০
১১০২ বার পঠিত
ভারতের বম্বে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, দেহব্যবসা কোনও অবস্থাতেই অপরাধ নয়। পুলিশ ভারতের ‘বেদিয়া’ সম্প্রদায়ের তিন নারীকে গ্রেপ্তার করেছিলো যৌনকর্মী হিসেবে। পুলিশের সেই মামলার রায়েই বম্বে হাইকোর্টের বিচারক পৃথ্বীরাজ চৌহানের বেঞ্চ এই রায় দেয়। রায়ে আদালত বলেছেন, ‘যৌন কর্ম যেহেতু একটি পেশা অতএব যে কোন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এই পেশা বেছে নিতে পারেন।’ তবে আদালত এও বলেছে তাকে বাধ্য করা যাবে না এ পেশায়।
আদালতের রায়ের সাথে ভারতের ‘বেদিয়া’ সম্প্রদায় নিয়েও কথা বলি। ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে খুব বেশি দূরে নয় রাজস্থানের খাকড়ানাগলা গ্রাম। এই গ্রামেই বাস আলোচিত ‘বেদিয়া’ এবং সাথে ‘নট’ সম্প্রদায়ের লোকদের। এই দুই সম্প্রদায়ে মেয়ে জন্ম নিলে রীতিমত উৎসব শুরু হয়ে যায়। কারণ মেয়ে মানেই এখানে উপার্জনক্ষম একজন। তাই ছেলের চেয়ে মেয়ে এই গ্রামে বেশি কাঙ্ক্ষিত। বিবিসি’র একটা প্রতিবেদন ছিলো এই গ্রামকে নিয়ে। অবশ্য প্রতিবেদনে ‘বেদিয়া’ সম্প্রদায়কে ‘বাচ্ছারা’ নামে অভিহিত করা হয়েছিলো।
সেই প্রতিবেদনও উঠে এসেছে একই কথা। বলা হয়েছে, মেয়েদের অল্প বয়সেই ঠেলে দেয়া হয় পতিতাবৃত্তিতে। সবচেয়ে ভয়াবহ যে ব্যাপার তা হলো, এক্ষেত্রে দালালের কাজ করে স্বয়ং সে মেয়ের বাবা বা ভাই। চিন্তা করা যায়। একজন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষ কি এমনটা চিন্তা করতে পারেন! সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের ব্যাপার এমন একটি সম্প্রদায়, এমন চিন্তার একটি সমাজ এই সময়েও টিকে আছে! আর সেটা মানবতাবাদী, গণতান্ত্রিক সমাজ বলে দাবি করা ভারতে! আর সে টিকে থাকার প্রমান হলো, বম্বে হাইকোর্টের রায়।
দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এই তিনটি দেশে কথিত নারীবাদের প্রবলতর প্রাবল্য রয়েছে। এতই প্রাবল্য সে নারীবাদে যা শুধুমাত্র অপমানজনক একটা বাক্যেই কখনো অগ্নিঝরা হয়ে ওঠে। আবার নারীদের পতিতায় রূপান্তকরণ, ধর্ষণেও নিরব-নির্বিকার থাকে। এই যে সিলেক্টিভ প্রতিবাদ বা সিলেক্টিভ নারীবাদ যা মূলত দক্ষিণ এশিয়ার কথিত নারীবাদীদেরই বিতর্কিত করে তুলেছে।
ভারতেও রয়েছে তুমুল নারীবাদী কার্যক্রম। তারা পতিতাদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করছে। কিন্তু নাকের ডগায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে নারীদের পতিতা বানানো হচ্ছে তাতে তাদের নজর নেই। বরং তারা যৌনকর্মকে পেশার মর্যাদা দিতেই অস্থির। কোর্ট বলেছে স্ব-ইচ্ছার কথা। কিন্তু ব্যতিক্রম বাদে স্ব-ইচ্ছায় কি কোনো নারী যৌনকর্মকে পেশা হিসাবে বেছে নেন? সঙ্গতই নেন না। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার সামাজিক পরিবেশে নারী-পুরুষ কেউ-ই একে সম্মানজনক পেশা হিসাবে মনে করেন না। অথচ এই পেশাকে মর্যাদা দিতে যতটা উন্মুখ উপমহাদেশের কথিত নারীবাদীরা ততটাই বিমুখ রাজস্থানের সেই গ্রামের নারীদের পতিতায় পরিণত হবার বিরোধীতায়। লক্ষণীয় বিষয় হলো, সেখানে কিছু এনজিও কাজ করে। যাদের প্রধান কাজ যৌন রোগের ব্যাপারে নারীদের অবহিত করা এবং তাদের কন্ডম বিতরণ করা। ভেবে দেখুন রোগ প্রতিরোধের চেয়ে রোগের চিকিৎসা করাতেই তাদের বেশি আগ্রহ। দক্ষিণ এশিয়ার কথিত নারীবাদীদের অবস্থাও তাই।
নয় কি? দেখুন তো দেশের দিকে তাকিয়ে। অনেকগুলো ঘটনা মেলান। কথিত নারীবাদের কোন ঘটনায় রিয়েকশন কী। দেখবেন কোনো সিরিয়াস ঘটনায় তারা পুরাই নিরব, আবার সামান্যতেই আগুন। উদাহরণ দিতে গেলে হাজারটা দেয়া যাবে। ভারতেও তাই। খাকড়ানাগলা গ্রাম তারই উদাহরণ। যেখানে যৌন রোগের দাওয়াই দিতে যায় কথিত নারীবাদ। বিপরীতে সেখানের নষ্ট সমাজ ঠিক করার কোনো দাওয়াই তাদের নেই। তারা খদ্দের দ্বারা কোনো নারী নির্যাতিত হলে উদ্ধারে এগিয়ে আসে। নারীকে খদ্দের পর্যন্ত যাতে পৌঁছাতে না হয় তার কোনো ব্যবস্থা করে না সেই অদ্ভুত নারীবাদ। আর এনজিওদের এটাও তো এক ধরণের ব্যবসা। সমস্যা জিইয়ে রেখে সমাধান বিক্রির ব্যবসা।
অনেকে বলেন, পতিতাবৃত্তি প্রাচীনকাল থেকেই ছিলো। এই পেশা আদিমতম পেশা, সেটা থাকবে। তাদের যদি প্রশ্ন করেন, আদিমতাই যদি ধরে রাখতে চাইবেন তাহলে আর সভ্য হিসাবে দাবি করা কেনো! প্রাচীনকালে পতিতাবৃত্তি ছিলো রাজা-বাদশাদের আনন্দ উপকরণ। তবে আজকে যারা পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে তাকে উৎসাহিত করতে চাচ্ছেন তারাও কি রাজা-বাদশা অথবা তাদের খেদমতগার! অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এরাই আবার আরব শেখদের, মোগল সম্রাটদের সমালোচনায় মুখর। দাসীপ্রথা, বহুবিবাহ, হেরেম এসবের বিরুদ্ধে রীতিমত বজ্রকন্ঠ! কিছু বেকুব আবার তাদের সাথে ধুয়াও ধরেন। অথচ তাদের উচিত ছিলো ভয়েজ রেইজ করা। জানতে চাওয়া। এক্ষেত্রে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যর্থ কিনা। এই যে পতিতাবৃত্তিকে বৈধ করে মানুষের শরীর বিক্রির অনুমোদন দেয়া, তা সেই ব্যর্থতারই স্বীকৃতি কিনা। তা না করে বরং উল্টো গীত গান কথিত নারীবাদীরা। এই হলো কথিত নারীবাদ এবং নারীবাদীগণ। বলিহারি যাই তাদের বিচিত্র কায়-কারবারে!
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন