সুইডিশ সাংবাদিক ও লেখক বারটিল লিন্টনার ১৯৯১ সালে কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের উপর একটি প্রতিবেদন নির্মাণ করেন। সে প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ১৯৮০ সালের প্রথম দিকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা তাদের একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন Rohingya Patriotic Front (RFT) ভেঙে মোহাম্মদ ইউনুসের (আরকান) নেতৃত্বে Rohingya Solidarity Organisation (RSO) নামে একটি জঙ্গি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। সংগঠনটির কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা উখিয়া থেকে পরিচালিত হয়।
জামাতি ইসলাম, হরকাতুল জিহাদ, আরএসও (Rohingya Solidarity Organisation) ওদের মধ্যে যে কী সম্পর্ক আমি যদি এটা মৌখিক ভাবে বলি তাহলে অবিশ্বাস্য দেখাবে। কিন্তু এটা বাস্তব, আমার প্রমাণ আছে। আরএসও Rohingya Solidarity Organisation মুখপত্র একটি আরবি একটি উর্দু আরেকটি বাংলা। আরবিটা হলো- আলকাদাম। ১৯৯১ সালে ওই আলকাদাম পত্রিকায় একেবারে সচিত্র, ওখানের লিস্টের মধ্যে বের হয়েছে জামাতের চৌদ্দগ্রামের এমপি ডাঃ তাহের ১৯৮৭/৮৯ পর্যন্ত ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। আরেকজন আমিরুল ইসলাম মুকুল, তিনি ছিলেন সাধারণ সম্পাদক, তারা আরাকানে ভারী অস্ত্র, মানে শুধু ভারী অস্ত্র না, একে ফরটি সেভেন বা রোহিঙ্গাদের ওখানে ওই অস্ত্র যে কী অস্ত্র তা সাব্যস্ত বা চিহ্নিত করতেও মানে হিমশিম খাইতে হবে। এবং আইআইএফএসও মানে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফেডারেশন অফ স্টুডেন্ট। এটা সারা বিশ্বের একটা ইসলামি রাজনীতি যারা করে এবং যারা জিহাদ করে তাদের নিয়ে কাজ করে, তাদের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। এই সংস্থার মাধ্যমে জামাতি ইসলামের ছাত্র শিবিরের মোহাম্মদ তাহের কী অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া, কী অস্ত্র আনা, কী টাকা দেয়া সব কিছু ওদের তথ্যাবধায়নে হতো।
- হরকাতুল জেহাদের প্রাক্তন কর্মী, হাসান রফিক।
লিন্টনার আর উল্লেখ করেন যে, RSO বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী, আফগানিস্তানের গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের হিজবি-ই-ইসলাম, কাশ্মীরের হিজবুল-মুজাহিদিনসহ বহু জঙ্গি সংগঠন থেকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা পেয়ে আসছে। আফগান জঙ্গি প্রশিক্ষকরা উখিয়াতে RSO এর কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তিনি লিখেছেন:
Afghan Instructors were seen in some of the RSO camps along with the Bangladesh-Burma border while nearly 100 RSO rebels were reported to be undergoing training in the Afgan province of Khost with Hizb-e-Islami Mujahideen.
[সূত্র:
‘Tension Mounts in Arakan State’, Jane’s Defence Weekly
প্রতিবেশী মায়ানমার থেকে নানান জঙ্গি সংগঠনের মাধ্যমে আরাকানের মুসলিম যুবকরা বাংলাদেশে আসছে জেহাদের প্রশিক্ষণ নিতে। জামাত ইসলামি, হরকাতুল জিহাদ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন আরএসও এরা সবাই মিলে আরাকানকে ইসলাম কায়েম করার জন্য জোরেশোরে প্রস্তুতি চলছিলো। আরাকানে জেহাদ করতে গিয়ে বাংলাদেশের অনেক জেহাদি নিহত হয়। আফগানিস্তান থেকে ট্রেনিং প্রাপ্ত জেহাদি বাংলাদেশে দশ হাজারের উপর। বাংলাদেশে জিহাদি ট্রেনিং প্রাপ্ত এমন জিহাদির সংখ্যা ১ লক্ষের বেশী।
১৯৯১ সালে কক্সবাজার এলাকা ও রোহিঙ্গা মিলিটারি ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা ও অন্যান্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই নিউজ স্টোরি তৈরি করা হয়েছে]
১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত অনেক বাংলাদেশি মুজাহিদিন আফগানিস্তানে গিয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। যুদ্ধ সমাপ্তির পর তারা দেশে ফিরে আসে বাংলাদেশকে একটি শরিয়াভিত্তিক ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে। কত সংখ্যক বাংলাদেশি মুজাহিদিন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তার পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে তখনকার ডানপন্থী রাজনীতির আদর্শিক বন্ধু প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সরকার বাংলাদেশি মুজাহিদিনদের মদদ দিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন লিন্টনার, ২০০২ সালে মোহাম্মদ গোলামের বরাত দিয়ে এক লেখায় তিনি উল্লেখ করলেন:
The late Bangladeshi scholar Muhammad Gulam agrued that Maj. Gen. Ziaur Rahman, who seized power in the middle 1970s ‘successfully changed the image of Bangladesh from a liberal Muslim country to an Islamic country.
[লিংক:
http://www.satp.org/satporgtp/publication/faultlines/volume14/Article1.htm
‘Bangladesh Extremist Islamist Consolidation’]
জেনারেল এরশাদের শাসনামলে কোনো শক্তিশালী উগ্রবাদী কার্যক্ষম লক্ষ্য করা যায়নি। এর পেছনে মোটা দাগে দুটি কারণ ছিল। প্রথমত, আফগান-সোভিয়েত যুদ্ধে দেশীয় মুজাহিদিনরা আফগানিস্তানের মুজাহিদিনদের পক্ষে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। ফলে ১৯৮৯ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো ধরনের উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি। দ্বিতীয় কারণটি হল, জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে অন্যান্য বিরোধী দলগুলি, এমনকি জামায়াতে ইসলামীও অভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করে আসছিল। বড় দুটি দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমন্বয় থাকায় ধর্মীয় উগ্রবাদ ততটা লক্ষ্য করা যায়নি।
প্রসঙ্গত, অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত সময়কালকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ‘ইনকিউবেশান পিরিয়ড’ বলে মনে করেন। রহমান এবং কাসেম তাদের সেই গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন যে, ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশীয় জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান এবং দেশে-বিদেশে তাদের নেটওয়ার্কের ব্যাপক প্রসার ঘটে:
Since 1999, Bangladesh has witnessed the rise of militant groups and terrorist outfits both homegrown and internationally linked including al-Qaeda.
২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সালের শেষ পর্যন্ত জঙ্গিবাদের ভয়াবহ রূপ বাংলাদেশ দেখেছে। বেড়ে গিয়েছিল যত্রতত্র বোমা হামলার ঘটনা। এসব বোমা হামলায় মারা গেছে অসংখ্য মানুষ। মূলত, মূলধারার রাজনীতি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে:
Islamist radicalization, extremism and militancy have gained accelerated currency in Bangladesh politics in recent years.
[সূত্র:
Riaz, 2008; Quamruzzaman, 2010; Datta, 2007]
২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত যে সকল জঙ্গি সংগঠন অবাধে তাদের কার্যকলাপ পরিচালনা করেছিল, তাদের মধ্যে চারটি জঙ্গি গোষ্ঠী জনবল, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, সক্ষমতা ও দক্ষতার জন্য বেশি আলোচিত ছিল। সেগুলো হল, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদুল ইসলামী ও হিজবুত তওহিদ। বাংলাদেশে জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম, গবেষক ও পশ্চিমা দুনিয়ার আগ্রহের কারণ হয়ে দাড়ায়। তারা খুঁজতে থাকে বাংলাদেশ জঙ্গি গোষ্ঠীর নতুন আশ্রয়স্থল হওয়ার পিছনের কারণ এবং জঙ্গি গোষ্ঠীর কার্যক্ষমের পরিধির বিষয়ে।
বিশ্বব্যাপী এই জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য তৎকালীন বিএনপি-জামাত সরকারে জঙ্গিবান্ধব মনোভাব এবং অনেকে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সহায়তাকেই দায়ী করা হয়। জঙ্গিদের আইনের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন পর্যায় থেকে চাপ থাকায় বিএনপি-জামাত জোট সরকার ২০০৫ সালের শেষের দিক দিয়ে কিছু ব্যবস্থা নেয়; কিছু জঙ্গি নেতার ফাঁসি হয়েছিল তখন। ২০০৭ সালে দত্ত এক লেখায় উল্লেখ করেন:
জঙ্গিদের রুট ম্যাপ
The government has not taken any action against this Islamist militancy until 2005 despite local and international media reports and even political and civil society concerns.
[সূত্র:
‘Islamic militancy in Bangladesh: The threat from within South Asia’: Journal of South Asian Studies, 30 (1), 145-170]
অনেকটা অনিচ্ছায় বিএনপি-জামাত জোট সরকারকে এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল। অনিচ্ছায় বলছি এ জন্য যে, জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড দমনে যে সব পদক্ষেপ, কৌশল ও রাজনৈতিক ইচ্ছা প্রয়োজন ছিল, তার কোনোটিই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ছিল না। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কানাডিয়ান ইন্টেলিজেন্স সিকিউরিটি সার্ভিসেস এক রিপোর্টে উল্লেখ করে:
Bangladesh government is not doing enough to prevent the country from becoming a haven for Islamic terrorists in South Asia and pointed out that religious extremists are connected to Al Qaeda.
[সূত্র:
Canadian Security Intelligence Service (CSIS) in December 2003]
বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের অনেক নেতাই জঙ্গি গোষ্ঠীর ‘গডফাদার’ হিসেবে কাজ করেছিলেন। জঙ্গি সংগঠন জেএমজেবির নেতা মওলানা শায়খ রহমান ও বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে বিএনপির একাংশের এবং জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্কটি ছিল ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল ইসলাম (জঙ্গি কর্মকাণ্ডের উপদেষ্টা), ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস দুলু (২০০৪ সালে এপ্রিল মাসে দুলুর বাসায় শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাই দলবল নিয়ে মিটিং করেন), গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির (যিনি মোবাইলে শায়খ রহমান ও বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতেন এবং ওদের বাসায় দাওয়াত দিয়েছিলেন), তৎকালীন মেয়র মিজানুর রহমান মিনু (মাহাবুব নামের এক জঙ্গির কাছে বাংলা ভাইয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকার ব্যাংক চেক দিয়েছিলেন), সাবেক সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফা (যিনি পুঠিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা বাংলা ভাইয়ের হাতে তুলে দেন) ও সংসদ সদস্য আবু হেনার (যিনি আপন ভাতিজার মাধ্যমে বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন) নিবিড় সম্পর্ক ছিল জেএমজেবির সঙ্গে।
[সূত্র:
প্রথম আলো; ৩০ জানুয়ারি, ২০০৭]
বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য অনেকগুলি স্বতন্ত্র গবেষণা হয়েছে। রহমান ও কাসেমের গবেষণা (২০১১) অনুযায়ী, দেশে জঙ্গি সংগঠনের সংখ্যা ৭০। ২০০৫ সালে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ৩৩টি ইসলামি জঙ্গি সংগঠনকে শনাক্ত করেছিল। পরে, ২০০৯ সালে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলোও ৩৩টি জঙ্গি সংগঠন রয়েছে বলে সরকারকে রিপোর্ট দিয়েছিল।
জঙ্গি সংগঠনের সংখ্যা কম বেশি হয়। কারণ কৌশলগত কারণে ওদের চেহারা বদলায়, নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করে। রহমান ও কাসেমের গবেষণায় (২০১১) দেখা যায় যে, দেশে ১৮ জানুয়ারি, ১৯৯৯ থেকে ৪ নভেম্বর, ২০১০ পর্যন্ত প্রায় ১০০টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। বোমা হামলায় নিহত হয়েছে ১৩৬ জন, আহত হয়েছে ২ হাজার ৪৮৮ জন।
এবার উল্লেখযোগ্য জঙ্গি হামলাগুলোর কথা পাঠকদের জানাতে চাই।
বাংলাদেশে ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ মাস যশোরে উদীচী শিল্প গোষ্ঠীর উপর প্রথম বোমা হামলা হয়। মারা যায় ১০ জন, আহত হয় ১০৬ জন।
একই বছরের অক্টোবরের ৮ তারিখে খুলনায় আহমদিয়াদের মসজিদে বোমা হামলায় মারা যায় আট জন, আহত হয় ৪০ জন।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিলে রমনা পার্কের বটমূলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ নিহত ও একশরও বেশি আহত হয়েছে।
২০০১ সালের শেষের দিকে, ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বরে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সভায় জঙ্গিদের বোমা হামলায় ৮ এবং ৪ জন যথাক্রমে মারা যান। আহতের সংখ্যা শতাধিক।
২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরাতে শক্তিশালী দুটি বোমা হামলায় মারা যায় ৩ জন, আহতের সংখ্যা ছিল ১২৫এরও বেশি।
একই বছরের ৭ ডিসেম্বর সিরিয়াল বোমা হামলা চালানো হয় ময়মনসিংহের সিনেমা হলগুলিতে। মারা যায় ১৮ জন, আহত হয়েছিলেন ৩০০।
২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জে শহরে দানিয়ার এক মেলাতে বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় ৮ জনকে। আহত হন অনেকে।
২০০৪ সালের ১২ জানুয়ারি সিলেটের হযরত শাহ জালাল দরগার শরীফে এক বোমা হামলায় ১০ জন মারা যায় এবং আহত হয় ১৩৮ জন।
২১ মে, ২০০৪ সিলেটে তখনকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে লক্ষ্য করে চালানো বোমা হামলায় হাইকমিশনার বেঁচে গেলেও মারা যায় অন্য দুজন, আহত হয় ২০ জন।
একই বছরের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক সিরিয়াল গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি ঘটে। এতে নিহত হয় ২৩ জন, আহত হয় পাঁচ শতাধিক। এ হামলায় তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের একটি বৃহৎ অংশ, বিশেষ করে বিএনপির শক্তিশালী তরুণ নেতৃত্ব ও জামাতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে; বিষয়টি এখন বিচারাধীন। আওয়ামী লীগ প্রধান তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেলেও মারা যান মহিলা আওয়ামী লীগ প্রধান আইভি রহমান।
২০০৫ সালে ১ জানুয়ারি বগুড়া ও নাটোরে বোমা হামলায় মারা যায় ৩ জন, আহতের সংখ্যা সত্তরের অধিক।
একই মাসে হবিগঞ্জের বৈধর বাজারে আওয়ামী লীগের সমাবেশে বোমা হামলায় মারা যান সাবেক অর্থমন্ত্রী গোলাম কিবরিয়াসহ পাঁচ জন। আহত হয় ১৫০ জন।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে একযোগে প্রতিটি জেলায় বোমা হামলা করা হয়। জঙ্গিরা তাদের অপারেশনাল সক্ষমতা কেমন তা দেশবাসীকে জানান দেয় এভাবেই।
নভেম্বরের ১৪ তারিখে ঝালকাঠিতে দু’জন সহকারী জেলা জজকে বোমা মেরে হত্যা করা হয়।
২৯ নভেম্বরে চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে একসঙ্গে বোমা হামলা করা হয়। এ হামলায় নিহতের সংখ্যা ৯, আহতের সংখ্যা ৭৮।
২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় উদীচী কার্যালয়ের সামনে এক বোমা হামলায় নিহত হয় ৮ জন, আহত ৪৮ জন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বোমা হামলায় এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা ৩৭, সেটা ২০০৪ সালের ঘটনা । ২০০৫ সালে বিভিন্ন হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা ৩৬। আহতের দিকে দিয়ে ২০০৫ সাল এগিয়ে (৯৫২ জন); তারপর রয়েছে ২০০৪ সাল (৭৬৫ জন)।
গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৩ সালে জেএমবি, হিজবুত তাহিরির, হরকাতুল-জিহাদ-উল-ইসলাম (হুজি) ও ইসলামিক বিপ্লবী পরিষদকে (আইডিপি) নিষিদ্ধ করার জন্য বিএনপি-জামাত জোট সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারের ভিতরের জঙ্গিবাদের সমর্থক অংশের বাধার কারণে সরকার তা করতে ব্যর্থ হয়, বরং জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সহায়তা দিয়ে যাওয়া হয়েছে।
দেশের ভিতরে যে সকল জঙ্গি সংগঠন সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী তাদের জন্ম, উদ্দেশ্য,পরিধি, অর্থায়নের উৎস সহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য নিচে দেওয়া হল। নিজের বর্ণিত তথ্যের উৎস হল: ‘বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ’ (BIPSS: http://www.bipss.org.bd/), ‘সাউথ এশিয়া টেরোরিজম পোর্টাল’ (SATP: www.satp.org) এবং রহমান এবং কাসেমের ২০১১ সালের গবেষণাপত্র।