০
১৬৭৫ বার পঠিত
উনিশ শতকের হিন্দু পণ্ডিতেরা বাংলাসাহিত্যে যে তিনটি অপকর্ম করেছেন।
১. চর্যাপদকে জোর করে বাংলাসাহিত্যের পূর্বসাহিত্য হিসেবে প্রমাণ করা।
২. বাংলাভাষা থেকে শল্যচিকিৎসার মতো বিপুল আরবি-ফারসি শব্দ সরিয়ে সেখানে সংস্কৃত শব্দ যুক্ত করা।
৩. বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস থেকে বাঙালি মুসলমানের কৃতিত্ব ও উপস্থিতিকে গৌণ এমনকি অস্বীকার করা। (১২০০ থেকে ১৩৫০ সাল পর্যন্ত বাংলাভাষার গঠনের সময়কে অন্ধকারযুগ নামে অপবাদ প্রতিষ্ঠা; ইউসুফ জোলেখার বদলে চণ্ডীমঙ্গলকে মধ্যযুগের সাহিত্যের প্রাচীনতম আদর্শ নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠা; বাংলাসাহিত্যের প্রথম ও সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী কেন্দ্র আরাকান রাজদরবারের সাহিত্যকে বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসের অভিনব ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা; ময়মনসিংহগীতিকা-বাউলগান প্রভৃতি জাতীয় সাহিত্যকে ‘লোকসাহিত্য’ নামে আলাদা ক্যাটাগরি করে জাতীয় সাহিত্যকে বিভাজিত করা)
এসব অপকর্মের নিরানব্বইটাই ছিল অর্গানাইজড ক্রাইম। সাহিত্যের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক আদালত থাকলে ওই পণ্ডিতেরা মরণোত্তর কঠোর দণ্ডপ্রাপ্ত হতেন।
– Alamgir Nishad
খ
৩-এর লোক-সাহিত্য প্রসঙ্গ দিয়েই আলোচনা শুরু করি। তার আগে একটি প্রশ্ন করিতে চাই- ভারত বর্ষজুড়ে সহস্র দেব দেবী তাহার কারন কি কাহারো জানা আছে? ছোটবেলায় শোনা একটি গ্রাম্য বচনে এর জবাবটি শুরু করি- যা নেই ভারতে তা নেই পৃথিবীতে। ভারত তাই কখোনই ভারতের বাইরে অভিযানে যায় নাই! এবং আজো কেউ যদি একটু খেয়াল করে দেখেন তবে এক কৌতুহলিউদ্দিপক বিষয় পাবেন, গড়ে প্রতি ২০ কিলোমিটারে ভাষার ভিন্নতা ও ধর্মের ভিন্নতা। আর লোক বা Folk মানে People in general বা জন সাধারন। লোকশিল্প বা সাহিত্য বা Folk ART হচ্ছে Relating to the traditional art or culture of a community or nation* ময়মনসিংহগীতিকা, বাউলগান, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি ইত্যাদি কি জন সাধারন কতৃক রচীত নাকি ইসলাম ও আরবী ও ফারসী ও খ্রীস্টান ও ইংরেজীর মত আমদানী কৃত?
এবার আসা যাক Folk literature এর আর এক পরিচয়ে- Oral literature or folk literature corresponds in the sphere of the spoken (oral) word to literature as literature operates in the domain of the written word. লালনকে লিখিত রুপ দিয়েছেন জ্যোতি দাদা, আর সম্পাদক দিনেশ বাবুর ভাষায় ময়মনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে ও আরো কয়েকজন। হারামনি মনসুরউদ্দিন। গগন হরকারা জমিদার বাবু রবীন্দ্রনাথ…
মুসলীম শোষন-শাসনের কালে (১৩৯৩–১৪০৯ খ্রিস্টাব্দ) ইউসুফ-জোলেখার কবি শাহ মুহম্মদ সগীর। কিন্তু তৎকালীন রীতি কিংবা বাঙালি-মুসলীম রীতির অনুসারে আমাদের জানা হয়নি ফারসী কবি জামী হচ্ছেন এর মূল রচয়ীতা। বর্তমান বাংলার জনপ্রিয় মুসলীম লেখকদের উপন্যাস/গ্রন্থ সমূহ যেমন বিদেশী ছায়া অবলম্বনে কিন্তু আমরা জানি সেটি তার মৌলিক মস্তক জাত সেরকম…
আলাওল ও আরাকান রাজসভার বাংলাপ্রেমী সভাসদেরা মসুলমান ছিলনা, তাই হয়তো আমরাও জানি হিন্দী কবি মালিক মুহম্মদ জায়সী এর ‘পদুমাবৎ’ই বাংলায় পদ্মাবতী…
গ
২-এর বিষয়ে- সংস্কৃত* হয়তো আরবী ফারসীর মতই বাংলায় আমদানী কৃত বা আরোপিত। তবে গত ১০০০ বছরে আরবী ফারসী যতখানী বাংলার, সংস্কৃত তার চেয়ে অধীক কালে আরো বেশী বাংলার। আর ভূগোল বিবেচনায় সংস্কৃত বাংলার নিকট আত্মীয়, আরবী ফারসী ভারতের বাইরের ভাষা ইংরেজীর মতই।
আর হিন্দু পন্ডিতেরা জীবন-যাপনের কারনেই সংস্কৃত শব্দের সাথে যত পরিচিত আরবী শব্দের সাথে তত পরিচিত নয়। ব্যাকরন রচনার কালে মানে ব্রিটিশ রানী কুইন ভিক্টোরিয়ার কালে এ দেশে ক’জন মুসলমান পন্ডিত ছিলেন? কেরী সাহেবদের যে ব্যাকরণ রচনার তাড়া ছিল, ইংরেজদের বাংলা শিখিবার তাড়াছিল…
ও হ্যা রবীন্দ্রনাথ নামের এক লোক কাজী নজরুল ইসলাম, মীর মোশারফ, হুমায়ূন কবীর, মনসুরউদ্দিন, ইত্যাদি মুসলীম লেখককে স্বাগত জানিয়েছিলেন বাংলার হাজার বছরের আরবী-ফার্সী শোষন-শাসনের কথা মনে রেখেই…
আমদানী বা দখলদারের আরবী ফারসী ইংরেজী যখন আপন তখন পড়শীর সংস্কৃত আপন হতে দোষ কি?
ঘ
ইউসুফ জোলেখা বা চণ্ডীমঙ্গল সবই গবেষকদের আবিস্কার মনসুরউদ্দিনের আগে গবেষক সকলেই যে ভাই হিন্দু কিংবা ইংরেজ, তাহারা আপনার আমার মতোই ধর্ম-নিরপেক্ষ তাই না! একটু বেশী বা কম…
ঙ
চর্যাপদ বাংলার আদী নিদর্শন হলে ক্ষতি কী? ডঃ শহীদুল্লাহ কি আপত্তি করেছিলেন, হুমায়ূন কবীরের কি আপত্তি আছে?
বিঃদ্রঃ *বাংলা সাহিত্যের আলোচক হিসেবে আমরা যে ‘পণ্ডিত’ হইতেছি তার সূচনা ইংরেজ আসিবার পর। তাই সংজ্ঞা বা শব্দার্থ বুঝিতে Oxford dictionary এর সাহায্য নিতে হইতেছে কারণ তৎকালীন পণ্ডিতদের পণ্ডিত হিসেবে স্বীকৃতি পাইতে আজকের মতই ইংরেজদেরই দারস্থ হইতে হইতো। তবে এই আন্তর্জাতিককালে Folk হইয়া বা স্ব-অধীনে পণ্ডিত হইবার সুযোগ আছে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন