মানব সভ্যতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে ধর্মের ইতিহাস।যা আমাদের পক্ষে অস্বীকার করা সম্ভব না।একসময় আমাদের ধর্ম একটা জনগোষ্ঠীতে রুপান্তরিত করে শক্তিশালী গোষ্ঠীতে পরিনত করেছে এবং বিভিন্ন ধর্ম বিভিন্ন মতবাদ দিয়ে নিজেকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছে ঈশ্বর নামক কাল্পনিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে।ধর্ম আমাদের সমাজ সংস্কৃতি ও জীবনাচরণের রন্ধ্রে রন্ধ্রে খুব দৃশ্যমানভাবেই বহমান, তাতে করে এর সত্যতা অগ্রাহ্য করার মত আমাদের তেমন কোন শক্তি নাই। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা অনেক বেশিই প্রকট।
যে কোনো দেশ-কাল-প্রেক্ষাপটের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে দেখা যায় অনিবার্যভাবেই নারীর অবস্থান নিয়ে আলোচনা চলে আসে; অর্থাৎ আমরা চাই বা না-চাই, নারীর অবস্থান দিয়ে বিবেচনা করা হয়। নারীরা মানবসভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পুরুষদের প্রেরণা ও শক্তির মূলে নারীর ভূমিকা অপরিসীম।একজন সুন্দর মনের নারী পারে একজন বখে যাওয়া ছেলেকে ভালোপথে ফিরিয়ে আনতে,আবার একজন নারী পারে প্ররোচনায় ফেলতে। তাদের ব্যতিরেকে মানবসভ্যতার অস্তিত্ব কল্পনাতীত। সব উন্নতি-অগ্রগতির মূলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রয়েছে নারীর।সেই হিসাবেই “পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী” নামে পূর্বে হিন্দু,খৃষ্ট,বৌদ্ধ,এবং ইহুদী ধর্মের দৃষ্টিতে চারটি পর্ব লিখেছি।এবং সেই ধারাবাহিকতায় আজ মুসলিম ধর্মের দৃষ্টিতে দেখবো আসলে ইসলাম কিভাবে নারীকে দেখে।আর চারটি পর্ব সম্পর্কে লিখতে গিয়ে নিজের মধ্যে কোন কার্পন্যবোধ কিংবা ভয় না থাকলেও এই ধর্ম নিয়ে ছিটেফুটা বলতে গেলেই নানা হুমকি,ধামকি এবং ভয় পেতে হয়।তাই লিখাটা অনেকবার লিখার চেষ্টা করেও পিছিয়ে গেছি।অবশ্য আমার লিখাটাই প্রথম লিখা হবে না ইসলাম ধর্ম কিভাবে নারীকে দেখে।তার কারণ অনেকেই এ নিয়ে পূর্বে লিখেছে।সেহেতু নতুন কিছু না পাওয়ারই সম্ভাবনা বেশী।তারপরেও কিছুটা ভিন্নতা আনার অপচেষ্টা করবো শুধু মাত্র আপনাদের বুঝার জন্য শর্ট ফিল্মের মাধ্যমে।যাই হোক,আগে দেখা যাক ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘আল-কোরান’ নারীকে কিভাবে দেখে।
# তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র।তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর।আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক।আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে,আল্লাহর সাথে তোমাদের সাক্ষাত করতেই হবে।আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও।(২:২২৩)
এ থেকে সহজেই বুঝা যায়,আপনি আপনার স্ত্রীকে যেভাবে ইচ্ছা বিয়ে করতে পারেন।শুধুমাত্র বিবাহ করার কারণেই তাকে আপনি আপনার সম্পদ মনে করতে পারেন।
# আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতিম মেয়েদের হক যথাযথভাবে পুরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্ক্ষা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকার সম্ভাবনা ।(৪:৩)
# তোমরা কখনও নারীদের সমান রাখতে পারবে না,যদিও এর আকাঙ্ক্ষী হও।অতএব,সম্পুর্ন ঝুঁকেও পড়ো না যে,একজনকে ফেলে রাখ দোদুল্যমান অবস্থায়।যদি সংশোধন কর এবং খোদাভীরু হও,তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল,করুনাময়।(৪:১২৯)
উপরের সূরা দুটি থেকে একজন পুরুষকে চারটি বিয়ের অনুমতি দিলেও তাদেরকে সমান ভাবে দেখতে হবে।কিন্তু নিচের আয়াতটি খেয়াল করেন এবার…
# পুরুষেরা নারীদের উপর কতৃত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে ও তারা হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্ক্ষা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।(৪:৩৪)
অর্থাৎ আপনি আপনার স্ত্রীর উপর শুধু কতৃত্বই না,প্রহারও করতে পারবেন।
# আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহর প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষণ করে। আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী। আর নারীরদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।(২:২২৮)
অর্থাৎ পুরুষ নিজ ইচ্ছায় তালাক দিয়েও তাকে আবার ফিরিয়ে নিতে পারবে এবং নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে,যা খুবই স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে।
# তারপর যদি সে স্ত্রীকে তৃতীয়বার তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কতৃêক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।(২:২৩০)
হা হা হা,তালাক দিয়ে তাকে নিতে হলে তাকে অন্যের বউ হতে হবে এবং সে যদি তালাক দেয় তবেই পূর্বের পুরুষ তাকে গ্রহন করতে পারবে।মানে মহিলাদের সাথে একধরনের পুতুল খেলা বিয়ের নামে।
এ বিষয়ে একটা অসাধারণ এবং ইসলামিক আইন অনুযায়ী এবং অনেক রেফারেন্সের মাধ্যমে রচিত ‘হাসান মাহমুদ’-এর ‘হিল্লা’ শর্ট ফিল্মটা দেখে নিতে পারেন হাতে সময় থাকলে।
# আল্লাহ্ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন: একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। অত:পর যদি শুধু নারীই হয় দু-এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে| যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অত:পর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যেেতর পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ।(৪:১১)
অর্থাৎ একজন পুরুষ=১/২ নারী অথবা ২ জন নারী।আর সম্পত্তির ভাগের ক্ষেত্রেও রয়েছে নারীদের প্রতি দ্বিচারীতা।
# ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।(২৪:২)
# ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে এবং এদেরকে মুমিনদের জন্যে হারাম করা হয়েছে।(২৪:৩)
# তোমাদের মধ্য থেকে যে দু’জন সেই কুকর্মে লিপ্ত হয়, তাদেরকে শাস্তি প্রদান কর। অতঃপর যদি উভয়ে তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে, তবে তাদের থেকে হাত গুটিয়ে নাও। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু।(৪:১৬)
হুম,এখানে যদি দুইজনের সম্মতিতে তারা যৌন মিলনে আবদ্ধ হয় তাহলে অবশ্যই অন্যের ঘুম হারাম হবার কথা না।কিন্তু যেহেতু ধর্মের বিধানে না আছে সেহেতু দুইজনে সমান অপরাধী অন্যদিকে জোর পূর্বক হলে অবশ্যই একজন অপরাধী হবার কথা।দেখা যাক পরের সূরায় কি বলা হয়েছে…,
# আর তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচারিণী তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার জন পুরুষকে সাক্ষী হিসেবে তলব কর। অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে সংশ্লিষ্টদেরকে গৃহে আবদ্ধ রাখ, যে পর্যন্ত মৃত্যু তাদেরকে তুলে না নেয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন পথ নির্দেশ না করেন।(৪:১৫)
অর্থাৎ চারজন পুরুষ সাক্ষী ব্যতীত বিচার হবে না।আবার ৪ জন পুরুষ সাক্ষী দিলেই একজন অপরাধী হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে একটা অসাধারণ এবং ইসলামিক আইন অনুযায়ী এবং অনেক রেফারেন্সের মাধ্যমে রচিত ‘হাসান মাহমুদ’-এর ‘নারী’ শর্ট ফিল্মটা দেখে নিতে পারেন হাতে সময় থাকলে।
# হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ঋনের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ করে নাও এবং তোমাদের মধ্যে কোন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লিখে দেবে; লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। আল্লাহ তাকে যেমন শিক্ষা দিয়েছেন, তার উচিত তা লিখে দেয়া। এবং ঋন গ্রহীতা যেন লেখার বিষয় বলে দেয় এবং সে যেন স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্রও বেশ কম না করে। অতঃপর ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ হয় কিংবা দূর্বল হয় অথবা নিজে লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে অক্ষম হয়, তবে তার অভিভাবক ন্যায়সঙ্গতভাবে লিখাবে। দুজন সাক্ষী কর, তোমাদের পুরুষদের মধ্যে থেকে। যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা। ঐ সাক্ষীদের মধ্য থেকে যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর যাতে একজন যদি ভুলে যায়, তবে একজন অন্যজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যখন ডাকা হয়, তখন সাক্ষীদের অস্বীকার করা উচিত নয়। তোমরা এটা লিখতে অলসতা করোনা, তা ছোট হোক কিংবা বড়, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এ লিপিবদ্ধ করণ আল্লাহর কাছে সুবিচারকে অধিক কায়েম রাখে, সাক্ষ্যকে অধিক সুসংহত রাখে এবং তোমাদের সন্দেহে পতিত না হওয়ার পক্ষে অধিক উপযুক্ত। কিন্তু যদি কারবার নগদ হয়, পরস্পর হাতে হাতে আদান-প্রদান কর, তবে তা না লিখলে তোমাদের প্রতি কোন অভিযোগ নেই। তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সাক্ষী রাখ। কোন লেখক ও সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না। যদি তোমরা এরূপ কর, তবে তা তোমাদের পক্ষে পাপের বিষয়। আল্লাহকে ভয় কর তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আল্লাহ সব কিছু জানেন।(২:২৮২)
একজন পুরুষের বিপরীতে আবারও দুইজন মহিলার কথা বলা হয়েছে।সত্যি কি আপনার মনে হয়,একজন স্ত্রীলোক আপনার থেকে জ্ঞানবুদ্ধিতে কম?যদি এমনটা ভাবেন তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন এই আধুনিক যুগে এসেও।তার প্রমান রয়েছে আপনার আমার আশে পাশে অনেক প্রমান।অন্যদিকে পুরুষ শাসিত সমাজই নারীদের জোর করে দাবিয়ে রাখতে চায় যা অস্বীকার করলেও সত্যি এটাই।
এবার আসুন কিছু হাদিসের দিক খেয়াল করি,
# আব্দুল্লা ইবনু সামিত(রাঃ) বর্নিত আছে, তিনি বলেন ,আমি আবূ যার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি ,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি নামায আদায় করে তখন তা সামলে হাওদার পিছনের কাঠের মত কিছু না থাকলে কালো কুকুর,গাধা ও স্ত্রীলোক তার নামায নষ্ট করে দিবে।আমি আবূ যার (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম,কালো কুকুর এমন কি অপরাধ করল,অথচ লাল অথবা সাদা কুকুরও তো রয়েছে?তিনি বলেন ,হে ভ্রাতুস্পুত্র।আমিও তোমার মত রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন প্রশ্ন করেছিলা,। তিনি বলেনঃ কালো কুকুর শাইতান সমতুল্য।–সহীহ।ইবনু মাজাহ-৯৫২,মুসলিম।(২৯৬ পৃষ্ঠা,অনুচ্ছেদ ১৪১ ,সহীহ আত-তিরমিযি)
# স্বামী প্রতি প্রেমাস্পদ,অধিক সন্তান জন্মদাত্রী জান্নাতী।-তারগীব,৩/৩৭
# কোন মহিলা ইন্তেকাল করল আর এ সময় স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট ছিল-সে মহিলা জান্নাতে যাবে।-বায়হাকি-২/৪২২
# আমি যদি কাউকে সেজদা করার আদেশ দিতাম তাহলে স্ত্রীদের তাদের স্বামীকে সেজদা করার আদেশ দিতাম।–তিরমিযি,১/১৩৮
# স্বামী তার স্ত্রী কে স্বীয় বিছানায় আহবান করলে স্ত্রী তার আহবানে সাড়া না দিলে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতারা উক্ত স্ত্রীর উপর লানত বর্ষন করে।-বুখারি,২/২৮২
# স্বামী স্ত্রীকে আহবান করলে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসতে হবে,যদিও স্ত্রী চুলার পাশে বসে থাকুক তবুও।-তিরমিযি,তাগরীব-৩/৩৮
এরকম বহু হাদিস আছে,যেখানে সবসময় নারীকে পুরুষের নিচেই দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে।হয়তো কোন কোন ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে তবে সেটা আপেক্ষিক ভাবে।আপনার ইহজগৎ থেকে পরকাল পর্যন্ত যেতে হলে, কেবল নারীদের পুরুষদেরকে সন্তুষ্ট রাখার কথাই বলা হয়েছে।অর্থাত,নারী মানেই পুরুষের ব্যবহৃত পন্য এবং পুরুষ মানেই স্ত্রী লোকের উপর কতৃত্বশীল।
পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী –পর্বঃ০১ (হিন্দু ধর্ম)
পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী –পর্বঃ০২ (খৃষ্ট ধর্ম)
পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী –পর্বঃ০৩ (বৌদ্ধ ধর্ম)
পুরুষ রচিত ধর্মের চোখে নারী –পর্বঃ০৪ (ইহুদী ধর্ম)
অক্টোবর ১৭, ২০১৭; ১০:১৯ অপরাহ্ন
যদিও একটিমাত্র লেখা পড়েই একটি ধর্মে নারীর অবস্থান সম্বন্ধে সম্যক ধারণা করা সহজ কথা নয়, তবে সমাজে মুসলিম মেয়েদের অবস্থানের যে সামাজিক চিত্র আমরা প্রায়শই সংবাদ মাধ্যম থেকে জানতে পারি, নানান ঘটনার ঘাত প্রতিঘাতে, তাতে আলোচ্য লেখাটির সাথে সহমত হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নাই বলেই মনে হয়। অনেকেই কোরানকে ধর্মগ্রন্থ বলে মানেন। কিন্তু এই সব নির্দেশ যে গুলি এই প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে কোরানের বাণী বলে, সেগুলি পড়লে বোঝা যায়, এই নির্দেশগুলি আসলেই একটি বিশেষ সময়কালে একটি বিশেষ অঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের সামাজিক কিছু বিধিবিধান মাত্র। ঐতিহাসিক ভাবে সেই আঞ্চলিক বিধিবিধানগুলিই আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছে নানান রাজনৈতিক কার্যকারণে। সে অন্য প্রসঙ্গ। কিন্তু এই যে নিতান্তই সামাজিক বিধিবিধান, যা পারিবারিক ও সামাজিক গণ্ডীতে প্রতিপালন যোগ্য, তার সাথে ধর্ম অর্থাৎ আধ্যাত্মিকতার কি যোগ থাকতে পারে? সে সময়ে আজকের রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে ওঠে নি। রাষ্ট্রীয় সংবিধানের বালাই ছিল না, সাম্প্রদায়িক বিধিবিধানই ছিল শেষ কথা। শুধু ইসলাম বলে নয়, সব সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেই এটা সত্য। কিন্তু আজকের আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবাস্থায় যেখানে প্রতিটি দেশের নাগরিককে তার রাষ্ট্রীয় সংবিধান মেনে চলতেই হবে, সেখানে আজ এই সব প্রাচীন সাম্প্রদায়িক বিধিবিধানের তো কোনরকম প্রাসঙ্গিকতাই থাকা উচিত নয়। একটি দেশের আইন সেই দেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যেই এক হবে। সম্প্রদায় ভিন্ন অন্যরকম হবেই বা কেন? আজ সময় এসেছে সকল সম্প্রদায়েট মধ্যেই এই সচেতনতা জেগে ওঠার।
এটা দেখা যায় প্রায় সকল ধর্মেই নারীকে অবহেলিত রেখে তাকে পুরুষের ভোগ্যপন্য করে রাখার নানান রকমের বন্দোবস্ত করা আছে। অন্তত অধিকাংশ ধর্মের ইতিহাসের দিকে তাকালেই সেকথা বোঝা য়ায়। আর এর কারণই একটাই। মূলত নারীর উপর প্রভুত্ব করার উদ্দেশ্যই নানান সময়ে নানার ধর্মের উৎপত্তি। যেসময় থেকে মানুষের সমাজ সভ্যতার দখল পুরুষের কুক্ষিগত হয়ে গিয়েছে, সেসময় থেকেই পুরুষ নানান ছলে বলে ও কৌশলে নারীকে নিজের আয়ত্তাধীনে রাখার জন্যেই শত সহস্ররকমের বিধিবিধান চালু করতে শুরু করেছিল। দিনে দিনে যে বিধিবিধানগুলিকে কেন্দ্র করেই নানান সাম্প্রদায়িক ধর্মের কাঠামোগুলি রূপ পায়। ফলে ধর্ম অর্থাৎ রিলিজিয়ন মানেই নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্বের রাজপথ। সেই দিক দিয়ে দেখতে গেলে কোন ধর্মই ধোয়া তুলসীপাতা নয়।
এখন ইসলাম নিয়ে আধুনিক সময়ে এত সমস্যার কারণ, অন্য সব রিলিজিয়নগুলি সভ্যতার অগ্রগতির সাথে দিনে দিনে ধীরে ধীরে সমাজের উপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব হারিয়ে চলেছে। একমাত্র ইসলামে এই কর্তৃত্ব এখনো সবচেয়ে প্রবল। তার সবচেয়ে বড়ো কারণ, যেখানেই ইসলাম ধর্মের বিস্তার হয়েছে, সেখানেই জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার পরিসর, মুক্তচিন্তার স্বাধীন পরিসর সীমিত হয়ে পড়েছে। ফলে শিক্ষার সর্বিক বিকাশের ধারা যত বেশি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে, ততবেশি করে ইসলামী বিধিবিধান সমাজের উপর জাঁকিয়ে বসে সমাজের উপর কর্তৃত্ব কায়েম রেখেছে। কিন্তু এই কর্তৃত্ব কায়েমের পিছনে কোন ধর্মীয় উদ্দেশ্যই নাই। সবটাই রাজনৈতিক। ফলে ইসলাম আর রাজনীতি পরস্পর পরস্পরকে দিনে দিনে পরিপুস্ট করে তোলার কারণেই আজও ইসলামী সমাজে রিলিজিয়নের এত দাপট দেখা যায়। যা অন্যান্য রিলিজিয়নে এমন প্রবল ও সর্বাত্মক ভাবে দেখা যায় না। আর যায় না বলেই ইসলামে নারীর প্রতি বৈষম্যও তীব্রভাবে বেআব্রু হয়ে পড়ে।
আলোচ্য প্রবন্ধে কোরানে উল্লিখিত যে বিধিবিধানগুলি দেখা গেল, তা থেকে এটা স্পষ্ট যে সমাজ যত বেশি পুরুষতান্ত্রিক, সেই সমাজের কাছে এই বিধিবিধানগুলি ততই আকাঙ্খিত হবে। ফলে ঐতিহাসিক ভাবেই মুসলিম সমাজে এইসব বিধিবিধানগুলি তীব্রভাবে অনুশীলিত হয়ে আসছে যুগের পর যুগ। কিন্তু আজকে একুশ শতকে এসে মুসলিম নারী ও মুসলিম পুরুষ উভয়কেই ঠিক করতে হবে, তাদের ভভিষ্যৎ কোন দিকে? মানব সভ্যতার সাথে পা মিলিয়ে সামনের দিকে? না কি কোরাণের বাণীর সাথে তাল মিলিয়ে ইতিহাসের পিছনের দিকে? এই সিদ্ধান্ত মুসলিম সমাজকেই নিতে হবে। বাইরের থেকে জোর করে তাদেরকে কেউ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করতে পারে না। তাদেরকে বাইরে থেকে উদ্ধার করাও সম্ভবপর নয়।