বৈদিক ঋষিরা জ্ঞানের বিস্তারে শুধুমাত্র ভারতবর্ষেই ঘটাননি, তাঁদের জ্ঞানের আলোর সংস্পর্শে এসেছিল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন মানুষজন। তাঁরাই অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে মানবতাকে আলোর পথে নিয়ে এসেছিলেন। এইজন্য আধুনিক ভারতীয় সভ্যতা প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা থেকেই শিক্ষার রসদ সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।
বির্বতনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ভারতীয় সভ্যতার ধারাবাহিকতা খুব সাবলীলভাবে ঘটেনি। তার চলার পথে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাধা এসেছে। কিন্তু ভারতীয় সভ্যতা এতটাই উন্নত যে, কোনো বাধাই তার চলার পথকে রুদ্ধ করতে পারেনি। বরঞ্চ বিভিন্ন বাধাবিপত্তির মধ্য দিয়ে অগ্রসর হওয়ার মাধ্যমেই ভারতীয় সভ্যতা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছে, যে অভিজ্ঞতাগুলি ভারতীয় শিক্ষাকে পুষ্ট করেছে। এইজন্য আধুনিককালে আমরা শিক্ষার যে রূপ পাই সেটি প্রাচীন ভারত থেকে পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়েছে।
শিক্ষা দুটি উপাদানের সমন্বয়ের ফলস্বরূপ, অর্থাৎ প্রকৃতি এবং প্রতিপালন। প্রকৃতি বলতে ব্যক্তির অন্তর্নিহিত, জন্মগত ক্ষমতা, সম্ভাবনা, মনঃপ্রকৃতিকে বোঝানো হয়। অপরদিকে, প্রতিপালন বলতে আমরা পরিবেশকে বুঝি যেখানে ব্যক্তি বেড়ে ওঠে, অর্থাৎ যেখানে যে থাকে তথা বাস সেই প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ।
স্বাভাবিকভাবে প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষার চরিত্রকে পর্যবেক্ষণ করলে আমাদের দু’টি বিষয়কে স্বীকার করতে হয়:
(১) ভারতবর্ষে প্রথম পদার্পণকারীদের মৌলিক প্রকৃতি এবং
(২) সক্রিয় বিকাশের জন্য দেশ তথা পরিবেশের প্রকৃতি যেখানে মৌলিক সংলক্ষণগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
প্রাচীন ভারতীয় জনসংখ্যা আর্য এবং অনার্যদের মিশ্রণ। যার ফলে আর্যদের আধ্যাত্মিক প্রকৃতি, অনার্যদের প্রাক্ষোভিক এবং চারুকলার প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়, আর এর মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি (Ancient Indian Culture)।
তাহলে এখন প্রশ্ন হল, প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষার উপাদানগুলি কী কী? আলোচনার সুবিধার্থে আমরা এই উপাদানগুলিকে চার ভাগে ভাগ করে নিতে পারি।
(১) জাতিগত উপাদান (Racial Factor):
ভারতবর্যে যেসব মানুষ বসবাস করত তারা কোনো একটি জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতির বা জাতিগোষ্ঠীর আগমন হয় এবং এরা সমাজে কমবেশি চিহ্ন রেখে যায়। ইতিহাস এবং নৃতত্ত্বের পোস্টমর্টেম করলে জানা যায়, প্রধানত চার ধরনের জাতি প্রাচীন ভারতে এসেছিল এবং দীর্ঘকাল বসবাস করেছিল। তারা হল আর্য, দ্রাবিড় গোষ্ঠী, সিজিআর মানুষ এবং মঙ্গোলিয়ান। পরবর্তীকালে এই চার ধরনের মানুষ আলাদা–আলাদাভাবে থাকতে পারেনি, তদুপরি তাদের মধ্যে এমনভাবে সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটেছিল যে এই গোষ্ঠীদের মাথাতেই হিন্দু ধারণার প্রথম বীজ বপন হয়ে গেল।
বৈদিক যুগে যাদের ঋষি বা মুনি বলা হত তারা শুধুমাত্র সংস্কৃত ভাষায় মন্ত্র রচনা এবং আত্মত্যাগের অনুশীলনের পারদর্শী ছিলেন তাই–ই নয়, তাঁরাও যুদ্ধ করতে, ফসল ফলাতে জানতেন। যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য তাঁরাও সু–প্রশিক্ষিত ছিলেন। অপরদিকে দ্রাবিড় জাতিরা সংগীত এবং সূক্ষ্ম কলায় পারদর্শী ছিলেন।এইভাবে আর্য এবং অনার্যদের গুণাবলি সব মিলেমিশে হিন্দু সভ্যতার জন্ম দেয়। বলা যায়, প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষায় আধ্যাত্মিক, নৈতিক, ধর্মীয় আদর্শগুলি যেমন আর্যদের কাছ থেকে উৎপত্তি লাভ করে, তেমনই প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষার বৃত্তিমূলক এবং নান্দনিক দিকগুলি দ্রাবিড় জাতিদের অনুপ্রাণিত করেছিল।
(২) ভৌগোলিক উপাদান (Geographical Factor):
ভৌগোলিক উপাদান বলতে বুঝবো বিশেষ করে ভারতের প্রাকৃতিক অবস্থানকে। জাতিগত উপাদান থেকেই আমরা অবগত হই যে, আর্যরা সামরিক দক্ষতায় অত্যন্ত পারদর্শী ছিল এবং বহুদিন পর্যন্ত তাদের নিজস্ব জায়গা ধরে রাখবার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ জারি রেখেছিল। কিন্তু অনার্যদের প্রতিহত করার ক্ষমতা যখন ভেঙে পড়ল তখন তাদের বলিষ্ঠতা প্রকাশের তেমন আর কোনো জায়গা রইল না। ফলে স্বাভাবিকভাবে ভারতীয়দের জন্য বেঁচে থাকার সংগ্রাম আরও সহজ হয়ে গেল এবং জীবনযাপন করার জন্য হতাশাও গেল কমে। প্রাকৃতিক প্রাচুর্যতা প্রাচীন ঋষিদের আধ্যাত্মিক চিন্তনে যে সহায়কের ভূমিকা পালন করেছিল – তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
(৩) সামাজিক উপাদান (Social Factor):
সেই বৈদিক যুগেই বর্ণাশ্রম ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। সমগ্র সমাজ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র – এই চারটি জাতিতে বিভক্ত ছিল। প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল জাতিপ্রথা। যদিও ঋগবৈদিক যুগে জাতিপ্রথা তেমনভাবে বিকাশ লাভ করেনি ; প্রতিটি মানুষ ছিলেন পুরোহিত, একজন সৈন্য, একজন চাষি এবং আরও কিছু। সময়ের সঙ্গে কিছু পরিবার বিশেষ বিশেষ জ্ঞানের দ্বারা নিজেদের ভিত্তি সুদৃঢ় কোরে তোলে। কেউ কেউ আধ্যাত্মিক আত্মত্যাগ এবং মন্ত্র রচনায় বিশেষজ্ঞ হলেন. আবার কেউ কেউ সামরিক দক্ষতায় পটু হয়ে উঠলেন। এইভাবে সমাজের জটিলতার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমের ক্ষেত্রে বিভাজন পরিলক্ষিত হতে থাকে। প্রাচীন হিন্দুরা সমাজকে একটি সম্পূর্ণ সংগঠনরূপে বিবেচনা করতেন এবং প্রারম্ভে প্রতিটি সদস্য তাঁদের নিজস্ব গুণ ও ক্ষমতা অনুযায়ী কার্যে অংশগ্রহণ করতেন এবং সেটাই পরবর্তীকালে বংশপরম্পরায় তা অনুসরণ করে চলত। আর এইভাবে পরবর্তী সময়ে কার্য পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন জাতির সৃষ্টি হয় এবং খুব স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন জাতির জন্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা পৃথক হয়ে ওঠে। সমাজের মধ্যেকার এই কর্তৃত্ব বা প্রভাব শিক্ষার পাঠ্যক্রম পদ্ধতি এবং সমগ্র ব্যবস্থায় প্রতিফলিত হয়। সেইসব প্রতিফলন বিবর্তিত হয়েই আজকের শিক্ষা ব্যবস্থার বিন্যাস।
(৪) ধর্মীয় উপাদান (Religious Factor):
ধর্মীয় উপাদানকে আধ্যাত্মিক উপাদানরূপেও ব্যাখ্যা করা যায়। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক মুখ্য বৈশিষ্ট্য হল রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক প্রভাবের তুলনায় ধর্মীয় উপাদানের দ্বারা অনেক বেশি পরিমাণে পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়েছে। ধর্ম বাস্তবিকভাবে তাদের জাতীয় জীবনের সর্বস্তরকে প্রভাবিত করেছিল। অবশ্যই শিক্ষা এর বাইরে থাকতে পারে না, পারেওনি। সংস্কৃতে ধর্ম শব্দটি এসেছে ‘ধৃ’ শব্দ থেকে, যার অর্থ ধারণ করা।
ভারতীয় ধারণা অনুযায়ী ধর্ম কোনো অন্ধবিশ্বাস নয়, ধর্ম বলতে প্রাচীন হিন্দুরা বুঝতেন এমন এক নির্দেশিত নীতি যা মানুষের ব্যক্তিগত এবং সমাজজীবনের সর্বস্তরকে পরিচালিত করে থাকে। ধর্ম হল আদর্শ, অনুশীলন, নৈতিকতা, কর্তব্যবোধ, সহিষ্ণুতা ইত্যাদি গুণাবলির এক সমন্বিত রূপ।
এই ধর্মীয় উপাদান শুধুমাত্র শিক্ষার লক্ষ্যের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণ করে, তা নয় – ব্যাবহারিক অনুশীলন এবং অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার করে। ইংরেজি Religion শব্দটিও এসেছে Re-Ligare থেকে, যেখানে Re অর্থাৎ পুনরায় এবং Ligare অর্থাৎ একসঙ্গে আবদ্ধ করা। এই ধারণাগত অর্থ থেকে বলা যায়, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবনের মৌলিক নীতিগুলি একসূত্র্র্রে গ্রথিত হয়ে এক সমন্বয়িত তত্ত্বের জন্ম দিয়েছে যার অর্থ হল ধর্ম বা Religion ।
এর ফলে ব্যাবহারিক দিকের মনোভাব তাত্ত্বিক দিকের ক্ষেত্রে অনুসৃত হয়েছে। সেই কারণে ধর্ম তাই একমাত্র প্রাচীন হিন্দুদের সামাজিক জীবন এবং সংগঠনের কর্তৃত্ব করত। এমন কি তাঁদের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করত। এক্কেবারে প্রারম্ভে ভারতবর্ষের হিন্দুরা তাঁদের ধর্মীয় আদর্শের প্রভাবে সাংস্কৃতিক বা আধ্যাত্মিক অধিকরণের প্রকাশ ভৌগোলিক এবং বস্তুগত অধিকরণের তুলনায় বেশি করতেন। তাই ব্যাপক অর্থে বলা যায়, তাঁরা তাঁদের দেশকে আধ্যাত্মিকতাবাদ বা সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে নির্ধারণ করতেন। ভারতবর্ষ প্রথম দেশ যা দেশবহির্ভূত জাতীয়তার ধারণাকে জাগ্রত করতে পেরেছিল।
প্রাচীনকালে হিন্দুদের ধর্মীয় চিন্তাধারা তিনটি বিভিন্ন সূত্রের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছিল-
(১) বাল্যস্তর (প্রথম স্তর)
(২) পূর্ণবয়স স্তর (দ্বিতীয় স্তর) এবং
(৩) বার্ধক্য স্তর (তৃতীয় স্তর)।
আর্যদের ধর্মীয় কার্যাবলীর প্রথম স্তর প্রত্যক্ষ স্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এবং তাদের প্রত্যক্ষ আগ্রহের সঙ্গে যুক্ত। দ্বিতীয় স্তরে ঋষিদের মন প্রাকৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাস্তব দৃষ্টিকোণে পরিবর্তিত হয়। এই স্তরের মুখ্য বৈশিষ্ট্য হল ত্যাগের উপর গুরুত্বদান। তৃতীয় স্তরে বিশ্বের উৎস এবং সেই পরম ক্ষমতার প্রকৃতির উপরগভীর চিন্তাধারায় আচ্ছন্ন হতে দেখা যায়। চিন্তাধারা এবং আদর্শের এই প্রবণতা যা তৃতীয় স্তরে দেখা যায় তার প্রতিফলন উপনিষদের শিক্ষণে লক্ষ করা যায়। এর থেকে ধারণা করা হয় যে, প্রাচীনভারতে শিক্ষার ধারণা সেইসময়ের মানুষের জীবনদর্শন থেকে বিকাশ লাভ করেছিল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি ছিল জাতির আদর্শের প্রতিবিম্বস্বরূপ, যার মধ্যে দিয়ে সভ্যতার প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হত। প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষা বলতে মূলত বৈদিক শিক্ষা ও বৌদ্ধ শিক্ষাধারাকে বুঝিয়ে থাকে। আবার বৈদিক যুগ, পরবর্তী বৈদিক যুগ, ব্রাহ্মণ্য ব্যবস্থা বৈদিক শিক্ষার অন্তর্গত। এ বিষয়ে আজ এ পর্যন্তই।
এপ্রিল ২৫, ২০১৩; ১২:৪১ অপরাহ্ন
অনেক কিছু জানা গেল, ভাল লিখেছেন। ধন্যবাদ।
এপ্রিল ২৬, ২০১৩; ১২:৪১ অপরাহ্ন
কাশেম ভাই, আপনি আমার পোস্টটি ধৈর্যসহকারে পড়েছেন বলে খুশি হলাম। ভালো থাকবেন।
এপ্রিল ২৬, ২০১৩; ২:৫০ পূর্বাহ্ন
আপনার পোস্টে অনেককিছু জানা গেল। আর একটা কথা, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের সাথে ইসলাম বা খ্রিস্টান ধর্মের মিল অমিল কি দেখানো যাবে?
এপ্রিল ২৬, ২০১৩; ১২:৩৪ অপরাহ্ন
ভবঘুরে, আপনি আমার পোস্টটি ধৈর্যসহকারে পড়েছেন বলে খুশি হলাম। এজন্য ধন্যবাদ।
আপনি প্রশ্ন করেছেন-
ধর্ম বিষয়ে যতটুকু জানি তা হল, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে ইসলাম বা খ্রিস্টান ধর্মের অমিলই অমিল। মিল যৎসামান্য। বরং বলা যেতে পারে হিন্দু ধর্মের সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মের মিল মোটামুটি বেশি। অপরদিকে, ইসলাম বা খ্রিস্টান ধর্মের সঙ্গে ইহুদি ধর্মের খুব মিল লক্ষণীয়। ইসলাম ধর্মের সঙ্গে খ্রিস্টান ধর্মের মিল অনেকটাই। সেইজন্যই এগুলিকে সিমেটিক ধর্ম বলা হয়। তবে এ বিষয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আলাদা পোস্টে আলোচনা করা যায়। তখন হয়তো বের করা সম্ভব হবে এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের কতোটা মিল, কতটা অমিল।
এপ্রিল ২৯, ২০১৩; ৮:১১ পূর্বাহ্ন
ভাই ভবঘুরে, যে কোন একাধিক বস্তু বা বিষয়ের মধ্যে মিল অমিল খুজতে হলে তার ডি, এন,এ, খুঁজতে হবে। দেখুন পৃথিবীতে যত ধর্ম আছে তার মধ্যে ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের জন্ম মধ্যপ্রাচ্যে, আর সনাতন বা হিন্দু ধর্মের জন্ম ভারতে।
এই চারটার বাইরে পৃথিবীতে আর কোথাও এতো প্রভাবশালী কোন ধর্ম আসে নি।
অতএব ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম এই তিনটির মধ্যে কিছু মিল বা অমিল পাবেন, কিন্তু সনাতন বা হিন্দু ধর্মের সাথে না।
মে ১, ২০১৩; ১২:১৯ পূর্বাহ্ন
ভারতবর্ষে প্রধানত তিনটি ধর্মের উৎপত্তি। সনাতন বা হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম। বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মকে বলা হয় প্রতিবাদী ধর্ম বা নাস্তিক ধর্ম।
সনাতন বা হিন্দু ধর্মে নাস্তিক বলা হয় যারা বেদ বা বৈদিক ধর্ম বিশ্বাস করে না। বস্তুত বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের প্রবক্তাদের প্রতিবাদ ছিল ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধেই। তাই বৈদিক ধর্মের কিছু মন্দ দিকের সংস্কার করেই এই দুটি ধর্মের উৎপত্তি। সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীরা দলে দলে বৌদ্ধ ধর্মে চলে আসতে লাগল।
ব্যাপারটা এতো বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল যে, সনাতন ধর্মের ধারক ও বাহকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ল এবং বিপন্নবোধ করতে থাকল। এই ধর্মীয় অক্টোপাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু কৌশল আবিষ্কার করল সনাতন ধর্মের ধারক ও বাহকরা। সেযাত্রা রক্ষা হলেও পরবর্তীতে আবারও সনাতন ধর্ম সংকটাপন্ন হল। কী সেই সংকট? ইসলাম ধর্মের আগ্রাসন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যে বিপুলসংখ্যক অন্ত্যজ শ্রেণি তারা ধর্মান্তরিত হতে থাকল ভয়ে কিম্বা ঘৃণায়। সে ধারা আজও অব্যাহত। পাশাপাশি খ্রিস্টান ধর্মেরও প্রেমে পড়ে গেল হিন্দু ধর্মের একটা বড় অংশ। এক্ষেত্রে যতোটা না ছিল পরকালের ভয়, তারচেয়ে ইহজাগতিক লোভই ছিল বেশি।
মে ১, ২০১৩; ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন
বিস্তারিত লিখুন । আশায় রইলাম ।