নারীবাদ শব্দে কিছু মানুষের বিদ্বেষভাব

2 মতামত পাওয়া গেছে

প্রথম সর্বনাশের সূত্রই হচ্ছে মানুষের সৃষ্ট বিভিন্ন ধর্মগুলি! আর ধর্মের ভিত্তিই হচ্ছে ক্ষমতার রাজনীতি! যে ক্ষমতার বিন্যাসকরণ শুরুই হয়েছে নারীর উপর প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে! তাই পৃথিবীর সব ধর্মেই নারীর অবস্থান দ্বিতীয় লিঙ্গে ! সেখান থেকেই লড়াইটা শুরু করতে হয় নারীবাদী আন্দোলনগুলিকে ! ধর্মের এই নাগপাশ, সময়ের অগ্রগতির সাথে কতটা মুক্ত হচ্ছে সেটা বিতর্কের বিষয়! কিন্তু দেখার বিষয়, যুগ পরিবর্ত্তনের সাথে সাথে ধর্মের বাঁধন একটু একটু করে আলগা হলেও প্রভুত্বের অনুষঙ্গগুলি নতুন নতুন রূপে শাখাপ্রশাখা বিস্তার করতে থাকে সমাজ থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থার অলিতে গলিতে ! যার ধাক্কা খেতে হয় নারীকে আধুনিক জীবনের পরতে পরতে!

ঘরে বাইরে কর্মক্ষেত্রে সর্বত্র নারীর উপর প্রভুত্ব করার এই যে মানসিকতা আমাদের রক্তের ভিতরে নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের পুরুষত্বকে,এর থেকে মুক্ত হওয়ার মতো শিক্ষা আমাদের পরিবেশে আজও অপ্রতুল! তাই শুরু করতে হলে শুরু করতে হবে ঐ শিক্ষার বনিয়াদ থেকেই! সেখান থেকেই বিষবৃক্ষের শিকড় কাটার প্রস্তুতি নিতে হবে! আর এ’ দায়িত্ব নিতে হবে সেই নারীকেই! এই কাজে নারীকে নির্ভর করতে হবে নিজের আত্মপ্রত্যয়ের উপর ! পুরুষতন্ত্রের শিক্ষায় সাধন হবে না এই কাজ ! পুরুষতন্ত্রের বিপ্রতীপে নারীবাদের প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে পুরুষতন্ত্রের শিকড় কাটার শিক্ষার ভিত তৈরী কিন্তু অসম্ভব ! তাই অবাস্তব ! দুঃখের বিষয় নারীবাদী আন্দোলনগুলি এইখানে এসেই দিশা হারাচ্ছে ! নারীর জীবনবোধের পরিসরে নারীবাদ প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে সভাসমিতির মঞ্চে কিংবা গবেষণা গ্রন্থের সূচীতে নারীবাদের ঘোষণা কোনোদিনও সত্য হয়ে উঠবে না! কার্যকর হবে না সমাজ জীবনের কোনো স্তরেই! নারীবাদের মূলে যে দুটি বিষয়ের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন, সে দুটি হল, নারীর নিজের উপর আত্মনির্ভরতার দৃঢ়তা ! এবং পুরুষের প্রভুত্ব অস্বীকার করার প্রতিজ্ঞা ! পুরুষতন্ত্র এই ব্যাপারে বাধা দেবেই! কারণ পুরুষতন্ত্রের চরকায়, নারীর পুংনির্ভরতা ও পুংপ্রভুত্ব স্বীকারের তেল নিয়মিত যোগান বন্ধ করতে পারলেই পুরুষতন্ত্র বিকল হয়ে ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য ! তাই বাধা যখন প্রবল, প্রতিরোধের যুদ্ধও তখন তীব্র থেকে তীব্রতর করে তোলা দরকার !

আত্মনির্ভরতার পথে প্রথমেই অর্জন করতে হবে আত্মপ্রত্যয় ! আত্মপ্রত্যয় গড়ে ওঠে আত্মসমীক্ষা এবং চলমান অভিজ্ঞতার যুগলবন্দীতে ! সেইখানেই বিশ্বাসের ভরকেন্দ্রকে ধরে রাখলে দেখা যায় ঘরে বাইরে সর্বত্র নারীই কয়েক ধাপ এগিয়ে পাশের পুরুষটির থেকে! এই কয়েক ধাপের হিসেবটি, পুরুষের স্বীকৃতির মুখাপেক্ষী না থেকে নারী যদি নিজের দৈনন্দিন জীবনচর্চায় প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তবেই প্রাথমিক কাজটি শুরু করে দেওয়া যায় সার্বিক যুদ্ধের প্রস্তুতি স্বরূপ ! মনে রাখা দরকার যুদ্ধ পুরুষের বিরুদ্ধে নয় ! পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে ! এবং এটাও স্মরণে রাখতে হবে ব্যক্তি পুরুষ এই পুরুষতন্ত্রেরই ফসল! তাই সেই পুরুষকেও বিচ্ছিন্ন করতে হবে পুরুষতন্ত্র থেকে!


আপনার মতামত দিন

আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।