প্রযুক্তির এই সময়ে সবকিছুই প্রযুক্তির মত আপডেট হয়, সময়ের সাথে নতুন ভার্সন আসে। আধুনিক নাস্তিক্যবাদেরও সেরকম নাস্তিক্যবাদ ১.০ থেকে নাস্তিক্যবাদ ২.০ ভার্সনে আপডেটের সময় এসেছে ।
নাস্তিক্যবাদ নতুন কোন দর্শন নয়, চার্বাক, এপিকিউরাস, বৌদ্ধ দর্শন থেকে শুরু করে আধুনিক সময়ে ব্রাট্রান্ড রাসেল পর্যন্ত অনেক দার্শনিক নাস্তিক্যবাদের চর্চা করেছেন। কিন্তু একবিংস শতকের গোড়ার দিকে পাশ্চাত্যের কিছু বিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবী যে আক্রমনাত্মক নাস্তিক্যবাদ চালু করেন সেটাকে আমরা নাস্তিক্যবাদ ১.০ বলতে পারি।
সফটওয়্যার এর বেলায় যেমন মেজর, মাইনর, প্যাচ ( জোড়াতালি) ইত্যাদি নানা ধরণের আপডেট থাকে তেমনি আধুনিক নাস্তিক্যবাদের জন্য এটা একটা মেজর আপডেট, অনেকদিন ধরে নানা জোড়াতালি, মাইনর আপডেট চলছিল সেগুলোকে একত্রিত করে এখন নতুন ভার্সন চালু করার সময় এসেছে । বিশেষ করে এখন ‘জঙ্গীবাদী নাস্তিক্যবাদ’ ( militant atheism) থেকে সরে এসে অপরের চিন্তা,আচরণের প্রতি সহনশীল, মর্যাদাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীর সময় এসেছে। মানবেতিহাসে ধর্মচিন্তা কোন বিচ্ছিন্ন চিন্তা নয়, মানুষের ঐতিহাসিক অগ্রগতি, সমাজ চিন্তা, বিজ্ঞান, রাষ্ট্রনীতি সবকিছুর সাথে ধর্মীয় চিন্তা-চেতনা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ধর্মকে খারিজ করতে গিয়ে আমরা যাতে ধর্মের সাথে জড়িত এসব বিষয়কেও ছুঁড়ে ফেলে না দেই, স্নানের ময়লা পানির সাথে বাচ্চাটাকেও যাতে ফেলে না দেই সেটা নিশ্চিত করতে নাস্তিক্যবাদ ২.০ ভার্সন প্রচলন করা হয়।
নাস্তিক্যবাদ ২.০ এককথায় ধর্মকে খারিজ করে দেয় না। ধর্ম মাত্রেই খারাপ, ধর্মপালনকারী মাত্রেই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন এভাবে চিন্তা না করে ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে ধর্মকে দেখতে বলে।
নাস্তিক্যবাদ ১.০ এর উৎপত্তিঃ
একুশ শতকের প্রথম দিকে পাশ্চাত্য বিশেষ করে আমেরিকা এবং ন্যাটো বাহিনী দু’দুটি মুসলিম অধ্যূষিত দেশ ইরাক এবং আফগানিস্তানে আক্রমন চালায়। পাশ্চাত্যের সরকারগুলো ওয়ার অন টেররের ধুঁয়া তুলে ‘ওয়েপন্স অফ ম্যাস ডেস্ট্রাকশান’ এর মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে তারা এই অন্যায় যুদ্ধ চালিয়ে যায়। আজকে সবাই জানেন সম্পূর্ণ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ইরাক এবং আফগানিস্তানে যুদ্ধ চালিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়। ‘war is being conducted without transparency, without credibility and without competence’
ফ্রন্টলাইনে এসব যুদ্ধের পাশাপাশি পাশ্চাত্যের একাডেমিক অঙ্গনেও ( প্রক্সি ওয়ার) নাস্তিক্যবাদের প্রসার ঘটে। এসব ভোকাল নাস্তিকদের মধ্যে একটা বিষয় কমন ছিল, তারা অন্য ধর্মের ব্যাপারে যেমন ভাব পোষণ করুক না কেন তারা ছিল মারাত্মকভাবে মুসলিম বিদ্বেষী। একটু ভাল করে লক্ষ্য করলেই সেটা সচেতন কারো নজর এড়িয়ে যাবার উপায় নেই।
পাশ্চাত্যে নতুন করে যারা নাস্তিক্যবাদের প্রসার ঘটান তারা নিজেদের ‘জঙ্গীবাদী নাস্তিক’ বা ‘মিলিট্যান্ট এথেইস্ট’ বলে ঘোষণা দেন। এদেরকে “Four Horsemen of New Atheism” ও বলা হয়। অনলাইনে, অফলাইনে এদের অনেক অনুসারী থাকায় এদেরকে নব্য নাস্তিক্যবাদের চার খলিফাও বলা যায়। এরা হলেন ক্রিস্টোফার হিচেন্স, স্যাম হ্যারিস, ডেনিয়েল ডেনেট, এবং রিচার্ড ডকিন্স। এরমধ্যে হিচেন্স সরাসরি ইরাক আক্রমণ এবং বুশের মিথ্যাচারকে সমর্থন দেন। বাকি তিনজন বিজ্ঞানী, বিশেষ করে জীববিজ্ঞানী বা জীববিজ্ঞানের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত কগন্যাটিভ সায়েন্স, নিউরো সায়েন্স এসব বিষয়ের গবেষক।
একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে জীববিজ্ঞানে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়। যার ফলে জীন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ অনেক অজানাকে জানার সুযোগ পায়, সামনের দিকে গবেষণার, অজানাকে জানার আরো অনেক সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায়। জীববিজ্ঞান অন্যান্য বিজ্ঞান থেকে কিছুটা পৃথক। অন্যান্য বিজ্ঞান কোন একটা ব্যাপার কীভাবে ( How) ঘটছে সেটার ব্যাখ্যা দিতে পারে কিন্তু জীববিজ্ঞান সেল বায়োলজির মাধ্যমে কীভাবে ঘটছে (How) সেটার জবাব দেয়ার পাশাপাশি বিবর্তনবাদ দিয়ে কেন ( Why) সেটা ঘটছে তাও বলতে পারে। যেমন, পদার্থবিদ্যা বিগ-ব্যাং ঘটার পর থেকে ঘটনাবলির বিশ্লেষণ করতে পারে, কীভাবে পরিবর্তন হচ্ছে সেটা ব্যাখ্যা করতে পারে, কিন্তু কেন বিগ-ব্যাং হলো সেটার জবাব দেয়া পদার্থবিদ্যার আয়ত্ত্বের বাইরে।
জীববিজ্ঞানের এই সফলতার কারণে জীববিজ্ঞানী রিচার্ড হকিন্স, ডাক্তার স্যাম হ্যারিস এরা অতিরিক্ত কনফিডেন্স পেয়ে যান। একটা গন্ডীর মধ্যে থেকে জীববিজ্ঞানের সফলতার জোরে তারা ধর্মকে নাকচ করে দেন, আইল ডিঙ্গিয়ে ধর্ম, দর্শন ইত্যাদি নানা বিষয়ে তাদের অজ্ঞতার প্রকাশ করতে শুরু করেন। খুব শীঘ্রই তাদের অনেক অনুসারী জুটে যায়, এবং ইতিহাসে প্রথমবারের মত জঙ্গী নাস্তিক্যবাদের প্রসার ঘটে।
নাস্তিক্যবাদী চিন্তায় বিজ্ঞানবাদের প্রভাবঃ
এছাড়া বর্তমান সময়ের শিক্ষিত মানুষকে তাড়া করে ফিরছে এক ভুত, সে ভুতের নাম বিজ্ঞানবাদের (scientism) ভুত। বিজ্ঞানের জয় জয়াকারের এ যুগে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ ভুতের আবির্ভাব। বিজ্ঞানের গর্বে গর্বিত বিজ্ঞানী মনে করেন ধর্ম, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিদ্যা ইত্যাদি সবকিছুর ব্যাপারে সে তার মতামত দিতে পারবে। এটা খুবই স্বাভাবিক, সুসময়ে মানুষ এরকম আইল ডিঙ্গিয়ে ঘাস খেতে চায়। কিন্তু বিজ্ঞানীদের মনে রাখা উচিত এসকল বিষয় ইতিমধ্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করছে, এজন্য জ্ঞানের প্রায় সব শাখার পেছনেই বিজ্ঞান নামটা আছে। নতুন করে বিজ্ঞানীকে গিয়ে ঐসকল শাখার বিষয়বস্তুর উপরে ফোঁপর দালালি করে লোক হাসানোর দরকার নাই।
এ কাজ যে শুধু পাতি বিজ্ঞানীরা করছে তা নয়। আত্মম্ভরিতা, হামবড়া ভাবটা উপরদিক থেকেই চুঁইয়ে পড়ছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বিশিষ্ট ডাক্তার, পাশ্চাত্য যুদ্ধংদেহী নাস্তিক্যবাদের পান্ডা স্যাম হ্যারিসের কথা। ভদ্রলোক বিজ্ঞানের মোহে এমন মোহ মুদ্গার অবস্থায় আছেন যে তিনি দর্শনের নীতিশাস্ত্রকে বিজ্ঞান দিয়ে সরাতে চান, তার মতে ‘all-we-need-is-science’। ২০১০ সালে ‘বিজ্ঞান কিভাবে মানুষের মূল্যবোধ নির্ধারণ করতে পারে’ এ নিয়ে বই লিখে, লোক হাসিয়ে, ভালো একটা সমালোচনার মুখে পড়ে ভদ্রলোক আর ওমুখো হননি। তার বইয়ের শিরোনামঃ ” The Moral Landscape: How Science Can Determine Human Values” । একটা মানুষ কি পরিমান নির্বোধ হলে বিজ্ঞান দিয়ে মানুষের মূল্যবোধ মাপতে যায়।
একটা সত্য ঘটনা/ তথ্য এবং মূল্যবোধের মধ্যে ধারণাগত পার্থক্য আছে। কোন একটা তথ্য নিয়ে আমরা যৌক্তিক গবেষণা করতে পারি, কিন্তু মূল্যবোধকে নিয়ে তা পারি না। কিন্তু হ্যারিস সাহেবের মতে বিজ্ঞানের সাহায্যে আমরা সেটা পারি, সঠিক মূল্যবোধ হলো সেটা যা মানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন করে। কিন্তু আমরা কিভাবে বুঝব, কোনটা নীতিগতভাবে সঠিক কাজ? হ্যারিসের মতে, আমাদের সচেতন মানসিক অবস্থায় যে কাজ আমাদের সর্বোচ্চ কল্যান সাধন করে সেটাই নীতিগতভাবে সঠিক কাজ।
হ্যারিস আসলে আমাদের নতুন কিছু বলতে পারেননি, তার ‘নীতিশাস্ত্রের জমিন’ আমেরিকান প্রয়োগবাদের মাঠের কোনায় আশ্রয় নেয়। তার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য খারাপ ছিল এটা বলা যাবে না, প্রয়োগবাদীদের ‘greatest happiness of the greatest numbers’ প্রতিষ্ঠা করাই তার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু প্রয়োগবাদীদের যেসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল হ্যারিসের কাছেও সেসকল প্রশ্নের কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। যদি আমরা ধরেও নেই যে বিজ্ঞানের দ্বারা মূল্যবোধ পরিমাপ করা যাবে,তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায়, কিভাবে আমরা দুজন ভিন্ন মানুষের সুখাবস্থা/কল্যানের তুলনা করব? নাকি আমরা একটা সর্বমোট কল্যানাবস্থার কথা ভাবব? যদি সচেতন মানুষের মানসিক অবস্থাই শুধু বিবেচনা করতে হয়, তাহলে ঘুমন্ত অবস্থায় কাউকে মেরে ফেললে কি কোন দোষ হবে? বর্তমানের সুখাবস্থার সাথে কিভাবে ভবিষ্যতের সুখাবস্থার তুলনা করব?
বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংও এ দোষে দুষ্টঃ গুগলের একটা কনফারেন্সে তিনি বলেছেন, “philosophy is dead”। ভদ্রলোক অনেকদিন যাবত এরকম বলে আসছিলেন। এটা ঠিক যে,সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে দার্শনিকেরা তাল মিলিয়ে চলতে পারেননি। তাই বলে এতবড় দাবী করা আত্মম্ভরিতা ছাড়া আর কিছু নয়। মূলতঃ তার কথা থেকে আস্কারা পেয়েই হালের পাতি বিজ্ঞানীরা বাড়াবাড়ি করছে। দর্শন যে এখনো ফুরিয়ে যায়নি এটা হকিং এর বিরোধীতা থেকেই বুঝা যায়, কোন দার্শনিক হয়ত পদার্থবিদ্যা নিয়ে তার হামবড়া ভাবে পানি ঢেলে দিয়েছিল। অথবা নিজেই বুঝতে পারছেন কার সাথে বিরোধ লাগতে পারে,তাই আগে থেকে সাঙ্গোপাঙ্গ মিলে প্রি- এম্পটিভ এটাক শুরু করে দিয়েছে।
দর্শন নিয়ে আরেকজন বিজ্ঞানী বলছেন, দর্শন শাস্ত্রের আর কিছু দেয়ার নেই। ওরা এখন শুধু ভাষা নিয়ে গবেষণা করবে। এটা ঠিক যে বিষয় হিসেবে দর্শনের আগের জৌলুস নেই,তারপরেও দর্শন এখনো মানুষকে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছে। প্রত্যেক মানুষের একটা দার্শনিক অবস্থান আছে। দর্শন শাস্ত্র ভাষা দর্শনে আকৃষ্ট হবার পেছনেও ঐতিহাসিক পটভূমি আছে। আর ভাষা দর্শনই এখনকার একমাত্র দর্শন নয়।
বছর কয়েক আগে এক সাক্ষাতকারে নোম চমস্কি বলেছিলেন,
“প্রকৃতির কিছু ব্যাপার এত জটিল যে তা নিয়ে গবেষণা করা যায় না। যেমন, পদার্থবিদ্যা খুব সহজ প্রশ্নের সমাধান করার চেষ্টা করে। পরমাণু থেকে অণুর আকার একটু বড় হয়ে গেলে তারা সেটা রসায়নবিদের হাতে সমর্পণ করে। অণুর ধর্মাবলী বেশ জটিল হয়ে গেলে রসায়নবিদ সেটা দিয়ে দেয় জীববিজ্ঞানীর হাতে। সমস্যা জীববিজ্ঞানীর আয়ত্ত্বের বাইরে চলে গেলে তখন সেটা যায় মনোবিজ্ঞানীদের এক্তিয়ারে, এভাবে শেষ পর্যন্ত সব সমস্যা গিয়ে পৌঁছায় দার্শনিক, ঐতিহাসিক বা ঔপন্যাসিকের কাছে। একটা সিস্টেম যত জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে ততই সেটা থেকে গভীর, এবং তাৎপর্যপূর্ণ গুণাবলী বের করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ে।”
বর্তমানে ইরাক, আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ, আগের মত জঙ্গী হামলার খবরও শোনা যাচ্ছে না। নাস্তিক্যবাদের প্রয়োজনীয়তাও কিছুটা ফুরিয়ে এসেছে। নব্য নাস্তিক্যবাদের পান্ডারাও এখন নানাভাবে পরাস্ত হয়ে ধরাশায়ী। কিন্তু তাদের প্রচারণার কারণে দেশে-বিদেশে তাদের অনেক অনুসারীরা বিভিন্ন ভাষায় ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে অনেক ক্ষতি করে ফেলেছেন। অনেকেই পাশ্চাত্যের এসব বুদ্ধিজীবীদের রাজনৈতিক দখলদারীত্ব, অপরিপক্ক দার্শনিক চিন্তা-ভাবনাকে ‘আউট অফ কনটেক্সট’ নিজেদের সমাজে চালু করার ফুরসত পেয়ে নিজেকে প্রগতিশীল মনে করেছেন। এতে করে সমাজে বিভেদ, হানাহানির পরিমাণ বেড়েছে।
পাশ্চাত্যের বুদ্ধিজীবীদের যুদ্ধংদেহী নাস্তিক্যবাদ যেটাকে আমরা আধুনিক নাস্তিক্যবাদ ১.০ বলছি সেটা এখন অনেক দূর্বল হয়ে পড়েছে। তবে তাদের এই হঠকারিতার জবাব পাশ্চাত্য বুদ্ধিজীবীদের নিজেদের ভেতর থেকেই শুরু হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে আরো দুজন বুদ্ধিজীবী এই বিষয়ে মতামত দিয়েছেন, প্রথমজন এলেইন দ্য বতোঁ, ব্রিটিশ দার্শনিক, ‘রিলিজন ফর এথেইস্ট’ বইয়ের লেখক। দ্বিতীয় জন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জোনাথন হাইড।
অধ্যাপক জোনাথন হাইড জঙ্গীবাদী নাস্তিক্যবাদের কঠোর সমালোচনা করেন। তার মতে বিজ্ঞানীরা ধর্মকে ভুল বুঝছেন এবং একে খাটো করে দেখছেন।
‘scientific community at that time . . . was really underestimating and misunderstanding religion’
নৈতিকতা নিয়ে হ্যারিসের যুক্তি শুনে তিনি বলেন,
“Reading Harris is like watching professional wrestling or the Harlem Globetrotters. It’s great fun, with lots of acrobatics, but it must not be mistaken for an actual contest. If we want to stage a fair fight between religious and secular moralities, we can’t eliminate one by definition before the match begins.”
দার্শনিক এলেইন বতোঁ নাস্তিক্যবাদ ২.০ ধারণাটির প্রচার করেন।
তাঁর মতে ধর্মের সবকিছুই খারাপ নয়, অনেকে ধর্মের রিচুয়াল, উৎসব এসব পছন্দ করে কিন্তু ধর্মের কট্টর মতামত পছন্দ করে না। বর্তমান সময় পর্যন্ত এই মানুষগুলোর জন্য কোন চয়েস ছিল না, তাদেরকে হয় ধর্মের সবকিছু গ্রহণ করতে হবে অথবা বাজার অর্থনীতির কাছে নিজের আধ্যাত্মিক সত্ত্বাকে বিকিয়ে দিতে হবে। ‘the secular world is full of holes we have secularized badly’। নাস্তিক্যবাদ ২.০ ধর্মের প্রতি সম্মান বজায় রেখে এর থেকে যা কিছু ভালো সেটা গ্রহণ করার মাধ্যমে এদের জন্য নতুন সমাধান নিয়ে এসেছে।
ধর্ম থেকে আমরা ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক শিক্ষা ছাড়াও আরো অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি।
শিক্ষাঃ শিক্ষা এমন একটা বিষয় যাতে সেক্যুলাররা খুব গুরুত্ব দেয়। সমাজকে উন্নত করতে হলে নাগরিকদের শিক্ষিত করতে হবে এটা সবাই বিশ্বাস করেন। সেজন্য শিক্ষাখাতে আমরা অনেক টাকা-পয়সা খরচ করি। আমরা মনে করি শিক্ষা শুধু বিভিন্ন স্কিল বাড়াবে না শিক্ষার দ্বারা সুনাগরিক, ভালো মানুষও তৈরি করা যাবে।
উনিশ শতকে যখন ইওরোপে গীর্জায় যাবার হার কমে যায়, তখন মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, মানুষের নৈতিক শিক্ষার কী হবে? তারা কোথায় সেটা পাবে? তখন উত্তর দেয়া হয়, সংস্কৃতির চর্চা থেকে মানুষ নীতি-নৈতিকতা, সহনশীলতা এগুলোর শিক্ষা নিবে। নাটক, দর্শন, উপন্যাসে আগেকার দিনের গসপেলের সত্যগুলোকে খুঁজে পাওয়া যাবে। এভাবে সংস্কৃতির চর্চা দিয়ে ধর্মীয় পুস্তককে প্রতিস্থাপিত করা হয়।
সারমন বা ওয়াজ-নসিহতঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কখনোই ভাবে না আমাদের কোন সাহায্য-সহযোগীতার প্রয়োজন আছে। তারা আমাদের যুক্তিশীল প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হিসেবে দেখে। তাদের মতে আমাদের দরকার ড্যাটা, তথ্য, এর বাইরে আমাদের কোন রকম সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। এই ব্যাপারে ধর্ম সম্পূর্ণ ভিন্ন জায়গা থেকে শুরু করে, প্রত্যেক ধর্মেই দেখা যায় অনুসারীদের চিল্ড্রেন বা বৎস্য সম্বোধন করা হয়। ধর্মীয় ট্রাডিশনে ধরে নেয়া হয় যে আমাদের প্রত্যেকের নানা ধরণের সাহায্য-সহযোগীতা দরকার, আমরা জাস্ট কোনরকমে সবকিছুর সাথে তাল মিলিয়ে টিকে আছি, কিন্তু সবারই জীবনে বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য, কাউন্সেলিং দরকার। আজকে আধুনিক মানুষকে সারমন শোনার কথা বললে সে প্রতিবাদ করবে। কিন্তু লেকচারের সাথে সারমনের পার্থক্য হলো,
‘A sermon wants to change your life and a lecture wants to give you a bit of information. The tradition of sermonizing is hugely valuable because we are in need of guidance, morality and consolation and religions know that.’
জপ-তপ, মন্ত্রোচ্চারণঃ
আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে একবার কিছু বলা হলে সেটা সারাজীবনের জন্য তাদের মনে থাকবে। যেমন, ২০ বছর বয়সে প্লেটো পড়ানো হলে ৪০ বছর বয়সের সেই শিক্ষা কাজে লাগানোর সময় ঠিকই মনে করতে পারবে। ধর্ম এই ব্যাপারে নাছোড়বান্দা, ধর্মীয় প্রথামতে এটা ননসেন্স। প্রতিদিন বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় শিক্ষা, মন্ত্র, জিকির, জপ, তপ এগুলো চালিয়ে যেতে হবে, তাহলেই সেগুলো মনে থাকবে এবং জীবন চলার পথে কাজে আসবে।
আধুনিক সেক্যুলার সমাজ মানুষকে আধ্যাত্মিকভাবে পঙ্গু বানিয়ে ফেলে, যাপিত জীবন তার ভেতরে একটা ছিদ্র তৈরি করে যেটা কোন কিছু দিয়ে পূরণ হয় না। ফলে সমাজে ইভাঞ্জেলিক্যাল গুরুদের চাহিদা তৈরি হয়। মানুষ তাদের কাছে নানা ধরণের মানসিক সহায়তা, শক্তির জন্য ছুটে যায়।
কোন আইডিয়াকে ভালোভাবে মনের মধ্যে প্রোথিত করার জন্য চ্যান্টিং, জপ, রিপিটিশান খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা উপায়। মনোবিজ্ঞানী, সেলফ-হেল্প গুরুরা ধর্মীয় প্রথা থেকে সেটা ধার করে সেক্যুলার চর্চা হিসেবে চালু করেছেন। যে কোন ধর্মের মানুষ এগুলো অনুসরণ করতে পারবে।
‘Everyday in everyway, I am getting better and better’. – Émile Coué
সময়ঃ ধর্ম সময়কে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাজায়। বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা উৎসবের মাধ্যমে অনুসারীদের একটা ক্যালেন্ডার দেয়। ঋতু পরিবর্তন তখন ভিন্ন একটা মিনিং নিয়ে হাজির হয়।
রিচুয়ালঃ বিভিন্ন প্রথা পালনের মাধ্যমে দেহ-মনের সংযোগের যে ব্যবস্থা ধর্মে আছে সেটা আধুনিক সেক্যুলার জীবনে নাই। যেমন, ব্যাপ্টিজম, স্নান ইত্যাদির মাধ্যমে ক্লিনজিং এর প্রক্রিয়া তাতে দেহ ও মনের যে সংযোগ হয় সেটা অন্য কোনভাবে সম্ভব হয় না।
চারু শিল্পঃ আধুনিক সমাজে শিল্পের মূল্য উদ্ধৃত্ত সম্পত্তির মত, জাদুঘরে বা ব্যক্তিগত কালেকশানে সেটা থাকবে। জাদুঘর হলো আধুনিক গীর্জা এবং বেশিরভাগ শিল্পকর্ম দূর্বোধ্য। কিন্তু ধর্মীয় প্রথায় শিল্পের ব্যবহার অনেক প্রাচীন। বর্তমানে আর্ট সম্পর্কে আমাদের অনেক বদ্ধমূল ধারণা আছে যেগুলো সঠিক নয় যেমন, ‘আর্ট ফর আর্টস সেইক’ অথবা ‘art shouldn’t explain itself that artists shouldn’t say what they’re up to because if they said it they might destroy the spell’। ধর্মীয় প্রথা এই বিষয়ে অনেক পরিষ্কার, ধর্মের কাছে শিল্পের মূল্য আছে কারণ শিল্প বলে দেয় কোনটা ভালবাসতে হবে, এবং কোনটা ভয় পেতে হবে। গীর্জা বা মন্দিরের শিল্পকর্ম দেখে একজন ধার্মিক তার ধর্মীয় প্রপাগান্ডায় অবগাহন করবে, যেটা তার মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলবে।
একইভাবে ধর্মচর্চার মধ্যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, জ্ঞানচর্চার পদ্ধতি, বাগ্মীতার চর্চা, নানা ধ্যান-ধারণার বিস্তার, তীর্থযাত্রা (পর্যটন) ইত্যাদি নানা বিষয় আছে যার থেকে সেক্যুলার বিশ্ব অনেক কিছু জানতে পারে।
পাশ্চাত্যের দ্বারা মিথ্যা যুদ্ধ, ধর্মের নামে অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার ফলশ্রুতিতে পাশ্চাত্যের একাডেমিক সার্কেলে যুদ্ধংদেহী নাস্তিক্যবাদের প্রসার ঘটে। এরা ধর্মের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে (“religion poisons everything”-Hitchens) ইতোমধ্যে অনেক ক্ষতি করেছে। তাদের মূল বক্তব্য, ধর্মীয় দাবীগুলো খারিজ করা থেকে শুরু করে ধর্ম মানুষের জন্য ক্ষতিকর এটা প্রমাণ করা। কিন্তু তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়। জঙ্গীবাদী নাস্তিকেরা মানব জীবনের নৈতিকতা, মূল্যবোধকে জীববিজ্ঞান দিয়ে পরিমাপের অপচেষ্টা করে ক্ষান্ত হন।
“জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন,
জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন।”
পাশ্চাত্যের সেক্যুলার অংশ থেকেই এদের বিরোধীতা শুরু হয় যেটা খুবই আশাব্যঞ্জক। অনেকেই তাদের চিন্তা-চেতনার ত্রুটি ধরিয়ে দেন। নব্য নাস্তিকেরা দর্শনের ব্যাপারে অজ্ঞ হয়েও নীতি-নৈতিকতা নিয়ে তাদের অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এতদিনে হয়ত তারা বুঝতে পেরছেন বিজ্ঞান দিয়ে মানব জীবনের সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাছাড়া বিশ্বাস মাত্রেই খারাপ কিছু নয়। বিশ্বাস ছাড়া ভাষার মাধ্যমে যোগাযোগ অসম্ভব। বিজ্ঞানের সবচেয়ে বিশুদ্ধ শাখা যেই গণিত সেটাও কতগুলো বিশ্বাসের ( জ্যামিতির স্বীকার্য, স্বতঃসিদ্ধ) উপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে জীববিজ্ঞান তো অনেক দূরের বিষয়।
‘বিদ্যা মানুষকে বিনয়ী করে’। যেকোন জ্ঞানী-গুনী মানুষের সেজন্য বিনয় দরকার, হিউমিলিটি দরকার। ধর্ম মানুষের ঐতিহাসিক ডেভেলপমেন্টের অন্যতম প্রধান উপাদান। এর সাথে শিল্প-সাহিত্য, দর্শন, ওরাটরি, জ্ঞান চর্চা, নীতি-নৈতিকত, মানসিক, সামাজিক অনেক কিছু জড়িত। এক কথায় ধর্মকে নাকচ করে দিয়ে, ধার্মিকের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে কারো কোন লাভ নেই। ধর্মীয় প্রথা থেকে সেক্যুলারদের অনেক কিছু শেখার আছে। নাস্তিক্যবাদ অনেক প্রাচীন দর্শন, এটা আগেও ছিল কিন্তু তার সাথে জঙ্গীবাদী ঘৃণা ছিল না। সেজন্য আধুনিক সময়ের প্রভাবশালী ঘৃণা ছড়ানো নাস্তিক্যবাদের বিবর্তনের সময় এসেছে। ঘৃণা দিয়ে ঘৃণাকে জয় করা যায় না। নতুন নাস্তিক্যবাদ ২.০ আমাদের ধর্মকে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝতে শেখাবে, সহনশীল হতে শেখাবে। যুক্তি, মানবিকতা, ইতিহাস, দর্শন এবং সর্বোপরি মানব জীবনে ধর্মীয় প্রথার ভালো উপাদানগুলোর প্রয়োজনীয়তা নতুন নাস্তিকদের দিক নির্দেশনা দিবে।
জুন ১২, ২০২৩; ৫:৪২ অপরাহ্ন
Seems you know everything. From my observation I think Religion man made, so we can see different religions and differen type of Gods. PEOPLE from Every religion say their God is true. Veson 2 is better than verson 1