০
১২০১ বার পঠিত
নতুন বছরে নতুন আশার কথা লিখবো, এমনটাই ইচ্ছে ছিলো।
বড় মেয়ে অনেকদিন ধরেই আমার লেখার পাঠক। ছোট মেয়ে ইদানিং গুগুল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে আমার লেখা পড়ার চেষ্টা করছে। সেদিন মতামত দিলো, ‘আম্মুনি, তোমার লেখাগুলো খুব Deep and often depressing”। ছোটজন বড় কঠিন সমালোচক। তবে কথা সত্যি। আমার অধিকাংশ লেখাই সোশ্যাল ইস্যু নিয়ে, তাই ডিপ্রেসিং হওয়াটা চাইলেও এড়ানো মুশকিল।
পুরনো বছরের শেষের দিক থেকে বছরের শুরু পর্যন্ত খুব উল্লেখ করার মতো তেমন কোন ভালো ঘটনা খুঁজে পাচ্ছি না। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে আঙুলগুলোকে সংযত রাখলাম। লিখবো না! লিখবো না! পজেটিভ কিছু দিয়েই বছর শুরু করবো।
আর পারলাম না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বন্ধুর বাসায় পড়তে যাবার পথে ধর্ষিত, এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে। অবশেষে আমার সংযমের মুখে ছাই পড়লো। গোল্লায় যাক পজিটিভিটি। আর যারা বড় লেখা পড়তে ভয় পান, তারাও দূরে থাকেন। অবোধের প্যাঁচাল একটু লম্বাই হয়।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, প্রতিদিনই তো এমন অনেক ঘটনা ঘটে, তখন কোথায় ছিলেন আপনি? উত্তরটা হলো যেখানে ছিলাম, ঠিক সেখানটাতেই আছি। প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনাই আমাকে এলোমেলো করে দেয়। তবে কিছু বিষয় আছে, যেগুলো little closer to your heart. আজ থেকে অনেক বছর আগে ওই নাম না জানা মেয়েটা ছিলাম আমি। ইউনিভার্সিটি হল থেকে কত শতবার ভার্সিটি বাস অথবা পাবলিক বাস নিয়ে বন্ধুর বাসায় পড়তে গেছি, আত্নীয়-স্বজনের বাসায় ঘুরতে গেছি। শুধু আমি নই, হোস্টেলে থাকা হাজারো মেয়ের দৈনন্দিন রুটিন এটি। শুধু বলবো আমরা ওই মেয়েটার চেয়ে খানিকটা ভাগ্যবান ছিলাম। তাই ওই লাঞ্ছিত মেয়েটিকে বোঝা আমার জন্য খুব সহজ। গত কয়েকবছরে বাংলাদেশে কিছু মহামারী শুরু হয়েছে- ধর্ষণ তার মধ্যে অন্যতম। প্রশ্ন হলো ধর্ষণ রোধে আমরা কী করেছি?
ফলাফল-ধর্ষককূলের পোয়াবারো। ছাড় পাচ্ছে না কেউই- কী আটমাস, কী আট বছর কিংবা আশি বছর। সশরীরে না পারলে চোখ দিয়ে ধর্ষণ চলছে। সেটাও না পারলে চলছে অনলাইনে ধর্ষণ। মাঝে মাঝে অনলাইনে কিছু মানুষের মন্তব্য দেখে প্রোফাইল চেক করার লোভ সামলাতে পারি না। ওমা! ওমা! সবাই তো বেশ হাই প্রোফাইল পেশাজীবি আবার দারুণ সংসারীও। কেউ কেউ কন্যা সন্তানের বাবাও। প্রোফাইলে বেশ উচ্চমার্গীয় ভাব ধরা কোট! ব্রাভো! কোনটা মুখ আর কোনটা মুখোশ বোঝা দায়।
তবে উপায় কী?
উপায় একটাই-প্রতিরোধ।
নিজের সুরক্ষার দায় যখন নিজেরই, তবে প্রক্রিয়া নির্ধারণের স্বাধীনতাও আপনার। প্রথম সিদ্ধান্ত এই পৃথিবীতে সন্তানকে আনবেন কী না? যদি সিদ্ধান্ত হয় সন্তান নেবার, ঠিক যেদিন সন্তানকে গর্ভে ধারণ করবেন, জানবেন যুদ্ধটা সেদিন থেকেই শুরু হয়ে গেলো। আমার কথা শুনতে হয়তো অনেকটা সিনিক্যাল শোনাবে, তবুও শুনুন।
১) সন্তান জন্ম দেবার পর কার সাথে থাকবে, সেটার সিদ্ধান্ত আজই নিন। যার কাছেই থাকুক, কোনভাবেই আপনার গার্ড ডাউন করবেন না।
২) সন্তান একটু বোঝার বয়সে এলে গুড টাচ, ব্যাড টাচ নিয়ে কথা বলুন- এটা ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
৩) সন্তানের সাথে সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ রাখুন যেন সে অস্বস্তিকর যে কোন বিষয় আপনার সাথে শেয়ার করতে দ্বিধা না করে।
৪) পার্সোনাল স্পেস বিষয়টি ছেলেমেয়ে দু’জনকেই বোঝানোর চেষ্টা করুন। যতই কাছের মানুষ হোক না কেন, অনুমতি ছাড়া কারও স্পেস ইনভেড করার অধিকার কারও নেই।
৫) আজাইরা রাজকন্যা রাজপুত্রের গল্পগুলো বলা বন্ধ করুন। ঠাট্টার ছলে হলেও মেয়েদের মাথায় ঢোকানো বন্ধ করুন, যে বিয়ে হচ্ছে তাদের আল্টিমেট গোওল। সেজেগুজে বড়লোকের সাথে বিয়ে বসাই তাদের ধ্যানজ্ঞান নয়। সে নিজে যদি কোন স্বপ্ন দেখে থাকে, সেই স্বপ্ন পূরণের দায়টাও তার। এতে ফুলের বাগানে সাপ ঢোকার সম্ভাবনাটাও কম থাকে।
৬) ছেলে সন্তানদের শিক্ষা দিন মেয়েদের যেন তারা অন্তত তাদের থেকে ইনফেরিয়র জেনে বড় না হয়। এতে তাদের কন্ট্রোলিং মনোভাবটা তৈরী হবে না।
৭) পিরিয়ড, পিউবার্টি, সেক্স; এগুলো নিয়ে নিজে পড়াশুনা করুন এবং সন্তানের উপযোগী করে তাকে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করুন। এতে অন্তত সমবয়সী বন্ধু, অ্যাডাল্টসাইট আর প্লেবয় ম্যাগাজিন থেকে ভুলভাল শেখাটা রোধ করতে পারবেন।
৮) ছেলেমেয়ে উভয়কেই পারলে সেল্ফ ডিফেন্স শেখান। এগুলো প্রতিরক্ষার পাশাপাশি অনেক পজিটিভ থিংকিং এবং নিয়মানুবর্তিতা শেখায়। সর্বোপরি-
৯) বাবারা জাম্বু আর মায়েরা শাবানার ভূমিকা থেকে বের হোন। প্রথমক্ষেত্রে কন্ট্রোলিং আর দ্বিতীয়ক্ষেত্রে সব মুখ বুজে সয়ে যাবো, দুটো ভুমিকাই আপনার সন্তানের জন্য ক্ষতিকর। মনে রাখবেন আপনি খেয়াল না করলেও, আপনাদের সন্তান কিন্তু আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ লক্ষ করছে।
আগেই বলেছি, লেখাটি একটু Cynical মনে হতেই পারে। কিন্তু কিছু করার নাই। দেশে এখন ধর্ষণ নিয়ে জরুরী অবস্থা চলছে। জরুরী অবস্থায় স্বাভাবিক আচরণ বা চিন্তা ভাবনা কোনটাই করা সম্ভব না।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন