… সভ্যযুগের সূচনা লগ্ন থেকে ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক স্বাভাবিক-প্রাকৃতিক ভাষার শব্দ ও কথাকে পশ্চাৎপটের স্মৃতিরূপে রেখে শিথিলভাবে প্রতীকায়ন করে বদ্ধকথায় পরিণত করে মানুষের সামাজিক গোষ্ঠীগুলি কাজ চালাতে শুরু করে। আধুনিক যুগে পৌঁছে সেই প্রতীকায়ন প্রথায় পরিণত হয়ে যায়। তা দেখে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন – ‘এখন আমরা কথার অধীন, প্রথার অধীন’। বর্ত্তমানে সেই বদ্ধকথার প্রথা আরও কঠিন কঠোর হয়ে একেবারে আমাদের মানসিক কারাগারে পরিণত হয়েছে। এর থেকে মুক্তি মিলবে কীভাবে?
আগে আমাদের ভাষার কোনো শব্দই বদ্ধকথা মাত্র ছিল না। প্রতিটি গাছের নাম, মাছের নাম, জীবজন্তু ও কীটপতঙ্গদের নাম, বারগুলির নাম …সবই সেই সেই বস্তু বা বিষয়ের স্বভাবের কথা বলে দিত। নটে থানকুনি ব্রাহ্মী সুষু(সু)নী প্রভৃতি শাকজাতীয় শব্দের, ঝিঙা পটল বেগুন ওল প্রভৃতি শাকফল-জাতীয় শব্দের, রুই কাৎলা মৃগেল সিঙ্গি মাগুর টেংরা প্রভৃতি মাছজাতীয় শব্দের, অশ্বত্থ বট বেল আম জাম প্রভৃতি গাছজাতীয় শব্দের, ভারত মিশর ইংলণ্ড জাপান প্রভৃতি দেশজাতীয় শব্দের, কিংবা, পাদোদক ষড়যন্ত্র রবিবার রাষ্ট্র সমাজ গণতন্ত্র শিক্ষাদীক্ষা প্রভৃতি ধারণাজাতীয় শব্দের পশ্চাৎপট দেখতে পেয়ে গেলেই তো নতুন দিগদর্শন ঘটে যায়।
কী সমৃদ্ধ ও বিপুল পরিমাণ সেই উত্তরাধিকার! সেই উত্তরাধিকার ছাইগাদায় ফেলে দিয়ে ছাইচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। যে কারণে আমরা নটে বললে Amarantu বুঝি, নটুয়া নর্ত্তকদের স্বতঃউদ্ভাবন বুঝি না। থানকুনি বললে Hydrocotyle asiatica বুঝি, সে যে পাচকশক্তির থানকে বা জঠরকে অতি গরম বা ঠাণ্ডা হতে না দিয়ে কুনকুনে গরম রাখে বলেই থানকুনি, সেকথা বুঝি না। ….
c
পরমাপ্রকৃতি তাঁর অশেষ কৃপায় আমাদের দুজনকে দিয়ে বাংলা শব্দের সেই ছাইচাপা সত্যকে পুনরুদ্ধার করিয়ে নিয়েছেন এবং বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ (১ম খণ্ড ২০০৯, ২য় খণ্ড ২০১১) ও সরল শব্দার্থকোষ (প্রকাশিতব্য) লিখিয়ে নিয়েছেন। এতে ৫০টি বর্ণের [ অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ ও ঔ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব (অন্তঃস্থ-’ব’সহ) ভ ম য র ড় ঢ় ল শ ষ স হ ৎ ং ঃ ঁ ] প্রত্যেকটির অর্থ উদ্ধার করে যেমন প্রকাশ করা হয়েছে, তেমনি ‘কার’ ও ‘ফলা’ শব্দের অর্থও উদ্ধার করে ব্যাখ্যাসহ প্রকাশ করা হয়েছে [ নমুনাসমূহে ‘ফলা’ শব্দের অর্থ দ্রষ্টব্য ]।
এই ৫০টি বর্ণের অর্থ এবং ‘কার’ ও ‘ফলা’র অর্থ মনে থাকলে [ এবং উপরোক্ত কোষগ্রন্থের সাহায্যে তার প্রয়োগ রপ্ত করে নিতে পারলে ] আপনি যে কোনর পশ্চাৎপট উন্মোচনের কাজের সূচনা হয়ে গেছে। এই পথে এগোতে থাকলে বাংলাভাষার প্রতিটি বদ্ধ-শব্দের বন্ধনমুক্তি ঘটে যায়। এভাবে শব্দের পশ্চাৎপটের রহস্য উন্মোচন করে করে এগোলে বঙ্গভাষীর বিশ্বদর্শন ঘটে যাবে; বদ্ধকথার কারাগারটা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। তখন তাঁর মন বদ্ধকথার দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে নবজীবনের মন্ত্র লাভ করবে।
‘পাদোদক’ শব্দটির কথাই ধরুন। এর মানে বোঝা হয় ‘পা-ধোয়া জল’। অথচ সে ছিল ‘সাদৃশ্য’ অর্থ মাত্র। প্রকৃত অর্থ ছিল, শ্লোকের ও পদাবলীর চরণে চরণে পদে পদে আমাদের মহান পূর্ব্বপুরুষেরা চরণামৃত-স্বরূপ যে অমৃতসমান জ্ঞানরস রেখে গিয়েছেন, তার কথা। পাদোদক পান করা মানে সেই জ্ঞানরস পান করা, পা-ধোয়া জল খাওয়া নয়। সেই পশ্চাৎপট উন্মোচন করে দিলেই পাদোদক কথাটি আর বদ্ধকথা মাত্র থাকে না, বন্ধনমুক্ত হয়ে যায় পাদোদক শব্দ ও তার শব্দার্থ। তখনই বাংলাভাষীর মনও পাদোদক কথাটির ‘পা-ধোয়া জল’-রূপ আবদ্ধ স্থির অনড় অচল অর্থের দাসত্ব থেকে বা ‘পাদোদক-মূঢ়তা’ থেকে মুক্তি লাভ করে। একালের প্রতিটি বাংলা শব্দের দশা ‘নটে’ ‘থানকুনি’ বা ‘পাদোদক’ শব্দের মতো।
প্রতিটি শব্দের ক্ষেত্রেই এই মুক্তিসংগ্রাম চালাতে হবে। তবেই কথার অধীনতা বা দাসত্ব থেকে মিলবে মুক্তি। শব্দার্থতত্ত্বের এই নবাবিষ্কৃত পদ্ধতি স্বভাবতই বিপুল সৃষ্টিশক্তির এক অনন্ত অমৃতভাণ্ডার। ধ্বংসের মহাশক্তি যেমন আণবিক শক্তি সৃষ্টির, মানুষের মানসিক সৃষ্টির মহাশক্তি তেমনি এই শব্দাণুশক্তি (বর্ণশক্তি, অর্থময়-ধ্বনিশক্তি, শব্দব্রহ্ম)। আণবিক-বোমার শক্তি যেমন বাহ্য-অণুর ভিতরে কী আছে তা দেখতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছিল, তেমনি মানসকণার বা বাক্যের শব্দকণার (বর্ণের) ভিতরে কী আছে তা দেখতে গিয়ে বেরিয়ে আসে এই মানসিক মহাসৃষ্টির শক্তি। আমরা নিশ্চয় করে ঘোষণা করছি, যে পাঠক-পাঠিকা এই পদ্ধতি বুঝে নিয়ে শব্দের অন্দরমহলে যাওয়ার ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থসন্ধান প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত হতে হতে খানিকটা হলেও এই বর্ণদর্শন আত্মস্থ করে নিতে পারবেন, বর্ণ-বিদারণের কলাকৌশল আয়ত্ত করে নিতে পারবেন, অসীম মানসিক সৃষ্টিশক্তির অধিকারী-অধিকারিণী হওয়া থেকে কেউ তাঁদের আটকাতে পারবে না।
সরল শব্দার্থকোষ (প্রকাশিতব্য) গ্রন্থ থেকে বন্ধনমুক্ত শব্দার্থের নমুনা : –
[ পাঠপ্রক্রিয়া:
• চিহ্নটির পরে দেওয়া হয়েছে শব্দটির প্রকৃত বা অন্তর্নিহিত ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক অর্থ, যা এক বা একাধিক বাক্যের সাহায্যে দেওয়া হয়েছে।
□ চিহ্নটির পরে দেওয়া হয়েছে শব্দটির দু-চারটি প্রচলিত প্রতীকী অর্থ। মোটা হরফের শব্দকে সরল শব্দার্থকোষ গ্রন্থে শব্দটির নিজস্ব ভুক্তিতে পাওয়া যাবে। ]
অজয়:
• নেই জয় যাহাতে; অথবা, যাহাকে জয় করা যায় না, এবং যে কাহাকেও জয় করে না বা করিতে যায় না।
□ অভিভবহীন,সারবান, বীরভূম জেলার নদবিশেষ।
অতসী:
• অতস্ ( অতখানি বড় হওয়াই শেষ ) যে সক্রিয় আধারের; অথবা, যে গাছ জন্মিয়া বড় হইয়া ফুল ফোটায় এবং সেখানেই তাহার শেষ হইয়া যায় ( ফল ফলানোতে যেন-বা তাহার প্রয়োজন নাই ); কিংবা, যে যুবতী নারীর পুত্রকন্যা এখনও হয় নাই।
□ নীল ফুলের ছোট গাছ, মসিনা গাছ, তিসি, শণবৃক্ষ (hemp), পীতপুষ্পের বৃক্ষ ও তাহার পুষ্প; সদর্থে চিরকুমারী, কদর্থে বাঁজা মেয়ে।
অপর্ণা:
• নেই পর্ণ (‘পাত’ বা জীবিকা) যে আধারশক্তির; অথবা, ভোজনের পাতা বা জীবিকা ত্যাগ করিয়াছে যে; কিংবা, যাহার ভাগের পাত পড়েনি; অথবা, সাধনার নিমিত্ত সামাজিক ভোজন-পাত বা জীবিকা ত্যাগ করিয়াছেন যিনি; কিংবা, যে নব্যশিক্ষিত তরুণতরুণীর ভাগে সমাজবৃক্ষের পাতা বা পাত পড়েনি; অথবা, যে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের জীবিকা নাই।
□ জীবিকাত্যাগী সাধক বা সাধিকা, নব্যশিক্ষিত বেকার শ্রেণী, ( সেকেলে ভাষায় ) পার্ব্বতী, উমা।
অমায়িক:
• মায়িক ( প্রযুক্তিবিদ ) নহে যে; অথবা, মায়াবিদ্যার ( প্রযুক্তিবিদ্যার ) প্রয়োগ করিয়া মানুষের প্রয়োজনীয় বস্তু উৎপাদন করিতে পারে না যে; কিংবা, ‘অ্যাকাডেমীতে উচ্চশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ’ হইলে যেরূপ দাম্ভিক হয় তদ্রূপ নহে যে।
□ অমায়াবান, অকপট, সরল, সাধু, আড়ম্বরহীন, মায়ালেশহীন, মায়াবরণহীন, স্বচ্ছ, স্বার্থহীন।
অস্থি:
• অ-এর ( অস্তিত্বের ) স্থিত হওয়ন সক্রিয় যাহাতে; অথবা, অস্তির ( চলমান স্থিতসত্তার ) হওয়ন চলে যাহাতে ( যে কাঠামোতে) ; কিংবা, যে কঙ্কালের উপর বাকী ছয়টি ধাতু লিপ্ত হইয়া জীবের শরীর সাধন করে বা গড়িয়া তোলে।
□ শরীরস্থ সপ্তধাতুর একতম, হাড়, আঁটি।
আচ্ছা:
• অচ্ছ ( নির্ম্মল ) হইতে জাত থাকে যে আধারে; অথবা, যাহার ভিতরে কোনো মল বা মালিন্য চোখে পড়ে না; কিংবা, লক্ষণার্থে,মালিন্যহীন বলিয়া যাহাকে ‘ঠিক আছে’ বা ‘আচ্ছা’ বলা হইয়া থাকে ।
আস্থা:
• আ ( অনকৃত ) স্থা ( থাকা ) যাহাতে; অথবা, যে স্থানে বা পাত্রে স্থা-করা বা থাকা যায় বা নির্ভর করা যায়।
□ আলম্বন, যত্ন, আদর, প্রত্যয়।
উপায়:
• আয়-এর ( অর্জ্জনের ) উপ ( বাড়তি ) থাকে যে আয়-এ; অথবা, মূল আয়ের পাশাপাশি বাড়তি বা উপরি আয় থাকে যাহাতে; কিংবা, উপ-অয়নকারী থাকে যাহাতে; অর্থাৎ, কার্য্যাদি অয়ন করার ( চালানোর ) সহযোগিতা করে যে ( ক্রিয়া-কৌশলাদি )।
□ উপার্জ্জন, উপরি-আয়, কার্য্যসিদ্ধির কৌশল।
কচু:
• কচ ( … স্বত্বাধিকার ) নবরূপে উত্তীর্ণ যাহাতে; অথবা, যাহার কোনো প্রকার কচ ( মালিকানা বা মূল্যাদি ) নাই।
□ শূন্যতা, ফাঁকি,হেয়তা; ( সাদৃশ্যে ) কচু নামক কন্দবিশেষ।
কনক:
• কন ( কারীর অনকরণ ) করে যে; অথবা, সূক্ষ্ম আঘাতে মানবমনে চুলকানির মতো সুখানুভূতি জাগায় যে সত্তা।
□ স্বর্ণ, স্বর্ণমুদ্রা, মোহর, পলাশবৃক্ষ … ইত্যাদি।
খেয়া:
• যাহা ( যাত্রীদিগকে ) খে ( খি-করণ ) করিয়া বা দূরে ( নদীর ওপারে ) ক্ষেপন করিয়া ফিরিয়া আসে।
□ পরপারে দিয়া আসা।
গাঁটছড়া:
• যে গাঁট ( … সংহতি, গ্রন্থি, গিঁট ) হইতে সত্তা তাহার পরবর্তী অধ্যায়ে ছড়ায়; অথবা, যে গাঁটে-গাঁটে বন্ধনে মানবের বংশ ক্রমশ ছড়াইয়া পড়ে।
□ বরকন্যার বস্ত্র সংযোগপূর্ব্বক বন্ধন।
ঘাগু:
• ‘ঘা’করণ-গামী নবরূপে উত্তীর্ণ যাহাতে; অথবা, যে ঘা ( পিটুনি ) খাইয়াও থামে না, নবরূপে গমন করে বা চলে।
□ অত্যন্ত ধূর্ত্ত, ঝানু, পাকা।
চম্পা (চাঁপা):
• চম্প-এর আধার যে; অথবা, নিষিদ্ধ উৎসাহ পালন করে যে ( জাতি, সংস্থা, ব্যবস্থা, বৃক্ষ, নারী … ); অথবা, যে মেয়ে দৃশ্যত চাপা স্বভাবের কিন্তু কার্য্যত অত্যন্ত উৎসাহী; কিংবা, যে ফুলের গন্ধ চাপা ( বেল কামিনী প্রভৃতির মতো বাতাসে ভাসে না ), কিন্তু হাতে নিলেই তাহার তীব্র গন্ধ টের পাওয়া যায়।
□ প্রাচীন কুটীর শিল্প, ( সাদৃশ্যে ) ভাগলপুর, চম্পকনগর, চাঁপা, কাঁটালে চাঁপা, মেয়ের নাম।
চর্ম্ম: • চর-সীমায়ন করে যে সীমায়নকারী; অথবা, চর-লব্ধকে পরিমাপকারী ( বা চরে বেড়ানো ) মন থাকে যাহাতে ( যে ত্বকের প্রতি বিন্দুতে )। ( চর্ম্মের যে বিন্দুতে মন সক্রিয় নয়, সেখানে কোনো স্পর্শ ঘটিলেও মানুষ তাহা জানিতে পারে না। ( দ্রষ্টব্য-চোখের চামড়া )। □ ত্বক, চামড়া, স্পর্শেন্দ্রিয় …।
ঝা:
• ঝ-এর আধার যে; অথবা, রুদ্ধ বহির্গমনকামী ক্রুদ্ধ সত্তা থাকে যাহাতে; অথবা, ঝড় বহির্গত হইয়া প্রবাহিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে যাহাতে ( যে বৃক্ষে, ব্যবস্থা, গোষ্ঠীতে ); কিংবা, ভারতের যে ( নব্যন্যায়পন্থী ) ব্রাহ্মণেরা বেদবিরোধী ঝড়ের আধার রূপে সক্রিয় ছিলেন।
□ অপেক্ষা-কারী ঝড়, পণ্ডিতের পদবী, ঝা, ওঝা।
ঝোপ:
• ঝুপ-এর সার্ব্বিক আধার যে; অথবা, যাহা ( ঝড়ের বা অন্য কিছুর কারণে ) বৃক্ষরূপে উচ্চগমন করিতে না পারিয়া আপাতত চারিদিকে ছড়াইয়া বসিয়া পড়িয়াছে; কিংবা, পণ্য উৎপাদন করিয়া বিক্রয়ের নিমিত্ত পালন করা হয় যাহাতে ( যে নিকুঞ্জে ); অথবা, পণ্য-নিষিদ্ধকারী রাষ্ট্রের রাজপুরুষেরা ঠিকঠাক ঝোপ বুঝিয়া কোপ মারেন যাহাতে ( যে নিকুঞ্জে )।
□ রাষ্ট্রচক্ষুর আড়ালে চলা কুটীরশিল্পের কারখানা, কুঞ্জবন, ( সাদৃশ্যে ) গুল্মগহন।
টপকা (টপকা-ঝোল):
• টপ করণের আধার যে; অথবা, টপ-করণ ( ডিঙানো ) চলে যে আচরণে; কিংবা, ( রান্নার ক্ষেত্রে ) মাঝের কয়েকটি প্রক্রিয়া না করিয়া বা ডিঙাইয়া ( টপকাইয়া ) যে ব্যঞ্জন রান্না করা হয়।
□ লাফাইয়া পার হওয়া, প্রক্রিয়া ডিঙানো ব্যঞ্জন বা টপকা-রান্না।
ঠন:
• ঠ ( অবটঙ্কারী ) অনকৃত যাহাতে; অথবা, যাহাতে ( আহত ) অবটঙ্কারী ( শব্দমাত্র প্রেরণকারী ) বিচ্ছুরিত হইতেছে; কিংবা, যাহাতে নীরস-সত্তার আঘাতজন্য প্রত্যাঘাতে অসমর্থ নীরস-সত্তা শুধুমাত্র শব্দাঘাত প্রেরণ করে; অথবা, আপন আবেগহীনতা বা শুষ্কতার প্রকাশ থাকে যাহাতে।
□ ভদ্রলোকের প্রতিবাদ, কঠিন ধাতব দ্রব্যের আঘাতজন্য শব্দ।
ঠনঠনে:
• ঠনঠন দিশাগ্রস্ত যাহাতে; অথবা, যে বা যাহারা ঠনঠন শব্দ করে; কিংবা, যাহারা আবেগহীন শুষ্ক ‘ভদ্র’ ব্যবহার করে; অথবা, ( পালটা মারিবার পৌরুষ নষ্ট বলিয়া ) যাহারা প্রত্যাঘাত রূপে শুধুমাত্র চীৎকার-চেঁচামেচি প্রতিবাদ ইত্যাদি করে।
□ নিরাবেগী, শুষ্ক, ঠনঠন শব্দকারক, ( কলিকাতার একটি অঞ্চলের নাম। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এটি ভদ্রলোকদের পাড়া রূপে প্রতিষ্ঠা পায়। এখানে যে কালীমন্দিরটি আছে, তাকে এখনো ঠনঠনে কালীবাড়ী বলে )।
ঠানদি:
• ঠান-স্বরূপ যে দিদি; অথবা, দিদিস্থানীয়া যে অতিবয়স্কা মহিলার শরীর শুকাইয়া কাঠ বা ধাতুর ন্যায় হইয়া গিয়াছে।
□ অতি বয়স্কা মহিলা।
ডগ:
• উড়ানকারীর গমন থাকে যাহাতে; অথবা, উড়ানকারীর ( ইচ্ছা, অংশ, আওয়াজ, পোষ্য ইত্যাদির ) গমন থাকে যাহাতে; কিংবা, যাহাতে উড়িয়া গমন বা উড়িয়া গমনের ভাব থাকে।
□ আগা, অগ্রণী অংশ, সরু ডাল, শিকারীর কুকুর।
ঢেরা:
• ঢের-এর আধার যে; অথবা, ঢেরকরণ বা যোগকরণ থাকে যাহাতে ( যে ক্রিয়ায় ); অথবা, ( দড়ি পাকাইয়া পূর্ব্বকৃত দড়ির সহিত ) যোগকরণ করে যে ( দো কাঠি যন্ত্রবিশেষ ) ।
□ যোগ করা, ঢের করা, ঢেরকরণ-চিহ্ণ, যোগ চিহ্ণের ( + ) ন্যায় আড়ভাবে স্থাপিত দুই খণ্ড কাষ্ঠে রচিত দড়ি পাকাইবার যন্ত্রবিশেষ।
তন্দ্রা:
• তন দ্রা যাহাতে; অথবা, ( তন ) ‘তারী অনকৃত’ হইয়া ( দ্রা ) ‘পলায়মান’ যাহাতে; অথবা, যাহাতে সত্তার সচেতনতা পলায়ন করিতে শুরু করিয়াছে ( তবে সম্পূর্ণ পলায়ন করে নাই বা নিদ্রা যায় নাই, তন্দ্রা গিয়াছে )।
□ অবসাদ, ঈষৎ নিদ্রা, নিদ্রাবেশ।
তরুণ: • তর তর করিয়া বাড়িতে থাকা চলমান যাহাতে; অথবা, যে বাড়িতেছে এবং যাহার বৃদ্ধি এখনও সম্পূর্ণ হয় নাই। □ প্রাক্-পূর্ণবয়স্ক, ষোড়শোর্দ্ধবয়স্ক, যুবা, কচি, উৎসাহসম্পন্ন …।
তীর:
• তী ( সক্রিয় তারী-ধারী ) রহে যাহাতে; অথবা, তিরকরণকে ( তিরতির প্রবাহকে ) ধারণ করে যে; অথবা, তারিতকে ( জলধারা প্রভৃতিকে ) প্রবাহিত রাখে যে ( যে বাঁধ, পাড়, লোহার টুকরো বা সীসা ); কিংবা, যাহা না থাকিলে বাণাদি ও ধারাদি তাহার লক্ষ্য অবধি তারিত হইতে পারে না।
□ কূল, বেলা, বাণ, সীসক।
তুলসী:
• তুল-এর শেষ যাহাতে, তাহার সক্রিয় আধার যে; অথবা, সকল তুলনার শেষ যাহাতে; অথবা, যাহার সহিত তুলনা করার ন্যায় আর কিছুই নাই। / যাহাকে দেখিয়া আর্য্যগণ তাহার তুলনা দিতে অক্ষম হন।
□ অতুলনীয়া, ‘বেনজির’, শঙ্খচূড় দানবের স্ত্রী, জলন্ধর-স্ত্রী; ( সাদৃশ্যে ) তুলসী গাছ।
দধি:
• দাতাকে ( প্রদত্ত অম্লকে ) ধারণপূর্ব্বক সক্রিয় যে ( দুগ্ধ বা দোহন করে আনা গরুর দুধ বা প্রজার উৎপন্ন ); অথবা, অম্লযোগজন্য ( ‘আমার’ ‘আমার’ বোধ ঢুকিয়া যাওয়ার জন্য ) দুগ্ধবিকার বা সামাজিক সম্পদের বিকার ( ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণতি ) যাহাতে; অথবা, যাহা ভোগ করিলে শুরুতে টক ও শেষে কষায় লাগে; অথবা, পৃথিবীদোহন করিয়া যে দুগ্ধ পাওয়া যায় তাহাতে ‘আমার আমার ভাব’ ( ব্যক্তিমালিকানা ) ধারিত হইলে তাহা টক হইয়া যায় কিন্তু অন্তিমে তাহা কষায় লাগে ( শেষজীবনে মানুষ তাই বিষয়বিরাগী হইয়া কষায় বস্ত্র পরিধান করিয়া সন্ন্যাসী হইয়া যায় ); কিংবা, যে দধি ( জীবনধর্ম্ম ) গ্রহণ করিলে মানুষ বিষয়ে নিযুক্ত হইয়া জ্ঞানের পূর্ণতা এবং তদ্দ্বারা পূর্ণসংযম লাভ ও শেষে বিষয়বিরাগী হইয়া মুক্তি লাভ করে; অথবা, যাহা মানুষকে দৈহিক শক্তিবর্দ্ধক বলসম্পদ, মানসিক শক্তিবর্দ্ধক জ্ঞানসম্পদ এবং দেহমন উভয়ের শক্তিবর্দ্ধক ধনসম্পদ দেয়, কিন্তু তাহার একপ্রকার সীমাও যে রক্ষা করে।
□ জীবনধর্ম্ম, অনুরাগ ও বিরাগের সামঞ্জস্যের ধর্ম্ম, বাহ্যসম্পদ সৃজন ও ভোগের ধর্ম্ম, ব্যক্তিগত সম্পদ; ( সাদৃশ্যে ) গরু মোষ প্রভৃতির দুধের দই, কষায় বস্ত্র।
দধিমঙ্গল:
• দধি গ্রহণের কারণে মঙ্গল যাহাতে; অথবা, প্রবৃত্তি ও সংযমের সামঞ্জস্যমূলক কর্ম্ম-ধর্ম্ম পালন করিলে যে মঙ্গল হয়; কিংবা, যে কোনো মঙ্গলকর্ম্ম সূচনা করিবার পূর্ব্বে যে আচার প্রতীকরূপে পালন করিতে হয়।
□ উপনয়ন ও বিবাহের পূর্ব্বরাত্রিতে মাণবক ও বরের দধিমিশ্র মিষ্টান্নভক্ষণরূপ আচারবিশেষ।
দীক্ষা:
• দীক্ষা-এর আধার যাহাতে; অথবা, দীক্ষকরণ (দক্ষাধিকার প্রদান) থাকে যাহাতে (যে আচরণে, ক্রিয়ানুষ্ঠানে); অথবা, উত্তীর্ণ ছাত্রগণকে যাহাতে দক্ষরূপে কর্ম্মযজ্ঞ পরিচালনার অধিকার দেওয়া হয়।
□ ক্যাম্পাস অ্যাপয়েন্টমেন্ট; ( সেকালের ভাষায় ) মন্ত্রোপদেশ, ব্রতোপদেশ গ্রহণ, নিয়মগ্রহণ, যজন …।
দীক্ষান্ত-ভাষণ:
• দীক্ষা-শেষে যে ভাষণ দেওয়া হয়; অথবা, বিদ্যাশিক্ষার পর দীক্ষা-অন্তে ( বা দক্ষাধিকার প্রদান-অন্তে ) যে ভাষণ দেওয়া হইত; অথবা, যেরূপ শিক্ষা দেওয়া হইয়াছে তদনুসারে সম্যকরূপে আবর্ত্তিত হইবার বা সমাবর্ত্তন করিবার জন্য শেষ যে তাত্ত্বিক উপদেশ ( মন্ত্রোপদেশ, ব্রতোপদেশ ) দেওয়া হইত যাহাতে; কিংবা, দীক্ষা শব্দের কার্য্যকরী অর্থ ভুলিয়া গিয়া ছাত্রদিগকে দক্ষাধিকার না দিয়াই তাহাদের উদ্দেশ্যে একালের স্মৃতিভ্রষ্ট পণ্ডিতেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠান্তে যে অপ্রাসঙ্গিক ভাষণ দিয়া থাকেন।
□ সমাবর্ত্তনে প্রদত্ত ভাষণ, দীক্ষা বা কর্ম্মযজ্ঞ পরিচালনার অধিকার বা নিয়োগপত্র ( অ্য়াপয়েণ্টমেণ্ট ) দিয়া যে ভাষণ দেওয়ার কথা, নিয়োগপত্র না দিয়াই একালে যে অপ্রাসঙ্গিক ভাষণ দেওয়া হয়।
দূর্ব্বা:
• দূর ( … দুহিতব্যের রক্ষক ) বহনপূর্ব্বক বাহিত হয় যাহাতে; অথবা, যে সামাজিক-পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধন দূরকে বহন করিয়া আনয়ন করে; কিংবা, যে বন্ধন দূর অবধি বিস্তারিত থাকে; অথবা, যাহার প্রতীকরূপে ধানদূর্ব্বা সহকারে অনুষ্ঠানাদি বহু প্রাচীনকাল হইতে প্রচলিত আছে; কিংবা, ( সাদৃশ্যে ) যে ঘাস ( ঘাসের শাখাপ্রশাখা ) অনেক দূর পর্য্যন্ত বিস্তারিত থাকে।
□ সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক, ( সাদৃশ্যে ) তৃণবিশেষ, দূর্ব্বাঘাস।
ধারাকদম্ব:
• ধারা ( প্রবাহ ) রূপ কদম্ব যাহাতে; অথবা, একই পণ্য অজস্র থাকে যে পণ্যধারায়।
□ পাইকারী মাল বিক্রির দোকান, পাইকারী দোকান; ( সাদৃশ্যে ) একপ্রকার কদমগাছ। দ্র. নীপ।
ধূলিকদম্ব:
• ধূলিরূপ কদম্ব যাহাতে; অথবা, পণ্যসম্ভারের কণা পাওয়া যায় যে ব্যবস্থা ( বৃক্ষ ) হইতে; কিংবা, খুচরো পণ্য বিক্রয় করা হয় যে দোকানে।
□ খুচরো মাল বিক্রির দোকান; ( সাদৃশ্যে ) একপ্রকার কদমগাছ, ক্ষুদে-কদমা।
ধ্যান:
• ধ্যা ( ধারী থাকে বা চলে যাহাতে তাহা ) অনকৃত ( চলমান ) যাহাতে; অথবা, ধারণ-উদ্দেশ্যে ( বা মানসিকভাবে ধরিবার জন্য ) পশ্চাদ্ধাবন করা অনকৃত থাকে যাহাতে। / অদ্বিতীয় বস্তুতে চিত্তবৃত্তিপ্রবাহ ( থাকে যাহাতে )।
□ চিন্তন, মনন, যোগবিশেষ, ধ্যেয় বিষয়।
নটে-গাছ:
• নটকরণ ব্যবস্থা ( গাছ ) যাহাতে; অথবা, বিভিন্ন উপলক্ষে নটকরণ করিবার নিমিত্ত ( পাড়ায় বা গ্রামে ) যে সাময়িক নাট্যদল ( নটে-গাছ ) গড়িয়া উঠে; কিংবা, নটকরণের মাধ্যমে কথকের কথা ও কাহিনী শেষ হইলে যে নাট্যদল ভাঙিয়া ( নটে-গাছ মুড়াইয়া ) দেওয়া হয়; অথবা, ( সাদৃশ্যে ) যে শাক বছরের যে কোনো সময় যত্রতত্র বীজ পড়িয়া থাকিলেই গজাইয়া উঠে।
□ সাময়িক নাট্যদল, ( সাদৃশ্যে ) নটে নামক শাকের গাছ।
নিরীহ:
• নিঃ ( সক্রিয়ভাবে অনকৃত হইয়া নিঃশেষিত ) ঈহা ( অর্জ্জনেচ্ছা ) যাহার; অথবা, যাহার ঈহার (‘এইরূপ হোক’ – এমন ইচ্ছা ও চেষ্টার ) সমাপ্তি সক্রিয়ভাবে করা হইয়াছে; অথবা, অর্জ্জনেচ্ছা সক্রিয়ভাবে বিসর্জ্জিত যাহার। / নির্গত ঈহা যাহার।
□ চেষ্টারহিত, নিষ্ক্রিয়, নিস্পৃহ।
নেজ:
• নে ( দিশাগ্রস্তভাবে অনকরণ ) জনন করে যে; অথবা, যাহাতে হাত দিলে তাহার অধিকারী ( হালের বলদ, উপাধিধারী চাকুরে ) তেজ-প্রকাশপূর্ব্বক বিশেষ দিকে ছোটে।
□ শিক্ষিত চাকুরের নামের পেছনে থাকা ডিগ্রিরূপী ও মর্য্যাদাসূচক ‘পুচ্ছ’ ( যথা, M.A., Ph.D. ইত্যাদি ), বলদের পুচ্ছ।
পক্ষী:
• পক্ষ-এর সক্রিয় আধার যে; অথবা, যে তাহার দুই পক্ষ-এর উপর শক্তিপ্রয়োগ করিয়া আকাশে ( বাহ্যাকাশে বা সমাজ-আকাশে ) উড়ে।
□ ( শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষধারী ) চন্দ্র, ( আসামীপক্ষ ও বাদীপক্ষধারী ) বিচারক, ( ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষধারী ) দোকানদার, ( দক্ষিণ ও বামপক্ষধারী ) পাখী …।
পবিত্র:
• পব ( পালন-বাহক ) ইত্র ( সক্রিয়ভাবে ত্রাণ পায় ) যাহাতে; অথবা, যাহা দ্বারা পালন-বাহক ( সন্তান, সৃষ্টি, উৎপন্ন, পণ্য ) মাত্রেই প্রকৃতিসিদ্ধ, সমাজস্বীকৃত, ধর্ম্মস্বীকৃত, ও রাষ্ট্রস্বীকৃত হইয়া গ্রহণযোগ্য বলিয়া ঘোষিত হয়; কিংবা, জনসাধারণের যে সন্তানাদি ( সৃষ্টি, উৎপন্নাদি ) তাহাদের উদ্ভব, বিকাশ, পরিণামের প্রতিটি অধ্যায়ের অস্তিত্ব ও সক্রিয়তার জন্য যথাবিহিত দক্ষিণা দান করিয়া পুরোহিত-মোল্লা-পাদ্রী, বিশেষজ্ঞ, আমলা প্রমুখ তত্তদ ক্ষেত্রের অধিকারীদের শংসাপত্র ( সার্টিফিকেট ) পাইয়াছে; অথবা, আপন অস্তিত্ব লইয়া বর্ত্তমান ও সক্রিয় থাকার অনুমতি বা অনুমতিপত্র ( লাইসেন্স, পারমিট ) পাইয়াছে যে।
□ শুচি, পূত, শুদ্ধ, ( সেকেলে ভাষায় ) পবিত্র-করণোপায়, পাবন তপস্যাদি বা যজ্ঞদানাদি, শুদ্ধিকর কুশরচিত অনামিকা-বেষ্টন, তাম্র, জল, ঘৃত, মধু, ঘর্ষণ, মার্জ্জন, ঋষি, বেদমন্ত্র, মন্ত্র।
পল্লী (পল্লীগ্রাম):
• পল ( আপতনকারীর লয়ন বা পতন ) সক্রিয়ভাবে লালিত হয় যে আধারে ( যে গ্রামে ); অথবা, গ্রাম পল্লবিত হইয়া যে নতুন ক্ষুদ্র গ্রাম পত্তন করে; কিংবা, গ্রামের যে সম্প্রদায় গ্রাম হইতে বহির্গত হইয়া গ্রামের অদূরে যে নতুন গ্রাম পত্তন করিয়াছে।
□ ক্ষুদ্রগ্রাম, পল্লবিত গ্রামাংশ, কুটী।
পাইকার:
• পাই ধরিয়া ( লেনদেন ) করে যে; অথবা, পদে পদে ( একটি একটি ধরিয়া ) না করিয়া পাই ( পর্য্যায় বা শ্রেণী ) ধরিয়া ( লেনদেন ) করে যে; কিংবা, যে থোক কিনিয়া খুচরা বেচে, বা, খুচরা কিনিয়া থোক বেচে, অথবা, থোক কিনিয়া থোক বেচে।
□ যে মহাজনের কাছে মাল কিনিয়া একেবারে অধিক বিক্রয় করে ( wholesale-dealer )।
পুঁচকে:
• পুঁচ করিয়া এক দিকে বাহিরায় যে; অথবা, সত্তার রূপগুণের ক্ষুদ্র প্রতিরূপ চয়নপূর্ব্বক বহির্গত হয় যাহাতে।
□ সত্তার ক্ষুদ্র প্রতিনিধি, অত্যন্ত ছোট, অপরিণত।
-ফলা:
• ফল-এর ( কর্ম্ম-পরিণামের ) আধার যে; অথবা, কোনো সত্তার আভ্যন্তরীণ ক্রিয়ার বা ক্রিয়াসমূহের পরিণাম থাকে যাহাতে ( যে নির্গত রূপে ); কিংবা, সত্তার অভ্যন্তরে পালিত-পুষ্ট হইয়া তাহার বহির্গমনপথ চিরিয়া বহির্গত হয় যে; অথবা, কোনো সত্তার আভ্যন্তরীণ ক্রিয়া কার্য্যকরী হইলে বা পরিণামপ্রাপ্ত হইলে যাহা হয়; [ কিংবা, উদাহরণস্বরূপ, ক-এ র-ফলা জুড়িলে বা ‘ক্র’ করিলে অর্থাৎ করণ ক্রিয়া রক্ষিত হইতে থাকিলে যে পরিণাম হয় ]।
□ ফলিত হওয়া, ফলন্ত গাছ, উৎপন্ন করা বা ধরান, কার্য্যে পরিণত করা, প্রতিফলিত করা, প্রকাশ করা, বিস্তারিত করা; ঢাল, বাণের আগা, অস্ত্রের পাতা ( blade ); ব্যঞ্জনবর্ণের সহিত যুক্ত ‘য’-কারাদি [ বাংলাভাষায় কার-সহ ফলা মুখ্যত আঠার প্রকার : কা কি কী কু কূ কৃ ক্লি ( ক+৯ ) কে কৈ কো কৌ – এই এগার এবং ক্য ক্র র্ক ক্ল ক্ব ক্ন ক্ম – এই সাত, মোট আঠার। প্রয়োগে – ক-এ আ-কার = করণকে আধারিত করিলে যাহা হয়; ক-এ য-ফলা = করণ চলিতে থাকিলে বা ফলিলে যাহা হয় ]।
ফিকে:
• ফিক ( সারাংশ ক্ষেপণ ) দিশাগ্রস্ত যাহাতে; অথবা, যাহার সারাংশ ( লবণাক্ত অংশ ) ফিক ( ক্ষেপণ ) করা হইয়াছে বা ফেলিয়া দেওয়া হইয়াছে; কিংবা, সারাংশ নিষ্কাশিত ও নিক্ষিপ্ত যাহার।
□ অযৌক্তিক, পাতলা, হালকা, জলো, আলুনী।
ফোড়ন:
• ফোড় ( সংহতি ভাঙিয়া দেওয়া ) অন ( চলমান ) যাহাতে; অথবা, যে কথার দ্বারা আলোচনাদির সে-যাবৎ গড়িয়া উঠা সংহতি ভাঙিয়া দেওয়া হয়; কিংবা, যাহা দ্বারা ঘৃতে বা তৈলে যে লঙ্কা তেজপাতা মৌরী ইত্যাদি দ্বারা ( ব্যঞ্জনাদির ) পূর্ব্বপ্রস্তুত সংহতি ভাঙিয়া দেওয়া হয় ( এবং স্বভাবতই নূতন সংহতি গড়িয়া উঠে )।
□ আলোচনায় ফোড়ন কাটা, সম্ভরা দেওয়া, সাঁতলানো, ছালন দেওয়া, বাগার ( বাগাড় ) দেওয়া।
বাদসাদ:
• বাদ ( ত্যক্ত ) ও সাদ ( উৎসাদিত বা বিনষ্ট ) যাহাতে; অথবা, যথা, পোকায় খাওয়া বলিয়া ত্যক্ত ( বাদ ) এবং পচিয়া গিয়াছে বলিয়া নষ্ট ( সাদ ) যে শস্যাদি ( বেগুন প্রভৃতি )।
□ কিয়দংশ বিসর্জ্জন, ত্যাগ।
বিড়ে-দেখা:
• বিড়করণ করিয়া দেখা হয় যাহাতে; অথবা, ঘনিষ্ঠ হইয়া ও বিরুদ্ধ আচরণ করিয়া ( তাহার প্রতিক্রিয়ার দ্বারা সত্তার স্বরূপ বিচার করিয়া ) দেখা হয় যাহাতে।
বৃন্দ:
• বাহীর আবর্ত্তন দান করে যে; অথবা, যে পরিমাণ বহুত্ব ( কোষ সংখ্যা, সদস্য সংখ্যা, যাত্রী সংখ্যা…) থাকিলে তবেই কোনো বিশেষ সামাজিক সত্তা ( সমাজদেহ, গোষ্ঠী, সংস্থা, সংগঠন প্রভৃতি ) আবর্ত্তিত হইবার যোগ্যতা অর্জ্জন করে।
□ তত্তদ বিষয় বা বস্তুর সুনির্দ্দিষ্ট বহু, সংখ্যাবিশেষ, সমূহ, গুচ্ছ; সঙ্ঘ, সার্থ; ভিক্ষুসঙ্ঘ বা ভিক্ষুবৃন্দ।
বোঝা:
• বুঝ-এর সার্ব্বিক আশ্রয় যাহাতে; অথবা, যাহা অবগত হইলে বা হৃদয়ঙ্গম করিলে তাহা মাথার ( মনের ) উপর ভার বা বোঝা বলিয়া মনে হয়; কিংবা, ( স্বাভাবিক-প্রাকৃতিক সহজ জ্ঞান নয় বলিয়া এবং উদ্ভাবিত ব্যক্তজ্ঞান বলিয়া) যাহাকে অবগত করিলেই চলে না, চেষ্টাপূর্ব্বক মনে রাখিতে হয় এবং সেকারণে তাহা মনের ( মস্তিষ্কের ) বোঝাস্বরূপ প্রতীয়মান হয়; অথবা, যে অবগতি মস্তিষ্কের মননচেষ্টার উপর ভার হইয়া চাপিয়া বসে এবং মানুষকে অবগত করে বা নীচে নামায়; কিংবা, একালের স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির শিক্ষা যাহাতে পরিণত হইয়াছে; অথবা, ( সাদৃশ্যে ) যাহা বাহ্যিকভাবে দৃশ্যত শিরের উপরে চাপিয়া বসে।
□ অবগত হওয়া, জানা, মস্তিষ্কের ভারস্বরূপ বোধবুদ্ধি; শিরের উপরের ভার, শিরে রাখা বহনীয় দ্রব্য।
ভঞ্জ:
• ভং ( মানসসম্পদ অন্তর্ভুক্তকারীর রহস্যরূপ ) জনন করে যে বা জনিত যাহাতে; অথবা, যে অন্তর্ভুক্তকারী ( ভেদ দূর করিয়া ) সামঞ্জস্য সাধন করে; কিংবা, যে কায়স্থ বা সরকারী প্রতিনিধি ( পাত্র, মিত্র, অমাত্য ) বিভিন্ন প্রকার ( মান, বিবাদ প্রভৃতি ) ভেদ-এর সামঞ্জস্য বিধান ( মানভঞ্জন, বিবাদভঞ্জন ইত্যাদি ) করিতেন।
□ ভগ্ন করা, নাশ করা, দূর করা, মীমাংসা করা, মিটান; কায়স্থের উপাধিবিশেষ ( arbitrator )।
ভোঁদড়:
• ভোঁ ( … রহস্যময়ভাবে অদৃশ্য ) হইতে দড় যে; অথবা, দেখিতে না দেখিতে জলমধ্যে ( মৎস্যের প্রত্যাশায় ) অদৃশ্য হইয়া যায় যে।
□ উদ্বিড়াল, ধেড়ে।
মলাট:
• মলা ( ময়লা ) টঙ্কারিত যাহাতে; অথবা, ধূলি-ময়লা আটকায় যাহাতে।
□ পুস্তকের মলাপহারক বহিরাবরণ।
মহিলা:
• মহ ( সমস্ত, যূথ, ঝাঁক ) সক্রিয়ভাবে লালিত যে আধারে; অথবা, আদিম মানবজাতির আধেয়স্বরূপ মহকে ( যূথকে ) আধাররূপে ধারণ করিতেন যে মানবীগণ; কিংবা, যে নারীগণ বৈদিক-পূর্ব্ববর্ত্তী যুগের ( সনাতন যুগের ) আদিম সাম্যবাদী যৌথসমাজের ( মাতৃতান্ত্রিক সমাজের ) সদস্যরূপে পরিগণিত হইতেন; অথবা, আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজের নারীর স্বভাব এখনও যে গিন্নিমাদের ভিতরে দেখিতে পাওয়া যায়; কিংবা, যে গৃহিণী সনাতন যুগের নারীর ন্যায় স্বভাবতই সাম্যবাদী বলিয়া এখনও তাঁহার স্বজন-পরিজনের মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ সমমর্য্যাদায় ( সুন্দরভাবে ) মমতা আবেগ ও খাদ্যাদি পরিবেশন করিয়া থাকেন।
□ মাতৃতান্ত্রিক সমাজের নারী, গৃহিণী, নারী, ( সাদৃশ্যে ) প্রিয়ঙ্গুলতা, রেণুকা-গন্ধদ্রব্য।
মেয়ে (মেয়া):
• মেয় ( দিশাগ্রস্তভাবে পরিমিত ) থাকে যে নির্দ্দিষ্ট আধারে ( মেয়-র আধার যে ); অথবা, যাহাকে ( দৈহিক ও মানসিকভাবে ) মর্দ্দনপূর্ব্বক সঙ্কুচিত-সীমিত করিয়া নির্দ্দেশিত জীবনযাত্রাপথে চলিতে দেওয়া হয়।
□ স্ত্রীলোক, স্ত্রী, ঝি, বউ, সামান্য স্ত্রীলোক, কন্যা, বলহীনা নারী, অবলা, পাত্রী, বিয়ের কনে, কন্যাসদৃশী স্নেহপাত্রী।
যত্ন-আত্তি:
• যত্ন ও আত্তি যাহাতে; অথবা, যাহা দ্বারা যত্ন বা সংযত করিবার এবং আত্তি বা আয়ত্ত করিবার চেষ্টা করা হয়।
□ সেবাযত্ন অর্থে প্রচলিত।
যূথ:
• যূ ( পরিপূরকগণ বা বৃন্দ ) থাকে যাহাতে; অথবা, পরস্পরের পরিপূরক মানুষেরা থাকে যে দলবদ্ধ গোষ্ঠীতে।
□ তির্য্যক বৃন্দ, পশুপক্ষীবৃন্দ, গণ, সমূহ, বৃন্দ; মানুষের থোকা।
রাঢ়:
• ( ৭৫০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গের বেদবিরোধী যুদ্ধে ) যে দেশের মানুষেরা সেই দেশের ব্রাহ্মণের নেতৃত্বে বেদবাদী ব্রাহ্মণদিগকে রঢ় ( পালটা মার ) দিয়াছিল; অথবা, ( বেদবাদিগণের দৃষ্টিতে ) যে দেশের মানুষেরা ‘উদ্ধতস্বভাব, রূক্ষপ্রকৃতি, গোঁয়ার’ ছিল।
□ গঙ্গার পশ্চিমতীরস্থ ভূভাগ, পশ্চিমবঙ্গ।
রুধির:
• রুধ ( অবরুদ্ধ ) সক্রিয় রহে যাহাতে; অথবা, যাহা শিরা-উপশিরা ফাটাইয়া বাহিরে চলিয়া যায় না; কিংবা, যাহাকে শিরাদি দ্বারা রোধ করিয়া সমগ্র দেহে সক্রিয় রাখা হয়।
□ শোণিত, রক্ত।
রেতঃ :
• রে-র ( দিশাগ্রস্ত পুনরাবৃত্তিকারী সত্তার ) তারণের নির্য্যাস থাকে যাহাতে; অথবা, জ্ঞানসম্পদের যে অংশকে বা যে তত্ত্বাদিকে উৎপাদন কর্ম্মযজ্ঞে প্রয়োগ করা হয়; কিংবা, ( সাদৃশ্যে ) যাহা নারীগর্ভে নিষেক করা হয়।
□ শিববীর্য্য, উদ্ভাবিত বা আবিষ্কৃত জ্ঞান, প্রযুক্তি, টেকনলজি; ( সাদৃশ্যে ) নরের বীর্য্য, শুক্র।
রেতঃপাত:
• রেতঃ-এর পতন ঘটান হয় যাহাতে; অথবা, অর্জ্জিত প্রযুক্তিজ্ঞানের প্রয়োগ করা হয় যাহাতে ( যে উপযুক্ত ক্ষেত্রে ); কিংবা, পুরাণাদি গ্রন্থে আমাদের মুনিঋষিগণকে নানা স্থান-কাল-পাত্রে যে গৌরবজনক কার্য্য ( রেতঃপাত ) প্রায়শই করিতে দেখা যায়; এবং ‘পাদোদক-মূঢ়’ আমরা তাহার অর্থ না বুঝিয়া তাহাকে ‘নারীগর্ভে বীর্য্যপাত’ ভাবিয়া নিজেরা বোকা বনি এবং পূর্ব্বসূরী মুনিঋষিগণকে অমর্য্যাদা করি।
□ প্রযুক্তিপ্রয়োগ, (সাদৃশ্যে) শুক্রপাত।
লা:
• ল-এর (লেন-দেনের) আধার যে; অথবা, লালিত হওয়া বা লালন করা চলে যাহাতে; কিংবা, যে ( অন্য কাহাকেও লালনের জন্য ) দান করে বা ( নিজেকে লালনের জন্য ) গ্রহণ করে; অথবা, লইবার বা লয় করিবার আধার যে।
□ দান, গ্রহণ।
-লা:
• ( যেহেতু প্রত্যেক মানুষই দানকারী বা গ্রহণকারী হইতে পারেন, গ্রামবাংলার মানবীগণ সেকারণে অন্যদের সম্বোধন করেন -) হ্যা-লা, কী-লা … ইত্যাদি।
□ হে দানকারিণী, হে গ্রহণকারিণী।
লাই:
• লা ( লা, লিয়ে আয়, বা লও, ভয় নেই, যাও, লইয়া আইস, গ্রহণ কর … ইত্যাদি বলিয়া লালিত করা বা লেলাইয়া দেওয়া ) সক্রিয় যাহাতে।
□ প্রশ্রয়, অতিরিক্ত আদর।
লো:
• ল-এর ( অবলালিত হইতে অতিলালিত অবধি সর্ব্বপ্রকার লালনাদির ) সার্ব্বিক আধার যে; অথবা, মনের সার্ব্বিক বাহক যে; কিংবা, যে সত্তা বিন্দু হইতে সিন্ধু অবধি কিছু না কিছু বহন করিয়া লইয়া যাইতেছে।
□ মনোবাহক, বাহকমাত্র।
-লো:
• ( মানুষ মনপ্রধান প্রাণী, প্রাচীন পূর্ব্বপুরুষেরা তা জানতেন। অন্যেরা সেই উত্তরাধিকার অনেকখানি বিস্মৃত হইলেও গ্রামবাংলার মানবীগণ আজও সেই উত্তরাধিকার বহন করেন। তাঁরা অন্যদের সম্বোধন করেন – ) ও-লো, অর্থাৎ, ‘হে মনিনী বা মনোবহনকারিণী!’
□ ওলো, হ্যাঁলো, কীলো, হ্যালো (hallo)।
লোক:
• লুক-এর (অনুসন্ধানী দৃষ্টির) সার্ব্বিক আশ্রয় যাহাতে; অথবা, যাহার ( যে ভুবনের ) সমগ্র এলাকা দেখিতে পাওয়া যায়; অথবা, যে মানসিক ও বাহ্যিক চক্ষুষ্মান ( বড়মানুষ ) সবকিছুর ভিতরে লোকন করিতে পারেন; কিংবা, যাহার ( যে মানুষের ) ভিতরে অনায়াসে লোকন করা যায় ( এতই স্বচ্ছ )।
□ ভুবনসামান্য, পৃথিবী, বড়লোক, মহর্ষি, জন, মনুষ্য, ত্রিলোক, সপ্তলোক, স্থাবরলোক, জঙ্গমলোক …, লোক = sphere, যথা financial sphere, political sphere … ইত্যাদি।
শত্রু:
• শ-এর ( শক্তিযোজনের ) ত্রাতা নবরূপে উত্তীর্ণ যাহাতে; অথবা, যে ত্রাতা ত্রাণ করিবে বলিয়া মাঝপথে বিশ্বাসঘাতকতা করে; অথবা, মানুষের ( পরিবারের, সংস্থার, রাজ্যের … ) বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত যে-আপনজন তাহার দায়িত্ব পালন না করিয়া ( হঠাৎ মাঝপথে বিশ্বাসঘাতকতা করিয়া ) মানুষের ( পরিবারের, সংস্থার, রাজ্যের … ) ক্ষতি করিয়া দেয়; কিংবা, লক্ষণার্থে, মানুষের বা তার পরিবার প্রভৃতির ক্ষতিসাধন বা সর্ব্বনাশ করিবার চেষ্টা করে যে সত্তা।
□ ঘরশত্রু বিভীষণ, রিপু, অরি, দুষমন।
শুশ্রূষক:
• শুশ্রূ-র ( গৃহীত শ্রুত কথার নবোত্তীর্ণ কর্ম্মের ) দিশাগ্রস্তভাবে যোজনা করা হয় যাহাতে; অথবা, ( প্রভুর বা রোগীর ) নির্দ্দেশ আদেশ আজ্ঞা ইত্যাদি শুনিয়া তদনুসারে কর্ম্ম করে যে কর্ম্মীগণ; কিংবা, নির্দ্দেশ শুনিয়া কর্ম্ম করিবার জন্য যে বা যাহারা দাঁড়াইয়া থাকে।
□ শ্রবণেচ্ছু, নির্দ্দেশবর্ত্তী, ( একালের ভাষায় ) অ্যাটেনড্যাণ্ট; ( সেকালের ভাষায় ) চার প্রকার কর্ম্মকর ও পনের প্রকার দাস।
ষড়রিপু:
• ষড় ( ছয় ) রিপু যাহাতে; অথবা, যে ছয় প্রকার ঘরশত্রু ( কাম ক্রোধ লোভ মদ মোহ মাৎসর্য্য ) মানবাত্মার গভীরে থাকে; অথবা, শয়তানের যে ছয় দোষ স্বভাবতই থাকে ( বলিয়া মনে করা হয় ); কিংবা, মানবাত্মার গভীরে থাকা যে ছয় দোষের উপর নির্ভর করিয়া একালের আধুনিকতাবাদী মার্কসবাদী বিপ্লববাদী তত্ত্বস্রষ্টাগণ তাঁহাদের মতবাদগুলি গড়িয়া তুলিয়াছেন ও প্রচার করিয়া থাকেন।
ষড়ৈশ্বর্য্য:
• ষড় ( ছয় ) প্রকার ঐশ্বর্য্য [ ঐশ্বর্য্য ( অণিমা লঘিমা প্রাপ্তি প্রাকাম্য মহিমা ঈশিত্ব বশিত্ব কামবসায়িতা নামক অষ্টসিদ্ধি ), জ্ঞান, বীর্য্য, যশঃ, শ্রী, বৈরাগ্য ] যাহাতে; অথবা, ঈশ্বরের যে ছয় গুণ স্বভাবতই থাকে ( বলিয়া মনে করা হয় ); কিংবা, যে মানুষের কমবেশী থাকে এবং বাকীটা যে অর্জ্জন করিতে পারে; অথবা, মানুষের যে ছয় গুণের উপর নির্ভর করিয়া সেকালের ( সনাতন, বৈদিক, তান্ত্রিক, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, ইসলাম, হিন্দু প্রভৃতি ) ধর্ম্মস্রষ্টাগণ তাঁহাদের ধর্ম্ম সৃষ্টি করিয়া গিয়াছেন।
সামনা:
• সামন করা হয় যাহাতে; অথবা, সামন বা সমনজাত করা হয় যাহাতে; অথবা, মন-এর মুখোমুখী মন যাহাতে; কিংবা, দেখা হয় দেহমনের সহিত দেহমনের কিন্তু বলা হচ্ছে – দেখা হয় শুধুমাত্র মনের সহিত মনের ( সামন ); ঠিক যেভাবে সম্মুখ-এর বেলায় বলা হয়, দেখা হয়েছে কেবল মুখের সহিত মুখের ( face to face ); যেমন কিনা, গাত্রদাহ-এর বেলায় জ্বলে যায় মানুষের মন, বলা হয়, জ্বলে যাচ্ছে তার গা।
□ মানসিক-মুখোমুখী।(ইংরেজীতে mind to mind হয় না, বাংলায় সামনাসামনি হয়।)
স্নাতক:
• স্নাত ( স্রোতধারায় স্নান ) করণ সমাপ্ত করিয়াছে যে; অথবা, যে জ্ঞানতাপস চতুষ্পাঠীর বিশেষ প্রকার বিদ্যাস্রোতের ধারায় বহুবর্ষ নিমজ্জিত থাকিয়া তপস্যা করিয়াছে বা স্নান করিয়াছে; কিংবা, ( একালে ) যে জ্ঞানতাপস বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রিত বিদ্যাধারার স্রোতে নির্দিষ্টকাল নিমজ্জিত থাকিয়া তপস্যা করিয়াছে বা স্নান করিয়াছে; অথবা, ( সাদৃশ্যে ) জলস্রোতের ধারায় ডুবিয়া স্নান করিয়াছে যে।
□ (সেকালে) চতুষ্পাঠীর স্নাতক, বিদ্যাব্রত-স্নাতক; ( একালে ) গ্র্যাজুয়েট বা স্নাতক।
হই-হই (হৈ-হৈ):
• হই-এর ( ভবিতের ) পুনরাবৃত্তি যাহাতে; অথবা, যাহাতে অজস্র প্রকারের হইতেছে হইতেছ হইতেছি … প্রভৃতি হই হই কারীরা যে যার নিজ নিজ ভূত হওয়নের ঘোষণা করিতে থাকে; কিংবা, ‘তুমি বা তোমরা এভাবে হইলে আমি বা আমরা কীভাবে হইব’ – ইত্যাকার নানা প্রকারের পরস্পরবিরোধী হই-কারিগণের হই হই করণের ঘোষণা চলিতে থাকে যাহাতে।
□ কোলাহল, গোলমাল।
হাঁদা:
• হাঁ-এর ( … অভাবপূরণেচ্ছায় গৃহীতের ) দান থাকে যাহাতে; অথবা, যে নিজের প্রাপ্য অন্যকে ছাড়িয়া দেয়।
□ অজ্ঞানান্ধ, মূর্খ।
হাঁদু: • হাঁদা নবরূপে উত্তীর্ণ যাহাতে; অথবা, যে হাঁদা তাহার সরলতার জন্য অন্যদের আদর পায়।
□ আদুরে হাঁদা।
হিয়া:
• হি-এর ( সক্রিয় স্থিত সত্তার ) যাওয়া বা গমন চলে যাহাতে; অথবা, অন্তর্গত বা আগত অবাহ্যিক বিষয়াদিকে ( আবেগাদিকে ) লইয়া চলে যাহার; কিংবা, যে বিশ্বব্যবস্থা আবেগ-যুক্তি, কালো-সাদা, আঁধার-আলো, কৃষ্ণ-রাধা, হর-গৌরী … ইত্যাদি দ্বৈতাদ্বৈতকে লইয়া চলমান, তাহার আবেগ-কালো-আঁধার-কৃষ্ণ-হর …কে লইয়া চলিবার জন্য পরমাপ্রকৃতি মানুষকে যাহা ( যে হিয়া বা হৃদয় ) দিয়াছিলেন ( এবং যুক্তি-সাদা-আলো-রাধা-গৌরী … কে লইয়া চলিবার জন্য পরে যে মস্তিষ্ক দিয়াছেন )।
□ হৃদয়, অন্তরতমাংশ, বক্ষ, মন।
হুতুম:
• হুত ( … প্রক্ষিপ্ত বা আহুতিপ্রদত্ত সত্তা ) নবরূপে উত্তীর্ণ হইয়া সীমায়িত যাহাতে; অথবা, উৎপাদন কর্ম্মযজ্ঞে বিনিয়োগকৃত অর্থাদি নিয়োজিত না হইয়া যাহার নিকট সঞ্চিত হইয়া যায়।
□ ( সাদৃশ্যে ) পেচকবিশেষ।
হৃদয়:
• হৃ-কে ( … আপন আবর্ত্তনের অন্তঃকরণকে বা হরণকে ) দান করিয়া ( নানা অবাহ্যিক বিষয়াদি বা আবেগাদি দিয়া ) চলে যাহার। … দ্র. হিয়া।
□ আবেগালয়, কৃষ্ণালয়, চিত্ত, মানস, মনঃ, অন্তরতমাংশ।
হৃষ্টপুষ্ট:
• হৃষ ( হর্ষ বা হাসি ) টঙ্কারিত যাহাতে এবং পুষ ( পোষি ) টঙ্কারিত যাহাতে; অথবা, মনের খাদ্য ( নানা ঘনত্বের আনন্দরস ) গ্রহণ করিয়া যাহার মন সুস্থ সতেজ সবল হইয়া হর্ষযুক্ত ( হৃ ষ্ট) হইয়াছে, এবং দেহের খাদ্য ( নানা রকমের বাহ্য-ভোজন) গ্রহণ করিয়া যাহার দেহ সুস্থ সতেজ সবল বা পুষ্টিযুক্ত ( পুষ্ট) হইয়াছে।
□ চিত্তসন্তোষ-দেহপুষ্টিযুক্ত, সানন্দ ও পুষ্টদেহ। (দৈহিক শ্রীবৃদ্ধির পাশাপাশি মনের শ্রীবৃদ্ধির কথা বা হ্যাপিনেস ইনডেক্স-এর কথা বঙ্গভাষী বহু আগেই জেনেছে ও বুঝেছে এবং তাকে স্থান দিয়েছেন ।