১৭৩৩ বার পঠিত
নাস্তিকতা বিষয়টিকে কেহ যদি আধুনিকতার সাথে মিলিয়ে দেখতে চান তবে তার জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে- নাস্তিকতা বিষয়টি ধর্মের সমান প্রাচীন, বরঞ্চ বলা যেতে পারে ধর্মের যমজ বড়ভাই।
নাস্তিক আরবের আল্লাহর চেয়ে বুড়ো, ভারতের ঈশ্বরের চেয়ে বয়োজেষ্ঠ, ইউরোপের জিউস নাস্তিকের চেয়ে বয়ঃকনিষ্ঠ…
যাদুকরের যাদু ধরে ফেলবার মজাই আলাদা, কিন্তু যাদুকরের পেটে লাথিমারাও বটে। যাদুকর এই সব মজাবাজদের ‘নাস্তিক’ বলিয়া কটাক্ষ করিতেই পারেন। তখোনো ধর্ম জন্ম নেয় নাই… যাদু দেখিতে পুরোগ্রাম বসে আছে, নাস্তিক যাদুর মজাটা নষ্ট করিলে তাহার খবর আছে…
খ
ধর্ম বিচারে নাস্তিকদের মধ্যে বুদ্ধ বহুবার হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেচে গেছেন, মহম্মদই প্রথম নাস্তিক যিনি ক্ষমতারোহন করেছিলেন এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র। অর্থাৎ বুদ্ধ ও মুহম্মদই শুধুমাত্র হত্যার শিকার হন নি বা নির্বাসিত অবস্থায় মারা যান নি। সক্রেটিস, মুসা, ইশা, স্পাটাকাস, রাবন, চৈতন্য সকলেই নিহত…
গ
মনসামঙ্গল কাব্যকে যদি ইতিহাস ধরি তবে ইহাও নাস্তিকতার বিজয়।
ঘ
বেদ এর সিদ্ধান্তসমূহে অনাস্থাই নাস্তিকতা। এটাই ভারতীয় সূত্র। ঈশ্বরকে নিরাকার, নিস্ক্রিয়, পরমশূন্যতা হিসেবে বয়ান করার মধ্য দিয়ে বেদ ঈশ্বর আছে কী নেই সে প্রশ্নের কূটনৈতিক সমাধান করলেও বাকি বিষয়ে বিরোধীতার কিংবা প্রশ্নের মুখে থেকেছে চিরকাল।
ঙ
আরব গিলগামেসের গল্পকে ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যানের সাথে সাথে প্রত্নসম্পদে পরিণত করেছে। মিশরের পিরামিডের চূড়া থেকে নেমে নীল নদ পেরিয়ে ‘রব’ হয়েছেন মূর্তি বা রূপহীন, মুসা তার বন্ধু। সেই ‘রব’ দের রাজা আল্লাহকেই এক বা অ-দ্বীতিয় ও নিরাকার ঘোষণা দিলেন মুহম্মদ।
চ
টাইটানদের লড়াই শেষে ইউরোপ জিউসকে দেবরাজ মেনে নিলে, ব্যাবিলনে গিলগামেসের গল্পসমূহ প্রত্নসম্পদে পরিণত হয়। তবে অগ্নিদেবতা আল্লাহ নিরাকার ও অদ্বিতীয় হওয়ার পর ভারতে চলে আসেন। যেভাবে মূর্তি বা রূপহীন ‘রব’ এর উপাসকেরা ভারতের আশ্রয়ে আছেন বহুকাল। তবে এদের ভারত আগমন ‘অগ্নি’ সন্তানদের সহযাত্রী হয়ে না ‘রব’ পুত্র যিশু বা ইসার সাথে তা গবেষণা দাবী করে।
ছ
ইউরোপ জিউস ও তার পরিষদকে উন্নত সিনেট ভবন প্রদানে ব্যার্থ হলে, আল্পসের পর্বতে এসে বসলেন আরবের ‘রব’। ইসা ‘দ্যা রাখাল যুবক’, যেন ইশপের গড-এর পুত্র হয়ে ওঠা কিংবা প্রমিথিউসের লোকায়ত রূপ।
জ
নাস্তিক এর দুটি সমস্যা- শাসকের আধ্যাত্ম রূপটি এবং শাসকের বাস্তব বা পার্থিব বা সমাজপতি রূপটি।
সমাজপতি রূপটি ধর্ম বা সনাতন বা প্রচলিতের মুখোশে অবস্থান করে। নাস্তিক তাই সমাজপতির মুখোশ উম্মোচন করতে গিয়ে আধ্যাত্ম রূপটিকে ধরেই টানাটানি করেছেন। ঈশ্বরকে নিরাকার, নিস্ক্রিয়, পরমশূন্যতা হিসেবে বয়ান করার মধ্য দিয়ে ভারত আধ্যাত্ম পরিসরে এক প্রশ্নাতীত বা শান্তি-অবস্থা তৈরির প্রয়াস পেলেও ‘সমাজপতি’র মুখোশ উম্মোচন ধারণাটির প্রয়োগে ‘দেবতা, অবতার, অসুর’ উপকথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। গণউত্থানের নায়কেরা অবতার, তবে অসুরেরাও হিটলার। সকলেই ধার্মিক সকলে নাস্তিক।
ঝ
রেনেসাঁ-ফরাসি বিপ্লব-আধুনিকতায় এসে ইউরোপ বুঝলো শাসনে আধ্যাত্মকতার বা ধর্মের আফিম লাগে বটে, কিন্তু তা বেশি হলে লাভের গুড়ের হিসাব থাকে না। তাই প্রচলিত স্বয়ং নাস্তিক হয়ে পোপকে ভ্যাটিকান নাপে একটা বাড়ি বানিয়ে দিল, চার্চগুলো সার্বভৌম। কিছু চার্চ ড্রেসকোডের ঝামেলা থেকে বাঁচতে নিজেরাই নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় বলে ঘোষণা দিল। সকলেরই তো নিজেকে বিশিষ্ট ভাবতে মন চায়, তো শুরু হলো ‘ফ্যাশন ডিজাইন’ বা চিন্তার স্বাধীনতা।
ঙ
তো আধুনিক নাস্তিক আপনি কোন প্রচলিত বা ‘সিদ্ধান্ত সমূহের ডিব্বা’ বা বেদ এর প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করিবেন?
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন