০
১৯২৭ বার পঠিত
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মতো বর্ণবাদি মানুষ পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার ব্যক্তিত্ব হচ্ছে একটি ঝাঁঝরের শতছিদ্র। যে শতছিদ্র পট কইরা অন্য দেশের সূঁচের গোড়ায় একটি ছ্যাদা কেন তা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতার পান্ডারা দরিদ্র মানুষের মাথা পিষে দেয় অহোরহো; ক্রসফায়ারে পাখির মতো গুলি করে মারে অধিকারহীন মানুষকে।
কিন্তু এমেরিকায় একটি শ্বেতাঙ্গ পুলিশ একজন শ্যামল যুবকের মাথা বুটের নীচে পিষে দিলে; দক্ষিণ এশিয়ার মাগন ঠাকুর আর খয়ের খাঁরা ছ্যা ছ্যা করে ওঠে।
যেন কী বিরাট মানবাধিকার সরোবরে ফুটেছে মাগন ও খয়ের ফুল।
ফেসবুকে দেখি; ধরুন ভারতে কোন মানবাধিকার হরণের ঘটনা ঘটলে; পাকিস্তানের মানবাধিকার হরণের সহমত ভাইয়েরা ছ্যা ছ্যা করে। পাকিস্তানে কোন মানবাধিকার হরণের ঘটনা ঘটলে ভারতের মানবাধিকার হরণের সহমত ভাইয়েরা ছ্যা ছ্যা করে। অপরাধী দুটি রাষ্ট্রের ভাঁড়েরা তুই-থুলি মুই-থুলি করে অপরাধ অস্বীকারের পিলো পাসিং গেমটি খেলে।
এইদিক দিয়া বাংলাদেশে আবার রয়েছে পবিত্র দুগ্ধ পোষ্য শিশুরা। তারা ফুলের মতো পবিত্র। বাংলাদেশে নিয়ত মানবাধিকার হরণ করা সহমত আর রহমত ভাইয়েরা; বাংলাদেশকে “মিনি পাকিস্তান” বা ” মিনি ভারত” বানানোর “যন্ত্র ঐ একটাই ষড়যন্ত্রের” আলাপ তোলে মুখে খয়ের আর সুপোরি গুঁজে। বাংলাদেশের সকল অধোগতির জন্য যেহেতু পাকিস্তান আর ভারত দায়ী; তার যেন কী এমন বেরিয়েছে গোটা দুনিয়া তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে! এই অস্বীকার প্রবণতা ও অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর ঠগী স্বভাবের কারণে মানবাধিকার হরণের অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে বাংলাদেশ।
অস্বীকার প্রবণতায় দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশই একই রকম। তবে বাংলাদেশের মতো আত্মসমালোচনাবিমুখ সমাজ দক্ষিণ এশিয়ার আর কোথাও নেই।
ঠিক কী নিয়া শ্রেষ্ঠত্ব তা বোঝা কঠিন; তবে অপরাধের দায় অন্যের ওপরে চাপানোর রাজরোগ এখানে দৃশ্যমান। ফেসবুকে এদের মন্তব্য দেখবেন, ভারতীয়রা খারাপ-পাকিস্তানিরা খারাপ-আম্রিকানরা খারাপ, চাইনিজরা খারাপ; শুধু ভালো বলদডাঙ্গার বলদা রায় আর বলদা খান।
যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমের নানা দেশে বর্ণবিদ্বেষ বেড়েছে; যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বর্ণবিদ্বেষী ঘটনার পর সেখানকার পুলিশকে হাঁটু ভাঁজ করে বসে অনুতাপ ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে দেখা গেছে।
পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশে সিসটেমেটিক হিউম্যান ক্লিনজিং করা কোন রাক্ষসকে কখনো অনুতপ্ত হতে বা ক্ষমা চাইতে আমরা দেখিনি। কারণ এরা হচ্ছে হাড়ে খুনজাদা।
আর এদের আছে জাস্টিফিকেশান প্রিয় কোলাবরেটরেরা। দক্ষিণ এশিয়ার কোলাবরেটরের নিত্যতা সূত্র অনুযায়ী; এখানে কোলাবরেটরের বিনাশ ঘটেনা। কেবল দল আর রূপ বদলায় কোলাবরেটরেরা।
ঘাড় গুঁজ কইরা হ্যাতে কী করলো; অমুক দ্যাশে কী ভুল করতেয়াছে; ইত্যাদি ঢপের চপের আলাপ করার বিনিময়ে দুটি বিরিয়ানি আর পিঠাপুলি খায় এই মাগন ও খয়ের খাঁরা।
পট কইরা চোখ উল্টাইয়া; হাতের রক্ত ধুয়ে; গর্তে অস্ট্রিচের মতো
“কাতলা-মুখ” লুকিয়ে এরা ভাবে; কেউ দেখতে পাচ্ছে না খুনীদের পিতলা ঘুঘু মুখ।
অতএব আইসো আমৃকার মানবাধিকার হরণের গল্প নিয়া নাচন-কোদন করি।
এমেরিকার বর্ণবিদ্বেষী ঘটনায় নাগরিক সমাজ হোয়াইট হাউজ ঘেরাও করেছিলো; খলনায়ক ট্রাম্পকে বাংকারে লুকাতে হয়েছিলো।
অথচ ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশের নাগরিক সমাজকে কোন মানবাধিকার হরণের ঘটনার প্রতিবাদে রাজপ্রাসাদ ঘেরাও করতে দেবার প্রশ্নই ওঠে না। রাজরক্ষী আর কোলাবরেটর সহমত ভাইয়েরা পালটা কর্মসূচি দিয়ে হীরক রাজাদের গুণগান করে সেখানে। এইরকম শঠতা আর হিপোক্রেসির লীলাভূমি দক্ষিণ এশিয়া।
(পুলিশের অনুতাপ প্রকাশ ও প্রতিবাদে যোগদানের ছবি দক্ষিণ এশিয়ায় খুঁজে পাওয়া যাবে না)
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন