প্রিয়া সাহা, যে কথাগুলো বলছে সেই একই কথা শেখ হাসিনা এবং সেক্যুলাররা বিএনপি’র আমলে হাজার হাজার বার বলে গ্যাছে, তাতে কোনো অপরাধ হয় নাই কিন্তু, তারা একই বয়ান আওয়ামী লীগ আমলে বলার কারণে অনেকেই অপরাধ ধরছেন যেখানে আবুল বারাকাতের মত কোর আওয়ামি লীগারের গবেষণায় লেখা আছে, বাংলাদেশের হিন্দু সম্পত্তি দখল ৫০% করে আওয়ামি লীগ বাকি সকলে মিলে পঞ্চাশ পারসেন্ট।
প্রিয়া সাহার এই ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ভিকটিম হুডকে যতদূর না চেনা যায় তার চেয়ে বেশী চেনা যায় আমাদের সেকুলার এস্টাব্লিশ্মেন্টের সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির রাজনীতিতে।
তাদের মূল কথা হইলো সাম্প্রদায়িকতার অপরাধে, শুধুমাত্র বিএনপিকে বা মৌলবাদীদেরকে দায়ি করা যাবে, আওয়ামী লীগকে সাম্প্রদায়িকতার জন্যে দায়ী করলে গুনাহটা হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের।
কারন আওয়ামি লীগ যদি হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলমান-চাকমা মেরে কেটে লাশও বানায়- আওয়ামি লীগ বাই-ডিফল্ট প্রগতিশীল এবং আওয়ামি রীগের বিপক্ষে যারা বাই-ডিফল্ট সাম্প্রদায়িক শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি- ফলে আওয়ামি লীগকে কোনভাবেই সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট করা যাবেনা।
আজকে ঠিক এইসময়ে যদি আওয়ামী লীগের বদলে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতো এবং ঠিক একই প্রিয়া সাহা যদি ট্রাম্পকে একই বক্তব্য বলে আসতো তারপরে, পুরো সেক্যুলার এস্টাব্লিশমেন্ট প্রিয়া সাহার সাহস, বীরত্ব এবং সত্যবাদিতা নিয়ে পেপারগুলোতে কলামের বন্যা বইয়ে দিত। তাকে জাতীয় হিরো বানানো হইতো। কারণ, এই সেক্যুলারদের কাছে হিন্দু নির্যাতনের মূল বেনেফিট হচ্ছে, আওয়ামী লীগের মরাল এজেন্সি ধরে রাখা।
প্রিয়া সাহা কিন্তু হিন্দু না, প্রিয়া সাহা সেক্যুলার। এটা খেয়াল রাখবেন। প্রিয়া সাহা কোন দলের রাজনীতি করেন, প্রিয়া সাহার হাজব্যান্ড কোন দলের রাজনীতি করেন, এবং সেই দল কীভাবে এই একই ন্যারেটিভ বাজারে হাজির রেখে, বাংলাদেশের সকল বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষকে বিভক্ত করে রাখে এইগুলোও খেয়াল রাখবেন। আরো খেয়াল রাখবেন, প্রিয়া সাহার হাজব্যান্ডদেরকে কীভাবে ভাল ভাল চাকুরি দিয়ে, আওয়ামী লীগের সাথে সেকুলারদের প্যাট্রন ক্ল্যায়েন্ট সম্পর্ক ডিফাইন করা হয়।
খেয়াল রাখবেন, এইখানে পক্ষ-বিপক্ষ হিন্দু মুসলমানে ভাগ হয় নাই। এইখানে আস ভারসাস দেম ডিফাইন হয়েছে, সেকুলার এবং মৌলবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে। তাদের ডেফিনিশানে এইখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ এবং বিপক্ষের শক্তির ভাগ হয়েছে।
প্রিয়া সাহার বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের পরে, গতকাল হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রানা দাশগুপ্ত গতকালই বলেছেন,
যে শক্তিটি বাংলাদেশ চায় নি, সেই শক্তিটি একাত্তরের মতোই ‘ক্লিনজিং’ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। তারা যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন করে। আর যখন ক্ষমতায় থাকে না, তখন নানা রাজনৈতিক দলে অনুপ্রবেশ করে একই কাজ অব্যাহত রাখে।
(সুত্র: কালের কণ্ঠ ২০ জুলাই)
রানা দাশগুপ্তের কথাটা আবার শুনুন,
যে শক্তিটি বাংলাদেশ চায়নি…
সেই শক্তিটি একাত্তরের মতোই ‘ক্লিনজিং’ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে…
তারা যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন করে…
আর যখন ক্ষমতায় থাকে না, তখন নানা রাজনৈতিক দলে অনুপ্রবেশ করে- (পড়ুন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে) একই কাজ অব্যাহত রাখে।
রানা দাশগুপ্তের মত ঠিক একইকথা অনলাইনে অনেক বামপন্থী স্পেশালি সিপিবি ঘরানার লোকদের নিয়মিত বলতে দেখি। মঞ্জুরুল আহসান সাহেবও ইলেকশানের পরে, ওপেন মাইকে কয়েকদিন আগে বললেন।
রানা দাশগুপ্তের এই কথাটি কিন্ত প্রিয়া সাহার আলাপ থেকেও ভয়ংকর।
এবং এই আলাপগুলো করে, তারা রেগুলার ভারতীয় এস্টাব্লিশমেন্টের কাছে শেখ হাসিনার রেজাইমের নৈতিক বৈধতা ধরে রাখেন।
এবং শুধু রানা দাশগুপ্ত হিন্দু নন, বাংলাদেশের পুরো সেক্যুলার ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগের মরাল অথরিটি ধরে রাখা যে আওয়ামী লীগ না থাকলে, হিন্দুদের প্রটেকশান থাকবেনা; তাই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামানো যাবে না।
এইখানে প্রিয়া সাহার বক্তব্য আওয়ামী লীগ মোটেও মাইন্ড করে নাই, জাস্ট বিষয়টা সোশাল মিডিয়াতে আলোচিত হওয়াতে, এবং টিভি ক্যামেরাতে চলে আসাতে বিষয়টা বড় হয়ে গ্যাছে। নইলে, বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতনের আলাপে আওয়ামী লীগের কোন প্রব্লেম নাই- কারণ- রানা দাশগুপ্তরা সার্টিফিকেট দিয়েই দিয়েছে এইটা আওয়ামী লিগের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী বিএনপি-জামাত শিবিরের কাজ।
আওয়ামী লীগ তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যে দেশের সর্বস্তরে একটা বাস্টারডাইজেশান করেছে যাতে তারা প্রতিটি শ্রেণির সবচেয়ে গারবেজ অংশটিকে উপরে তুলে এনেছে এবং সুস্থ অংশটিকে অপমান করে, আক্রমণ করে ধংস করে দিয়েছে। এই বাস্টারডাইজেশান প্রক্রিয়া থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ও বাদ যায় নাই। আওয়ামী লীগ হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে নোংরা অংশটিকে, সেকুলার বামপন্থীদের মধ্যে সবচেয়ে পচে যাওয়া অংশটিকে, প্রশাসনে ইউনিভার্সিটিতে পুলিশে ফৌজে সবচেয়ে পতিত অংশটিকে ক্ষমতায়ন করেছে।
এবং সেকুলার ভারসাস মৌলবাদী ন্যারেটিভে, হিন্দু সম্প্রদায়কে রক্ষা করার বয়ানে শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় গুটি ছিল, হিন্দু সম্প্রদায়ের এলিট অংশকে এম্পাওয়ার করা। এবং অনৈতিকভাবে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়া। কিন্ত শেখ হাসিনা এলিট প্রিভিলেজ দিয়েছে বলেই, আজকে, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় নির্যাতিত হয় না এই কথাটা ঠিক না।
আমাদের পুরো উপমহাদেশের মানুষের সাইকিতে সংখ্যাগুরুর ব্যাটাগিরি দেখানোর যে টেন্ডেন্সি তার থেকে, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা কোন দেশের মেজরিটি বাদ পরে নাই। এবং এই মেজরিটির ব্যাটাগিরি খুবই সাম্প্রদায়িক রূপ নিতে পারে এবং অনেকক্ষেত্রে সেইটা ভয়ংকর বিদ্বেষ এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়।
এইটা একধরনের মেজরিটির্যান সাম্প্রদায়িকতা যা ভারতে গো রক্ষকদের হাতে মুসলমান খুন হতে শুরু করে বাংলাদেশে মন্দির ধংস এবং রামু সাথিয়ার মত ঘটনায় প্রকাশ পায়।
এই মেজরিটেরিয়ান ব্যাটাগিরির সাথে আছে, ক্ষমতাবানের হাতে দুর্বলের নিপীড়নের সাম্প্রদায়িকতা। এই আচরণটি মুলত লোকাল এবং স্থানীয় নেতারা এইটার সুযোগ নেন। এই নিপীড়নে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতে, হিন্দু জনগোষ্ঠী যেমন লুণ্ঠনের শিকার হন একইসাথে মুসলমান জনগোষ্ঠী এবং বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতা কর্মীরাও আক্রমণের শিকার হন।
কিন্ত, আমাদের হিন্দু লিডারশিপ এই জায়গায় নীরব। কারণ, আওয়ামী লীগের হাতে এই নির্যাতনের কারণে তারা ভুক্তভোগী নন। এবং শেখ হাসিনার কাছে ডিরেক্ট প্রিভিলেজ পেয়ে অবর্ণ হিন্দুদের ওপরে ক্ষমতাসীনের এই নির্যাতনের ব্যাপারে তার নীরব থাকেন যে ঘটনা বিএনপির আমলে ১০০ ভাগের এক ভাগ ঘটলেও বিশাল হইচই তুলে ফেলতেন। পেপারে পেপারে সিরিজ আর্টিকেলের বন্যা বয়ে যেত।
বিগত ১০ বছরের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় চাল ছিল, হিন্দু এলিটদেরকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো। এবং হিন্দু এলিটরাও এই সুবিধা পেয়ে একটা ফ্যাসিস্ট জনবিরোধী শক্তিকে অন্ধ সমর্থন দিয়ে গ্যাছে এবং ভারতের কাছ থেকে, শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন আদায় করে দিয়েছে।
শেখ হাসিনার এই ট্রাইবালাইজেশান বাংলাদেশের প্রধান যে ক্ষতি হচ্ছে – তা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস। যে ধ্বংসযজ্ঞের কারণেই আজকে, দেশের অঞ্চলে অঞ্চলে নিম্নবিত্ত হিন্দুদের সম্পদ জান মাল ইজ্জৎ, তাদের মুসলমান ভাইদের মতই যদি আওয়ামী নেতাদের হাতে ধ্বংসের শিকার হচ্ছে, তার কোন বিচার হচ্ছেনা প্রতিকার হচ্ছেনা। কিন্ত, হিন্দু এলিটরা বুঝতে পারছেন এই পরিস্থিতি সৃষ্টিতে তাদের বড় দায় আছে।
কারণ তারাই ভারতের কাছে, শেখ হাসিনার ন্যায্যতা সৃষ্টি করেছেন, কারণ, তারাই বলেন,
যে শক্তিটি বাংলাদেশ চায়নি…
সেই শক্তিটি একাত্তরের মতোই ‘ক্লিনজিং’ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে…
তারা যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন করে…
আর যখন ক্ষমতায় থাকে না, তখন নানা রাজনৈতিক দলে অনুপ্রবেশ করে- (পড়ুন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে) একই কাজ অব্যাহত রাখে।
আমার অনেক হিন্দু বন্ধু আছে, যাদের আমি দেখি তারা এখন এই বিষয়টা সচেতন। তারা একটা সোল সারচিং করছে। এবং প্রিয়া সাহা এবং রানা দাশগুপ্তদের খপ্পর থেকে তারা বের হয়ে আসছেন। এবং বাকিদেরকে বের হয়ে আসতে আহবান জানাচ্ছেন।
আজকে, বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কেও এইটা বুঝতে হবে যে ভারতীয় হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা এবং বাংলাদেশের মুসলমানদের সাম্প্রদায়িকতা এক নয়। কারণ উপমহাদেশের রাজনীতিতে ভারত একটা গ্লোবাল পরাশক্তি। ভারতের কাছে, উপমহাদেশ বিশেষত বাংলাদেশ বর্গা করে দিয়েছে গ্লোবাল শক্তিরা। তাই কখনই মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক অংশের প্রতিক্রিয়া কখনই ভারতের হিন্দুত্ববাদীতার সমশক্তি হতে পারবেনা।
বাংলাদেশের রাজনীতি এমন একটা জায়গায় গিয়েছে, সেখানে ভারতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায়ও আসতে পারবেনা, টিকে থাকতেও পারবেনা।
এই অবস্থায় বাংলাদেশের হিন্দু এলিটদেরকে বুঝতে হবে তাদের সম্প্রদায় মেজরিটির হাতে কোন না কোনভাবে নির্যাতিত হতে পারে, কিন্ত তারা ভারত রাষ্ট্রের মত বিশাল একটি সাম্প্রদায়িক এবং পরাশক্তির দ্বারা এমপাওয়ারড। এই পাওয়ার তারা কীভাবে ব্যবহার করছে তাই প্রমাণ করবে, তাদের আনুগত্য দেশের প্রতি নাকী দলের প্রতি নাকী নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থের প্রতি নাকী নিজের সমাজের সমষ্টিগত স্বার্থের প্রতি এবং একটি গণতান্ত্রিক সাম্যতা ভিত্তিক বাংলাদেশের প্রতি।
এবং আজকে সেক্যুলার, ন্যাশনালিস্ট, নিরপেক্ষ সবাইকেই বুঝতে হবে, এই দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করছে তাতে এই দেশ যদি বাসযোগ্য না থাকে, মানুষের ন্যূনতম অধিকার যদি ধ্বংস হয়ে যায়, হিন্দুদের পালানোর জন্যে ভারত আছে। কিন্ত মুসলমানদেরকে কেউই নিবে না।