২৮৯ বার পঠিত
আমরা কেন বিবাহ করি? প্রজনন বা বংশ বিস্তারের জন্য নাকি যৌনতার জন্য?
(বাংলাদেশ সহ অন্য অনেক দেশেই অবশ্য মেয়েদের বিয়েটি একটি সামাজিক নিরাপত্তা কিংবা পেশা)
প্রাণীকুলের অন্যান্য প্রজাতিতে যৌনতা প্রজননেনর জন্য, তাই তাহাদের যৌন কর্মর সময় ও সংখ্যা মোটামুটি সুনিদৃষ্ট। ঝামেলাটা মানুষের, তাহার নারী প্রজাতির ‘ডিম্ব’ সংখ্যার বিপরীতে তাহার যৌনকর্ম করিবার ইচ্ছা ও সক্ষমতাকে সময় ও সংখ্যা দ্বারা মোটামুটি সুনিদৃষ্ট করা দূরূহ। অথাৎ প্রজনন ও যৌনতা একই বিষয়ের দুই পযায়, তা বলা যাচ্ছেনা, মানুষের জীবন চক্রতে যৌনতার প্রজনন অতিরেক কিছু ভূমিকা আছে, সেটা কি? মানুষ কি তাহা জানে না? জানে বলিয়াই পরকিয়া, ব্যভিচার, পর-আপন, পতিতা ইত্যাদী ইত্যাদী, জানে বলিয়াই ‘কামসূত্র রচনা, কোনারকের সূয মন্দির, গ্লামার জগত। জানে বলিয়াই পর্ণ। জানে বলিয়াই এই ভাবনা-‘বাবুরা রক্ষিতা রাখতেন। রাক্ষিতা রেখে গর্ব করতেন। আর প্রেম ভালোবাসাও ছিল রক্ষিতার সঙ্গে। ভার্যার সঙ্গে প্রেম হতো না, ভার্যা ছিলেন পুত্র জন্ম দেবার জন্য’। এটা কলকাতা কেন্দ্রীক ১৮শতকের রূপ! এটা কি শুধুই এ সময়ের রূপ? না, কৃষি সমাজ বলে আমরা যাকে বর্ননা করি, সেই সমাজ যে দিন থেকে মাতৃতন্ত্র থেকে পিতৃতন্ত্র হয়ে ওঠলো সেদিন থেকেই এরকমই চলছে…সেটা যেমন ১৮ শতকের কলকাতা, তেমনি একুশ শতকের নিউইয়ক-প্যারিস-বুম্বাই-ঢাকা, তেমনি মুঘল দিল্লী, তেমনি ইউরোপীয় রেনেসাঁ। পরুষ সমাজ কতৃত্ব যতই দখল করুক যৌনতাই যে তাহার সমাজ গঠনের মূল উপাদান তাহা সে কিভাবে অস্বীকার করবে? খাদ্য সংগ্রহের জন্যতো তার ‘অপর’ অপরিহায্য নয়, কিন্তু প্রজনন? কিন্তু যৌনতা? অপর সেখানে তাহার মতই প্রবল। এসো তবে চুক্তি হোক, শব্দাবলীর নাম হল নীতি বা নৈতিকতা; যাকে আমরা এক সময় ধর্ম নামে চিনতাম, এখন চিনছি আইন নামে (এখোনো ৯৯ শতাশং মানুষ চিন্তাহীন অভ্যাসে এঁকে ধর্ম নামেই চিনতে চায়)…
খেয়াল করে দেখুন-আইনের সিংহ ভাগই হয়তো খাদ্য (সম্পদ) সংকট কেন্দ্রিক, কিন্তু যৌনতা কেন্দ্রিক আইনই (বিবাহ, উত্তরাধীকার) আইন গুলিই সমাজের চলনের নিয়ামক। আজকের ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ শব্দ বন্ধকে যতই অর্থনৈতিক ব্যনারের নিচে স্থান দেয়া হোক, নৈতিকতা বা নীতির জন্ম যে যৌনতা ও প্রজননের জ্ঞানের মধ্যে তা প্রকট ভাবে প্রকাশিত ‘নারী’ শব্দেই। যৌনতাকে ‘বিবাহ’ নীতি/আইনের আড়ালে ফেলে দেখবার প্রয়াসটিতে হয়তো পুরুষ তন্ত্র লাভবান হয়েছিল, প্রজনন ইচ্ছাকে পুরুষের নিয়ন্ত্রনে আনবার প্রয়াস পেয়েছিল। মানবতা হয়তো সভ্য হয়েছিল। কিস্তু অহেতুক প্রজননের মধ্যদিয়ে গত কয়েক শতাব্দী ধরে পুরুষতন্ত্র পৃথিবীকে জনসংখ্যার ভারে ভারাক্রান্ত করে তুলেছে। হারিয়ে গ্যাছে/যাচ্ছে প্রকৃতির আর সব সৌন্দর্য্। বিপন্ন ধরিত্রী, বিপন্ন নদী, বিপন্ন বনভূমি, বিপন্ন প্রানীকূল, বিপন্ন মানবতা। মহাবানবের অর্ধঅঙ্গটিকে (নারী) নৈতিকতা, ধর্ম ইত্যাদির নামে অবস করে দিয়ে প্রগতীর (স্বর্গ স্বপ্ন) যাত্রাকে কি বিবস করে দেয়া হয়নি। মাতৃসমাজ জানতো প্রজনন নিয়ন্ত্রনের উপায়, তাই সে যৌনতা যাপনটিও জানতো (যা আজ প্রায় বিস্মৃত মধ্যপ্রাচ্য (ইহুদী+খ্রীস্ট+ইসলাম) ও ইউরোপীয় (খ্রীস্ট+রেনেসা বা গ্রীক ভাবনার পুনরত্থান) পুরুষতন্ত্র বা উপনিবেশ/সাম্রাজ্য আজ আবার সেটাকেই ‘অর্থনীতি’র চেহারা দিয়ে গোলমাল পাকানোর চেস্টা হচ্ছে। যৌনতাকে উপভোগ করতে গিয়ে প্রজনন নিয়ন্ত্রনহীনতার ভীতি পুরুষতন্ত্রকে মৌলবাদী করেছে, যুদ্ধবাজ করেছে। পুরুষ তাই যুদ্ধ যৌনতা (ধর্ষন) কিংবা পতিতা গমনে অতি উৎসাহী বা সচ্ছন্দ (অধস্তনের প্রতি তার যৌন আকর্ষনও এ কারনেই)। আজ যখন প্রজনন নিয়ন্ত্রনের লিঙ্গ নিরপেক্ষ কৌশল (কনডম, পিল ইত্যাদি ইত্যাদি, এখোনো পুরোপুরি লিঙ্গ নিরপেক্ষ নয়; তবে অচিরেই তা হবে বলে আশা করা যায়) তখন কি আশা করা যেতে পারে না- মহামানবের দুই অংশ নারী ও পুরষ পরস্পরের দিকে নতুন করে তাকাবে। গত ক’হাজার বছরের ভ্রান্তি (যা ধর্মাচার, নৈতিকতা, আইন ইত্যাদী নামে মানব মতিস্কে বিরাজমান) গুলিকে শুধরে পারা কি যাবেনা পৃথিবীর প্রথম পুরুষ প্রথম নারীর দৃষ্টি বিশুদ্ধতা ফিরিয়ে আনা।
আজ যখন নারী পুরুষের দিকে তাকায়, সে দৃষ্টিতে সেই বিশুদ্ধতা থাকে; কিন্তু তা হারিয়ে যায় হাজার বছরের শাষনের ভীতির গহ্বরে, সংস্কারের বেড়াজালে, নৈতিকতার অচলায়তনে। আজ যখন পুরুষ নারীর দিকে তাকায়, সে দৃষ্টিতে সেই বিশুদ্ধতা থাকে; কিন্তু তা পুরুষত্বের দম্ভে লক্ষ্য বিচ্যুত। সেই বিশুদ্ধতা ফিরিয়ে আনবার উপায়? পুরুষ কি পারবে তারই তৈরী ইশ্বর, পয়গম্বর ও নারীর পতিতাবৃত্তির কাঁধে যে আলস্যের ভার চাপিয়ে চিন্তাহীনতার অচলায়তন জগতে বাস করছে তা থেকে বেরুতে, শিখবে কি চিন্তা করতে? তথ্য প্রবাহ নামক যে জঞ্জাল স্রোতের মধ্যে তার বাস তা থেকে সত্যকে খুজে নেবার পরিশ্রম কি সে করবে? নারী কি হাজার বছরের অভিমান ভুলে, প্রতিশোধের নেশায় মত্ত হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবে?
সংযুক্তি (১৯ এপ্রিল ২০১৪): যৌন স্বাধীনতা আসলে কি? যা ইচ্ছে যৌনতা চর্চা? না, যৌন স্বাধীনতা আসলে প্রজননের প্রয়োজন থেকে যৌনতার মুক্তি। যৌনতা ব্যাতিরেকে প্রজনন হয়তো সহজ নয়। কিন্তু প্রজনন প্রয়োজনের (বা ভীতির) বাইরে বা উর্ধে যে মিলন বা যৌনতা তাকে প্রজননের শৃখ্ঙল থেকে মুক্ত করাই ‘যৌন স্বাধীনতা’। এখানে যৌনতা হোক ‘অপর’ এর সঙ্গে মিলবার উপায়।
November 24, 2012 @ facebook.com/notes/najib-tareque
সংযুক্তি (২০ ডিসেম্বর ২০১৬): শারীরিক ভাবে নারী পুরুষের চেয়ে অধিক কষ্ট সহিষ্ণু, পুরুষ নারীরে চেয়ে ক্ষীপ্র যা শিকারে তার অংশ গ্রহনকে উৎসাহ জুগিয়েছে। প্রাকৃতিক কারনে (সন্তানের নিরাপত্তা) নারীর শরীর ভারসাম্য অধিক কিন্তু সামাজিক কারনে নারী বাসে বা যে কোন জায়গায় অল্পেই আছাড় খায়। নারীর পিছিয়ে পড়ার প্রশ্নে ধর্ম (একেশ্বরবাদ) ও আধুনিকতার ভূমিকা বিশাল। যে সব অঞ্চলে মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রীক একেশ্বরবাদী ধর্ম (ইহুদী, খ্রীস্টান, ইসলাম) ও তৎপরবর্তী ইউরোপীয় জ্ঞান পৌছেনি সেসব জায়গায় পুরুষও আগায়নি, নারীও পেছোয়নি…
ইউরোপীয় রেনেসাঁ ও শিল্পবিপ্লবই নারী পুরুষের ব্যববধান বাড়িয়েছে। আবার সে ইউরোপই এ ব্যবধান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে… (যদিও ভারতের বিদ্যাসাগর, রোকেয়া ইউরোপের থেকে প্রাচীন…)
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন