“(ক) ১৯৭১-২০১৩ অবধি ৪২ বছরে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমে তাদের আগের সংখ্যার এক-চতুর্থাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। ২৮% ভাগ থেকে ৮% শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের গবেষণা গ্রন্থ ‘এ্যান ইনকোয়ারি ইন টু কজেস এন্ড কনসিকোয়েন্সেস অফ ডিপ্রাইভেশন অফ হিন্দু মাইনরিটিজ ইন বাংলাদেশ থ্রু দ্য ভেস্টেড প্রপার্টি এ্যাক্ট (প্রিপ ট্রাস্ট, ২০০০ সাল)’ বইয়ে দেখা যাচ্ছে ১৯৬৪ সাল থেকে অদ্যাবধি প্রতি বছর ১৯৬, ২৯৬ জন হিন্দু হারিয়ে যাচ্ছেন এদেশ থেকে। প্রতিদিন হারাচ্ছেন ৫৩৮ জন মানুষ। শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তির আওতায় এপর্যন্ত ৯২৫,০৫০ হিন্দু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৭৪৮,৮৫০ পরিবার হারিয়েছেন কৃষি জমি, ২৫১,০৮৫ পরিবার হারিয়েছেন বসতভিটা, ৪৮,৪৫৫ পরিবার হারিয়েছেন উদ্যান জমি, ২২,০২৫ পরিবার হারিয়েছেন বাড়ির পাশের পতিত জমি, ৭৯,২৯০ পরিবার হারিয়েছেন পুকুর, ৪,৪০৫ পরিবার হারিয়েছেন বাণিজ্যিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন জমি এবং ১১৪,৫৩০ পরিবার হারিয়েছেন আরো নানা শ্রেণীভুক্ত জমি।
(খ)আসুন আবার দেখি আবুল বারকাত কি বলেছেন? শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইনের আওতায় এপর্যন্ত ১.৬৪ মিলিয়ন একর জমি হারিয়েছে হিন্দুরা। এটা ১৯৯৫ সালের হিসাব। এরপর পদ্মা-মেঘনায় আরো জল গড়িয়েছে। আরো অনেক সহায়-সম্বলহারা হয়েছে হিন্দুরা। এপর্যন্ত ১.৩৪ মিলিয়ন কৃষি জমি (মোট বেদখল হওয়া জমির ৮১.৭ ভাগ), ১৫৬ হাজার একর বা¯ত্তজমি (মোট বেদখল হওয়া জমির ১০% ভাগ), ২৯ হাজার একর উদ্যান জমি (মোট বেদখলকৃত জমির ১.৭৪% ভাগ), ১১ হাজার একর পতিত জমি (০.৬৮% ভাগ), ৩২৯ একর বাণিজ্যিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত জমি এবং ৫৬ হাজার একর অন্যান্য জমি (৩.৪% ভাগ)-র অর্থমূল্য ২০০০ সালের বাজারদরে গড় দামে হিসাব করলে (প্রতি ডেসিমাল ৫৭৬০ টাকা), শুধুমাত্র শত্রু“ সম্পত্তি আইনের আওতায় হিন্দু পরিবারগুলো যত জমি হারিয়েছে, তার মোট আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ৯৪৪,৬৪০ মিলিয়ন টাকা যা বাংলাদেশের জিডিপি-র শতকরা ৫৫ ভাগ এবং ২০০০-২০০১-এ বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। আবুল বারকাত আরো বলেন নগদ আর্থিক মূল্যের বিবেচনা ছাড়াও মানসিক হতাশা ও ভেঙ্গে পড়া, পারিবারিক বন্ধন হারানো (পরিবারের তিন জন ওপারে ত’ চার জন এপারে), সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও স্বাধীনতার অভাবের মত বিষয়গুলোর কোন আর্থিক পরিমাপই হয় না।
১৬৫)তৎকালীন মুসলমান পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক ১৯৭১ সালে ৯ মাসব্যাপী পরিচালিত গণহত্যায় ৩০ লাখ বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়, এক কোটি হিন্দু শরণার্থী হয়ে ভারতে পালিয়ে যান (কেনেডি, ১৯৭১, পৃঃ ৬-৭) এবং ২ লাখ নারী ধর্ষিতা হন ( রায়, ২০০৭, পৃঃ ২৯৮) ইহুদীদের বিরুদ্ধে হিটলার পরিচালিত গণহত্যার সময় যেমনটি ঘটেছিল (এখানে একটু বলি, হিটলারের সাথে মুসলিম দেশগুলোর এলাই ছিলো, মুসলিম বহু নেতা ইহুদী নিধনে হিটলারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইহুদী হত্যা করেছে।) তেমনিভাবে হিন্দু পরিবারসমূহের প্রতিবেশী মুসলমানরা হিন্দুদের বাড়ীর গায়ে হিন্দু বুঝাতে হলুদ রঙে ইংরাজি ’এইচ’ চিহ্ন লিখে রাখত, যাতে ঘাতক পাকিস্তানী সৈন্যরা সহজে তাদের টার্গেট চিনতে পারে। (শ্যানবার্গ, ১৯৯৪)। ১৯৭১ সালে তৎকালের পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার গরিষ্ঠ সংখ্যক শিকার হচ্ছে হিন্দু, প্রায় ৮০%, এর পর রয়েছে মুসলমান (১৫%) এবং খ্রিষ্টান (৫%) রায়, ২০০৭, পৃঃ ৩১২)।
আমি এখানে পাকিস্তানি আর্মি বা রাজাকার, আলবদর, আলশামসের হাতে- কোনও ধর্ষিতার ছবি, বা হাত চোখ বেঁধে বদ্ধভূমিতে পড়ে থাকা লাশের স্তূপের ছবি, ঘড়, বাড়ি, গ্রাম জ্বালিয়ে দেবার ছবি দিলাম না। আমি এটা দেখতে পারি না। আমাকে’তো আরো লিখতে হবে। এইসব ছবি চোখে পড়লেই আমার চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। ঝাপসা চোখ নিয়ে লিখতে পারি না।
এটি ছিলো ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণা দেয়া একটি পোস্টার। কিন্তু, স্বাধীন বাংলাদেশে এটা কী সত্যি প্রতিফলিত। উঁহু, না। অথচ সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে এই পোস্টারেরই মূল বক্তব্যটি আছে। কিন্তু, স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা বাঙালি হতে পারিনি। হয় মুসলমান হয়েছি আর নয়তো, মুসলমানদের কাছে মুরতাদ, কাফের, নাস্তিক, হিন্দু, বৌদ্ধ হয়ে ঘড়-বাড়ি, ভিটে-মাটি হারা হচ্ছি, দেশে ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছি। আর নয়তো, মরছি। যারা এখনো বেঁচে আছে- তাদের চেয়ে আপোষই মানুষ পৃথিবীতে সবচাইতে বিরল। যদি তারা তাদের নাগরিক ও হিউম্যান রাইটস এর দিক থেকে বিচার করে।
দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট প্যারেড গ্রাউন্ডে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তাঁর সে কথার সাথে আমি একমত। তাঁর সেই কথাতে ছিলো মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার প্রতিফলন। হাজার মানুষের স্লোগান হচ্ছে- শেখ মুজিব জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। তিনি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে হাসি মুখে মঞ্চে উঠলেন, হাত নেড়ে তাঁর বক্তব্য ইংরেজিতে শুরু করতে নিলেন- লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান। কিন্তু দিল্লির জনগণ হইচই করে উঠলো- তারা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে বাংলায় কথা শুনতে চায়। বঙ্গবন্ধু হাসি মুখে চশমাটা একটু ঠিক করে নিয়ে বাংলায় বললেন-
… ‘’আমি বিশ্বাস করি সেক্যুলারিজমে, আমি বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে, আমি বিশ্বাস করি সোশ্যালিজমে। আমাকে প্রশ্ন করা হয়- শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে আপনার আদর্শে এত মিল কেন? আমি বলি- এটা আদর্শের মিল, এটা নীতির মিল, এটা মনুষ্যত্বের মিল, এটা বিশ্বশান্তির মিল।‘’
(আমি অংশ বিশেষ উদ্ধৃতি করছি)
লিঙ্ক: https://www.youtube.com/watch?v=7A7O_d09uTo
আমি এই মানুষটিকে ভীষণ শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি, ওনাকে দেখলেই আপন আপন একজন মানুষ মনে হয়, দিল খোলা একজন বাঙালি মনে হয়। তাঁর পায়ের কাছে গিয়ে বসতে ইচ্ছে করে। এই দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তাকে বলতে ইচ্ছে করে। আমরা যারা এই বাংলাদেশে এখনো বাঙালি আছি তাদের কাছে শেখ মুজিবের চেয়ে আপন বা আশ্রয় বোধকরি নেই। আমাদের সকল অভিমান, অভিযোগ তাকেই বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু হায়! আমরা আমাদের এই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির বুকেও ১৮ টি বুলেট গেঁথে দিয়েছি। তিনি যতদিন বাঁচবেন, বাংলাদেশকে যে তিনি পিছিয়ে যেতে দেবেন না। এটা একটা বাচ্চাও বোঝে। তাই তাকে হত্যা করাটা, অমানুষের বাংলাদেশ গড়ার জন্য, বা ছায়া পাকিস্তান বানানোর জন্য বড় প্রয়োজন ছিলো। বাঙালিরা না ইসলামিক ভাবধারার বাংলাদেশিরা এটা পেরেছে। তাকে হত্যাই ছিলো বাংলাদেশে সেক্যুলার বাঙলার কফিনের শেষ পেরেক। এরপর আজ পর্যন্ত অন্ধকার আর অন্ধকার। এই দেশ আজ কবর। আমাদের জাতির পিতার সাথে বাঙালি জাতির মুক্ত চিন্তার অবশিষ্ট আত্মার অংশটুকুও সেদিন বাংলাদেশে ঘুমিয়ে গিয়েছে।
জিয়া ক্ষমতায় এসেই ইসলাইমাইজেশনে পাকিস্তানের বাকী কাজটুকু সুসম্পন্ন করতে হাত দিলেন সংবিধানে। শেখ মুজিবুর রহমানের সংবিধানের যে চারটি মূলনীতি ছিলো- ১. জাতীয়তাবাদ, ২. গণতন্ত্র, ৩. সমাজতন্ত্র এবং ৪. ধর্মনিরপেক্ষতা৷ সেই মূলনীতির উপরে ইসলামিক টুপি পড়িয়ে দিলেন। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের শুরুতে প্রস্তাবনার আগেই ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম'(দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করলাম) – এই কথাটি যুক্ত করে দিলেন।
(গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, প্রথম পাতা।)
এখন সেক্যুলার, বা বিধর্মীরাও এই বাংলাদেশের সংবিধান পড়ার সময় – বিসমিল্লাহ্ বললেন। এটা ওনার জন্য দরকার ছিলো। ওনার জনগণের, জাগ্রত তৌহিদ জনগণের সাপোর্ট দরকার ছিলো। কারণ, তিনি গণতান্ত্রিক উপায়ে তো ক্ষমতায় আসেননি। এবং তার সাথে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে। একটি উদাহরণ দেই।
মুক্তি যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কর্নেল বেগ তাকে একটি চিঠি লিখেন, যেই চিঠিটি পরবর্তী কালে পাকিস্তানের ডন পত্রিকা ২০১৩, অক্টোবরে সম্ভবত পাবলিশ করে।
(মেজর জিয়াউর রহমান’কে লেখা পাকিস্তানের কর্নেল বেগ-এর চিঠি। ১৯৭১, ২৯-শে মে।)
Major Zia Ur Rahman, Pak Army, Dacca
We all happy with your job. We must say good job! You will get new job soon.
DonÕt worrie about your family. Your wife and kids are fine.
You have to be more carefull about major Jalil.
Col. Baig Pak Army
May 29. 1971
(মেজর জিয়াউর রহমান, পাক আর্মি, ঢাকা তোমার কাজে আমরা সবাই খুশি। আমাদের অবশ্যই বলতে হবে তুমি ভালো কাজ করছো। শিগগিরই তুমি নতুন কাজ পাবে। তোমার পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ো না। তোমার স্ত্রী ও বাচ্চারা ভালো আছে। তোমাকে মেজর জলিল সম্পর্কে আরো সতর্ক থাকতে হবে।
কর্নেল বেগ, পাক আর্মি মে ২৯, ১৯৭১)
জিয়ার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ তার আরো কারণ, তিনি যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন। ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিকে আবার মেইন স্ট্রিমে আনেন। দেশত্যাগী রাজাকার জামাত নেতাদের পুনরায় ইসলামিক রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেন। সো, পাকিস্তান সরকারের যা যা দরকার বা চাওয়া ছিলো, জিয়ার মধ্যে তার সকল এজেন্ডা বাস্তবায়নের একটি স্পষ্ট প্রচেষ্টা ইতিহাসে দেখা যায়। আর তাছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নীল নকশার অনুমোদন তার বাড়িতে হবার বিষয়টা এখন জনসম্মুখে বা মিডিয়াতে চলে এসেছে। মোস্তাক, ডালিমের সাথে তার একটা আঁতাত নিয়ে যুক্তি সঙ্গত বিতর্ক আছে। তাই স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের ইসলামাইজেশনে তাকে এক প্রকার গড ফাদার বলা যেতে পারে। পাকিস্তানের জেনারেল জিয়াউল হকের মতোই। তিনিও পাকিস্তানে র্যাডিক্যাল ইসলামাইজেশনের পথ করে দেন। কারণ তিনিও নির্বাচিত বা লিগ্যাল ভাবে ক্ষমতায় আসেননি। তারও পাকিস্তানি ইসলামি তৌহিদ জনতার সাপোর্ট দরকার ছিল।
জাতি যেমন তেমন শাসক পেয়েছে। এরা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড’কেও জাস্টিফাই করে- যে তিনি বাকশাল কায়েম করেছিলেন। তাই তাকে নিহত হতে হয়। বাহাত্তুর থেকে পচাত্তুর! হায় বাকশাল কবে? আর বাকশালের শাসন আমল কতদিন? ছিঃ বাংলাদেশি ছিঃ তোমাদের জন্য উপযুক্ত শাসক হুমো এরশাদই ঠিক ছিলো। আর তার দশ বছরে স্বৈরশাসন। কই তাকে কেউ তো হত্যা করেনি। কে করবে? এই দেশের জন্য তিনিই উপযুক্ত হয় তো। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো সেক্যুলার নন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম একজন নেতা নন। তিনি একটি কাজই মন দিয়ে করেছেন। তা হলো- সংবিধানের যে চারটি মূলনীতি ছিলো- ১. জাতীয়তাবাদ, ২. গণতন্ত্র, ৩. সমাজতন্ত্র এবং ৪. ধর্মনিরপেক্ষতা৷ এর মধ্যে ৪. ধর্মনিরপেক্ষতার খৎনা নিজের হাতে দিয়েছেন। ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সংবিধানের ঐ অষ্টম সংশোধনীতে বলা হয়, ‘‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাবে৷”
(গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, রাষ্ট্রধর্ম।)
এরশাদের এই রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানে যোগ করা যেনো বাচ্চাদের কে হারানোর একটি কয়েন টসের ট্রিক। হেড উঠলে আমি জিতবো আর টেল উঠলে তুমি হারবে। অন্যান্য ধর্ম শান্তিতে পালন করবে- সেখানেও আমি আছি, আবার রাষ্ট্রধর্মও আমার। মধ্যেখানে টসের তুমি আর সংবিধানের অন্যান্য যেনো একটা মস্ত ফাঁকি। ধরতে পারলেও ধরা না ধরতে পারলেও ধরা। গাছেরটাও খাবো, তলারটাও কুড়াবো।
যে বঙ্গবন্ধু আজীবন বিদ্রোহী dissident ছিলেন, যিনি সকল জাত, পাত, ধর্মের ঊর্ধ্বে একটি সোনার বাঙলার স্বপ্ন দেখতেন, এই হুমো এরশাদের তার সংবিধানকে কী করেছে এটা দেখতে পেলে কী তিনি সেই শাসকের বিরুদ্ধে লড়তেন না? তিনি কি মেনে নিতেন এই সংবিধান। তবে কেউ যে লড়েনি তাও নয়।
পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলা হলেও, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এখনো বহাল আছে৷ তাই সেই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের জন্যই এখন উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলছে, যা দায়ের করা হয়েছিল ১৯৮৮ সালে৷ অর্থাৎ যখন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে সংযোজন করা হয়, সে বছরই৷
২৭ বছর আগে হাইকোর্টে প্রথম এ বিষয়ে রিট আবেদন করার পর, তারপরে আরো একটি সম্পূরক রিট হয়৷ রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে তখন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন দেশের ১৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক৷ তাঁদের মধ্যে ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল, ড. কামাল উদ্দিন হোসেন, কে এম সোবহান, বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, কলিম শরাফী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, সিআর দত্ত প্রমূখ৷ তখনই আদালত রুল ইস্যু করে৷ এরপর ২০১১ সালে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলে আরেকটি সম্পূরক রিট হয় হাইকোর্টে এবং তাতেও রুল ইস্যু হয়৷
যাইহোক, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা হলো, সংবিধানে বিসমিল্লাহ্ যোগ হলো, ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি এবং রাজাকারদেরকে পুনর্বাসন করা হলো, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলো, এখন WHAT NEXT ?
এবার রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দেশে জেহাদ ও ইসলামিক জঙ্গিবাদের সূচনা:
নানান খবর ও গবেষণার তথ্য ও লিঙ্ক।
স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানকে ইসলামাইজেশনের দিকে নিয়ে যাওয়া সৌদি আরব ও পাকিস্তানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র মেজর জিয়ার স্ত্রীর বেগম খালেদা জিয়ার দুই মেয়াদের শাসন আমলেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং উত্থান। গনহত্যাকারি মুসলিম জামাত নেতাদের মন্ত্রীসভায় স্থান দেয়া, বাংলা ভাইয়ের মতো, শায়খ আব্দুর রহমানের মতো ভয়ঙ্কর জঙ্গিরা তার সময়েই মাথা চারা দিয়ে ওঠে বাংলাদেশে। এবং নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। হরকাতুল জিহাদ, বা জামাতুল মুজাহিদিন, ছাত্র শিবির, জামাত ইসলামি, জেএমবির মতো সংগঠনগুলো রাষ্ট্রের মূল মূল প্রতিষ্ঠান যেমন- স্কুল, কলেজ, মেডিকেল, ব্যাংক, সরকারি প্রতিষ্ঠান, পত্র-পত্রিকা, মিডিয়াগুলোকে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে নেয়। হাতের পায়ের রগ কেটে দেয়ার একটি ট্র্যাডিশন শুরু হয়।
মুক্তচিন্তার লেখক শিল্পী নেতাদেরকে হুমকি বা হত্যা করতে শুরু করে। রমনা বটমূলে হামলা, উদীচী হামলা হয়। তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী (বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর) জনসভায় বোমা মারা হয়। বাংলাদেশে যেতে থাকে ঘোর অন্ধকারের দিকে।
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে হুজি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এটি মূলত আফগান যুদ্ধফেরত মুজাহিদদের নিয়ে গড়ে ওঠা পাকিস্তানভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন। এ সংগঠনের মূল নেতা আফগান মুজাহিদদের অন্যতম কমান্ডার পাকিস্তানি নাগরিক সাইফুল্লাহ আখার। তখন হরকাতুল জিহাদের নেতৃত্বে ছিলেন যশোরের মণিরামপুরের কমান্ডার মুফতি আবদুর রহমান ফারুকী। আফগান যুদ্ধে অংশ নেয়া বাংলাদেশি তরুণদের কাছে তিনি ছিলেন স্বপ্নপুরুষ। প্রায় ছয় বছর গোপনে সংগঠিত হলেও হুজি ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৯২ সালের ৩০ এপ্রিল। ড. আবুল বারকাতের গবেষণার তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশে ১২৫ জঙ্গি সংগঠনের মধ্যে রয়েছে আফগান পরিষদ, আহলে হাদিস আন্দোলন, আহলে হাদিস যুবসংঘ (এএইচজেএস), আহলে হাদিস তবলিগা ইসলাম, আহসাব বাহিনী (আত্মঘাতী গ্রুপ), আল হারামাইয়েন (এনজিও), আল হারাত আল ইসলামিয়া, আল ইসলাম মার্টারস ব্রিগেড, ইয়ং মুসলিম, এবতেদাতুল আল মুসলামিন, এহসাব বাহিনী, ওয়ারেট ইসলামিক ফ্রন্ট, ওয়ার্ড ইসলামিক ফ্রন্ট ফর জিহাদ, কালেমায়ে-জামাত, কালেমা-ই-দাওয়াত (অধ্যাপক আবদুল মজিদ এ দলের প্রধান)।
বাংলাদেশে ১২৫টি সংগঠন থাকলেও সমগ্র বিশ্বে রয়েছে ১৫৬টি জঙ্গি সংগঠনের কর্মতৎপরতা। জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের ১৬টি দেশ বা সংস্থা ১৫৬টি সংগঠনকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এই ১৬টি দেশ বা সংস্থা হলো অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মিসর, ইরান, ভারত, কাজাখস্তান, সৌদি আরব, চীন, রাশিয়া, তিউনেসিয়া, তুরস্ক, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য সর্বাধিক ৬৮টি সংগঠনকে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করে। আর জাতিসংঘ কাতাব হিজবুল্লাহ, ইসলামিক স্টেট অব ইরাক, বোকো হারাম, আল-কায়েদা, আল নুসরা ফ্রন্টকে তাদের জঙ্গি তালিকায় রেখেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২৯টি এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের তালিকায় ৬০টি সংগঠনকে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
চলতি খবরের সূত্র:
আজ বাংলাদেশে কমপক্ষে অর্ধশত উগ্রবাদ ও জঙ্গি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের কার্যক্রম চলছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যে উঠে আসলেও এর মধ্যে নিষিদ্ধ মাত্র ৬টি সংগঠন। সক্রিয় কার্যক্রম চালাচ্ছে কমপক্ষে ২০টি সংগঠন। যে ৬টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলোর কর্মকাণ্ডও পুরো বন্ধ হয়নি। বরং নিষিদ্ধগুলোই বেশি সক্রিয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে র্যাব মোট ১ হাজার ১৮১ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছে। র্যাবের অভিযানে গ্রেফতারকৃতরা ১৬টি সংগঠনের। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও ১৪ সংগঠনের হাজারেরও বেশি জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। অথচ এরপরও নিষিদ্ধ মাত্র ৬টি জঙ্গি সংগঠন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অনেকেই জামিনে বেরিয়ে একইভাবে জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে পড়েছে। অনেকে জড়িত লিস্টেট ব্যক্তিদের খুনে। জামিনে বেরিয়ে যাওয়া জঙ্গি সদস্যদের সঠিক নজরদারিও চলছে না বলে দাবি অপরাধ বিশেষজ্ঞদের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, বিগত জোট সরকারের আমলে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে শাহাদত-ই-আল হিকমা, হরকাতুল জিহাদ (হুজি), জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি) সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করা হয়।
মহাজোট সরকারের আমলে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর হিজবুত তাহরিরকে নিষিদ্ধ করা হয়। এ ছাড়াও আরো প্রায় অর্ধশত সংগঠনের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। ওই সময় গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করে, ছদ্মনাম ব্যবহার করে জঙ্গি নেতারা সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
২০১৩ সালের জুনে বরগুনার দক্ষিণ খাজুরতলা এলাকা থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানীসহ ৩১ জঙ্গি গ্রেফতার হয়। তাদের সহযোগীদের ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলায় অভিযান চালিয়ে হিটলিস্ট উদ্ধার করা হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে গোয়েন্দা বাহিনী।
২০১৩ সালে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখায় সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনের একটি তালিকা দেয়। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আল্লাহর দল, ইসলামিক সলিডারিটি ফ্রন্ট, তামীরউদ্দীন বাংলাদেশ, তৌহিদী ট্রাস্ট, হিজবুত তাওহিদ, শাহাদত-ই-নবুয়ত ও জামাত-আস-সাদাত নিষিদ্ধ করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়।
সে অনুযায়ী ওই বছরের ২৬ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ৮টি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। তবে এর মধ্যে শুধু মাত্র আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে (এবিটি) নিষিদ্ধ করা হয়। বাকিগুলোকে নজরদারিতে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সবচেয়ে সফল সংগঠন এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব সূত্র জানায়, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে র্যাব সর্বশেষ ১৬টি সংগঠনের মোট ১ হাজার ১৮১ জনকে গ্রেফতার করে। এগুলোর মধ্যে জেএমবির সদস্যই ৬১০ জন, হিজবুত তাহরিরের ২৪৪ জন, হিজবুত তাওহিদের ১৪৪ জন, হুজিবির ৯০ জন, বিইএমের ৩ জন, ইসলাম ও মুসলিমের ৬ জন, জয়েস-ই-মোহাম্মদের ৮ জন, আল্লাহর দলের ৮ জন, হিজবুল মুজাহীদীনের ১ জন, লস্কর ই-তৈয়বার ৬ জন, খেলাফত মজলিসের ২ জন, উলফা সদস্য ২ জন, তাসাউফ মহলের ১০ জন, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের ৯ জন, শহীদ হামজা ব্রিগেডের ৩২ জন।
র্যাব সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে র্যাবের পক্ষ থেকে হিজবুত তাওহিদসহ অন্য জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেয়া হয়। যদিও আনসারুল্লাহ বাংলাটিমকে নিষিদ্ধ করা হয় তবে হিজবুত তাওহিদকে নিষিদ্ধ করা আরো বেশি জরুরি।
বাংলাদেশের জঙ্গি রাজনীতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কিছু উগ্র ধর্মীয় সংগঠন ১৯৮০ সাল থেকেই তাদের কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে পরিচালনা করে আসছে। মোহাম্মদ আজিজুর রহমান এবং মোহাম্মদ বিন কাসেম ২০১১ সালে একটি গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন যে, ‘আমরা ঢাকাবাসী’ ও ‘খাতুমে নবিয়াত আন্দোলন’ (এটি পাকিস্তানের অংশ) ১৯৮০ সালে থেকে পাকিস্তানের খাতুমে নবিয়াতের অর্থায়নে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে।
[লিংক: http://www.scribd.com/doc/215209705/]
Understanding Religious Militancy and Terrorism in Bangladesh