ইসলাম পৃথিবীর স্বীকৃত ধর্মগুলির মধ্যে কনিষ্ঠতম ধর্ম। হজরত মোহাম্মদ এই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। যদিও ইসলাম ধর্মানুসারীদের বিশ্বাস, সৃষ্টির আদি পিতা আদম হতে ইসলামের উদ্ভব। আদম ইসলামের প্রথম নবি। এখানে একটা বড় বিতর্ক আছে- সেমেটিক ধর্মসমূহের মধ্যে। আলোচনার শুরুতেই সেই বিতর্কে ঢুকতে চাই না। আলোচনায় তা প্রয়োজনীয়ও নয়। হজরত মোহাম্মদকে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক রূপেই আমরা ধরে নেব। মোহাম্মদের জন্ম আরবভূমির মক্কা নগরীতে, কোরাইশ বংশে। তাঁর পিতার নাম আবদুল্লাহ, মাতার নাম আমিনা খাতুন। আরবের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী যে ধাত্রীর স্তন্যপান করেছেন মোহাম্মদ শৈশবে, তাঁর নাম হালিমা খাতুন। আরবদেশে ধাত্রীমাকে জননীর মর্যাদা দেওয়া হয়। মোহাম্মদের জীবনকথাও এই আলোচনার বিষয় নয়।
মোহাম্মদের যখন ৪০ বছর বয়স তখন রমজান মাসে তাঁর ওপর প্রথম ‘ওহী’ নাজেল হয়। বলা যায় সেই হল ইসলাম ধর্মের জন্ম মুহর্ত। নতুন সেই ধর্মের প্রবর্তক হলেন মোহাম্মদ। তিনি হয়ে গেলেন আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ বা দূত। মোহাম্মদ লাভ করলেন নবুয়ত। ওহী শব্দের সাধারণ অর্থ হল ঈশ্বরের প্রেরিত ঈশীবাণী বা প্রত্যাদেশ। এই প্রত্যাদেশ লাভ করেই মোহাম্মদ হলেন আল্লাহর রসুল বা নবি। প্রথম অবতীর্ণ হওয়া প্রত্যাদেশ বা ওহী হল কোরানের সুরা আলাক। এই সুরাই সৃষ্টি করল কোরান, জন্ম নিল ইসলাম ধর্ম। তারপর দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নবি মোহাম্মদের ওপর ওহী নাজেল হয়। বিভিন্ন সুরা ও আয়াতে গ্রন্থিত হয়েছে ওহী। সেই ওহী নাজেল হয়েছে ইসলাম ধর্মানুসারী মুসলমানদের জন্যে নীতি-নির্দেশ উপদেশ নিয়ে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাদের জীবনচর্চা ও জীবনচর্যার বিস্তারিত বিধান নিয়ে। অনেক ওহী নাজেল হয়েছে মোহাম্মদের ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যার সমাধান দিয়ে তা নবদীক্ষিত মুসলমানদের কাছে দুষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরে। মোহাম্মদের জীবনাবসান ৬৩২ খ্রীস্টাব্দে। শেষতম ওহী নাজেল হয় তাঁর মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন আগে।
হজরত মোহাম্মদের ওপর যত ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল তা ‘অবিকৃতভাবে’ সংকলিত রয়েছে কোরানে। মুসলমানদের দাবি, ওহী যেভাবে নাজেল হয়েছিল, তা যেভাবে গ্রন্থিত করেছিলেন রসুল মোহাম্মদ তা থেকে একটি অক্ষর কিংবা যতিচিহ্ন পর্যন্ত পরিবর্তিত হয় নি সুদীর্ঘকালেও। কোরান আল্লাহর ওহী। কোরানে কোনও কিছু যুক্ত, বিযুক্ত কিংবা প্রক্ষিপ্ত করা সম্ভব নয় বলেই বিশ্বাস করেন মুসলমানরা। অবতীর্ণ হওয়া ওহীর ধারাবাহিকতা মেনে কোরান গ্রন্থিত হয় নি। কিন্তু কেন কোরানের প্রচলিত সংকলনে সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হল না, তার কোনও সদুত্তর মেলে নি বিশিষ্ট সব কোরান বিশেষজ্ঞ ও চিন্তাবিদদের কাছ থেকে। অথচ তা অসম্ভব ছিল না। তবে কী কোরানের স্রষ্টা এইভাবেই চেয়েছিলেন সেই ওহীর সংকলনকে? কিন্তু এর উত্তর পেতে হলেও আরেকটা ওহীর প্রয়োজন। কিন্তু তা তো আর পাওয়া যাবে না।
মোহাম্মদ যে আল্লাহর শেষ নবি। আখেরী পয়গম্বর, এরপর আর কোনও নবি ধূলার ধরণীতে আসবেন না, অবতীর্ণ হবে না কোনও ওহী। আখেরী ওহী যে নাজেল হয়ে গেছে। এই হল ইসলামের চূড়ান্ত বিশ্বাস (Ultimate Truth)। মোহাম্মদ কোরানকে ধারণ করেছিলেন, অনেক সুরা ও আয়াত লিখেও রেখেছিলেন। বেশীরভাগই ছিল হাফেজ (যাদেঁর কোরান মুখস্ত আছে) দের কণ্ঠে। কিন্তু কোনও সংকলিত রূপ দিয়ে যান নি বা যেতে পারেন নি। কোরান পূর্ণাঙ্গরূপে সংকলিত হয় মোহাম্মদের মৃত্যুর দুই দশক পরে ইসলামের ৩য় খলিফা হজরত ওসমানের হাতে। খলিফা ওসমানকে তাই বলা হয় ‘জামেউল কোরান’ বা কোরান সংকলক। এই কোরান সংকলন নিয়েও ইসলামের ইতিহাসে অনেক বিতর্ক আছে। এই আলোচনার জন্যে তা প্রাসঙ্গিক নয়।
মক্কার কাছে হেরা পর্বতে প্রথম যে ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল মোহাম্মদের ওপর তা সুরা আলাক।
“পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিণ্ড হতে।“
(সুরা আলাক, ৯৬:১-২)
ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের কোরানের প্রথম বাংলা অনুবাদে আছে রক্তপিণ্ডের পরিবর্তে ‘ঘনীভুত শোণিত যোগে’। রক্ত ঘনীভূত-ই হোক আর বিন্দু বিন্দুই হোক অর্থের তফাৎ হয় না। এই ওহীতে মানুষ সৃষ্টির কথা আছে, কিন্তু আলাদাভাবে নারী সৃষ্টির কথা নেই; যুগল নারীপুরুষের কথাও নেই। এই মানুষ সৃষ্টি যদি মানব প্রজাতি সৃষ্টি বলে ধরে নিই, তাহলে এই সুরা আলাক পূর্ণতা পেতে পারে। কিন্তু কোরানের কোনও তফসিরকার সুরা আলাককে সেভাবে ব্যাখ্যা করেন নি। তাই আল্লাহর সৃষ্ট মানুষ এখানে শুধুই পুরুষ। নারীর কথা তখনো মনে হয়নি তাঁর। বর্তমানে কোরানকে যেভাবে পাওয়া যায় তাতে ‘নারী’র প্রথম দর্শন দেখা যায়- সুরা বাকারায়। মদীনায় এই সুরাটি অবতীর্ণ হয়েছিল। এই সুরার আত্মপ্রকাশ তাই মোহাম্মদের নবুয়ত লাভের অনেক পরের দিকে।
সুরা বাকারার সেই বিখ্যাত আয়াতটি তুলে ধরছি-
“তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র, অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা যেতে পার।“
(সুরা বাকারা, ২:২২৩)
কোরানের এই আয়াত নারীকে একেবারে পৌছে দিয়েছে পৃথিবীর আদিমতম সমাজে। নবীন ধর্ম ইসলামের অনুগত মুসলমানদের জন্যে এই আয়াতের ‘নির্দেশ’ নারীর জন্যে চরম অবমাননার। এখানে নারীর অবনমন চূড়ান্ত। প্রাচীন বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই মনে করা হত যে নারীর সাথে উর্বরা প্রকৃতির কোনও প্রভেদ নেই। প্রকৃতির ক্ষেত্রকে কর্ষণ করলে যেমন শস্য পাওয়া যায়, নারীকে মৈথুন করলেও তেমনি সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান জন্মে নারীর কোনও ভূমিকা নেই। যেমন নেই শস্যক্ষেত্রের। কর্ষণ করে বীজ বপন করলে শস্য আর মৈথুনের বীজ থেকে সন্তান। এই আয়াত নারীকে শুধু পদানতই করে নি, তাকে পরিণত করেছে পুরোপুরি যৌনকর্ষণের ক্ষেত্ররূপে। নবীনতম ধর্ম ইসলাম দাবি করে, এই ধর্ম নারীকে যত অধিকার দিয়েছে বিশ্বের অন্য কোনও ধর্ম তা দেয় নি, দিতে পারে নি। ইসলাম নারীকে অন্ধকার যুগ থেকে তুলে এনে নতুন মহিমায় গরিয়সী করেছে। ইসলাম নারীকে কোনভাবেই মহিয়সী করে নি। নারীকে উর্বরা শস্যক্ষেত্রের সাথে উপমা তাকে আদিম থেকে আদিমতম স্তরে অবনমিত করে। সুরা বাকারার ২:২২৩ আয়াত সেটাই বুঝিয়ে দেয় আমাদের। কোরানের প্রথম সুরা, সুরা ফাতিহা, যে সুরাকে বলা যায় কোরানের ভূমিকা। বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর প্রশংসা এবং বন্দনা। দ্বিতীয় সুরা, সুরা বাকারা। এই সুরার ২:২২৩ আয়াত এখানে তুলে ধরেছি। এরপর এই সুরার নারী সংক্রান্ত অন্য আয়াতগুলি তুলে ধরছি।
“রোজার রাত্রিতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সহবাস বৈধ করা হয়েছে।“
(সুরা বাকারা, ২:১৮৭)
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য সংযমের মাস, রিপুকে দমনের মাস। সেই পবিত্র মাসেও মুসলমানদের জন্য স্ত্রী-সহবাস হালাল করে দিলেন আল্লাহ এই আয়াতে। ত্যাগের মাস, সংযমের মাস রমজানেও নব দীক্ষিত মুসলমানরা তখন স্ত্রী-সম্ভোগ করতেন। তাঁদের বাঁধভাঙ্গা যৌনতা রোজার মাসে শান্ত রাখা যেতো না। নবি মোহাম্মদ নিজেও রোজার মাসে স্ত্রী-সম্ভোগ করতেন। হাদিসেও তার উল্লেখ রয়েছে। যেমন-
“মোহাম্মদের পত্নী আয়েশা এবং উস্মে সালমা উভয়েই বলেছেন, যে কোনও কোনও সময় রসুল স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের পর ‘জানাবত’ অবস্থায় সুবেহ সাদেক (রাত্রি শেষে প্রত্যুষের আলো ফোটার আগের মুহুর্ত) হয়ে যেত। তখন তিনি স্নান করতেন এবং রোজা রাখতেন।“
(৯৯৫, বোখারী শরীফ, মাওলানা আজিজুল হক অনুদিত)
এই আয়াত কেন প্রয়োজন হয়েছিল তা আমরা বুঝতে পারি। এ নিয়ে মনে হয় একটা বিতর্ক ছিল নতুন ধর্মের অনুসারীদের। তাই এই আয়াতের অবতরণ। পবিত্র রোজার মাসেও যৌন সঙ্গম হালাল করে দিলেন আল্লাহ!
“মূর্তিপূজারী কাফের রমণীকে ধর্মান্তরিত না করে বিয়ে করা যায় না। কোরানের নির্দেশ তাই। আর অংশীবাদী রমণী যে- পর্যন্ত না বিশ্বাস করে তোমরা তাকে বিয়ে করো না। অবিশ্বাসী নারী তোমাদের চমৎকৃত করলেও নিশ্চয় ধর্মে বিশ্বাসী ক্রীতদাসী তার চেয়ে ভালো।“
(সুরা বাকারা, ২:২২১)
মুসলমানদের জন্য এই নির্দেশ এখনো বহাল। ইসলামের সমাজ ব্যবস্থায় বৈবাহিক সম্বন্ধে এই মূল নীতি থেকে বিচ্যুত হলে মুসলমান আর মুসলমান থাকে না। সে ধর্মচ্যুত হয়ে যায় অপবিত্র অবিশ্বাসী রমণীকে ঘরে তোলার কথা চিন্তা করলে। একজন আধুনিক মুসলমানও তাই বিয়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকেন, না হলে তার ইমান নষ্ট হয়ে যায়!
কোরানেও রজঃস্বলা নারীকে দেখা হয়েছে নিষিদ্ধ ও দূষিত প্রাণী রূপে। এখানে ইসলামের বিধান পুরুষতান্ত্রিক অন্যসব ধর্মের চেয়ে আলাদা নয়। ইসলাম এখানে কোনরূপ আধুনিকতার পরিচয় দিতে পারে নি। রজঃস্রাব চলাকালীন নারী অশূচি হয় না। তবে তার প্রয়োজন হয় বিশ্রামের, বিশেষ করে যৌনসঙ্গম থেকে।
“লোকে তোমাকে রজঃস্রাব সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে। তুমি বলো, ‘তা অশূর্চি’, তাই রজঃস্রাবকালে স্ত্রীসঙ্গ বর্জন করবে।
(সুরা বাকারা, ২:২২২)
ঋতুমতী নারীর রজঃঅশূচি। এই বার্তা কোরানে বলা হলেও রসুল মোহাম্মদ কামুক পুরুষদের জন্য স্ত্রী সংসর্গ পুরোপুরি বন্ধ করেন নি। তিনি ইচ্ছা করেই যেন কোরানকে অতিক্রম করেছিলেন। তিনি অবশ্য কিছু ‘শাস্তি’র ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন।
একটি হাদিসে বলা হয়েছে-
“রজঃস্বলা স্ত্রীর সাথে কোনও পুরুষ সংগত হলে তাকে এই কাজের জন্যে এক দিরহাম সদকা (Charity) দিতে হবে। রক্তের রং কিছুটা হলদেটে হলে সদকার পরিমাণ হবে অর্ধ দিনার আর সম্পূর্ণ লাল হলে এক দিনার।“
(মিশকাত, ৫৫৩-৫৫৪)
কোরান যা নিষিদ্ধ করেছে তা থেকেও রেহাই পাওয়া যায় কিছু সদকা দিলে, যদি তা স্ত্রী সংসর্গজনিত হয়। সমর্থ পুরুষের জন্য এই সদকা সংগ্রহ করা খুব কঠিন নয়। যৌন-সংযম বলে কিছু যেন থাকতে নেই ইসলামে। ইসলাম নারীকে দেখেছে মূর্তিমতী কাম বলে, যে নারী একদিন তাকে করেছিল স্বর্গভ্রষ্ট; লিপ্ত করেছিল ‘পাপকাজে’। সে নারীকে ইসলাম ক্ষমা করে নি।
সুরা নিসা কোরানের চতুর্থ সুরা। ‘নিসা’ শব্দের অর্থ নারী। এই সুরার নামকরণ থেকেই বোঝা যায় এই সুরাতে নারী সংক্রান্ত বিধি-বিধান, নির্দেশ-উপদেশ তুলে ধরা হয়েছে। এই সুরাও মদীনায় অবতীর্ণ। ততদিনে হজরত মোহাম্মদ নতুন ধর্মকে একটা সুনির্দিষ্ট অবয়ব দিতে চেষ্টা করেছেন। সুরা নিসায়ও বিবাহ, এতিমদের প্রতি আচরণ, সর্বোপরী নারীর সম্পত্তির অধিকার নিয়ে বিস্তারিত বিধান রয়েছে। ইসলাম দাবি করে, নারীকে সম্পত্তির ওপর অধিকার প্রদান, এর আগে কোনও ধর্ম-সমাজ দেয় নি; এটা এক বৈপ্লবিক উদাহরণ। ইসলাম পুরুষের সাথে নারীকেও সম্পত্তির অধিকারী করেছে। ইসলাম নারীকে সম্পত্তির অধিকার দিলেও তার সমান অধিকার দেয় নি, সব স্থানেই নারী পুরুষের অর্ধেক। অর্থাৎ একজন পুরুষের সমান দু’জন নারী। পিতা-মাতা-ভ্রাতা-স্বামী-পুত্র-সবার সম্পত্তিতেই নারীর উত্তরাধিকার স্বীকৃত হলেও তা নিরংকুশ নয়। সেখানেও লিঙ্গ-বৈষম্য তাকে পূর্ণ মানব না করে অর্ধমানবী করে রেখে দিয়েছে।
সুরা নিসার ৭, ১১ এবং ১২ নং আয়াতে বলা হয়েছে-
“পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে। আর পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে, তা অল্পই হোক অথবা বেশিই হোক, এক নির্ধারিত অংশ।
আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছে তোমাদের সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে এক ছেলে পাবে দুই মেয়ের অংশের সমান; যদি দুই মেয়ের বেশি থাকে তবে তারা পাবে যা সে রেখে গেছে তার দুই- তৃতীয়াংশ, আর যদি এক মেয়ে থাকে তবে সে পাবে অর্ধেক, আর তার যদি সন্তান থাকে তবে তার পিতা-মাতা প্রত্যেকে পাবে তার ছয় ভাগের এক ভাগ, কিন্তু যদি তার সন্তান না থাকে, শুধু পিতামাতা তার উত্তরাধকারী হয় তবে তার মা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ, কিন্তু যদি তার ভাইয়েরা থাকে তবে তার মা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ।
তোমাদের স্ত্রী যা রেখে যায় তার অর্ধেক তোমরা পাবে। যদি তাদের একটি সন্তান থাকে তবে তোমরা পাবে তাদের রেখে-যাওয়া সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ, তাদের অসিয়তের দাবি বা ঋণ পরিশোধের পরে। আর তারা পাবে তোমরা যা রেখে যাও তার চার ভাগের এক ভাগ যদি তোমাদের সন্তান না থাকে, কিন্তু যদি একটি সন্তান থাকে তবে যা রেখে যাও তার আট ভাগের এক ভাগ তারা পাবে, তোমাদের অসিয়তের দাবি বা ঋণ পরিশোধের পরে। আর যদি কোনো পুরুষ বা স্ত্রীলোক সম্পত্তি রেখে যায় তার আছে এক ভাই বা এক বোন তবে তাদের প্রত্যেকে পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ।“
(সুরা নিসা, ৪:৭, ১১, ১২)
ইসলাম নারীকে সম্পত্তির অধিকার দিয়ে কিছু আর্থিক সুবিধা দিলেও কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু। নারীকে এই সুবিধা দানের জন্য অহংকারও কম নেই ইসলামের। কিন্তু ইসলামের আইনে নারী পিতা ও স্বামীর যে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়েছে তাতে তার অংশ খুবই কম, সবক্ষেত্রেই তা পুরুষের অর্ধেক। মুসলমানরা দাবি করেন, নারী যেভাবে পিতৃকূল ও পতির কুলে সম্পত্তি পায় তা যোগ করলে পুরুষের অংশকে ছাড়িয়ে যাবে, কিন্তু মোটেই তা সত্যি নয়। সব রকম হিসেব-নিকেশ করে দেখা গেছে একই অবস্থানে নারী কোনভাবেই পুরুষের অংশ ছাড়িয়ে যায় না।
সুরা নিসায় কোরানের স্রষ্টা আবার পুরুষের শ্রেষ্ঠত্বও ঘোষণা করেছেন। যেমন-
“পুরুষ নারীর রক্ষাকর্তা, কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের ওপর বিশিষ্টতা দান করেছেন, আর এজন্য যে, পুরুষরা তাদের ধনসম্পদ থেকে ব্যয় করে।“
(সুরা নিসা, ৪:৩৪)
এই বিষয়ে সতর্কবাণীও রয়েছে আল্লাহর। যেমন-
“যা দিয়ে আল্লাহ তোমাদের কাউকে কারও ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তোমরা তার লালসা করো না। পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য, আর নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য।“
(সুরা নিসা, ৪:৩২)
আল্লাহর পুরুষের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা নিয়ে কোন প্রকার প্রশ্ন করতে পারবে না নারী। এটা আল্লাহর বিধান। এই বিধান থেকেই গড়ে উঠেছে ইসলামের সব আইন-কানুন, যা নারীকে করেছে শৃঙ্খলিত। যা থেকে ইসলামের বিশ্ব নারীকে আর মুক্তি দেয় নি। মুসলমানরা বলেন, ইসলাম নারীকে যত সম্মান দিয়েছে অন্য কেউ তা দেয় নি। এখানে কোথায় সেই সম্মান? কোথায়ইবা পরিপূর্ণ সামাজিক অধিকার? একজনকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করলে অন্যজনের অধিকার সংকুচিত করে নিতে হয়। তার সমান অধিকারের দাবি তুলে নিতে হয়। কোরান নারীকে সেই কথাই শিখিয়েছে।