০
১৫১৯ বার পঠিত
বাংলাদেশ হেরেছে!!!
রাজনীতিতে আমার আগ্রহ কম। কারণ আমি দেখেছি, রাজনীতিবিদরা নিজের, আপনজনের বা দলের স্বার্থ রক্ষার জন্য অবলীলায় অন্যের (হোক সে বিরোধী দলের বা নিরপেক্ষ কেউ) ক্ষতি করতে পারে, অন্যকে বঞ্চিত করতে পারে, অন্যকে নির্যাতন, এমনকী খুনও করতে পারে – যারজন্য তাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা হয়না, তা সে যে দলের, যে স্তরের রাজনীতিবিদই হোন না কেন।
বর্তমানে আওয়ামীলীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে লক্ষ-কোটি মাইল দূরে সরে গেছে, একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। খালেদা জিয়ার শাস্তি হওয়াতে আওয়ামীলীগ খুশী হচ্ছে। এজন্য নয় যে, একজন ক্ষমতাবান অপরাধী তার অপরাধের জন্য শাস্তি পেয়েছে। বরং এজন্য যে, তাদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে তারা কৌশলে ঘায়েল করতে পেরেছে। তাদের আগামীর পথ নিষ্কণ্টক হয়ে গেল।
স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও আমরা আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ঠিক করতে পারিনি। আজকের বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে, এ পরিস্থিতি এই না পারার ফল। খালেদা জিয়াকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলা সম্ভব হয়েছে এই না পারার কারণেই। তাই খালেদা জিয়া হারেন নি। হেরেছে গোটা বাংলাদেশ।
একটি সর্বজনগ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য এদেশে যে পরিমাণ জান-মালের ক্ষতি হয়েছে, পৃথিবীর আর কোন দেশে তা হয় নি। তাও সান্ত্বনা পেতাম যদি এতকিছুর বিনিময়ে হলেও একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা পেতাম! নির্বাচনের নামে এদেশে এখন একেরপরএক প্রহসন হয়। স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে রাজনীতির বিষবাষ্প ঢুকিয়ে তাদের মনে সহপাঠীদের প্রতি প্রতিহিংসা তৈরি করা হচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁস একটা দেশের কী পরিমাণ ক্ষতি করে, তা অনুধাবন করার মত রাজনীতিবিদ এদেশে নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক লুট হয়ে যায়। অথচ তারজন্য ক্ষমতাসীন সরকারকে বিচারের মুখোমুখি করা হয় না।
কারণ আমরা এদেশের বিচার ব্যবস্থাকেও নিরপেক্ষ করতে পারি নি। খালেদা জিয়া এদেশের প্রথম অপরাধী রাজনীতিবিদ নন। বহু বহু অপরাধের অপরাধীরা বিচারের আওতায় আসে না। রাজনৈতিক বিবেচনায় কারুর মামলা ঝুলে থাকে বছরের পর বছর, কারু খারিজ হয়, কারুর দ্রুত বিচার হয়ে শাস্তি হয়। খালেদা জিয়ার শাস্তিকে তাঁর দলের লোকজন মেনে নিতে চাইবেনা। কারণ এদেশের মানুষ মনে করে, তাঁর বিরুদ্ধে দেয়া রায় নিরপেক্ষ নয়। প্রতিপক্ষকে দাবিয়ে রাখার জন্য এমন শত শত রাজনৈতিক মামলা দেয়া হয়, রায় দেয়া হয় সরকারের নির্দেশে। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেয়া হাজার হাজার মামলা তার প্রমাণ। অতীতে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও মামলা, জেল-জুলুম, পুলিশি নির্যাতন কম হয়নি।
বাংলাদেশে ঘুষ দিয়ে খুনের মামলা থেকে আসামীর নাম বাদ দেয়া যায়। তাই বিএনপির নেতাকর্মীরা বলতেই পারে যে, খালেদা জিয়া ন্যায় বিচার পান নি বা তাঁর বিরুদ্ধে দেয়া রায় পক্ষপাতমূলক। তবে আমি মনে করি, খালেদা জিয়া যেহেতু নিজেকে আদালতে নিরপরাধ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাই তাঁর এ রায় মেনে নিয়ে আগামীর কর্মপন্থা ঠিক করা উচিত।
রাজনীতিবিদদের জেল, জুলুম নতুন কিছু নয়। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু জেলে কাটিয়েছেন সাড়ে ১১ বছর! আমি বিশ্বাস করি, খালেদা জিয়াও জেলকে ভয় পাবেন না। আমৃত্যু তিনি দেশ ও তাঁর দলের জন্য কাজ করে যাবেন।
যেকোন দেশের সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা রোধে শক্তিশালী বিরোধী দল সক্রিয় থাকা জরুরী। বিএনপির রাজনীতি দূর্বল হলে সেটি বিএনপির একার ক্ষতি নয়। ক্ষতি গোটা বাংলাদেশের।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন