৫৭৬ বার পঠিত
৫৭৬ বার পঠিত
দেশের ভিতরে বা দেশের বাইরে বাংলা ইমিগ্রান্ট মোডারেট ধার্মিকদের একটি অংশ সৌদি আরবের উপর নাখোশ থাকবার কারণে এদের আদর্শ দেশটির নাম ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরান। পার্সিয়ানদের অতীতের জ্ঞান বিজ্ঞানের ইতিহাসটি তাদের এই চয়েসে ইন্ধন জুগিয়েছে বলেই আমার ধারনা। উপসাগরীয় তেলে ধনী ইসলামি দেশগুলি নিয়ে এরা সাধারণত বিভিন্ন কারণে হীনমন্যতায় ভোগে। বিশেষ করে ধনী আরবদের জ্ঞানচর্চায় বিমুখতা, নারী মাংস এবং মোটাদাগের আনন্দ ফুর্তিতে গা ভাসিয়ে দেয়া এই নব্য আইডেন্টিটি ক্র্যাশে ভোগা বাংলা ইমিগ্রান্ট মোডারেট ধার্মিকদের লজ্জায় ফেলে দেয়। কোরআন, হাদিস, বা মুহাম্মদের কথিত জীবনগ্রন্থির কলুষতা ‘ইন্টারপ্রেটেশন’ নামক নিউ ধার্মিক থিওলজির আড়ালে ঢাক-ঢাক গুড়-গুড় করে না-জানা অন্ধ ধার্মিকদের চোখ বন্ধ রাখা সম্ভব। কিন্তু ধনী আরবদের নষ্টামি এবং সাংস্কৃতিক দারিদ্রতা পশ্চিমা সম্রাজ্যবাদকে গালি-গালাজ করে ঢাকা সম্ভব নয়। এহেন অবস্থায় আদর্শ হিসেবে ইসলামিক ইরানই তাদের একমাত্র ভরসা।
ইরানীদের মুসলমান হওয়ার ইতিহাসটুকু জানা থাকলে নব্য মোডারেট ধার্মিকরা নিজেদের মুসলমান নয় বাঙালি পরিচয় দিতেই বেশি গর্বিত বোধ করতেন। ইরানীদের মুসলমান হওয়ার ধারায় নন-পার্সিয়ানদের বিরুদ্ধে ইসলামের শুরু থেকে ইরানীদের সাংস্কৃতিক যুদ্ধ Persianization বা পারস্যকরণ মুভমেন্টের ইতিহাসটি জানা গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। এই মুভমেন্টের মূলে টার্গেট ছিল বর্বর আরব। যদিও প্রাথমিকভাবে এই আন্দোলনের শুরু আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সময়থেকেই।
পারস্যদেশের খানিকটা দখল করে উমাইয়ারা যখন সেখানে জোর-জবরদস্তি করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পারছিল না। তাদের সেনাপতি হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ দেখলেন ফার্সি হচ্ছে মূল সমস্যা। তিনি ঘোষণা করলেন, আরবদের দখলকৃত অঞ্চলে ফার্সি নয় আরবি হবে অফিসিয়াল ভাষা। ইরানীয়ানদের পূরণো ধর্ম জোরাস্ত্রিয়ানস পালনকারীদের নন-মুসলমান ঘোষণা করে এদের ওপর উচ্চকর আদায়, জমি কেড়ে নেওয়া এবং বাকিদের দাস এবং হত্যা করার আদেশ দেন। এরপরেও ইরানীরা ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান করতে থাকে। এবং শুরু হয় নন-পারস্যদের পারস্যকরণের মুভমেন্টের পূনর্জাগরণ। উমাইয়াদের পতনের পরে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া চতুর আব্বাসীয়রা দেখল জ্ঞানে-বিজ্ঞানে উন্নত এবং উন্নত সাংস্কৃতিক পারস্যদের বশে আনবার একমাত্র উপায় তাদের সংস্কৃতি গ্রহণ করা। তারা পারস্য দখলকৃত অঞ্চলে ফার্সি ভাষা পূনর্বহাল করে এবং যে কোন পারস্যজন ধর্মান্তরিত হলে তাকে জমি-জমা দিয়ে এক এক একটি এস্টেটের শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া শুরু করে। এই ধারায়, আব্বাসীয় আমলে পারস্য দক্ষলকৃত যেকোনো অঞ্চলের গভর্নর ছিল হয় পার্সিয়ান বা পার্সিয়ানাইজড আর্মেনিয়ান। আরব রাজাদের এতো অকৃপণ দানের পরেও ইরানীদের জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হল। তারা পড়ে রইল নিজেদের ধর্ম জোরাস্ত্রিয়ানস নিয়ে। কালের ধারায়, মূলত ইরানীরা ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় উচ্চ কর এড়াতে, দাসজীবন থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং শিরশ্ছেদ থেকে রক্ষা পেতে। এত হত্যা, দমন, নিপীড়ন করা সত্বেও ৯৮% ইরানীদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে আরবদের সময় লেগেছে মোটের উপর ৬০০ বছর। এবং সেটা সম্ভব হয়েছে ইরানীদের সংস্কৃতিকে ধারণ করেই।
কোন শান্তির বাণীর জাদু নয় বা মুহাম্মদের পুষ্পসম চরিত্রের মোহে নয়, ইরানীয়ানরা ইসলাম গ্রহণ করেছিল বাধ্য হয়ে, শাসক গোষ্ঠীর চাপে পিষ্ট হয়ে। খোদ ইরানে মুহাম্মদের সুন্নি ইসলামের বিরুদ্ধে শিয়াদের প্রচার, সুফিজমের সৃষ্টি একটি উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা। হাজার হাজার বছর পাশাপাশি থাকবার কারণে বর্বর আরবদের ইরানীয়ানদের চাইতে কেউ ভাল জানেনা। সাসানীয়, বাইজেন্টাইন এবং রোমান সাম্রাজ্য পারস্পরিক যুদ্ধে ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে না পড়লে আরবদের পারস্য দখল করা সম্ভব হতো না। আজকের মুসলিম ইরানীয়ানদের ইতিহাস আলাদাভাবে লেখা হতো।
নব্য আইডিনটিটি ক্ষুধার্ত, যারা নিজেদের বাঙালি ভেবে লজ্জা পান, এবং ইরানীদের ইসলামী ভেবে আনন্দপান, পক্ষান্তরে বর্বর আরবদের সাম্রাজ্য চেতনার হাতিয়ার হয়ে কাজ করছেন, তাদের ইরানীদের মুসলমান হবার ইতিহাসটুকু জানতে অনুরোধ করছি। আপনারা হয়তো বাঙালিত্বর মাঝে হিন্দুয়ানার গন্ধ পান কিন্তু ইসলামে পার্সিয়ানদের গন্ধ খুঁজে লাভ নাই।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন