০
৬৫৩ বার পঠিত
নেন এইবার ধরা খাইছে বাংলাদেশের কিংবদন্তী বাউল শাহ আব্দুল করিম। হ্যার গাওয়া কলঙ্কিনী রাধা গানটা ব্যবহার হইছিলো নেটফ্লিক্স প্ল্যাটফরমের মুক্তি পাওয়া ছবি ‘বুলবুলে’। এইখানে খ্যাপছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রগতিশীলরা। বুঝলেন নাতো হিন্দুত্ববাদী আবার প্রগতিশীল হয় ক্যামনে। তয় বুঝাই, এই যে আমাগো দেশে হোলি খেইলা আইসা যারা কুরবানির ঈদরে কয় সাম্প্রদায়িক, হ্যাই রকম প্রগতিশীল আর কী। যারা ইউরোপ-অ্যামেরিকায় গিয়া বিফ ছাড়া কিছু খায় না, দেশে কুরবানির সময় ‘পশু হত্যা’ নিয়া রচনা লেখে এই রকম প্রগতিশীলরাই সেইখানে খ্যাইপা উঠছে। যেই সেই খ্যাপা না, রীতিমত ‘ক্যাম্পেইন’ কইরা খ্যাপা। ফিল্মের প্রযোজক আনুষ্কা শর্মার বারোটা বাজলো বইলা।
অখন ক্যাম্পেইন কইরা খ্যাপার ব্যাখ্যা দেই। দেখবেন আমাগো আম কথার মইধ্যে এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করি, যা ধরলে অনেক কিছু না ধরলে কিছুই না। ধরলে জরি, না ধরলে খড়ি, এমুনডা। পুরান ঢাকায় কথার মইধ্যে হালা, হালার পু, মামদার পুত কমন বিষয়। এইডারে কেউ গালিগালাজ হিসাবে নেয় না, তয় কেউ যদি নিয়া ফালায় তয় ভেজাল। ভাষা সংস্কারের নামে কেউ যদি এইসব কথাগুলান পুরান ঢাকার ভাষা থন তুইলা দিতে চায় এবং এর লাইগা চোঙ্গা ফুঁকায় তইলেই সেইটা ক্যাম্পেইন। আর এই ক্যাম্পেইনের খবর দিছে স্বয়ং বিবিসি। তয় বুইঝা দেখেন।
রাধা’রে কেডায় ‘কলঙ্কিনী’ কইলো। কইলো তার সমাজ। এইডা যারা রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ে পড়ছেন, পদাবলী পড়ছেন তারা সক্কলেই জানেন। সবচে বড় কথা হইল, এই গানডা রাধা রমণ দত্তের লেখা। ভ্রমর কইও গিয়া গান শুনছেন না, হ্যাই রাধা রমণের গান। হ্যাও বাউল। হ্যাইডাও আবার জন্মসূত্রে। অথচ দোষ পড়লো গিয়া শাহ আব্দুল করিমের ঘাড়ে। ক্যান পড়লো, তার নামের পিছে ‘পাধ্যায়’ তো নাই-ই। দাস, দত্তও নাই। তাই পড়লো। এইগুলান থাকলে তো দেব-দেবীরে গাইলাইছেন হ্যাই কথা কওন যাইবো না। বুঝলেন কিনা।
আমাগো কথিত ‘সেক্যুলার’রা যেমুন ঠিকমত আব্দুল করিম না পইড়া, না জাইনাই আব্দুল করিমরে লইয়া অজ্ঞান হইছে, ভারতেও তেমুনি। হ্যারাও সম্ভবত রাধা রমণ শুনে নাই নয় পদাবলীর বর্ণনা পড়ে নাই। হ্যাই বর্ণনা পড়লে এমুনডা হওনের কথা না। কৃষ্ণরে ‘হারামজাদা’ কইছে হ্যাই সমাজের লোকজনই। রাধা রমণ বা আব্দুল করিমগো মতন বাউলরা সমাজের কওনডার উপরই ভর কইরা গান বাঁধছে। হ্যাইডাই হয়া গ্যাছে দোষ। বোম্বাইয়া মাইনে হালের মুম্বাইয়া থন শুরু কইরা পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্তও প্রতিবাদের ঢেউ উইঠা গ্যাছে।
তয় এই ঢেউ বাংলাদেশে আইলে মাইনকার চিপায় পড়বো আমাগো চাপা বাইরানি ‘সেক্যুলার’গণ। যারা বাউল শাহ আব্দুল করিম কইতে আতিশয্যে তিনবার কইরা অজ্ঞান হইয়া যায়। হ্যাই আব্দুল করিমই অহন ‘হেটার্স’ হিসাবে আলাপের বিষয় হইয়া উঠছেন। চিন্তা করছেন, যেই মরমী সাধক শাহ আব্দুল করিমরে এতদিন ‘সেক্যুলার’ আইকন বানাইলেন। সেই বাউলগো লইয়া বিপ্লব করতে চাইলেন, হ্যাই আব্দুল করিমরেও অহন ‘হেটার্স’ কয়। কয় তিনি দেব-দেবীগো গালিগালাজ করছেন। যাই কই, আর আমাগো ‘সেক্যুলার’রাই বা যায় কোনহানে!
বাউলগো গানে চিন্তায় রাধা-কৃষ্ণ আউগাইয়া আছে। এতে কুনো দ্বিধা নাই। তাগো গানে-কবিতায় রাধা-কৃষ্ণের বর্ণনা থাকবো এইডা কমন। বিশেষ কইরা বৈষ্ণব সম্প্রদায় ধর্মেরই একটা অংশ। বাউল বিষয়টা বৈষ্ণব থাইকাই আসা। আর বৈষ্ণবগো কামই রাধা-কৃষ্ণের প্রেমরে সামনে রাইখা মানব প্রেমের কথা কওন। আর হ্যাইডা কইতে গিয়াই তারা তারা রাধা-কৃষ্ণের পিরিতি ও তার বাধা লইয়া কথা কয়। হ্যাতে যে সমাজ এই পিরিতিতে বাধ সাধছিলো হ্যাগো কথাতো আইবোই, হ্যাগো ভাষা তো উচ্চারিত হইবোই, অ্যাইডা দোষের কী! হ্যাইডা, রাধা রমণ কইলেই কী শাহ আব্দুল করিম কইলেই বা কী!
যাউক গা, দোষ ধরলে তো কতরকম দোষই ধরন যায়। বাঘের পানি ঘোলা করনের গপ্পটা মনে আছে তো। ওই যে, তুই না করলে তোর দাদায় করছে কইয়াই গলায় কামুড়। হ্যাই রকম গলায় কামুড়ের চিন্তা থাকলে সব কিছুতেই ধইরা বহন যায়। মাইনে হইলো, চিন্তাটাই যদি থাকে ‘ধরুম’ তয় আর ছাড়নের রাস্তা নাই। আমাগো দেশের কিছু কিছু পাবলিকের অবস্থাও তেমুন, খালি থাকে ধরণের ধান্ধায়। ধান্ধা কেন কইলাম এইডা জিগাইতে পারেন, তাই কই। তার আগে হিটলাররে লইয়া গপ্পটা কইয়া লই।
হিটলার একবার একশ ইহুদিরে বিনা কারণে খতম করলো। সাথে একটা কুত্তারেও মাইরা ফালাইলো। হিটলারের কাছের একজন কইলেন, স্যার মানুষ মারলেন বুঝলাম, কুত্তাটারে কেন মারলেন বুঝলাম না। হিটলার কইলো, দ্যাহো তুমি মানুষগুলার থিকা কুত্তাটারে বেশি গুরুত্ব দিলা, কুত্তাটারে এই জন্যেই মারছি। মানুষ কুত্তাটারে লইয়া আলাপ পারবো বেশি, একশ মানুষের মরণটা গুরুত্ব পাইবো কম। সাক্ষাত প্রমান দিয়া দেই। এই যে দেখেন, বুড়িগঙ্গায় লঞ্চ ডুইবা ৩৪ জন মানুষ মইরা গেলো’ হ্যাইডার থাইকা কথা বেশি হইলো পানির তলে ১৩ ঘন্টা ক্যামনে একজন বাঁইচা রইলো হ্যাইডা নিয়া। গণমাইধ্যমের আলাপও হ্যাইডাই। বুঝলেন তো হিটলার কেন কুত্তাটারে মারছিলো। কুত্তা মারাটা আছিল হিটলারের চালাকি, আর ধান্ধাবাজগো ধান্ধা। বিষয়টারে ঘুরাইয়া দেওনের ধান্ধা। আর এই ধান্ধায় ‘ধরা’টাই হইলো মূল কাম। ঠিকমতো ধরতে পারলে, আসল জিনিসটা ‘আউট অব ফোকাস’ হইয়া কুত্তাটা ফোকাস হইবো। হ্যাই হিসাবে ধান্ধাবাজগো ‘ইয়ে’বাজও কওন যায়। ঘেউ ঘেউ কইরা অন্তত ফোকাসটারে সরাইতে পারে। কি কন?
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন