ইহুদি এবং খ্রিস্টান ঐতিহ্য অনুসারে তোরা নামক ধর্মগ্রন্থগুলোকে মুসা নবীর রচনা বলে মনে করা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ বাইবেল বিশেষজ্ঞের মতে এ বইগুলো একের বেশি লেখকের রচনা এবং সেটা মুসা নবীর সময়ের কয়েকশত বছর পরে রচনা শুরু হয়ে আধুনিক রূপ নিতে আরও পাঁচশত বছরের বেশি সময় নেয়। বাইবেল সমালোচনা বা বাইবেলকে ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক গুণাবলী থেকে বিচার করা, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে তা বুঝার চেষ্টা করা বর্তমান সময়ে একটা সিরিয়াস একাডেমিক ডিসিপ্লিন। কিন্তু সবসময় এরকম ছিল না। অষ্টাদশ শতকে দার্শনিক বেনেডিক্ট স্পিনোজা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, এবং তারপরে উনিশ ও বিশ শতকে এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়। অবশ্য স্পিনোজার আগে আরেক দার্শনিক হবসও বলে গিয়েছিলেন যে মূসা নবী বাইবেলের তোরাহ এর লেখক নন। কিন্তু স্পিনোজা প্রথম বাইবেলের ঐতিহাসিকতা নিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে গবেষণা করেন।
ওল্ড টেস্টামেন্ট বা পুরাতন বাইবেলের মোট ২৪টি বইয়ের মধ্যে প্রথম পাঁচটা বই বিখ্যাত এবং গুরুত্বের দিক থেকেও এ পাঁচটা বইয়ের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এ পাঁচটি বই হল জেনেসিস, ইক্সোডাস, লেভিটিকাস, নাম্বারস এবং ডিউটেরোনমি। এদেরকে একসাথে বলা হয় তোরাহ।
পণ্ডিতদের মতে এ পাঁচটি বইয়ে অনেকগুলো স্পষ্ট নির্দেশনা আছে যা থেকে বুঝা যায় যে এগুলোর রচনায় অনেক লেখক জড়িত ছিলেন। যেমন এ বইগুলোতে ঈশ্বরকে বুঝানোর জন্য তাঁকে কখনও বলা হয়েছে ‘ইলোহিম‘, কখনও বা ‘ইয়াওয়ে‘। এছাড়া তাদের মধ্যে শব্দ এবং প্রকরণগত অনেক পার্থক্য আছে, আবার অনেকক্ষেত্রে একইগল্পের ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখা যায়।
বাইবেলের দলিলিক প্রকল্প (Documentary Hypothesis) অনুসারে বিশেষজ্ঞরা এর চারটি ভিন্ন উৎসের কথা বলে থাকেন। উৎসের নামের আদ্যাক্ষর থেকে এদেরকে সংক্ষেপে ‘জেইপিডি’ (JEPD) বলা হয়।
প্রথম অংশের নাম ‘ইয়াওয়িস্ট বর্ণনা’ (Yahway, Latin Jehovah) যেটি খ্রিস্টপূর্ব ১০ম থেকে ৯ম শতকে লিখিত হয়েছিল।
দ্বিতীয় অংশের নাম ‘ইলোহিম বর্ণনা‘ (Elohim), যেটি খ্রিস্টপূর্ব ৯ম শতকে রচিত।
ডিউটেরোনমি (Deuteronomy) নামের পঞ্চম বইটি রচিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতকে।
আর সবশেষে আরেকটা অংশ, পূনর্যোজিত হয় যাজকদের (Priest) দ্বারা খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ এবং ৫ম শতকে।
ইয়াওয়িস্ট বর্ণনায় বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্বে (জেনেসিস 2:4b-3:24) বলা হয় সৃষ্টিকর্তা গাছপালা সৃষ্টি করার আগে প্রথমে মাটি থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেন। তারপরে তিনি একটা বাগান স্থাপন করে মানুষকে তার মাঝে বাস করতে বলেন এবং গন্ধম বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেন। এরপরে তিনি ভাবলেন মানুষের সঙ্গীর প্রয়োজন, তাই একে একে প্রাণি সৃষ্টি করে তাদের মানুষের সামনে এনে হাজির করলেন। মানুষ তখন সব প্রাণির নামকরণ করে কিন্তু কোন প্রাণিই তার নিঃসঙ্গতা ঘুচাতে পারল না। তখন ঈশ্বর আদমকে গভীর ঘুমে নিমগ্ন করলেন এবং তার পাঁজরের হাড় থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করলেন। সাপ সঙ্গিনীকে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেতে প্ররোচিত করল, এবং সে আদমকে প্ররোচিত করল। এতে সৃষ্টিকর্তার আদেশ অমান্য করায় (আদিম পাপ) তারা দুজনে স্বর্গীয় বাগান থেকে বহিষ্কৃত হল। এটি বাইবেলের সবচেয়ে পরিচিত তত্ত্ব।
কিন্তু জেনেসিস 1:1 থেকে 2:4 পর্যন্ত সৃষ্টিতত্ত্বের আরেক বর্ণনা পাওয়া যায়, যেটা আগেরটার চেয়ে ভিন্ন। এ বর্ণনাকে পণ্ডিতেরা পরবর্তী যাজকদের (P) সংযোজন বলে মত প্রকাশ করেন, এতে পুরো বিশ্বজগত সৃষ্টির ঘটনা বলা আছে। প্রথমে কিছু ছিল না, ছিল শুধু শুন্য, তারপরে সৃষ্টিকর্তা সেখানে আলো সৃষ্টি করলেন। তারপরে যথাক্রমে ২য় দিন পানিকে সরিয়ে আকাশ সৃষ্টি করলেন, ৩য় দিন মাটি এবং তার ওপরের গাছপালা, ৪র্থ দিনে চন্দ্র এবং সূর্য। ৫ম দিনে পানি এবং আকাশের প্রাণি, ৬ষ্ঠ দিনে মানুষসহ মাটির সব প্রাণি, পুরুষ এবং নারীরূপে সৃষ্টি করলেন।
জেনেসিস এর প্রথম তিন অধ্যায়ে দুটি ভিন্ন সৃষ্টি তত্ত্বের দেখা মিলে, এবং এ দুটো তত্ত্বে যেসব ঘটনা ঘটে তার ঘটনাক্রমে ব্যত্যয় দেখা যায়। প্রাথমিক যুগের ইয়াওয়িস্ট (J) বর্ণনায় সৃষ্টির ক্রম হল মানুষ, তারপরে গাছপালা, তারপরে প্রাণি এবং সবশেষে নারী। অপরদিকে যাজকীয় (P) বর্ণনায় প্রথমে গাছ, তারপরে প্রাণি এবং সবশেষে মানুষ (পুরুষ এবং নারী)।
এ দুটি বর্ণনায় এমন আরো পার্থক্য দেখা যায়। যেমন, J বর্ণনায় সৃষ্টিকর্তার মধ্যে অনেক মানবিক গুণাবলী দেখা যায়, বাগানে হেঁটে আদম এবং হাওয়ার সাথে গল্প করেন। কিন্তু যাজকীয় বর্ণনায় সৃষ্টিকর্তার মানবিক গুণাবলী অনেক কম। P বর্ণনায় নারী এবং পুরুষকে একইসাথে সৃষ্টি করা হয়, এতে নারীর অধীনতার ব্যাপারটা নেই, দুজনকেই পৃথিবীর ওপর কর্তৃত্ব দেয়া হয়। এতে মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে বেশি আলোচনা করা হয়, পক্ষান্তরে যে বর্ণনায় মানুষ বেশি প্রাধান্য পায়।
পণ্ডিতেরা বাইবেলের যাজকীয় বা P বর্ণনার সাথে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সৃষ্টিতত্ত্ব ‘এনুমা ইলিশ’ (Enuma Elish) এর সাথে মারাত্মক সাযুজ্য দেখতে পান। বাইবেলের যাজকীয় অংশটা লেখা হয় ইহুদিদের ব্যাবিলনে নির্বাসনের সময় ( ৫৮৬-৫৩৮ খ্রিস্টপূর্ব)। সে সময় ইহুদি বিশ্বাসের সাথে ব্যবিলনের বিশ্বাস মিলিয়ে লেখা হয়েছিল পণ্ডিতেরা মনে করেন।
এভাবে দালিলিক প্রকল্প শুধুমাত্র বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্বই নয় তোরার বাকি অংশ নিয়েও গবেষণা করে অনেক আশ্চর্য তথ্য তুলে আনে। গবেষকেরা সমগ্র তোরায় এ চার ধরনের লেখার একটা জটিল মিশ্রণ খুঁজে পান। যেমন, বাইবেলের বন্যার বর্ণনায় জে এবং পি দু’ধরনের উৎসের সম্মিলিত বর্ণনায় একটা সুগঠিত কাহিনী পাওয়া যায় কিন্তু দুটো ভিন্ন উৎসের কিছু রেশ তারপরেও সেখান থেকে উদ্ধার করা সম্ভব। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রকল্প কিছু সমালোচনার মুখে পড়ে এবং কিছুটা পরিবর্তিত হয়, কিন্তু বাইবেলের রচনায় যে জটিল প্রক্রিয়া এবং দীর্ঘ সময় লাগে তাতে গবেষকদের এ তত্ত্ব অস্বীকার করার জো নেই।
ডিউটেরোনমিক ইতিহাসঃ
বাইবেল বা ওল্ড টেস্টামেন্টকে মোট তিনভাগে ভাগ করা যায়, যাকে ইহুদি ঐতিহ্য অনুসারে বলা হয় তানাখ। প্রথম ভাগের নাম তোরাহ, যেটি প্রথম পাঁচটি বই নিয়ে গঠিত, যাকে আবার পেন্টাটিউখ নামেও ডাকা হয়। দ্বিতীয় অংশের নাম নাভিয়িম বা প্রফেট (নবী)। এবং তৃতীয় বা শেষ অংশে হল কিতুভিম বা রাইটিংস (লেখা), এতে তোরাহ এবং নবী অংশে যা বলা হয়নি তা আছে।
বাইবেলের বুক অফ ডিউটেরোনমি হল তোরাহ এবং নবী অংশের মধ্যে সংযোগ সেতু। প্রফেটকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা হয়, প্রাথমিককালের নবী এবং শেষদিকের নবী। প্রথমদিকের নবীর মধ্যে আছেন যশুয়া, বিচারকগণ, স্যামুয়েল (১ এবং ২), কিংস (১ এবং ২)। শেষের দিকের নবীদের মধ্যে আছেন আইজাইয়া, জেরেমাইয়া, এজিকিয়েল এবং ১২ জন কম খ্যাত নবী।
ডিউটেরনমিক ইতিহাস মতে বাইবেলের ডিউটেরোনমি বই থেকে শুরু প্রথমদিকের নবীদের শেষ বই মানে ‘কিং ২‘ পর্যন্ত একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসের কাহিনী। এর মানে হল যশুয়া, বিচারকগণ, স্যামুয়েল এবং কিং ডিউটেরোনমিতে বর্ণিত ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী অনুসরণ করে। ডিউটেরোনমিতে মূসা নবীর জীবনী এবং নেতৃত্বকালের সমাপ্তি ঘটে। ডিউটেরোনমির শব্দের আক্ষরিক মানেও হল ‘দ্বিতীয় আইন’, এতে তার পূর্ববর্তী তোরাহ গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত আইন-কানুনের সংস্কার ঘটে এবং চুড়ান্তরূপ নেয়। ডিউটেরোনমির বর্তমান রূপ খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকে রচিত, যেটি মূসা নবীর সময়ের ছয়শত বছর পরের ঘটনা। এতে ধর্মীয় উপাসনা, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং আইন-কানুন নিয়ে আলোচনা করা হয়।
ডিউটেরোনমিতে ধারণা করা হয় ইসরায়েলের মানুষ সৃষ্টিকর্তা অবাধ্য হলে এবং মূসা নবীর সাথে যে চুক্তি হয় তা মেনে না চললে তাদের ওপর খারাপ সময় নেমে আসে, আর মেনে চললে তারা সাফল্য লাভ করে। গবেষকেরা মূসা নবীর সাথে সৃষ্টিকর্তার চুক্তির সাথে সমসাময়িক নিকট প্রাচ্যের অর্থাৎ মেসোপটেমিয়ার জোতদারের সাথে রাজার বা বড় রাজার সাথে ছোটরাজার যে চুক্তি হত (suzerain-vassal treaty) তার সাথে মিল খুঁজে পান। এতে সাধারণত বড় রাজা আনুগত্য এবং মান্যতার ভিত্তিতে ছোট রাজাকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। এর ভিত্তিতে মূসা নবীর সাথে সৃষ্টিকর্তা যে চুক্তি হয় বলে ইহুদিরা মনে করে তাতে সৃষ্টিকর্তা তাদের ভাল আচরণের জন্য পুরষ্কার এবং খারাপ আচরণের জন্য শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এভাবে দেখলে ‘টেন কমান্ডম্যান্টস’কে চুক্তির ধারা বলে মেনে নেয়া যায়। যেমন প্রথম কমান্ডম্যান্টে আছে,
“Thou shalt have no other gods before me”
এতে তখনকার সময়ের রাজা বা সামন্তের প্রতি জায়গিরদার বা অনুগত প্রজার আনুগত্যের শপথের পরিচয় মিলে।
ডিউটেরোনমিক ইতিহাস তত্ত্বের সবেচেয়ে শক্তভাষ্যে মনে করা হয় পরবর্তী চারটি বইকে উপস্থাপন করার জন্য এ বইটি সূচনা হিসেবে রচিত হয়, এবং সম্ভবতঃ চারটি বই রচিত হবার পরে ডিউটেরোনমি লেখা বা সম্পাদন করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, একজন সম্পাদক বা কোন নির্দিষ্ট স্কুল এ পাঁচটি বই সংকলন করেন। গবেষকদের আরেকদল মনে করেন, এতে অনেক বেশি অসামঞ্জস্য আছে যে এ বইগুলো কিছুতেই একজনের রচিত হতে পারে না। এ তত্ত্বের আরেক মতে খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতক থেকে ডিউটেরোনমি ক্রমান্বয়ে রচিত এবং সম্পাদিত হতে হতে ব্যাবিলনে নির্বাসনের সময় এটি সমাপ্ত হয়।
গবেষকদের মধ্যে এমন বিভাজনের কারণ ডিউটেরোনমিক ইতিহাসে ঈশ্বরের সাথে ইহুদিদের চুক্তি এবং তৎপরবর্তী ঐতিহাসিক ঘটনাপঞ্জীকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়াস চালানো হয়। কেন ইসরায়েলে রাজতন্ত্র কায়েম করার প্রয়োজন পড়েছিল? সল যে রাজ্য গঠন করল, ডেভিড যেখানে রাজত্ব করল কেন সেটা পরবর্তীতে উত্তরে ইসরায়েল এবং দক্ষিণে জুদাহ নামে আলাদ হল? কেন খ্রিস্টপূর্ব ৭২২ সালে আসিরিয়ানরা উত্তরের রাজত্ব ইসরায়েল দখল করে নিল? এবং সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, কেন ব্যাবিলন খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ সালে জুদাহকে পরাজিত করে জেরুজালেম দখল করে নিল?
ঈশ্বরের সাথে মুসা নবীর চুক্তিকে কাঠামো হিসেবে ধরে, ডিউটেরোনমিক ইতিহাস পরবর্তী ঘটনাগুলোকে জায়গিরদার বা দাসের তার প্রভুর বা মালিকের প্রতি অবাধ্যতার পরিণতি হিসেবে দেখানো হয়। বিভিন্ন নেতার সময়ের নানা গল্প নিয়ে সাজানো এ ইতিহাসে শেষ পর্যন্ত রাজতন্ত্র কায়েম হয় এবং ডেভিডের বংশধরদের হাতে ক্ষমতা আসে এবং শেষ পর্যন্ত রাজতন্ত্রও বিলুপ্ত হয়।
বাইবেলে বর্ণিত ইহুদি রাজাদের গল্পগুলোকে গবেষকেরা ডিউটেরোনমিক ইতিহাস বললেও এসব গল্প আসলে ঐতিহাসিক নয়। এসব গল্প ঐতিহাসিক গুণাবলীর চেয়ে তাদের সাহিত্যিক গুণাবলীর জন্য বিখ্যাত। ঘটনা ঘটে যাবার অনেক পরের লেখকেরা এসব গল্প লিপিবদ্ধ করেন, ফলে তাদেরকে নিজস্ব কল্পনা খাটিয়ে সময়োপযোগী করে লিখতে হয়। বাইবেল সমালোচক, গবেষক রবার্ট অল্টার এসব গল্পকে “historicised prose fiction” এবং “fictionalized history” নামে অভিহিত করেছেন। তবে তার মানে এই নয় যে এসব টেক্সটে কোন ঐতিহাসিক উপাদান নেই।
ডিউটেরোনমিক ইতিহাসে যে বিষয়টাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে সেটা হল এর ধর্মতত্ত্ব। ভাল কাজের জন্য পুরষ্কার আর মন্দ কাজের জন্য শাস্তি। ধনবান মানে সে সঠিক পথে আছে তাই ঈশ্বর তাকে পুরষ্কৃত করেছেন, আর যে অভাবে, অসুখে-বিসুখে আছে তার ওপর ঈশ্বর নারাজ, যেভাবেই হোক সে কোন না কোন খারাপ কাজ করে তার শাস্তি ভোগ করছে। বুক অফ জোবে (আইয়ুব) যেটা আরো বিস্তারিতভাবে এসেছে?
ইহুদিদের ওপর এত অত্যাচার কেন আসল? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তারা নিজেদের দায়ী করল, তারা নিশ্চয়ই ঈশ্বরের সাথে তাদের চুক্তিভঙ্গ করে অন্য কোন দেবতার পূজা শুরু করেছে, যার কারণে ইয়াওয়ে তাদের ওপর নারাজ হয়ে তাদেরকে শাস্তি দিচ্ছেন।
বাইবেলের এ পর্যন্ত একটা বিষয় লক্ষণীয় যে অন্যান্য গডের অস্তিত্ব আছে এমনটা বলা হচ্ছে, তাদের পুরোপুরি অস্বীকার করছে না, কিন্তু ইয়াওয়ে তার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য চাচ্ছে।
পরবর্তী নবীদের সময়ে যেমন আইজাইয়া, জেরেমাইয়া, ঈজিকিয়েল (যাল-কিফল) এর সময়ে সম্পূর্ণ একত্ববাদী ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়। নবীদের বইগুলো খ্রিস্টপূর্ব ৫ম থেকে ৩য় শতকে রচিত হয়।
নবীদের বিবর্তনঃ
বাইবেলের বিবর্তনের সাথে সাথে নবীদেরও কাজের পরিধি পরিবর্তিত হয়। প্রথমদিকের নবীরা (১১-৯ম শতক) তারা রাজাকে পরামর্শ দিত এবং বিভিন্নবিষয়ে সতর্ক করত, এমনকী তারা কে রাজা হবে সেটাও নির্ধারণ করতে পারত। তখনকার সমাজে তাদের গুরুত্ব এবং ক্ষমতা দুটোই ছিল।
খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতকের দিকে এসে নবীদের কাজ-কর্মে ব্যাপক পরিবর্তন হয়। রাজতন্ত্র ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ায় তাদের পদমর্যাদা ‘কিং মেইকার’ থেকে ‘উপদেষ্টা’র স্তরে নেমে আসে। এ সময়ের নবীরা সামাজিক ন্যায়বিচার এবং ধর্মীয় প্রথা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এ শতকে আসিরিয়ানরা ইসরায়েল দখল করে নিলে নবীরা সেটাকে ইহুদিদের বিপক্ষে ঈশ্বরের বিচার হিসেবে দেখেন।
তৃতীয় স্তরের নবীরা ব্যাবিলনের উত্থানের সময়কার। ব্যাবিলনে নির্বাসনের সময় নবীরা জনগণকে ভবিষ্যতে জেরুজালেমে ফিরে যাবার আশা দিতেন এবং নতুন করে আবার তাদের গির্জা গড়ে তোলার কথা বলতেন।
চতুর্থ এবং শেষ পর্যায়ের নবীরা হলেন নির্বাসন পরবর্তী যুগের নবী, যখন পারস্যের সম্রাট সাইরাস তাদের দেশে ফিরে যাবার সুযোগ দেন। এসময়ের নবীরা তাদের কম্যুনিটি গড়ে তোলা নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলেন। এজন্য তাদের কাজে ইহুদি পরিচিতি, সামাজিক সংগঠন এবং ঐক্যের কথা শোনা যায়।
নবীদের বই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে গবেষকেরা যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হন বাইবেলের ‘বুক অফ আইজাইয়া’ তার একটা উদাহরণ। এ বইটি তিনটি ভিন্ন সময়ে মোট তিনভাগে লিখিত। আইজাইয়া জীবিত ছিলেন খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতকের শেষ থেকে ৭ম শতকের প্রথম ভাগে। বইটির প্রথম অংশ (অধ্যায় ১-৩৯) সে সময়কার রচনা। তারপরের দ্বিতীয় অংশ (অধ্যায় ৪০-৬৬) লেখা হয় খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে। কারণ এ পর্যায়ে জেরুজালেমের পতন এবং নির্বাসনের কথা বলা আছে, যেটি ষষ্ঠ শতকের ঘটনা। দ্বিতীয় অংশের আরেকটা ভাগ (অধ্যায় ৫৫-৬৬) লেখা হয় নির্বাসন পরবর্তী যুগে। ফলে দেখা যায় নবীর জীবিতকাল থেকে লেখা শুরু করে পরবর্তী ২-৩ শত বছর ধরে তার কাহিনী লিখিত হতে থাকে। তার কথাকে তার যুগের সাথে সাথে পরবর্তী যুগের ঘটনাবলীর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের কাজে লাগানো হয়। প্রথমভাগে আইজাইয়া যখন অত্যাচারী বিদেশী শক্তির কথা বলে তখন সেটা হল আসিরীয় পরাশক্তি, আবার দ্বিতীয় অংশে যখন ব্যাবিলন জেরুজালেম আক্রমণ করে তখন একই বর্ণনাকে পূনরায় ব্যবহার করা হয়। তাই বলে আইজাইয়াকে অসংলগ্ন কাহিনীর সমাবেশ বলা যাবে, এ বই বাইবেলের সবচেয়ে কাব্যিক বই।
আইজাইয়ার দ্বিতীয় অংশে আরেকটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে, ইয়াওয়ে নিজেকে সর্বকালের সব মানুষের ঈশ্বর ঘোষণা দেন, কেবল যারা তার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তারাই নয়, দুনিয়ার সবাই এক জন সৃষ্টিকর্তার অধীনে। ( আইজাইয়া ৪৫;৫-৭) ডিউটেরোনমিক ইতিহাসের ঐশ্বরিক ধারণার থেকে এটা এক বিশাল পরিবর্তন। যার ফলে বাইবেলের আইজাইয়া’র দ্বিতীয় অংশে এসে একেশ্বরবাদী ধারণা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ অংশে পারস্যের সম্রাট সাইরাসকেও বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, তাকে নবীর মর্যাদা দেয়া হয় (অধ্যায় ৪৪-৪৫)। বাইবেলের একমাত্র এ জায়গাতে ইসরায়েলের অধিবাসী ছাড়া অন্য কাউকে মেসিয়াহ বা নবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
রাইটিংস (লেখা)
বাইবেলের তৃতীয় অংশ কিতুভিম বা লেখা (রাইটিংস) অংশটি ইহুদিদের নির্বাসন পরবর্তী যুগের অর্থাৎ, যখন তারা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে তখনকার লেখা। এ পর্বের লেখাগুলো প্রজ্ঞাধর্মী সাহিত্য নামে পরিচিত, এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল ইক্লেসিয়াস্ট এবং প্রবাদ। এ বই দুটিতে প্রকৃতি এবং দুনিয়াতে ন্যায়বিচারের অবস্থান নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছে। সৎ মানুষ পুরষ্কৃত হবে এবং দুষ্কৃতিকারী শাস্তি ভোগ করবে, ইক্লেসিয়াস্ট অংশে ডিউটেরোনমি ধর্মতত্ত্বের এ অনুমানের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা হয়।
বাইবেলের বুক অফ জোব বা আইয়ুব নবীর কাহিনীকে গবেষকেরা অনেক সময় প্রজ্ঞা সাহিত্যের অংশ বলে মনে করেন। এতে খুবই শক্ত প্রশ্ন তোলা হয়, কেন সৎ মানুষ শাস্তি পায় আর পাপী, বদমাশ দুনিয়াতে আরাম-আয়েশ করে যায়?
If God is both righteous and all-powerful, why does he allow good people to suffer?
নতুন বাইবেল বা গসপেলঃ
গসপেল শব্দের আক্ষরিক মানে হল, ‘গুড নিউজ‘। আধুনিক পাশ্চাত্য সমাজে সবচেয়ে পরিচিত এবং সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই হল ম্যাথু, মার্ক, লুক এবং জনের লেখা গসপেল। পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে এসব বইয়ে লেখা যিশুখ্রিস্টের নব্যুয়ত, মৃত্যু এবং পূনরুত্থান এর বর্ণনার মারাত্মক প্রভাব। তবে গসপেলকে ঐতিহাসিক কাহিনী, জীবনী, পুরাণ বা স্মৃতিকথা, এর কোনটাই বলা যাবে না। কারণ এসব বর্ণনায় যিশুর জন্মকাহিনীর বিশদ বর্ণনায় অনেক অমিল আছে। তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, যিশুর শেষ খাবারের তারিখ, ক্রুশবিদ্ধ হবার সময় এবং পূনরুত্থানের পরের আবির্ভাবের স্থান নিয়ে গড়মিল দেখা যায়। আবার এসব কাহিনী যদি পৌরাণিক হয় তাহলে এর বিশদ বিবরণকে সিরিয়াসলি নেবার কোন প্রয়োজন নেই।
তারপরেও প্রশ্ন থাকে কারা এসব লিখেছে, কখন লিখেছে? এ চারটি গসপেল অবশ্যই খ্রিস্টধর্মের প্রথম রচনা নয়। খ্রিস্টিয় ৫০ সালের দিকে লেখা পলের চিঠি খ্রিস্টধর্মের সর্বপ্রথম রচনা। নতুন বাইবেলের চারটি গসপেলই সাধু পলের চিঠির পরবর্তী রচনা। সাধারণত দুটি গসপেল যিশুর দুজন সহগামীর নামের প্রচলিত এবং বাকি দুটি সহগামীদের শিষ্যের নামে প্রচলিত। কিন্তু পণ্ডিতেরা মনে করেন তারা এসব গসপেলের লেখক ছিলেন না। কারণ যিশুর সহগামীরা যিশুর মতই নিরক্ষর ছিলেন, এছাড়া তারা কথা বলতেন আরামেইক ভাষায়, অপরদিকে গসপেলগুলো লিখিত হয় গ্রিক ভাষায়। ফলে ধারণা করা হয় যিশুর সরাসরি অনুসারীদের গল্পগুলো প্রথমে মুখে মুখে ছড়ায়, তারপরে গ্রিকভাষী লেখকেরা সেগুলো লিপিবদ্ধ করেন।
গবেষকেরা একমত যে গসপেলের মধ্যে সবার আগে লিখিত হয় মার্ক এবং জন সর্বশেষে। মার্ক সবচেয়ে ছোট এবং সম্ভবত ষাটের দশকের শেষ দিকে লিখিত হয়। ম্যাথু লিখিত হয় আনুমানিক ৮৫ সালের দিকে, আর লুক এর সময়কাল সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায়নি। আনুমানিক ৯০ সাল বা তারও পরের দিকে এসে জন লিখিত হয়।
ফলে গসপেলগুলো কোন স্মৃতিকথা বা যিশুর সাক্ষাৎদর্শী কারও বিবরণ নয়, সর্বোচ্চ কোন সহগামীর অনুসারীদের দ্বারা রচিত হতে পারে। এসব গসপেলের বাইরে আরো অনেক গসপেল আছে যেগুল বাইবেলে স্থান পায়নি, তাদের মধ্যে টমাস এবং ফিলিপের গসপেল উল্লেখযোগ্য। সবগুলো গসপেলের মধ্যে কিছু মিল আছে আবার অমিলের পরিমাণও অনেক। একেক গসপেলে সে লেখকের উদ্দেশ্য অনুযায়ী একেকটা বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। যেমন, ম্যাথু শিশু যিশুকে দেখার জন্য ইরানের ম্যাজাইদের আসার কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু রাখালদের ব্যাপারে কিছু বলেনি। অপরদিকে লুক রাখালদের কথা বর্ণনা করে কিন্তু ম্যাজাইদের ব্যাপারটা উল্লেখ করেনি। জন এর বর্ণনা আবার এদের থেকে পৃথক সেখানে যিশুর জন্মের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি, পাহাড়ের ওপরে তার বক্তৃতার ব্যাপারটাও তাতে এড়িয়ে যেতে দেখা যায়। জনের লেখায় নস্টিক প্রভাব আছে বলে গবেষকেরা মনে করেন।
গসপেলের একটা উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল এটি সাধারণ মানুষের চলিত ভাষায় লিখিত। প্রাচীন গ্রিক এবং রোমের সাহিত্যের ভাষায় দেখা যায় কেবল রম্য রচনায় সাধারণের ভাষা ব্যবহৃত হত, গসপেল তার ব্যতিক্রম। এতে সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ্য করে তাদের ভাষায় সিরিয়াস বিষয় রচনা করে তাদেরকে মর্যাদা দেয়া হয়।
আধুনিক সমাজে বাইবেলের প্রভাব এবং গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। মানুষ নানাভাবে এসব পুস্তককে জানা এবং বুঝার চেষ্টা করছে। বাইবেল গবেষণা এবং সমালোচনা তেমনি একটা পদ্ধতি, ধর্মীয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থেকে যেটা অনেক ভিন্ন। এ ধরনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে যারা ধার্মিক তাদের অসুবিধা হবে কী, এমন প্রশ্নের জবাবে দার্শনিক এবং গবেষকেরা মনে করেন, কোন অসুবিধা হবে না, কারণ এসব জানার পরেও মানুষের মধ্যে ধর্মবিশ্বাস থাকে, দার্শনিক কিয়ের্কেগার্ডের মতে এতে বরং তাদের ধর্ম বিশ্বাসে একটা যুক্তিগত ভিত্তি আসে।
Related articles across the web
ডিসেম্বর ৩, ২০১৭; ৮:৩৭ পূর্বাহ্ন
ব্লগপোস্টটা কৌতুহলসহকারে পাঠ করলাম। ভালো লেগেছে। বাইবেলের মতো কোরান এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ নিয়েও গবেষণামূলক লেখা আশাকরছি। ব্লগ লেখককে আন্তরিক ধন্যবাদ।
ডিসেম্বর ৩, ২০১৭; ১২:৩৬ অপরাহ্ন
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ডিসেম্বর ৭, ২০১৭; ১১:২০ পূর্বাহ্ন
কোরান-হাদিস পড়েই কুল পাই না, বাইবেল নিয়ে গবেষণার সময়-সুযোগই করতে পারি নি কোনোদিন। বাইবেল নিয়ে আপনার লেখাটা দারুণ হয়েছে। কোরান বনাম বাইবেল নিয়ে তুলনামুলক রিসার্চধর্মী লেখা দরকার। অনেকেই অভিযোগ করে বাইবেল থেকে চুরিবিদ্যা করে কোরান লেখা হয়েছে, এটা আদৌ সত্য কীনা মিথ্যা তা আলোচনা হওয়া দরকার।
বাইবেলে বর্ণিত নামগুলোও বেশ মজার, কেমন কেমন ইংলিশ ইংলিংশ ও ইউরোপিয়ান গন্ধ পাওয়া যায়। অপরদিকে কোরানে বর্ণিত নামগুলোয় স্পষ্ট আরব্য ফ্লেভার বিদ্যমান। আরব ও ইউরোপের বাইরের কোন এলাকার ফ্লেভার এইসব ধর্মগ্রন্থগুলোতে পাওয়া যায় না কেন সেটাই রহস্য। অথচ ঈশ্বর আল্লাহ তো পৃথিবীর সকল জাতি-গোত্রের মানুষের। এক্ষেত্রে ঈশ্বর-আল্লাহর পক্ষপাতিত্ব বেশ সন্দেহজনক।
ডিসেম্বর ৭, ২০১৭; ১১:০০ অপরাহ্ন
ইব্রাহীমি ধারার ধর্মগ্রন্থগুলোর মধ্যে বাইবেল যেহেতু সবচেয়ে পুরাতন তাই এতে অনেক বিবর্তন চোখে পড়ে, বিশেষ করে ঈশ্বরের বিবর্তন। প্রথমে মানবিক রাগ, বিদ্বেষ ইত্যাদি গুনাবলী সম্পন্ন ইয়াওয়ে অন্যতম ঈশ্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। ইয়াওয়ে ছিল তখন কেবল ইহুদিদের ঈশ্বর।বাইবেলের পরের দিকে এসে আমরা দেখি ইয়াওয়ে সব মানুষের ঈশ্বর, এবং মানবিক গুন হারিয়ে অনেকটা বিমূর্ত রূপে।
খ্রিস্টান এবং ইসলাম ধর্মের সময় একত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত ধারণা। এ দু’ধর্মেই পুরাতন বাইবেলকে স্বীকার করে নেয়া হয়।
ইসলামের সাথে অন্য ধর্মগুলোর মূল পার্থক্য হল, যীশুসহ বাকি ধর্মগুলোর প্রণেতাদের আমরা চিনি না, তাদের কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই, তাদেরকে পৌরাণিক ধরে নেয়া ছাড়া আমাদের কোন গতি নেই।তাদের কাহিনী পরবর্তীতে লিখিত হয়েছে। কিন্তু ইসলাম ধর্ম নবীন, ঐতিহাসিক যুগের ধর্ম এবং কোরাণ লিখিত হয়েছে সমসাময়িক সাহাবীদের দ্বারা, এর ইতিহাস মোটামুটি আমরা জানি।
বৌদ্ধ ধর্ম প্রাচীন এমনকী ইহুদী অনেক নবী এবং যীশুর ৫০০ বছর আগের হলেও খুব ভালভাবে ডকুমেন্টেড করা আছে। ফলে বুদ্ধের মুখের বাণী থেকে শুরু করে, নীতিকথা, হীনযান, মহাযান, বজ্রযান সবকিছুরই প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস আছে।