই আমাদের মগজ দখল করে নিচ্ছে। আমরা দাস হয়ে উঠছি। ‘দাসস্য দাস’।
ফ্রেইরি বলেছিলেন, যতক্ষণ নিজের মনের দাসত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করা না যাবে, ততক্ষণ দাসকে প্রভু বানালে সে আরো বেশি অত্যাচারী হয়ে উঠবে। জর্জ অরওয়েল তার অ্যানিমেল ফার্মে সে কথাই বলে গেছেন।
স্বাধীনতা হলো মূলত ‘না’ বলার অধিকার। আপনি আপত্তি জানাতে পারবেন, আপনার অপছন্দের বিষয়ে। আপনি বাধা দিতে পারবেন আপনার প্রতি অন্যায়-জুলুমের। এই ‘না’ বলা আর ‘বাধা’ দেয়াই স্বাধীনতা। আপনি যখন ‘না’ বলতে পারবেন না, ‘বাধা’ দিতে পারবেন না, তখন আপনি পরাধীন।
স্বাধীন রাষ্ট্রচিন্তা এমন পরাধীনতার সাথে যায় না। কল্যাণ রাষ্ট্র মানেই ‘না’ বলার অধিকার। আর সেই অধিকারটাকে আমলে নিয়ে তাকে ‘হ্যাঁ’তে রূপান্তরিত করাটাই কল্যাণ রাষ্ট্রের কাজ। আপনি যখন ‘না’ বলার অধিকার হারাবেন তখন আপনার রাষ্ট্র অকল্যাণকর। আর আপনি যদি সেই অধিকারহীনতায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন এবং সেই হীনতাকেই সমর্থন করেন তাহলে আপনি অকল্যাণের ‘গোলামস্য গোলাম’।
পাওলো ফ্রেইরিকেও জেল খাটতে হয়েছিলো। তাকে কম্যুনিস্ট আখ্যা দেয়া হয়েছে, আবার বলা হয়েছে সিআইএ’র চর। অর্থাৎ তিনি দু’দিক থেকেই সন্দেহের তালিকায় ছিলেন। আর এ থাকাটাই প্রমাণ করে তার পথ ছিলো সঠিক। ব্রাজিল সরকার তাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলো। বিশ্বাসঘাতক হিসেবে তিনি সত্তর দিন জেল খেটেছেন। অকল্যাণ রাষ্ট্রের নজির হলো এই; আপনি ভালো কিছু করতে চাইলে আপনাকে সন্দেহের চোখে দেখা হবে। আপনার ‘না’ বলার অধিকার কেড়ে নেয়া হবে। আপনাকে গোলাম বানানোর চেষ্টা করা হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি গোলাম না হয়ে ওঠেন। তাতেও ব্যর্থ হলে, আপনি আখ্যা পাবেন বিশ্বাসঘাতকের।
আপনাকে এই পরিস্থিতি নিশ্চিত হ্যান্ডেল করতে হবে। ‘উই শ্যাল ওভার কাম’ গানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আপনাকে সত্যিকার অর্থেই ‘ওভার কাম’ করতে হবে। তাহলেই গোলামির জিঞ্জির থেকে আপনি মুক্তি পাবেন। জান ও জবানের স্বাধীনতা পাবেন। আপনার রাষ্ট্র হয়ে উঠবে কল্যাণ রাষ্ট্র। পাওলো ফ্রেইরি কিন্তু ‘ওভার কাম’ করেছিলেন।
নোট : যুগে যুগে কিন্তু ‘ওভার কাম’-এর কাহিনিগুলোই টিকে আছে। যারা ‘ওভার কাম’ করতে পারেননি, তারা হারিয়ে গেছেন ইতিহাসের ব্ল্যাকহোলে। হ্যাঁ, যারা অধিকার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন তারাও ইতিহাসে টিকে আছেন। প্রতিটি নায়কই উঠে আসে খলনায়কের পরাজয়ে। নায়ক থাকলে খলনায়কও থাকবে। যেমন অসুরও ঠাঁই পায় দুর্গার কাঠামে। ভালোবাসা প্রকাশের জন্য যেমন জায়গা থাকে, তেমনি থাকে ঘৃণা প্রকাশেরও।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন