০
১১২৬ বার পঠিত
আমি নিজেকে ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষ বলে দাবি করি; ধর্ম নিরপেক্ষ মানে আবার ধর্মহীনতা না। এখানে ধর্ম বলতে আবার শুধু প্রচলিত ঈশ্বর বা ঐশ্বরিক কোন ধর্মকে বুঝাচ্ছি না। ধর্ম নিরপেক্ষ মানে সকল ধর্ম এমন কি ধর্মে বিশ্বাসী নয় এমন কাউকেও সমান চোখে দেখা (খুব সাধারণভাবে বললাম)। আমি নিজেকে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হিসাবেও দাবি করি; যার অর্থ হলো প্রতিটি বিষয়ের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এবং কার্যকারণ বিবেচনায় এনে বিচার বা কাজ করা।
আমার মেডিক্যাল কলেজের এসিস্ট্যান্ট ডীন হিসাবে প্রায় সাড়ে তিনশ ফ্যাকাল্টি (বেতনভূক্ত বা অবৈতনিক কোর ফ্যাকাল্টি, ভলান্টারি ফ্যাকাল্টি বাদ), কর্মচারী, ৪৮০ জন করে এমডি ছাত্রছাত্রী, ৪৬০ জন রেসিডেন্টসহ প্রায় চার হাজারের বেশি বায়ো-মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ডাইভারসিটি বজায় রাখা আমার কাজের একটা অংশ।
আমাদের এমডি প্রোগ্রামে অল্প কয়েকজন মুসলমান ছাত্রছাত্রী আছে যারা নিয়মিত নামাজ আদায় করে এবং কেউ কেউ হিজাব পরে আসে। এই ছাত্রছাত্রীরা আমার কাছে আবেদন জানালো যে তাঁদের নিয়মিত নামাজের জন্যে একটা জায়গা দরকার যেখানে ২৪ ঘন্টা আসা-যাওয়ার সুযোগ আছে। বলাই বাহুল্য, আমাদের মেডিক্যাল বিল্ডিং-এ একটি রুমের এতোটাই ক্রাইসিস যে অনেক ডাক্তারদের অফিস দেয়া সম্ভব হয় না। অন্যদিকে সিকিউরিটির জন্যে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখাও প্রায় অসম্ভব।
এতো কিছুর মধ্যে ঠিকই দরবার সালিশ করে একটি কনফারেন্স রুমকে পরিবর্তন করে সকল ছাত্রছাত্রীদের জন্যে প্রার্থনার রুম বানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হলো। যেখানে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা বা অন্য প্রার্থনার ব্যবস্থা থাকবে।
এই উদাহরণটি দিচ্ছে এজন্যে যে একজন ধর্ম-নিরপেক্ষ এবং বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের পক্ষেই এভাবে সকলকে সমান চোখে দেখা সম্ভব। মানুষ যখন শুধু নিজেকে মুসলমান বা খ্রীশ্চিয়ান বা ইহুদী বা হিন্দু মনে করে তখন তারপক্ষে নিরপেক্ষ থাকা খুবই মুশকিল। এখানে একজন ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ যে অন্য ধর্মের জন্যে করে না তা কিন্তু বলছি না; তাঁরাও করেন কিন্তু কোন না কোন উদ্দেশ্য থাকে পেছনে। এখানে যেমন আমার কোন সওয়াবের উদ্দেশ্য নেই, কোন ধর্ম প্রাসারের উদ্দেশ্য নেই। কিন্তু একজন ধর্ম নিরপেক্ষ, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ এগুলো করবেন শুধু মাত্র মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে।
এখানে নিজেকে জাহির করতে এই ঘটনাটি বলছি না; বলছি একারণে যে একজন মুসলমান কি একজন নাস্তিকের জন্যে বা একজন ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষের জন্যে এভাবে এগিয়ে আসতে পারেন? পারেন তো না-ই, বরং তাঁদের ওপরে খুনের খড়গ হাতে এগিয়ে আসেন। তাহলে আপনারাই প্রশ্ন করুন নিজেকে কীভাবে এবং কোথায় মানুষের মধ্যে এই গুণাবলী তৈরি হয় যখন সকল মানুষ কে সমান চোখে দেখা যায়।
ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-লিঙ্গ-যৌন-পরিচয়সহ সকল কিছু নির্বিশেষে সকল মানুষকে সমান চোখে দেখতে পারাই আমার বেঁচে থাকার অন্য এক মানে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন