০
১৮০০ বার পঠিত
এবার ২০১৭ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার ৩ জন মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (Gravitation Wave) গবেষকদের দেওয়া হলো যারা আলবার্ট আইনস্টাইন এর মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সূত্রের একশো বছর পরে তাঁর দেওয়া পূর্বাভাস শনাক্তকরণ কাজে লিপ্ত ছিলেন। পুরস্কারটি মার্কিন বিজ্ঞানী রায়নার হোয়াইস, কিপ থর্ন এবং ব্যারি বারিসের কাছে যায়।
তিন আমেরিকান পদার্থ বিজ্ঞানী ব্যারি বারিশ, রাইনার হোয়াইস এবং কিপ থর্ন মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আবিষ্কারের জন্য পদার্থ বিজ্ঞানের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার নোবেল পুরস্কার পেলেন। স্টকহোম এর নোবেল কমিটির জুরি এই তিনজন বিজ্ঞানীদের ৯ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হোয়াইস (৮৫), যিনি বার্লিনে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৮ সালে ও পরবর্তীতে আমেরিকায় ইমিগ্রান্ট হোন। তিনি প্রাইজমানির অর্ধেক পাবেন আর বারিশ (৮১) ও থর্ন (৭৭) অন্যান্য অর্ধেক প্রাইজমানি শেয়ার করবেন।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এর পূর্বাভাস একশত বছর আগে, এবং ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে একটি সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক গবেষণা সমষ্টিগতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উন্নত লেজার ইন্টারফেরোমিটার মহাকর্ষীয়-ওয়েভ মানমন্দির (Ligo) এ প্রথমবারের মত পরিমাপ করা হয়েছে। নোবেল বিচারকরা বলেন ‘বিজয়ীদের প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব উদ্যম এবং তাদের সংকল্প সাফল্যের অমূল্য আবিষ্কার করেন’।
বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের সর্বক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি করেন যা দিয়ে প্রমাণ করা হয় এখন মানুষ মহাবিশ্বের গতিশীল প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। ইতোমধ্যে, আরও মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি, গবেষকরা আরও একটি আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন।
আইনস্টাইন যখন স্থান-কালের কম্পন (Vibrations of space-time) নিয়ে কাজ করছিলেন ও তার পরবর্তী গবেষণার ফলাফল ভবিষ্যদ্বাণীগতভাবে তাত্ত্বিক রচনায় লিপ্ত ছিলেন তখন সময়টি ছিল ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ। সেসময় প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত যন্ত্রের অভাব ছিল। সেখান থেকেই কাজ শুরু করেন বারিশ ও থর্ন এবং হোয়াইস ১৯৭০ এর দশকের পর থেকে এগুলি তৈরির ক্ষেত্রে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন।
বারিশ বার্কলেয় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানে অধ্যয়ন করেন। পরে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ক্যালটেচ) থর্নের সাথে কাজ করেন। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে, মার্কিন বিজ্ঞানী বরিশ লিগো (Ligo) এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং প্রায় এবং প্রায় ৪০ জন বিজ্ঞানীর একটি ছোট গবেষণা গ্রুপ নিয়ে প্রায় এক হাজার গবেষক ও প্রযুক্তিবিদদের সাথে একটি আন্তর্জাতিক প্রকল্প তৈরি করেন।
হোয়াইস বোস্টনে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) এ গবেষণায় এবং ১৯৭০-এর দশকে একটি লেজার-ভিত্তিক ডিভাইস তৈরি করেন, যা প্রথমবার অত্যন্ত সংবেদনশীল ডিটেক্টরগুলির মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।
https://www.youtube.com/watch?v=m7XoOgeNj_c
হাজার হাজার কর্মীকে সম্মানিত করা হলো:
পৃথিবীর অন্যান্য বেশকিছু প্রতিষ্ঠান মহাকর্ষীয় তরঙ্গ পরিমাপের সাথে জড়িত। ‘ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারস’ এ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তে প্রকাশিত প্রকাশনায় হাজার হাজার বিজ্ঞানী ও লেখক এই উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তথাকথিত লিগো ইন্টারফেরোমিটারের Ligo-Interferometers লেজার প্রযুক্তিটি জার্মানির ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের মহাকর্ষীয় পদার্থবিজ্ঞানের জন্য এটি উদ্ভাবন হয় জার্মানির হানোফার শহরে। এই কাজের জন্য জার্মানির ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটকেও পুরস্কৃত করা হয়। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জার্মান বংশোদ্ভূত মার্কিন বিজ্ঞানী রায়নার হোয়াইস টেলিফোনে একটি সাক্ষাৎকারে স্পিগেল অনলাইন পত্রিকাকে বলেন,
“আমি বিশেষ করে এর পটভূমিতে এই পুরস্কারটি দেখি যে, এটি হাজারো বিজ্ঞানীর সমষ্টিগত কর্মকে সম্মান করে”।
তিনি আরও বলেন,
“আবিষ্কারটি সমস্ত মানবজাতির জন্য কল্যাণ এবং একটি নতুন প্রযুক্তি সংযোজন হলো যার মাধ্যমে ‘মহাবিশ্বের সন্ধান করা যায়’ কেবল পরবর্তী কয়েক বছর বা দশক ধরে নয়, পরবর্তী শতাব্দীতেও”।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন