০
৭১৪ বার পঠিত
বালিশ বসন্তের স্নিগ্ধ সন্ধ্যা; টিভিতে উন্নয়নী গানে চোখ মুদে আসে বিশিষ্ট বালিশ প্রেমিকের। এমন সময় বাসায় ঢুকেই রাগে ফেটে পড়ে রনি, লন্ডন থেকে ঢাকা এয়ারপোর্টে আসতে যতটুকু টাইম লাগসে; তার চাইতে বেশি টাইম লাগলো এয়ারপোর্ট থিকা বাসায় আসতে। ড্যাম শিট; ইচ্ছা করে রিক্সাগুলিরে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফালাইয়া দিই।
লেখাটির অডিও পডকাস্ট শুনতে চাইলে এখান থেকে শুনুন:
বাবা বিশিষ্ট বালিশ প্রেমিক একগাল হেসে বলে, বুড়িগঙ্গা বলিসনা রনি; আমরা এখন একে টেমস নদী বলি।
মা বিশিষ্ট বালিশ সংস্কৃতির প্রেমিকা নেইল ফাইলিং করছিলেন, তুই বাবা হাত-মুখ ধুয়ে খেয়ে নে-এঁই বুয়া বুয়া, টেবিল লাগাও।
ফোক-ফ্যান্টাসির রাজা-রাজড়ার ফিল্মের মতো ডাইনিং টেবিলে বিশাল তাম্রপাত্রে আপেল-কমলা-স্ট্রবেরি সাজানো। রনি একগুচ্ছ স্ট্রবেরি তুলে নিয়ে বলে, প্লেনে তো হাবিজাবি অনেক কিছু খাইসি। আজ রাতে আর কিসু খাবো না। জানো মাম্মি ইচ্ছা করতেসিলো গুলি কইরা রিক্সাওয়ালাদের মাথার খুলি উড়াইয়া দিই। ড্যাডি, তোমরা এতো লোকরে ক্রসফায়ারে দেও রিক্সাওয়ালাগুলিরে দেও না ক্যান!
বিশিষ্ট বালিশ প্রেমিক বাবা, হাহাহা করে হেসে নাটকের ডায়ালগ দেয়, পাগল ছেলে।
পরদিন ফইন্নিসভার বৈঠকে বালিশ প্রেমিক ‘শহর থেকে রিক্সা তুলে দেয়ার’ প্রস্তাব উত্থাপন করে।
ফইন্নিরা সমস্বরে বলে, রিক্সা তুলে দিন রিক্সা তুলে দিন।
সুযোগ বুঝে ফইন্নিদের মধ্যে একটু টকশো- বিশেষজ্ঞ বলে, একই শহরে বিভিন্ন গতির যানবাহন থাকতে পারে না। রিক্সা তুলে দিলেই রাতারাতি এ শহর আমস্টারডামের মতো হয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ওখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট খুব ভালো; কিন্তু আমাদের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই।
ফইন্নিরা সবাই গণ-পরিবহন সম্রাট বালিশ খানের দিকে তাকায়।
বালিশ খান হাত তুলে সারেন্ডারের ভঙ্গিতে বলে, মেট্রোরেলটা হয়ে গেলে দেখবেন এ শহর প্যারিসের চেয়ে বেটার হয়ে যাবে।
এক ফইন্নি অভিযোগ করে, মানুষজন তো হাঁটতে চায় না; একটু হাঁটলেই মেদ কমে যাবে। আমি তো মেদ কমাতে ঘরের মধ্যেই ট্রেডমিলে হাঁটি।
কৃষকদের ওপর বিরক্ত এক ফইন্নি বলে, এই তো দেখলেন চাষারা ধান কাটার শ্রমিক নাই বইলা কী একটা সিনক্রিয়েট করলো। আমি বলি কী, এই রিক্সাওয়ালাগুলিকে ঘেডি ধইরা ধান কাটতে পাঠাইয়া দিলেই তো হয়। তাইলেই তো ধান কাটনের লোকের অভাব হয় না।
আরেক ফইন্নি অভিযোগ করে, বিদেশী ইনভেস্টরগো নিয়া এদিক-ওদিক গেলে জ্যামের যন্ত্রণায় তারা ছটফট করে। আমি বলি কী, ৮.১ শতাংশ জিডিপির সঙ্গে মানানসই নয়; এইরকম লোকজনরে গ্রামে ফেরত পাঠান। উন্নয়ন করতে গেলে অতো আবেগ নিয়া বইসা থাকলে চলে না। আমি যখন মাত্র ৩৫ টাকা নিয়া ঢাকায় আসছিলাম, লজিং মাস্টার হইয়া পাতলা খান লেনে থাকতাম; কেউ তো আমারে একটুও মায়া-দয়া করে নাই।
সিদ্ধান্ত হয়, উন্নয়ন ও ৮.১ শতাংশ জিডিপির সঙ্গে মানানসই নয়; এমন রিক্সাওয়ালাদের ক্রমে ক্রমে গ্রামে ফেরত পাঠানো হবে।
কয়েকটা রাস্তা থেকে রিক্সা তুলে দেবার মাইকিং চলতে থাকে একটা রিক্সাতে করে।
এক বিশিষ্ট বালিশবিদের মেয়ে প্রাডোতে করে যাবার সময়, সামনের স্কুল ভ্যানটার কারণে প্রাডোটাকে মন্থর গতিতে চলতে হয়। বালিশের মেয়ে ক্ষেপে গিয়ে আর্তনাদ করে ডাকে পুলিশ সার্জেন্টকে, এই স্কুল ভ্যানটা আইন অমান্য করে এই পথে কেন! সরান এসব।
সার্জেন্ট বোঝায়, ম্যাডাম বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে; তাই বাধা দিইনি।
বালিশের মেয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে বলে, কেন আমার আব্বা কী ৪০ কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যাননি! ওরা এই কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে পারবে না কেন! এদিকে আমার পার্লারের এপয়েনমেন্ট মিস হয়ে গেলো।
বালিশের মেয়ে আক্ষেপ করে একটা ফেসবুক স্টেটাস দেয়, ইচ্ছা ছিলো পার্লার থেকে একটু সেজে দাওয়াতে যাবো; সে আর হলো কই রিক্সার অত্যাচারে। অনেকক্ষণ জ্যামে বসে আছি। আপনারা আমারে এলিট কন আর যাই কন, পভার্টি ইজ ডিজগাস্টিং; আই হেইট পভার্টি।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন