১৫৭৮ বার পঠিত
‘নারীদিবস’ বা নারীবাদী শব্দদ্বয়ের উৎপত্তির পেছনে এক বিশাল ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাসের ব্যাপকতা, যথার্থতা এবং মর্মার্থ গুরুত্ব রাখে অনেকাংশে। কবে, কোথায়, কেন এই নারীদিবসের উৎপত্তি, তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করলে আজকের নারীদিবসকে শ্রদ্ধার সাথেই স্মরণ করতে হয়।
প্রথম শুরুটা যেভাবেই হোক না কেন আজকের নারীর আত্মবলীয়ান হওয়ার পিছনে নারীদিবসের অবদান অনস্বীকার্য। বর্তমান পৃথিবীতে নারীর একলা চলার পথে নারীদিবসের ভূমিকা সেভাবে না রাখলেও নারীর চিন্তা-চেতনায় এই দিনটিকে বিশেষভাবে স্মরণ করা এখন নৈতিকতার মধ্যে পর্যবসিত। তারই লক্ষে প্রতিবছর ৮ মার্চ তারিখে পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারীদিবস। বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি বিশেষ উপলক্ষ হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের মূল লক্ষ্য ভিন্নভিন্ন রকম। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠা পাওয়াটি বেশি গুরুত্ব পায়।
’আন্তর্জাতিক নারীদিবস’ এর আদি নাম ছিল ‘আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারীদিবস’। এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। সেই মিছিলে চলে সরকারের লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন।
১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষথেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা।
১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ সালে খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবীজুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে।
নারীদিবস নিয়ে অনেক নারীপুরুষের মধ্যে হেয় মানসিকতা কাজ করে। এখন নারীপুরুষ সমান তালে কাঁধে কাঁধ রেখে চলছে বলে অনেকে নারীদিবসের গুরুত্বকে ম্লান করে দিতে চান। তবে নারীদিবসের মতো একটি পুরুষদিবসও আছে। মর্যাদা আর অধিকার আদায়ের প্রশ্নে এমন দিবসের সৃষ্টি। প্রতি বছর ১৯ নভেম্বর পৃথিবীর সত্তরটি দেশে এই দিনটি বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। প্রয়োজনের তাগিদেই নারীপুরুষের কণ্ঠ উচ্চকিত। কাজ করতে হবে নারী-পুরুষ সবাইকে মিলে। সমস্যা চিহ্নিত হোক শুধু মানুষ নাম বলে। সমাধান আসুক নারী-পুরুষের হাত ধরে।
তবে আজকে যেহেতু একটি বিশেষ দিন, তাই পৃথিবীর সকল নারীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কবির ভাষায় বলি, “বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।“
সূত্র: উইকিপিডিয়া
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন