০
১৩২৫ বার পঠিত
আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে উচ্চ আদালতে বিচারপতি থাকাকালে শামসুদ্দিন মানিক আদালতের সামান্য জমি রক্ষার স্বার্থের এক মামলার শুনানীকালে আজকের প্রেসিডেন্ট (তৎকালে স্পিকার) আব্দুল হামিদ খানকে তার সংসদে দেয়া এক বক্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন; “স্পিকার সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে উসকে দিয়েছেন।”
সুপ্রিম কোর্টের কাছে সড়ক ভবন হস্তান্তর করা নিয়ে এর আগে গত ২০১২ সালের ২৯ মে, জাতীয় সংসদে একটি বিতর্ক হয়। সুপ্রিম কোর্টের জমি নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশের বিষয় উত্থাপিত হলে স্পিকার আবদুল হামিদ ২৯ মে ২০১২ তে সংসদে বলেছিলেন; “দেশের মানুষের বিচার পেতে বছরের পর বছর লেগে যাবে আর নিজেদের বিষয় হলে বিচার বিভাগ ঝটপট সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন, এটি ভালো দেখায় না। আদালতের রায়ে ক্ষুব্ধ হলে জনগণ বিচার বিভাগের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াতে পারে।”
শামসুদ্দিন মানিক সেই সময় বলেছিলেন; স্পিকারের বক্তব্য শুধু অজ্ঞতাই নয়, অমার্জনীয়। জবাবে মতিন খসরু বলেন, এ বিষয়ে এখানে থেমে যাওয়াই মঙ্গলজনক। আদালত বলেন, স্পিকারই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেছেন। উনি জনগণকে সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে উসকে দিচ্ছেন। এটা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।
মতিন খসরু বলেন, ‘স্পিকার আবদুল হামিদ একজন আইনজীবী এবং অত্যন্ত জ্যেষ্ঠ সাংসদ। আদালত বলেন, উনি তো বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। আইন অনুযায়ী, তিনি কোনো বিতর্কে অংশ নিতে পারেন না। আমরা তাঁর বক্তব্যে হতবাক হয়েছি।’
একপর্যায়ে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও সংসদ। প্রত্যেক অংশকেই নিজ নিজ এখতিয়ারের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়।
শেষ পর্যায়ে শুনানিতে অংশ নিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘আপনি (বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী) একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আপনার প্রতি আমার অনুরোধ, রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে বিষয়টি এখানেই শেষ করে দিন।’
পরে আদালত আদেশ দেওয়া শুরু করেন। আদেশে বলা হয়, সংসদে আলোচনার বিষয়টি ২৯ মে প্রায় সব সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। একজন সাংসদ পয়েন্ট অব অর্ডারে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। স্পিকার রাষ্ট্রের তিন নম্বর ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের মর্যাদাশীল পদের অধিকারী। তিনি আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। রুলস অব পার্লামেন্ট অনুযায়ী কোনো ধরনের বিতর্কে অংশ নেওয়ার সুযোগ স্পিকারের নেই। তিনি শুধু সংসদ পরিচালনা করবেন। সারা বিশ্বের আইনে এটা প্রতিষ্ঠিত যে বিচারাধীন বিষয়ে সংসদে কোনো আলোচনা হতে পারে না।
একপর্যায়ে আনিসুল হক দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি, আপনার মনে অনেক কষ্ট। দয়া করে বিষয়টি এখানেই শেষ করে দিন।’
পরে আদেশে বলা হয়, ‘ওই দিন যা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশার। আমরা এটা পরিষ্কার করতে চাই যে রাষ্ট্রের অন্য দুটি অঙ্গের মতো সুপ্রিম কোর্টও সাংবিধানিক অর্গান, সুপ্রিম কোর্ট স্বাধীন। আমরা কোনো মন্ত্রীর দ্বারা পরিচালিত নই। আমরা কেবল আমাদের বিবেক এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে দায়বদ্ধ। সরকারের কাছে বা কোনো মন্ত্রীর কাছে আমরা দায়বদ্ধ নই। আমরা আমাদের স্বার্থে কোনো আদেশ দিই না, আমরা যে আদেশ দেই তা জনগণের স্বার্থে। সুপ্রিম কোর্টে স্থানের সংকুলান হওয়া জনগণের স্বার্থেই প্রয়োজন। কারণ, স্থান সংকুলান না হলে নতুন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে না, মামলার জটও শেষ হবে না।’ আদালত বলেন, ‘আমরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে স্বাধীনভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করব। আমরা আশা করি, স্পিকার সুপ্রিম কোর্টের প্রতি মর্যাদা দেখাবেন।
ছবি: বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক
অথচ আজ এসে এই শামসুদ্দিন মানিক হাইকোর্টের সামান্য জমি নয়, খোদ বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে যে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন, তার সমালোচনায় কোন সংসদ নয়, এমনকী কোন বিচারকের আসনও নয়, রাজনীতিবিদদের মত মাঠে ময়দানে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে শুধু পদই নয়, তাকে দেশ ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন!
সূত্র:
১) তুমি শুধু পদ না, দেশও ছাড়বা: প্রধান বিচারপতিকে মানিক
২) বিচারপতি মানিকের বক্তব্য সংবিধান লঙ্ঘন ও আদালত অবমাননা
৪) বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক আদালত অবমাননা করেছেন
৬) এবার সুপ্রিম কোর্টের বাইরে কথা বললেন বিচারপতি মানিক
৭) আবারও আলোচনায় বিচারপতি মানিক
৮) সেসময়কার সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়ুন এখানে>>> স্পিকারের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল: হাইকোর্ট
৯) প্রধান বিচারপতিকে যেন আদালতে বসতে দেয়া না হয়
১০) ‘৭৫-এর পর ক্ষমতাসীনরা খুনিদের পক্ষে ছিল: প্রধানমন্ত্রী
১১)
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন