“আমি নিঝুম মজুমদার। পেশায় ব্যারিস্টার।”
~ ব্যাক ফ্ল্যাপ, একাত্তরের ঘাতকদের বিচারে মুসলিম আইডেন্টিটি’র অপব্যবহার (শব্দশৈলী ২০১৮)
গোলাম মারুফ মজুমদার ওরফে নিঝুম মজুমদার আসলে কেমন ব্যারিস্টার? এই প্রশ্নটা আমার মাথায় বেশ কয়েকদিন ধরেই ঘুরছিলো। প্রশ্নের উৎপত্তি মূলত আমার এবং নেত্র নিউজের বিরুদ্ধে তার বানোয়াট প্রচারণার সূত্র ধরেই।
নেত্র নিউজ যে এনইডি থেকে ফান্ড পায় সেটা আমাদের ওয়েবসাইটেই আছে, গোপন কোন তথ্য না। এই তথ্যের সাথে হরেক গোঁজামিল দিয়ে নিঝুম বলেই যাচ্ছে আমি সিআইএর এজেন্ট। ভেনেজুয়েলার শাভেজ আর আরও কে কে জানি বলছে যে এনইডি সিআইএর ফ্রন্ট। অতএব যেহেতু এনইডি নেত্র নিউজকে ফান্ড করে, সেহেতু আমি সিআইএর এজেন্ট; ওবায়দুল কাদেরের ঘড়িকান্ড ফাঁস করে আমি বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করতেছি। হেন তেন। তার এই কন্সপিরেসি থিওরি নিয়ে সে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় লিখছে, টিভি চ্যানেলেও গেছে। মোটামুটি সব জায়গাতেই তার পরিচয় দেওয়া হইছে যে সে একজন ব্যারিস্টার।
আমার খটকাটা লাগে ওই জায়গাতেই। ব্যারিস্টারিতো একটা স্পেশালিস্ট বিদ্যা — এভিডেন্স আর আরগুমেন্টেশনের উপর এডভান্স ট্রেনিং নিয়েই একজন মানুষ ব্যারিস্টার হয়। অথচ স্রেফ হিয়ার সের (শোনা কথা) উপর ভিত্তি করে এই ছেলেটা আমাকে সিআইএর এজেন্ট বানিয়ে দিচ্ছে। এ কী করে ব্যারিস্টার হলো?
এই কনফিউশন আরও বাড়লো কার্টুনিস্ট কিশোরকে নিয়ে তার দেওয়া পোস্টগুলো দেখে। একটা মামলার চার্জশীট হওয়ার আগেই একজন ব্যারিস্টার কীভাবে সাবজুডিস এভিডেন্সিয়ারি ম্যাটেরিয়াল নিয়ে এইভাবে ফেসবুকে লিখতে পারে? অন্য কোন দেশ হলেতো এই মামলা মিস ট্রায়াল হয়ে যেতো! আমি একজন সাংবাদিক হয়ে এইটা বুঝি, সে একজন ব্যারিস্টার হয়ে কীভাবে এইটা বুঝেনা?
এরই মধ্যে বাংলাদেশ আর্মির এক অফিসার আমাকে নিঝুমের একটা কলামের ক্লিপ পাঠালেন। জেনারেল আজিজের ভাইয়েরা কেন নির্দোষ এইটা নিয়ে গাঞ্জাখুরী বিশ্লেষণ। আমার সোর্সের মন্ত্যব্য: “ভুঁইফোড় উকিল দিয়ে এসব ছাপাচ্ছে [আজিজ]”।
এই ভুঁইফোড় শব্দটাতেই আমার চোখ আটকালো। আসলেইতো! এই ছেলেটা কেমন উকিল? যাই হোক, নানা ব্যস্ততার কারণে বিষয়টা প্রায় ভুলেই গেছিলাম। এরই মধ্যে সে আমারে নিয়ে আরেকটা পোস্ট দিলো। ইনবক্সে সেটার লিংক পেয়ে পড়তে গেলাম তার ওয়ালে। সাথে পরীমনির কেস নিয়ে তার পোস্টগুলা পড়লাম। পড়ে মনে হলো এই ফটকাটা যদি ব্যারিস্টার হয় তাইলে আমি টম ক্রুজ।
বসলাম অনুসন্ধানে। সেই ওপেন সোর্স ইনভেস্টিগেশনের ফাইন্ডিংটাই এখানে ডিটেইল বলছি।
১) ফেসবুক আর লিংকডইনে নিঝুম নিজেকে ব্যারিস্টার হিসেবে পরিচয় দেয়না। তার ফেসবুক প্রোফাইল অনুযায়ী যে যুক্তরাজ্যে একজন রেজিস্টার্ড ফরেন লইয়ার; নিউজিল্যান্ডের হাইকোর্টে সে একজন *এনরোলড ব্যারিস্টার এন্ড সলিসিটর*; অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে সে একজন *ব্যারিস্টার এন্ড সলিসিটর*। আবার তার লিংকডইন প্রোফাইলে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে সে নিজেকে শুধুমাত্র একজন লইয়ার হিসেবেই পরিচয় দিচ্ছে।
ফেসবুক স্ক্রিনশট (https://imgur.com/a/2qRKNGp):
লিংকডইন স্ক্রিনশট (https://imgur.com/a/TIILGaL):
২) অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বার এসোসিয়শনে গোলাম মারুফ নামে কোন ব্যারিস্টার নাই। তবে ল সোসাইটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের ডাটাবেস অনুযায়ী গোলাম মারুফ ওরফে নিঝুমের একটা সুপারভাইসড (অন্য আইনজীবির তত্ত্বাবধানে) প্র্যাকটিসিং লাইসেন্স আছে। আবার অস্ট্রেলিয়ান লিগ্যাল প্রফেশন রেজিস্টার অনুযায়ী গোলাম মারুফ ওরফে নিঝুম একজন সলিসিটর।
নিউ সাউথ ওয়েলস বার এসোসিয়শনের স্ক্রিনশট (https://imgur.com/a/OIHiS4a):
লিগ্যাল প্রফেশন রেজিস্টারের স্ক্রিনশট (https://imgur.com/a/gxHwVGC):
৩) ল সোসাইটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের একজন প্রতিনিধির সাথে আমি ফোনে কথা বলেছি। তিনি আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে নিঝুমের একটা সুপারভাইসড প্র্যাকটিসিং লাইসেন্স আছে যেটা এখনো একটিভ। তাদের নিয়ম অনুযায়ী, একজন সলিসিটর নিজেকে *সলিসিটর এন্ড ব্যারিস্টার* অথবা *ব্যারিস্টার এন্ড সলিসিটর* হিসেবে পরিচয় দিতে পারে, কিন্তু শুধুমাত্র ব্যারিস্টার হিসেবে পরিচয় দিতে পারেনা। দিলে সেটা লিগ্যাল প্রফেশন জেনারেল রুলের লংঘন হবে।
৪) এই বিষয়ে ঘাটতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ল এনসারস ফোরামে একটা আলোচনা পেলাম যেখানে একজন সলিসিটর আরেকজন সলিসিটরের ব্যাপারে বলছেন:
“In NSW, professional titles are prescribed in Rule 9 of the Legal Profession Uniform General Rules 2015. The term ‘Solicitor and Barrister’ is provided for in item 2 thereof. The requirement is to have a practising certificate. That he has a supervised PC is not relevant. What he is not allowed to is call himself ‘a barrister’, as though he’s a wig-and-gown-clad full-time specialist court advocate (and, there are separate rules about solicitors wearing robes etc). The terms ‘Solicitor and Barrister’ and ‘Barrister and Solicitor’ are both OK, and interchangeable. Personally, in day to day life, I am a solicitor, even though I get on my feet quite often. For myself, I only use the term ‘Solicitor and Barrister’ when working overseas (such as when I work in China).”
৫) উপরোক্ত বিধির ৯.২ ও ৯.৩ অনুযায়ী সলিসিটর গোলাম মারুফ অস্ট্রেলিয়ায় নিজেকে একজন ব্যারিস্টার হিসেবে পরিচয় দিতে পারেনা, কারণ তার সেই লাইসেন্স নাই, কখনো ছিলোও না।
৬) এবার যাই নিউজিল্যান্ডে। নিউজিল্যান্ড বার এসোসিয়েশনের ডাটাবেসেও গোলাম মারুফ নামে কোন ব্যারিস্টার নাই। নিউজিল্যান্ড ল সোসাইটির একজন প্রতিনিধি ফোনে আমাকে জানিয়েছেন যে, গোলাম মারুফ নামে একজন তাদের রেজিস্ট্রিতে আছে, কিন্তু নিউজিল্যান্ডে তার কোন প্র্যাকটিসিং লাইসেন্স নাই। অতএব তাদের আইন অনুযায়ী সে নিজেকে *ব্যারিস্টার এন্ড সলিসিটর* হিসেবেও পরিচয় দিতে পারবেনা, দিলে সেটা আইনের লংঘন হবে। তবে সে নিজেকে *এনরোলড ব্যারিস্টার এন্ড সলিসিটর* বলতে পারবে।
৭) এ বিষয়ে নিউজিল্যান্ড ল সোসাইটির ওয়েবসাইটে বলা আছে:
“If you provide any legal services without a current practising certificate you must not describe yourself as a lawyer — or law practitioner, legal practitioner, barrister, barrister and solicitor, solicitor, attorney-at-law or counsel. To do so is an offence under S21 of the LCA. You should describe yourself in a way that will not be in breach of the LCA. One suitable formula might be ‘Enrolled barrister and solicitor of the High Court of New Zealand’.”
গোলাম মারুফ ওরফে নিঝুম মজুমদার একজন সলিসিটর, ব্যারিস্টার হিসেবে সে নিজের পরিচয় দিতে পারেনা। অথচ এই প্রতারণামূলক কাজটিই সে দীর্ঘদিন ধরে করে যাচ্ছে। শব্দশৈলী থেকে প্রকাশিত ‘একাত্তরের ঘাতকদের বিচারে মুসলিম আইডেন্টিটি’র অপব্যবহার‘ বইটির লেখক পরিচিতিতে সে লিখেছে, “আমি নিঝুম মজুমদার। পেশায় ব্যারিস্টার।” আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশ নিয়ে তার তিনটি বইয়ের কালেকশন বের হয়েছে গ্রন্থিক থেকে, যেটা বাতিঘরে বিক্রি হচ্ছে। সেই কালেকশনের কভারে তার পরিচয় “লেখক, গবেষক ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার”। কিছুদিন আগে সে কালেরকণ্ঠে একটা কলাম লিখেছে, সেটার বাই লাইনেও তার পরিচয় “ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার”। এমন এক বাটপার যে ব্যারিস্টার না হয়েও নিজেকে ব্যারিস্টার হিসেবে পরিচয় দেয় তার তথাকথিত আইনী বিশ্লেষণ কারা গুরুত্ব দিয়ে ছাপে সেটা পাঠকরাই বিবেচনা করবেন।
একাত্তরের ঘাতকদের বিচারে মুসলিম আইডেন্টিটি’র অপব্যবহার বইটির ব্যাক ফ্ল্যাপ (https://imgur.com/a/xSyc7jJ):
বইয়ের কালেকশনের কভার (https://imgur.com/a/MvruSKr):
কালের কণ্ঠে বাই লাইন (https://imgur.com/a/84Af2R9):
যাই হোক, আমার এই পোস্টের কারণে কেউ হারপিক-টারপিক খেয়ে ফেললে আমি কোন দায় নিবোনা। দশ দিন বাটপারের, এক দিন সাংবাদিকের — বটতলার ব্যারিস্টাররা এই কথাটা মনে রাখলে ভাল করবে।
সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২; ১:০৯ অপরাহ্ন
নিঝুমরা বাটপার ও দেশের শত্রু।
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২; ৫:৪৯ পূর্বাহ্ন
তার বাটপারি ভাইরাল করে দেওয়া উচিৎ।
সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২; ১:২০ পূর্বাহ্ন
বাটপারটাকে নিয়ে ফেসবুকে কিছু বলতে চাই তাই ইনফরমেশন খুঁজছি। ধন্যবাদ প্রিয় তাসনিম খলিল ভাই
সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২; ২:৩৬ অপরাহ্ন
Tui Hafej Takrim ke Nia Baje Montobbo Kore chis Sala Beadob,
অক্টোবর ৭, ২০২২; ৫:৪৮ অপরাহ্ন
ওই শালা নিঝুম মজুমদার একটা বাটপার
জানুয়ারি ১০, ২০২৩; ২:২৮ পূর্বাহ্ন
Bangladesh High Court should make enquiries about his qualifications, whether he is misrepresenting himself by calling himself a Barrister. But this is the age of Hasina, her people can do whatever they like!