১১৫২ বার পঠিত
নরভোজিরা যারা নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টর্চার সেলে ছাত্রদের নির্যাতন করে; হত্যা করে মৃতদেহের রক্তের স্যুপ পান করে যোগ দেয় নৈশভোজে; তাদের এক একটা অপরাধে পবিত্র করকে ধরায় নেমে আসতে হয়। পবিত্র করতে হয় পূণ্যভূমি। বলতে হয়, এতো পবিত্র ও বিশুদ্ধ ছাত্র সংগঠনে আসলে দূষিত বায়ুর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। পবিত্র কর সুর করে গান করে, একটা বদহাওয়া লেগেছে গায়; কখন পাখি উড়ে যায়।
স্বামী ধ্রুবেশানন্দ সহসা হ্যান্ড মাইক হাতে নেমে আসে, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে টর্চার সেলে মৃত্যু একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
ঐসব ঘটনায় নিয়মিত জাস্টিফিকেশান খুঁজতে খুঁজতে আর দলকে পবিত্র জল ছিটিয়ে পবিত্র করার যজ্ঞে ক্লান্ত হয়ে পড়ে সরকারের রসুলেরা।
ইউরেকা ইউরেকা বলে দৌড়াতে দৌড়াতে আসে আওমিমিডিস। ‘আমরা যে পত্রিকা পবিত্র ভবনে ঢুকতে দিইনা’ সেই পত্রিকার টর্চার সেলে আবার আবরারের মৃত্যু ঘটেছে। কই অহন তোমরা কিছু কওনা কেন মিয়ারা!
বিবেক বুবু যাকে প্রায়ই অনুপ্রবেশের গল্পে চুক চুক করে পবিত্র সংগঠন কাউয়ায় ভইরা গেলো বলে রগড় করতে হয়; সে অনেক দিন পর একটা উদযাপনের উপলক্ষ পায়। দ্যাখছোনি অপবিত্র পত্রিকার হালচাল। এইডা ক্যামনে পারলো; জ্যান্ত বাচ্চাডা মইরা গেলো; তবু তাদের অনুষ্ঠান থামলো না; হায়রে মানোস! অই তুমরা আইসো, অপবিত্র পত্রিকা বয়কট করো।
পবিত্র কর ধরায় নেমে আসে। আকুলি বিকুলি করে বলে, বিবেক মিয়া মরছে নাকি দেখতোরে; মানুষ খালি পবিত্র সংগঠনের খুন করা লাশগুলি দেখে; অথচ অপবিত্র পত্রিকার হাতে খুন হওয়া লাশ দেখে না।
সরকারের রসুলেরা বলে, অনিচ্ছুক জাতিরে স্বাধীনতা আইনা দেয়া ভুল হইছে; ছাগলের দল কুনহানকার; খালি আমগো দোষ দেখস; আর ভাসুরের সাত খুন মাফ।
বিবেক বুবু বলে, এইগুলি আস্তা সুশীলের দল;উন্নয়নের বিপক্ষের দল। শরম নাইরে হ্যাগো; আমি কই কি, আমগো ভালো না লাগলে বাপের দেশে চইলা যা। এইডা আমগো বাপের দেশ; আমরা এইখানে খড়ম পইরা ‘পবিত্র ভবনে’ দাওয়াত খামু খালি।
অপবিত্র পত্রিকার অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ পৃষ্ট হয়ে নিহত কিশোরের মৃত্যুর ঘটনাটি যতটা না শোকের; তার চেয়ে বেশি উদযাপনের। এই যে এতোদিন পবিত্র করকে জাস্টিফিকেশান মন্ত্রপাঠ করে পবিত্র দলকে গ্যাটিস দিতে হয়; আজ তার বিশ্রামের দিন। আজ সরকারের রসুলদের দিন।
সরকারালু পত্রিকার সাংবাদিকেরা প্রথমালুকে খপ করে ধরে বলে, পাইছি তোরে! বিবেক বুবু পাড়াময় রগড় করে বেড়ায়; অনেক দিন
পর আজ আনন্দের উপলক্ষ; সরকারি খুনের জায়গায় প্রথমালুর খুন।
সরকারি হত্যায় সহসা শৈশবের স্মৃতিচারণ কিংবা লতাপাতাফুলের কবিতায় ব্যস্ত থাকা ধ্রুবেশানন্দ; অথবা অনুশীলিত নির্লিপ্ততা ও নীরবতায় কাটানো সরকারি রসুলেরা প্রথমালুর অনুষ্ঠানে কিশোরের মৃত্যুতে বাকশক্তি ফিরে পায়।
বিবেক বুবু বলে, মানুষ এতো পাষাণ হইতে পারে! বাচ্চাডা মইরা গেছে; আর মঞ্চে গান চলতেছে; আমরা এতো নিষ্ঠুর হইতে শিখলাম না গো; তাই তো পিছাইয়া গেলাম; প্রথমালুর গুড বুকে আসতে পারলাম না।
সাধারণ জনতা বলে, সরকারালুই কন আর প্রথমালু কন; এই দ্যাশে জীবনের কোন দাম নাই গো!
কেউ একজন কোন কালে বলেছিলো, দ্য শো মাস্ট গো অন। আমরা দক্ষিণ এশিয়রা একে অত্যন্ত আক্ষরিক অর্থে নিয়েছিলাম। পরীক্ষা দিয়ে বাবার শেষকৃত্যে আসা, ভাই মারা গেছে তবু বোনের বিয়ের লগ্ন পেরুতে দেয়া যাবে না, অসুস্থ রোগী সিক বেডে পরীক্ষা দেবে, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ক্রসফায়ারে শিশু মারা গেলেও থেমে থাকবে না নির্বাচনী প্রচারণা।
অভিভাবক উপদেশ দেয়, কে মরলো কে বাঁচলো তোমার দেখার দরকার কী, তুমি অংক করো।
দেশবরেণ্য চিত্রকর মঞ্চে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে; তারপরেও চালিয়ে যেতে হবে উচ্চাঙ্গ সংগীত সন্ধ্যা। কিংবা বিদ্যুৎ পৃষ্ট হয়ে কিশোর মারা গেলেও; চালিয়ে যেতে হবে কিশোরদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠান মালা।
এ হচ্ছে জাতিগত ইমোশনাল কোশেন্ট (ই কিউ)-এর দৈন্য বা সমানুভূতির বোধহীনতায় চলতে থাকা জীবন চর্যা। ঠিক এ কারণেই ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট ( আই কিউ) থাকার পরেও দক্ষিণ এশিয়ার জাতিগোষ্ঠীগুলো সভ্যতার আলোর মুখ দেখতে পেলো না। এইজন্যই মাঝে মাঝে আক্ষেপ করে বলি, ওরে মানুষের জীবনই যদি না বাঁচে; তোমার জিডিপি গ্রোথের চাটনি দিয়ে কী করবো!
বিবেক বুবু বলে, এতো কঠিন কঠিন কথা বুঝিনা গো; এইজন্য তো সুশীল হইতারিনাই।
পবিত্র কর আঙ্গুল নাচিয়ে বলে, প্রথমালুর লাশ নিয়া মিছিলটা জমাইয়া তুলতে না তুলতেই রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সস্টিটিউটে ছাএলীগের পোলারা প্রিন্সিপালরে পুকুরে ফালাইয়া দিয়া; আমগো যাত্রা নাস্তি করলো গো!
বিবেক বুবু হাহাহাহা হাসিতে আর্তনাদ করে বলে, প্রিন্সিপালের দাড়ি-টুপি-টাকুনুর ওপর পায়জামা; নিশ্চয়ই জামায়াত।
সরকারের রসুল বলে, বিম্পিও হইতারে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন