পর্ব- ১
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি বইয়ের ফ্ল্যাপে পড়েছিলাম- ‘তীর সামনে ছুটে যাবার আগে কিছুটা পিছিয়ে যায়’।
আমার লেখাটিও অনেকটা এই কথাটির মতো। যে অতীত সময়ের তীর- আমাদের এই বর্তমানকে বিদ্ধ করেছে এবং আহত বা নিহত করেছে, সেই সময় তীরটি ছোড়ার সময়টিকে জানতে হলেও আমাকে যেতে হবে তারও আগে। এই বর্তমানে পৌঁছাতে হলে একটু পিছন থেকেই শুরু করতে হবে। যারা বাঙলায় এবং বাংলাদেশের এই বর্তমান ইসলামাইজেশনের কারণ জানতে সত্যিকার কৌতূহলী, তাদেরকে আমি চেষ্টা করবো একটি স্লাইড সো-এর মতো সময় পরিভ্রমণ করাতে।
আমাদের অস্থিরতা:
বর্তমানে বাংলাদেশের একজন নাগরিকও বোধহয় দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন। সোশ্যাল এনট্রপির মাত্রা এই দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে। সমাজের প্রতিটি স্তরে যেনো মাইন পেতে রাখা। প্রতিটি নাগরিক যেন একেকটি তাজা ককটেল। শুধু পিন খুলে নিলেই প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ফেটে পড়বে। পৃথিবীর এমন কোনও যাদু নেই, যে এই সতের কোটি বাংলাদেশীদের আত্মায় এখন শান্তি এনে দিতে পারে। সরকারী দল ব্যতীত সরকার দিন দিন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, সরকার জনগণের ভাষা বোঝে না, জনগণ সরকারের ভাষা বোঝে না। এমনকি জনগণ পরস্পর পরস্পরের প্রতি দিন দিন অসহিষ্ণু হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় ঐক্য শূন্যের কোঠায়, সামাজিক অবস্থান এবং মত বিভেদ এখন চরম পর্যায়, পারিবারিক বন্ধন স্মরনকালের মধ্যে সবচেয়ে আলগা। আমরা একান্নবর্তী পরিবার থেকে সিঙ্গেল পরিবার, এবং সিঙ্গেল পরিবার থেকে একেবারেই সিঙ্গেল হওয়ার পথে যাচ্ছি। ব্যক্তি সম্পর্কের তিক্ততা প্রতিনিয়ত কুড়েকুড়ে খাচ্ছে। ধর্ম এবং মুক্ত চিন্তা একেবারে মুখোমুখি। একটি এনাকোন্ডার সামনে একটি ছোট্ট চড়ুইয়ের মতো।
এক মহাপতন যখন শুরু হয়, সে শেষ অব্ধি না পতিত হয়ে থামে না। যদি পতনটি অনেক বড় কিছুর হয়, যেমন কোনও দেশ বা জাতির, তাহলে সেই পতন হয় মানব ইতিহাসের সবচেয়ে সশব্দ এবং ধ্বংসাত্মক পতন। আমি বাঙালি জাতিকে ইতিহাসের একটি নির্দিষ্ট সময় থেকে পতিত হতে দেখছি। এর চূড়ান্ত পতন না হওয়া অব্ধি কিছুই আর ঠিক হবে না, আমরা যা আশা করি।
এই ধ্বংসের ব্যথা, এর মূল্য আমাদেরকে দিতে হবে। হয়তো পতনের প্রায় শেষ পর্যায় চলে এসেছি। বড় কিছু পতিত হতে গেলেও একটু সময় নেয়। সেটা আমাদের জন্যেও হয়তো সত্যি। ধ্বংসস্তূপের উপর পঞ্চাশ একশ বছর বা আরো বেশী সময় হয়তো পড়ে রবো সবাই। তারপরে এই দেশ আর জাতির ঘুরে দাঁড়াতে কত সময় লাগবে- সেটা ইতিহাসে যসব জাতির এই অবস্থা হয়েছে তাদের থেকে উদাহরণ নিতে পারি। যেমন – পাকিস্তান, প্যালেস্টাইন। এই দুইটি দেশেই নিজের জাতির, ভাষার, সংস্কৃতির উপর ইসলাম ধর্ম চাপিয়ে আত্ম পরিচয় ভুলতে বসেছে। তাই এই দুই জাতি বা দেশ ফল করা শুরু করেছে। কতটা ধ্বংস হলে তাদের পতন থামবে কে জানে? কবে স্বাভাবিক রাষ্ট্রগুলোর মতো ঘুরে দাঁড়াবে কে জানে। এই বাংলাদেশ প্রথমে পাকিস্তান হবে, তারপর প্যালেস্টাইন হবে। ইসলাম ধর্ম যেসব দেশকে একবার ধরেছে সে দেশকে তার সমস্ত অতীত একেবারে শেষ করে একটা জম্বি জাতি না বানিয়ে ছাড়েনি। ইসলাম যেই দেশে এসেছে- সেই দেশের চূড়ান্ত পতন অনিবার্য হয়েছে, সেই পতন, ওই দেশের, জাতির, ভাষার, শিক্ষার, ঐতিহ্যের, সংস্কৃতির। সর্বোপরি ঐ দেশের সাধারণ মানুষের পতন। যেমন বাংলাদেশ আজ তার অনন্য উদাহরণ।
আমরা যদি আরব হতাম, হয়তো এতটা কিংভুতকিমাকার আমাদের লাগতো না নিজেদেরকে। যেহেতু আমরা বাঙালি- তাই এই বহিরাগত সংস্কৃতি আমরা গিলেও হজম করতে পারছি না। নয়তো এই ৯৪ % মুসলমানের দেশে এমন কি হবার কথা? সংস্কৃত ভাষায় ‘আরভ’ অর্থ- ঘোড়া, স্তান বা স্থান অর্থ- জায়গা বা অঞ্চল। আরভস্তান মানে- ঘোড়ায় অঞ্চল, বা যেই দেশে ঘোড়া চড়ে বেড়ায়। এই আরব নামটাও আমাদের দেয়া, সংস্কৃত ভাষায়। ইসলামের হাজার হাজার বছর পূর্বে। এমনকি যে সংখ্যা গণনা করে আরবরা, সেই সংখ্যাটাও বঙ্গ বা মগধের নালন্দার আবিষ্কার। আফসোস এই বর্বর আরবজাতি এসেছে আমাদেরকে শাসন করতে! তারা শাসন করেনি। তারা বন্দি করেছে, লুট করেছে। তাই আজো এই আটশ বছর পরেও বাঙালির সাথে আরবিয় সংস্কৃতির বা মূল্যবোধের এত দ্বৈরথ।
আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর জনগণের যে দেশ প্রেম, তার এক কণাও আজ এই দেশের জনগণের মধ্যে নেই। বরং নিজের দেশের প্রতি দ্বেষ, বিদ্বেষ রয়েছে এই দেশের মানুষের, আসলে ঘৃণাটা নিজের প্রতি। সিনেমাতে যেমন দেখায়- একটি বেজন্মা ছেলে যেমন চারপাশের সবাইকে ঘৃণা করছে, উদ্ধত, অশ্লীল আচরণ করছে, আসলে এই আচরণের মূলে তার পিতা-মাতার উপর তার অব্যক্ত ঘৃণা, যে ঘৃণায় সে নিজেকেই আসলে ঘৃণা করে। আজ বাংলাদেশি মুসলমানদের চরিত্র সেই সিনেমার- লাওয়ারিশ চরিত্রের মতো। সে সবাইকে ঘৃণা করছে, আসলে সবাইকে ঘৃণা করার আড়ালে অন্তর্নিহিত আছে তার নিজের জন্মের পরিচয়ের উপরে অব্যক্ত ঘৃণা।
পাশের দেশ ভারতের মানুষের- যত ভাষার পার্থক্যই থাকুক, ধর্মের পার্থক্য থাকুক, মতের, বিশ্বাসের পার্থক্য থাকুক কিন্তু, দিন শেষে তারা যে ভারতীয় এবং তাদের নিজের দেশের বিষয়ে যে তাদের প্রচণ্ড স্বদেশ প্রেম, এই কথা বোধকরি চরম ভারত বিদ্বেষীও স্বীকার করবেন। তেমনি সেটা- চীনের জন্যেও প্রযোজ্য। অথচ চীন, ভারত, আমি যদি রাশিয়া, বা আমেরিকার কথাও বলি, তারা সকলেই বড় দেশ, কত ভাষার পার্থক্য, আচার-অনুষ্ঠান, জীবন-যাপনের ধরণের পার্থক্য, ধর্মীয় বিশ্বাসে পার্থক্য, কিন্তু জাতীয় ঐক্যে তারা সবাই এক। ভীষণ অনড়। কিন্তু, এই সতের কোটির দেশে যেখানে ৯৪% মুসলমান তারা কেন কোনও ইস্যুতে এক হয় না? এর কারণ নির্ণয় করাটা কিন্তু সহজ। চীন, রাশিয়া, আমেরিকা, ভারত এই প্রতিটি দেশের মানুষের নিজ নিজ অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া খাদ্যাভাস, এবং জীবন-যাপনের হাজার হাজার বছরের একটি নিজস্ব ঐতিহ্য আছে। তাদের যার যার মহান ইতিহাসে, জাতি হিসেবে তাদের যা কিছু শ্রেষ্ঠতম অর্জন, তারা সেসব কিছু ভোলেনি। তাদের রাষ্ট্রের ঐক্য বা শক্তিটাই ওই জায়গায়। এই কথাটি একটু ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জন্যেও প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু, বাংলাদেশের জনগণের এই জায়গাটিই আজ সব চেয়ে বড় দুর্বলতা। যেই গাছ মাটিতে ফল দেয়, ফুল দেয়, যে ফসল মাটিতেই ভালো ফলে, তাকে আমরা বুনেছি মরুভূমির বালিতে। তাই সব গাছের ফুলে, ফলে, ফসলে এত অপুষ্টি, দৈনতা, ত্রুটি। আর এর জন্য দায়ী এই বাংলাদেশে ইসলামাইজেশন। এই ধর্মের আইন, আচার, অনুষ্ঠান, আচরণ, ভাষার সাথে বাঙালি জাতির কোনও সুদূর কালে কোনও সম্পর্ক ছিলো না। মুসলিমরা আরব’রা মরু অঞ্চলের বর্বর বেদুইন জাতি, আর বাঙালিরা- নদীর পাড়ে, বটের ছায়ায়, ধানের ক্ষেতের পাশে বসা রাখালের বাঁশির জাতি, বাউলের জাতি। যেই মাটির গাছ- যেই মাটিতেই হয়, তাকে বালিতে লাগাতে চেষ্টা করে আমরা ভুল করছি। আমরা বাঙালি-মুসলমান হতে গিয়ে- বট যেভাবে বনসাই হয়, তেমন বনসাই মুসলমান হচ্ছি। যারা আরব মুসলমান, তারা বাংলাদেশের মুসলমানকে বনসাই মুসলমানই মনে করে। বটকে বনসাই করা যেমন বটের প্রতি অবিচার, তেমনি বাঙালিকে মুসলমান করাটাও বাঙালির প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমরা বাঙালি কে ছিলাম? কী ছিলাম? সেটা ধাপে ধাপে কিছুটা অল্প পরিসরে তুলে ধরবো, কারণ, এর সমস্ত বিষয় নিয়ে লিখতে গেলে, একটি জীবন ধরে টানা লিখে গেলেও কম পরে যায়।
বাঙালি জাতি হিসেবে অথবা এই মাটির সন্তান হিসেবে আমাদের নিজেদের পরিচয় জানাটা খুব জরুরী। খুবই জরুরী। যে জাতি তার নিজের প্রাইড এন্ড কালচার জানে তাকে সহজেই অন্য মতাদর্শ দিয়ে ডমিনেট করা বা রুটলেস করা যায় না। এই জন্যেই আমাদের পিতা-মাতার পরিচয় আমাদেরকে নিরাপত্তা দেয়, আশ্রয় দেয়, পরিচয় দেয়। কারণ তারাই আমার ইমেডিয়েট পূর্ব-পুরুষ। ঠিক যেভাবে তাদের পিতা-মাতা তাদেরকে পরিচয় দিয়েছিলো, এবং তার পূর্বের যারা, এইভাবে যেতে যেতেই আমরা ইতিহাস থেকে আমাদের শিকড় সন্ধান করতে পারি। মানুষের যখন ভাষা ছিলো না, বাসা ছিলো না, যূথবদ্ধ অরণ্যচারী ছিলো কেবল; আমি সেই আদিম কালে যাচ্ছি না। আমি যাচ্ছি আমাদের পূর্ব-পুরুষদের হাতে গড়া ভাষা, গৃহ, বন্ধন, আদর্শ, প্রেম থেকে একদিন যখন তারা একটি সু-সভ্য জাতি গড়েছিলো সেই সময়।
আমরা ঘরের খাবার খেয়ে, ঘরের আচার-আচরণে অভ্যস্ত হয়ে, ঘরের ভালোবাসা, স্নেহে স্বাভাবিক ভাবেই ঘরের ছেলে হয়ে যাই। তেমনি একটি জাতিও ও অঞ্চলের ঘরেরই ছেলে, সেই জাতি ওই অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি, পাহাড়, নদী, ঘাস, মাঠ ফসলের সাথে মিশে গিয়েই তার ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য গড়ে নেয়। এটাই স্বাভাবিকতা। অস্বাভাবিক তাই হয়- যখন ভিন দেশি ভাষার মানুষ, ভিন দেশি সংস্কৃতি, ভিন দেশি চলন-বলন, আইন আরেকটি জাতির উপর জোড় করে চাপিয়ে দেয়া হয়। সেটা হোক রাষ্ট্রীয়, অথবা সামাজিক ভাবে, কিংবা আদর্শিক। তখন ওই জাতির- ভিনদেশি আচরণ জোড় করে গিলে খেলেও, ঠিক তার বদ হজম হয়, ফুড পয়েজেনিং হয়, জাতিটা ধুঁকে-ধুঁকে মরে। বাঙালি জাতি যেহেতু অনেক মহান এবং প্রাচীন একটি জাতি, বিশাল মহীরুহ বট গাছের মতো। তাই, তার মরতে সময় লাগছে, লেগেছে। আমার হিসেবে এই জাতি প্রায় আটশ বছর ধুঁকে ধুঁকে আজ নাভিশ্বাস তুলছে, তার সারা দেহের বেশির ভাগ জায়গায় বেডসোরের পচা কটু গন্ধ।
যে জাতির এখন নাভিশ্বাস উঠেছে সে অদূর ভবিষ্যতেই একেবারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে। এবং বাঙালি জাতির প্রথম কবরের নাম হবে- বাংলাদেশ। এই জাতির মৃত্যুর কারণ হবে, ইসলামাইজেশন। অন্য দেশের সভ্যতা বা অসভ্যতা নিজের মনে সহ্য করার আগে একটি সভ্যতার উচিত তার পূর্ব-পুরুষের সভ্যতাকে জেনে রাখা। নইলে সে কীভাবে অন্য সভ্যতার সাথে নিজের সভ্যতার পরিচয়ের সীমানা টানবে কিংবা মিশেল ঘটাবে? বর্তমানের এই আত্ম-পরিচয় সংকটে ভোগা বাংলাদেশের বাঙালি জাতির জন্য নিজের অতীতের দিকে, পরিচয়ের দিকে ফিরে তাকানো এখন অসম্ভব জরুরী হয়ে পড়েছে।
দেখুন, সংস্কৃত, মাগধী, প্রাকৃত এই তিনটি ভাষা আমাদের। অর্থাৎ, আমাদের পূর্ব-পুরুষদের, এই মাটির, এই অঞ্চলের। বাঙলা ভাষাও মূলত এসেছে সংস্কৃত, প্রাকৃত, মাগধী, থেকে। অথচ আমরা কেউ আজ (আমি বাংলাদেশের কথা বলছি) এই ভাষার একটি অক্ষরও পড়তে পারি না। লিখতে পারার কথাতো দূরে। এটা কেন হলো? পৃথিবীর কোন দেশ তাদের ভাষাই বদলে ফেলেছে? একমাত্র পাকিস্তান ছাড়া? আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে- আমাদের পূর্ব-পুরুষরা কীভাবে- সংস্কৃত, মাগধী, প্রাকৃত ভাষায় কথা বলতেন? কত গ্রেট লিটারেচার এবং দর্শনশাস্ত্র এই ভাষায় তারা রচনা করেছেন। ঠিক কবে থেকে আমরা এই ভাষা থেকে বিচ্ছিন্ন হলাম। কীভাবে ঘটলো? কারা ঘটালো? আমার সেসব জানতে মনটা হুহু করে। কই, আর কেউতো তাদের ভাষা বাদ দিয়ে দেয়নি, ভোলেনি। হয়তো নতুন শব্দ ভাণ্ডার যোগ করে নিয়েছে, এটা আমরাও করেছি। এত ঋদ্ধ একটি ভাষা- কেন আমাদের ছেড়ে নির্বাসনে গেলো, জানতে ইচ্ছে করে। সংস্কৃত মন্ত্র এখনো যদি শুনি, মনটা কেমন যেনো করে, কোথায় যেনো মনে হয়, এর সাথে আমারো সূক্ষ্ম একটা যোগ আছে। বিদেশে বাংলা ভাষা শুনলে যেমন লাগে, একটা মা, মা ভাব কাজ করে, তেমন।
পৃথিবীর যে কোনও জাতির বা অঞ্চলের ইতিহাস আড়াই হাজার বছর পূর্বের হলে তার তথ্য উপাত্ত নিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নানান মত বা তর্ক বিতর্ক থাকে। এইসব বিতর্ক ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক। আমি তাই আমার এই অঞ্চলের ইতিহাসও আড়াই হাজার বছরের খুব বেশী পূর্ব এই লেখাতে যাবো না। যদিও আমি বত্রিশ হাজার বছর, পঁচিশ হাজার বছর পুরানো আর্কিওলজিক্যাল ফ্যাক্ট পড়েছি অন্যান্য অঞ্চলের। সেটা ভিন্ন বিষয়।
আমি চলে যাবো প্রাচীন মগধে। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর পূর্বে।
এই বঙ্গ বা প্রাচীন বাঙলা পূর্বে ছিলো মগধ নামের একটি অতি সু-বিখ্যাত সমৃদ্ধ অঞ্চল। যার সীমানাটা বর্তমান বাংলাদেশ ছাড়িয়েও ব্যাপক ছিল।
যেই অঞ্চল ছিলো একটি ক্রমবর্ধমান বণিক শ্রেণী বা দার্শনিকদের বা গুরুদের একটি জনপদ। আবার এই মগধেই গুপ্তা ডায়নেসটির বা মৌর্য সাম্রাজ্যের সূচনা। যেটা বর্তমানে ভারতের বিহারে। বিহার কিন্তু বাঙলা জনপদই। মনে নাই- বাঙলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলা নিয়ে কত গর্ব করি! যে, তিনি ছিলেন কত বড় বাংলার- কত বড় নবাব! অথচ, নবাব সিরাজুদ্দৌলা কিন্তু বাঙলায়, সংস্কৃত, মাগধী, প্রাকৃত ভাষায় কথা বলতেন না। তার ভাষা ছিলো আরবি, ফার্সি বা উর্দু (আমার এই তথ্যে ভুল হলে পাঠক শুধরে দেবেন)। তিনি বা তার পূর্ব-পুরুষ- আরবিয় বহিরাগত। তিনি বা তার পূর্ব-পুরুষ কেউ এই অঞ্চল বা জনপদের সংস্কৃতি, ভাষা, আচরণ, গ্রহণ করেননি, না। যদিও খেয়েছিলেন এই দেশের মাটির ফসল, নদীর জল, শ্বাস টেনে নিয়েছিলেন- বিশুদ্ধ লেলুয়া হাওয়া। এখন আসুন, আপনার আমার যে পূর্ব-পুরুষ বাঙলা জনপদের, অর্থাৎ প্রাচীন মগধের, সেই গুপ্তা ডায়নেস্টির মৌর্য সাম্রাজ্যটা দেখি।
(দেখুন খ্রিস্টপূর্ব ২৫০ সালে অর্থাৎ, আজ থেকে দুই হাজার দুইশত পঞ্চাশ বছর পূর্বে আমাদের এই মগধের শাসকের সাম্রাজ্য বর্তমাণ India , Pakistan, Bangladesh , Nepal Iran পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো)
এই অঞ্চলের রাজধানী পাটলিপুত্র কিন্তু বর্তমান বিহারে, বাংলাদেশের একেবারে মাথার কাছেই, ম্যাপে দেখুন। এই হচ্ছে আপনার আমার পূর্ব-পুরুষের সাম্রাজ্য। একবার বর্তমান বাংলাদেশের কথা ভাবুন, আর এই বিপুল সাম্রাজ্যের কথা ভাবুন। ভাবা যায়! আমাদের ছোট মনে সেই বোধ কী আসে? আসার কথা না। কারণ, অনেক অনেক বছর ধরে আমাদেরকে নিজেদের ছোট আর আরবদের বড় ভাবতে শেখানো হয়েছে। আমরা গণ্ড-মূর্খ তাই ভেবে নিয়েছি, বিশ্বাস করেছি- কিছুটা প্রাণ ভয়ে, আর কিছুটা অভাবে। কারণ যারা আমাদেরকে আরবদের শ্রেষ্ঠ ভাবতে শিখিয়েছে তারা ততদিনে আমাদের গ্রেট পূর্ব-পুরুষদের অনেককেই হত্যা করে ফেলেছে, আমাদের গ্রেট কিংডম তখন ছাই।গাছের শিকড় নেই। সে গল্প পরে বলছি।
চলবে…