বিবাহ, উত্তরাধিকার ও সংখ্যালঘু নির্যাতন

7 মতামত পাওয়া গেছে

একমত হতে পারলাম না। প্রথম লাইনেই সমস্যা আছে, “মানবসমাজ যখন শিকারনির্ভর ছিল তখন বিবাহ ছিলনা। ” এটা মোটেই ঠিক না। বিবাহ অনেক পুরাতন প্রতিষ্ঠান, মর্গানের ‘আদিম সমাজ’ দেখেন। আর দুনিয়ার প্রথম আইন হল ‘বিবাহ আইন’, মানে কোন গোত্রের কাকে বিবাহ করা যাবে বা যাবে না এ সম্পর্কিত ট্যাবু বা নিষেধাজ্ঞা।
নর-নারীর সেক্সুয়াল সম্পর্কের ব্যাপারে আদিম সমাজ খুব সতর্ক ছিল, এ ব্যাপারে তারা কঠিন নিয়ম-কানুন পালন করত। তাদের পুরো সমাজ কাঠামোই এ উদ্দেশ্যকে উপলক্ষ্য করে।

    মর্গানের ‘আদিম সমাজ’ আর একবার পড়ুন…

      হা হা … খুব মজা পাইলাম। প্রথমবার মন্তব্য করার সময়ই আরেকবার দেখে নিয়েছিলাম।

      “In savagery community of husbands and wives, within prescribed limits, was the central principle of the social system. The marital rights and privileges, (jura conjugialia,) established in the group, grew into a stupendous scheme, which became the organic principle on which society was constituted.” – আদিম সমাজ

      Savage পর্যায় ছিল আজ থেকে ষাট হাজার বছর আগে। তারপরে হলো বর্বর সমাজ পঁয়ত্রিশ হাজার বছর আগে। আর সভ্যতা মাত্র দশ হাজার বছর। তো স্যাভেজ বা বুনো পর্যায়েই পরিবারের ধারণা ছিল। মানুষ তখন গোত্রে ভাগ হয়ে থাকত, এবং সেক্সুয়াল সম্পর্কের ব্যাপারে নানা বিধি-নিষেধ তখন থেকে কার্যকর ছিল। প্রতিটি গোত্রে একটা তালিকা ছিল কাদের সাথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিষেধ, গোত্রের মধ্যে তো অবশ্যই নয়। অন্য কোন গোত্র থেকে মেয়ে আনা যাবে সেসব বিষয়ে কঠোর নিয়ম ছিল। যার অন্যথা হলে কঠোর শাস্তি, গোত্রের সবাই মিলে তাকে মেরে ফেলে। সাময়িক প্রেমের ক্ষেত্রে ছেলেটাকে মেরে ফেলা হয়, আর মেয়েটাকে কঠোর শাস্তি দেয়া হতো।

      ‘ আমাদের ধারণা বর্বর, উলঙ্গ, অসভ্য মানুষেরা তাদের সেক্সুয়্যাল লাইফে আমাদের মত নিয়ম-নীতির অনুসরণ করবে না। কিন্তু দেখা গেছে তারা এ বিষয়ে খুবই সচেতন ছিল। অজাচারের ব্যপারে তারা খুবই সতর্ক থাকত। একই টোটেমের মানুষেরা সেক্সুয়াল সম্পর্ক করতে পারে না। তার উপর বাবা/ মায়ের গোত্রের কারণে আরো অনেক নিষেধাজ্ঞা থাকত।’ -টোটেম ও ট্যাবু, ফ্রয়েড

      আমিও মজা পাইলাম। আপনিই সঠিক, তবে সমস্যা হচ্ছে মর্গানের ৫০০ পৃষ্ঠাকে দু’লাইনে প্রকাশ করিতে গেলে যে সংকট বা ভ্রান্তি ঘটিবার সম্ভাবনা তৈরী হয় তাহাতে মর্গানের দুলাইনের পাঠক উক্ত দুলাইনে মূর্খতার সন্ধান পাইয়া পন্ডিতির হাসি দিতেই পারেন। তবে আদম-হাওয়ার (Adam & Eve) গল্প বলিতেছে গন্দম ফল খাইবার আগে আদম ও হাওয়া পরস্পরের সঙ্গী ছিলেন কিন্তু দম্পতি ছিলেন না…

      আমার সঠিক হবার দরকার নাই, এ ব্যাপারে এনথ্রপলজিস্টরা এবং অন্য যারা গবেষণা করেছেন তারা কী বলছেন সেটাই বিবেচ্য। এটা ঠিক যে আদিম মানুষ আমাদের বর্তমান সময়ের মত বিবাহের চুক্তিতে আবদ্ধ হত না। কিন্তু তাই বলে তাদের মধ্যে কোন নিয়ম-কানুন ছিল না, এটা সত্যের অপলাপ। বরং নর-নারীর সম্পর্কের ব্যাপারে আদিম অসভ্য মানুষের মধ্যে কঠোর নিয়ম-কানুন ছিল, সামাজিক অনেক বাধা নিষেধ ছিল। আদিম মানুষ ইনসেস্টের ব্যাপারে খু্ব সচেতন ছিল। বর্তমান কালের বিবাহের যেমন অনেক নিয়ম-কানুন এবং সামাজিক ভাবে গ্রহনযোগ্যতা লাগে তাদেরও তেমনি ছিল। গোত্রের বাইরে মানুষের টিকে থাকার সম্ভাবনা কম, গোত্রের সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে নিশ্চিতভাবে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা তাদের টোটেমের আইন বাস্তবায়নে সহায়ক ছিল। তার উপরে বংশ-বিস্তার, সন্তান লালন-পালনে গোত্র ছিল একমাত্র ভরসা। ফলে মেয়েদের অবশ্যই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হত।

      আপনার প্রথম মন্তব্য দেখে মজা পেয়েছিলাম। মর্গানের বই থেকে কোট করার সেটাই কারণ। দু’লাইনে বুঝার প্রয়োজন নাই,তার বইয়ে আমেরিকান বিভিন্ন আদিবাসীদের বিবাহ পদ্ধতির বিস্তারিত বর্ণনা আছে,যাদের অনেকেই ‘শিকার নির্ভর’। শুধু মর্গান কেন, ফ্রয়েড, ভুন্ড এদের সবার লেখায় আদিম সমাজের নর-নারীর সম্পর্কের ব্যাপারে কঠোরতার কথা বলা আছে। যদি সেসব নিয়মকে আমরা বিয়ে বলতে না চাই তাহলে কিছু বলার নেই। কিন্তু এনথ্র্পলিজস্টরা সেগুলোকে সামাজিক চুক্তির অংশ হিসেবে ‘বিবাহ’ বলেছেন। এবং মানুষের বানানো আইনের মধ্যে বিবাহ আইন প্রথম, তার অনেক অনেক পরে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণা প্রতিষ্ঠিত হলে আসে উত্তরাধিকার আইন। বিবাহ কী? দুজন নর-নারীর মধ্যে সমাজ স্বীক্রিত সেক্সুয়াল কন্ট্রাক্ট।

      আদম-হাওয়া তো পুরাণ, সম্পূর্ণ ভিন্ন কনটেক্সট, এর পাঠ ভিন্ন।

      বিবাহ বা চুক্তি ব্যাপারটি ঘটে প্রজননে যৌনতার ও নারী ও পুরুষের কার কি ভূমিকা সেটা মানুষ আবিস্কার করে তখন। এটাই আদম হাওয়ার গল্প… মানুষ হয়ে ওঠার গল্প… কারন মানুষের যৌনতায় প্রজনন ছাড়াও আরও কিছু আছে… যাহাকে আনন্দ বলে…প্রেম বলে…


আপনার মতামত দিন

আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।