০
৭২৯ বার পঠিত
মিয়ানমার সরকার অভিযোগ করেছেন , বিদেশি ফান্ডের লোভে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরৎ পাঠাচ্ছে না।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশকেই দায়ী করেছে মিয়ানমার সরকার৷ তারা অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য যে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক অর্থ সহায়তা পাচ্ছে, তা বন্ধ হয়ে যাবে এই আশঙ্কায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় বিলম্ব করছে৷
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি’র মুখপাত্র জাও তায় বলেছেন,
“৯০-এর রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন চুক্তি অনুযায়ী, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পুরোপুরি প্রস্তুত৷কিন্তু বাংলাদেশ এখনও সেই চুক্তির সব শর্ত মেনে নেয়নি৷”
এ কারণে পুরো প্রক্রিয়া বিলম্ব হচ্ছে বলে দাবি করেন জাও তায়৷ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্টেট কাউন্সিল মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জাও তায়৷ সেখানে তিনি বলেছেন,
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি তালিকা পাঠানোর কথা বাংলাদেশের, সেটির জন্য অপেক্ষা করছি আমরা৷
এ বিষয়ে রয়টার্স এর টুইটারে তাদের লেখা প্রতিবেদনের লিংক শেয়ার করে টুইট করা হয়েছে এভাবে-
Myanmar says Bangladesh dragging feet over repatriating Rohingya https://t.co/w3uJQpgjw7
— Reuters (@Reuters) November 1, 2017
ওদিকে ফোর্বস ম্যাগাজিনের অফিসিয়াল টুইটারে টুইট করা হয়েছে এভাবে-
The Rohingya refugee crisis: a shade on Myanmar, and a light on Bangladesh https://t.co/GEuAkuKJtm pic.twitter.com/Q23niXSWgv
— Forbes (@Forbes) November 1, 2017
সায়মন ক্যামেরন মুরের (Simon Cameron-Moore) লেখা ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে, Myanmar blames Bangladesh for delaying accord on repatriating Rohingya। যেখানে শুরুতেই লেখা হয়েছে এভাবে-
Myanmar insisted on Wednesday it was ready to set up a repatriation process for Rohingya Muslims even as more risked their lives fleeing the country, but it voiced fears Bangladesh was delaying an accord to first get international aid money.
মিয়ানমার স্টেট কাউন্সিল মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জাও তায় বলেন,
“We are ready to start, but the other side did not accept yet, and the process was delayed. This is the number one fact.”
অর্থাৎ,
“বাংলাদেশ সম্প্রতি ৪০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা পেয়েছে রোহিঙ্গাদের কারণে৷ আমাদের আশঙ্কা, আরও অর্থ সহায়তা পাওয়ার আশায় রোহিঙ্গাদের ফেরত দিতে দেরি করছে তারা”
কালিফোর্নিয়া থেকে জেসমিন খিন (Jasmine Khin) বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির ডকুমেন্ট টুইটারে টুইট করেছেন।
#Bangladesh says agreed 10 pts by #Myanmar "was not finally agreed upon" while "brief record of discussion" "yet to be endorsed by Myanmar" pic.twitter.com/4GP6ofvXBd
— Jasmine Khin (@khin_jasmine) October 27, 2017
১৯৯২ সালে মিয়ানমারের সামরিক সরকার শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে যে প্রত্যাবাসন চুক্তি করেছিল, তার আওতায় দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে সে সময় ফিরিয়ে নিয়েছিল তারা। চুক্তি নির্ধারিত যাচাই প্রক্রিয়ায় আরও ২৪১৫ জন শরণার্থীকে ‘মিয়ানমার থেকে আসা’ বলে চিহ্নিত করা হলেও তাদের আর তারা ফিরিয়ে নেয়নি।
গত অগাস্টে রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মধ্যে মিয়ানমারের তরফ থেকে বলা হয়, ১৯৯২ সালের চুক্তির আওতায় ‘যাচাইয়ের মাধ্যমে’ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রাখাইনের মুসলমানদের ফিরিয়ে নিতে তারা প্রস্তুত।
এর ধারাবাহিকতায় সু চির দপ্তরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে অক্টোবরের শুরুতে ঢাকায় এলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে দুই দেশ একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের বিষয়ে সম্মত হয়। ১৯৯২ সালের চুক্তি এখন আর ‘বাস্তবসম্মত নয়’ জানিয়ে ওই বৈঠকে নতুন একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এগিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে মিয়ানমারের জবাব এখনও বাংলাদেশ পায়নি।
গত ৯ অক্টোবর ঢাকায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, যে প্রেক্ষাপটে ১৯৯২ সালের চুক্তির নীতিমালা ও যাচাইয়ের প্রক্রিয়াগুলো ঠিক করা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতি তার তুলনায় অনেকটাই আলাদা। সুতরাং ওই চুক্তি অনুসারে এবার রোহিঙ্গাদের পরিচয় শনাক্ত করার প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়। ১৯৯২ সালের ওই চুক্তির চতুর্থ দফায় রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা হয়, যাদের কাছে মিয়ানমারের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জাতীয় নিবন্ধন কার্ড থাকবে, অথবা যারা জাতীয়তার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমার সরকারের যে কোনো দপ্তরের দেওয়া কোনো নথি দেখাতে পারবে এবং যারা মিয়ানমারে তাদের বসবাসের প্রমাণ দিতে পারবে- তাদের সবাইকে ধাপে ধাপে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার। কিন্তু গত মাসে কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে আসা একজন কূটনীতিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, যে অবস্থায় এই মানুষগুলো মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে, তাতে তাদের কাছে পরিচয়পত্র আশা করা
তাছাড়া রোহিঙ্গাদের কাছে জাতীয় পরিচিতির যেসব কাগজপত্র ছিল, গতবছরই সেগুলো বাতিল করে দিয়েছে মিয়ানমার।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর জন্য অক্টোবরের শুরুতে ঢাকায় দুই দেশের বৈঠকে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়৷ এরপর মাসের শেষে মিয়ানমারে যান বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল৷ সেখানে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে কোফি আনান কমিশনের সুপারিশের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ ১০ দফা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়৷
বাংলাদেশ সরকার গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, ওই দশ দফা প্রস্তাবের বিষয়ে মিয়ানমার এখনও সম্মতি দেয়নি৷ গত শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, এ ব্যাপারে আরো আলোচনা করতে ৩০শে নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মিয়ানমারে যাবেন৷
বাংলাদেশ বরাবরই বলে আসছে, মানবিক কারণে আপাতত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হলেও তাদের অবশ্যই মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে হবে। এ সমস্যার পেছনে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই; সমস্যার সৃষ্টি ও কেন্দ্রবিন্দু মিয়ানমারে, সমাধানও সেখানে নিহিত।
বাংলাদেশ সরকার গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে; সেখানে বলা হয়েছে, ওই দশ দফা প্রস্তাবের বিষয়ে মিয়ানমার এখনও সম্মতি দেয়নি। এদিকে মিয়ানমার বরাবরই বলে আসছে, রোহিঙ্গাদের পরিচয় এবং তাদের মিয়ানমারে বসবাসের তথ্য যাচাই হলেই তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। জ তাই বলেছেন, তার দেশ এখন বাংলাদেশের তরফ থেকে রোহিঙ্গাদের তালিকার জন্য অপেক্ষা করছে।
সূত্র সহায়তা:
১) টুইটার
২) রয়টার্স: Myanmar blames Bangladesh for delaying accord on repatriating Rohingya
৩) ফোর্বস: Rohingyas: Shade On Burmese, A Light On Bangladesh?
৪) দ্য ইকোনমিস্ট: Life in limbo: The half-million Rohingya refugees in Bangladesh will not leave soon
৫) ডয়েচেভেলে: বিদেশি সহায়তা পেতে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাচ্ছে না বাংলাদেশ: মিয়ানমার
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন