বাংলার দেশগুলোতে বুদ্ধির অভাব – এই স্থিতিকে নির্দেশ করতে বিপুল সংখ্যক শব্দ ব্যবহৃত হয়। এই প্রাচুর্য বাঙালির মাঝে ল্যাটকা আহ্লাদ ও শব্দ প্রয়োগে অসাবধানতার সঞ্চার করেছে। ফলে একজন মানুষ কী কারণে বোকা অথবা ঠিক কতোটা বোকা অথবা কতোদিন ধরে তিনি বোকা আছেন – এই দ্যোতনা প্রচলিত শব্দগুলো দিতে পারছে না। বাংলা ভাষায় এক ধরণের নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে; ফলশ্রুতিতে যাকে শুধুমাত্র বোকা বলাটাই যথেষ্ট ছিলো তাকে ইদানিং বোকাচোদা বলা হচ্ছে। এই প্রকার ভাষিক বিশৃঙ্খলা অনভিপ্রেত কারণ যিনি প্রকৃত বোকাচোদা তিনি হয়তো একজন সামান্য বোকাকে, অভ্যাসবশত, বোকাচোদা ভাববার প্রয়াস পান। ঠিক এভাবেই শব্দার্থের অভিস্রবণ হয় এবং বুদ্ধিহীন সমাজে এর ফলে এক ধরনের সংহতির উদ্ভব হয়। কবি বলেছেন, “আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে”।
বুদ্ধিহীন সমাজে সংহতির উদ্রেক মাত্রই বিপর্যয়ের আহবান কেননা তারা ক্ষণে ক্ষণেই আপনাকে তাদের সংখ্যাধিক্যের বাস্তবতা ও আপামর সংহতির শক্তি স্মরণ করিয়ে দেবে। বুদ্ধিহীন সমাজ যেন কোনোভাবেই শ্রেণীহীন দরদী সমাজে পর্যবসিত না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখা আমি কর্তব্য জ্ঞান করেছি।
ব্যক্তি যখন বুদ্ধিহীন হয় তাকে নির্দেশ করতে বাংলা ভাষায় শব্দসম্ভার প্রাচুর্যমণ্ডিত। প্রারম্ভিক নির্দেশিকা হোলো “বোকা” বা “বেকুব”। বুদ্ধিহীনতার প্রারম্ভিক পর্ব ও আমব্রেলা টার্ম হিসাবে এই শব্দদ্বয়ের উপযোগিতা আছে মোক্ষম। সমস্যা হোলো বেকুবরা স্বভাবত অস্থিরচিত্ত ও আবিষ্কারমুখী (explorer)। তারা নিত্যনতুন বুদ্ধিহীনতাকে আয়ত্ত্ব ও প্রদর্শন করতে উন্মুখ। প্রায় সব ক্ষেত্রেই আপনি অভিনব ও অভূতপূর্ব বুদ্ধিহীনতা লক্ষ্য করবেন – যে কারণে আজকে যিনি বোকা, কালকে যে তিনি শুধুমাত্র বোকাই থাকবেন কিংবা কোনোভাবেই তিনি বোকাচোদা হবেন না – এ ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব না। বুদ্ধিহীনতার এই অপার সম্ভাবনাকে নির্দিষ্ট করতে আপনার প্রয়োজন অনুরূপ সম্ভাবনাময় শব্দসম্ভার। নিম্নলখিত শব্দসম্ভার এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সূত্রপাত করতে সক্ষম বলে আমার প্রস্তাব: গাণ্ডু, বোকচোদ, বোকাচোদা, ভক্সদ, ভোদাই, ভোন্দা, নির্বোধ, ব্যাক্কেল/বেআক্কল, গবেট, উজবুক – আপাতত ইত্যাদি।
বোকাদেরকে কোনো চারপেয়ে উপকারী প্রাণীর সাথে সাযুজ্যমণ্ডিত করার একটি প্রবণতাও বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে লক্ষ্যণীয়। বলদ, গাধা, গর্দভ (গাধার সংস্কৃত হোলো গর্দভ – কাজেই গাধা, সংস্কৃত বা ইংরেজি জানলে তাকে গর্দভ বলাটাই সমীচীন), গরু, ছাগল, রামছাগল, গাড়ল (ভেড়া) – প্রভৃতি গৃহপালিত পশুকে বুদ্ধিহীনতার গোল্ডস্ট্যান্ডার্ড ধরবার রেওয়াজ আছে বাংলার দেশে।
বাঙালির সূক্ষ্ণ, জীবনমুখী বিবেচনাবোধটি কিন্তু লক্ষ্য না করলে এক্ষেত্রে অবিচার হবে। দেখুন একদল স্তন্যদায়ী প্রাণী যারা কোনো বেতন নিচ্ছে না অথচ তার সন্তানের জন্য বরাদ্দকৃত দুধ আপনাকে দিয়ে দিচ্ছে, হালচাষে সহযোগিতা করছে, গলাটা দিয়ে দিচ্ছে, এমন কি মৃত্যুর পর চামড়াটুকুও উৎসর্গ করছে কোনো পারিশ্রমিক ছাড়া – এই প্রকার অপরিণামদর্শিতাকে আপনি বোকামি ছাড়া কী বলবেন? বিশেষ্য হিসাবে “বলদামি” ও “গাড়লপনা” – আমি তাই যথোপযুক্ত মনে করি।
উমবের্তো একোর মতে বলদামি মূলত তিন স্তর বিশিষ্ট। প্রথম স্তরে আছে “সিম্পলটন” – মানে যারা চাঁদে সাঈদীকে দেখা গেছে বলে বিশ্বাস করেছেন কিংবা হোমিওপ্যাথী কে চিকিৎসা মনে করেন। এই স্তরের বেকুবদের নিয়ে মনীষীদের মাঝে সঙ্গত কারণেই কোনো আগ্রহ নাই – আমি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু তাদের কী নামে ডাকা উচিত এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কনসেন্সাস থাকা উচিত। আপনারা জানেন যে সিম্পলটনরা খুবই এনডিয়ারিং হয় – ভোলাভালা তো – তাই। বোকচোদ শব্দটার মধ্যে এক ধরণের রাগজনিত তেজস্বী ভাব আছে বলে আমি তা পরিহার করি – আপনারা বোকাচোদা বলতে পারেন। বোকা – চোদা: খেয়াল করুন যে এর শাব্দিক ছন্দময়তা ও অন্ত্যানুপ্রাস এক ধরনের কোমলতার দ্যোতনা দেয়। হৃদয়ে লঘু রসের সঞ্চার হয় কোনো ধরণের জিঘাংসা কিংবা বিরক্তি ছাড়া, ঠিক যেন বন্ধুতা সৃষ্টির অজুহাত। ভালো লাগে। ঠিক যেন “জীবনচোদা”, আমাদের ছোটোবেলার বন্ধু জীবনকে দেয়া আমাদের অবিরত নাম। প্রথম শুনলে মনে হয় মুসলমানের ছোড়া তুচ্ছনাম হিন্দুকে। দ্বিতীয়বার ভাবলেই মাথায় আসে আরে মনা এতো গালাগাল না – টুপি খোলা সম্ভাষণ – অকৃত্রিম Nihilist অভিবাদন। জীবনচোদা – আহ! হৃদয় নিংড়ানো এপ্রিসিয়েশান। এ তো নিখাদ প্রেম।
আমি লক্ষ্য করেছি যে সমাজের বেশীরভাগ মানুষ এই লেখকের মতো অশ্লীলশব্দপটিয়সী নন। শিক্ষিত হওয়ার কারণে ও শিক্ষিত থাকার তাগিদে তারা যেসব শব্দান্তে ‘চোদা’ আছে সেগুলো পরিহার করতে আগ্রহী। বোকাচোদার পরিবর্তে ভক্সদ ব্যবহার করলে তাদের অপরাধবোধ হ্রাস হবে বলে আমার অনুমান। এতে মূল শব্দের সততা ও সাবলীলতা অনেকটাই হারিয়ে যায় পরিণামদর্শিতার যাঁতাকলে – অকপটতাকে, বাঙালি সৌন্দর্য জ্ঞান করেছে, এমন অপবাদ দিতে পারবে না কোনো চুদির ভাই – তবু অন্তত শব্দের স্পিরিটটি বেঁচে থাকুক পর্যাপ্ত বিকৃতির মাঝে।
আরো একটি কারণে আমার এই প্রস্তাব।
বোকাচোদাকে বোকাচোদা হিসাবে চিহ্নিত করার মাঝে যে সাবলাইম হাহাকার ও বিষাদময় আনন্দ – উভয় থেকেই আমার প্রিয় – নারীজাতি (বাঙালি) মাহরুম। অশ্লীলতার অভিযোগে এসব আতরাফ শব্দ প্রয়োগ করতে তারা অক্ষমায়িত। তদুপরি বাংলা ভাষার ভোদাইমুখ শব্দসম্ভার অত্যন্ত সেক্সিস্ট। আমাদের জাতীয় জীবনে অসংখ্য নারী বলদামির যে থ্রেশহোল্ড তা স্পর্শ করার প্রমাণ রেখে যাচ্ছেন নিরন্তর, কিন্তু তাদেরকে নির্দিষ্ট করা দায় – যেহেতু প্রায় সব শব্দই পুরুষবাচক। এই কুসংস্কার থেকে মুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
অতঃপর বিশেষ্য হিসেবে ‘ভক্সদ’ কে অভিষিক্ত করা হোলো। আপনারা নিজদোষে একে সমাদৃত করবেন – আশা করি।
গুরু উমবের্তো বর্তে যান বলদামির দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রকার বিধৃত করায়। তার বিচারে দ্বিতীয় দলে আছে “fool” – মানে উজবুক। গবেটও বলতে পারেন। বহুব্রীহি নাটকে ডাক্তার আফজাল হোসেনের মতো – বিদ্যাধর কিন্তু মেয়েরা কাছে আসলেই মাথা নষ্ট হয়ে যায়। এদেরকে তিনি নির্দিষ্ট করছেন মূলত সোশাল ইন্টেলিজেন্স না থাকার ফলাফল হিসেবে। যেমন ধরুন আপনি একটি রাজনৈতিক দলের মহাসচিব ও আপনার একটি ফেইসবুক একাউন্ট আছে। আপনি প্রতি দুই দিন পর পর একই ধরনের আটতিরিশখানা ছবি আপলোড করেন। আপনি ভাবছেন যে আপনার অনেক ঘড়ি আছে, নানান রঙের পেঙ্গুইন কোট আছে, এগুলো সবাইকে দেখালে খুব ‘কুল’ হবে। উমবের্তো বলবেন যে সোশাল ইন্টেলিজেন্স না থাকার কারণে আপনি জানেনই না কোথায় কীভাবে এক্ট করতে হয়। তাই আপনি উজবুক।
তৃতীয় দলের বলদদের বুঝতে পারাটা কঠিন – গুরু বলছেন। এরা শুরু করে যুক্তি দিয়েই। কোথায় যেন সব গুবলেট করে ফেলে। আপনি বুঝতে পারেন কোথায় যেন ভুল আছে, কিন্তু ঠিক ভাষায় জানাতে পারেন না। স্টুপিড পিপল দেখবেন সাধারণত আইডিয়ালিস্ট হয়, তারা প্রচুর বইয়ের নাম জানে – পড়েও – কিন্তু কাণ্ডজ্ঞান না থাকার কারণে তারা খেই হারিয়ে ফেলে।
যেমন ধরুন এমেরিকার সম্পদ-বৈষম্য। কোনো সন্দেহ নাই যে এই ধন-বৈষম্য কুৎসিত ও সরকারের উচিৎ অতিধনীদের বেশী করে ট্যাক্স করা কারণ এমেরিকার অতিধনীরা ট্যাক্স দেন লজ্জাজনক কম।। এখানে কোনো যদি-কিন্তু নেই এবং এতোটুকুনে রাজী হবেন না এমন কাউকে আমি প্রায় দেখিই না। কিন্তু লিবরেল জজবায় গোসল করে এসে স্টুপিড আইডিয়ালিস্ট আপনাকে চ্যালেঞ্জ করে বসবে – অতি ধনীদের ৯০% কিংবা তার চেয়েও বেশী রেইটে ওয়েলথ ট্যাক্স বসানো উচিত কারণ পৃথিবীতে কোনো বিলিওনিয়ার থাকা উচিত না। জেফ বেজোকে না হয় আপনি নন-বিলিওনিয়ার বানিয়ে ফেললেন পিউনিটিভ ওয়েলথ ট্যাক্স প্রয়োগ করে – বুঝলাম। কিন্তু এর পরের সম্ভাব্য বিলিওনিয়ারটির কী হবে। তার তো কোনো ঠেকা পড়ে নাই ৯০% ওয়েলথ ট্যাক্স দেয়ার। সে হয় অন্য দেশে গিয়ে ব্যবসা করবে (যেমন চায়নায় গিয়ে), নয়তো ব্যবসায় ঢুকবেই না। বুঝলাম এতে আপনার ইগো – ভালো কাজ করছি এই মর্মে প্রশমিত হবে কিন্তু আপনার দেশের কি কোনো লাভ হবে? সবাই একই রকম গরীব হলে ধনবৈষম্য কমবে সত্য – কিন্তু এইভাবে শ্রেণীহীন হওয়াটা মনে হয় অর্থহীন। এই কাণ্ডজ্ঞানটা মাছিমারা কেরানীর আছে – কিন্তু স্টুপিড আইডিয়ালিস্টের নাই।
ঠিক এইখানে এসে গুস্তাভ ফ্লোবেয়ারকে যদি আমরা স্মরণ না করি – অন্যায় হয়ে যাবে। বলদামি বিষয়ে এতো ঘায়েল, এতো মস্তিষ্কভেদী, এতো বিস্তারিত আলোচনা করার দুঃসাহস আর কেউ দেখান নি। ইন ফ্যাক্ট, উমবের্তো যে বলদামির শ্রেণীবিন্যাস ফ্লোবেয়ার থেকে ধার করেছেন সেটা অস্বীকার করেন নি। ফ্লোবেয়ার বলদদের ব্যাপারে একেবারে আকরিক বৈশিষ্ট্যটি অকপটে লিখে গিয়েছেন যে “Stupidity lies in wanting to draw conclusions”। কী আশ্চর্য আপনাদের প্রিয় দুঃসহ লেখক যখন ফ্লোবেয়ার পড়ে নি তখন ঠিক একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলো (দ্রষ্টব্যঃ পিতা কন্যাকে)। বাস্তবিকই – বলদরা সব ব্যাপারে সব সময় খুব দ্রুত “নিশ্চয়তায়” উপনীত হতে পারে দেখেই তো তারা বলদ। ফ্লোবেয়ার অজ্ঞতা, ভুলভ্রান্তি ও অবহেলার সাথে বলদামির সীমারেখা টেনে দিচ্ছেন। তা কোথায় সে সীমারেখা? বলদামি ইস্পাত কঠিন – এর মধ্যে দেখবেন যে প্রমাণ, যুক্তি, বিচার, বিবেক – কিচ্ছু ঢুকতে পারে না – বিশ্বাসের প্রাবল্যে। বলদরা প্যাটার্ন রেকগনাইজ করে যেখানে আদতে কোনোই প্যাটার্ন নেই। তারা একটি মানুষ দেখে – যেমন ইয়াহইয়া বা মোদীকে দেখে যথাক্রমে পাকিস্তান ও ভারতের সব মানুষকে চিনে ফেলে।
ফ্লোবেয়ার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য করছেন যে fool এর সোশাল ইন্টেলিজেন্স নাই কিন্তু জ্ঞান থাকতে পারে (যেমন য়ুনিভার্সিটি প্রফেসর যে ভুলে লুঙ্গি পরে বিয়ে বাড়ীতে চলে গেলো – তার ভাষায় scholastic)। আবার stupid, সোশাল ইন্টেলিজেন্সে টইটম্বুর হতে পারে কিন্তু মাথায় নেই কোনো বুদ্ধি (man of world)।
তিনি উনবিংশ শতকের মধ্যভাগের মানুষ। ফ্রেঞ্চ রেভোলিউশান তখনও বলা চলে তরতাজা। ফ্রেঞ্চ রেভোলিউশানের ক্রিটিক করতে হলে এডমান্ড বার্ক অবশ্যপাঠ্য (বার্ক বলছেন যে ফ্রেঞ্চ রেভোলিউশান, ফ্রেঞ্চ সমাজব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে) কিন্তু ফ্রেঞ্চ রেভোলিউশান থেকে চাঙ্গা হওয়া এনলাইটেনমেন্ট প্রোজেক্ট দিয়ে পৃথিবী বদলে দেবো – এই জজবা নিয়ে ফাজলামি করার সমসাময়িক লেখক আমি পাই নি। আমার কালে পশ্চিমে হাটে-ঘাটে এই একই জজবা উৎলে উঠছে – সেই জন্যেই মূলত – ফ্লোবেয়ার খুবই প্রাসঙ্গিক। Bouvard and Pecuchet পড়তে গিয়ে আমার মনে হয়েছে – এই বইয়ের পাতায় পাতায় আমি আছি। সমাজ ও সময় বদলে যাওয়ার কারণে অনেক কিছুই ঠাওর করা যায় না সত্য কিন্তু এমন ড্ৰাই-হিউমারওলা ফিকশান রাইটার ঐসময়ে কমই ছিলেন।
খাপে খাপ – মমতাইজ্যার বাপ: আমি জানি ফ্লোবেয়ার-উমবের্তোর শ্রেণীবিন্যাসে আপনি আমোদিত। এমন মোক্ষম দিকবিচার আর হয়ই না।
ধীরে ম্যান!
উমবের্তো তুখা – সন্দেহ কি তায়? তবে বলদামির যে মর্মশাস ঠিক সেই জায়গাটায় কিন্তু উমবের্তো ছোবল দিতে পারে নি। দিয়েছে কে? আরেক ইটালিয়ান। কার্লো এম চিপোল্লা। তিনি একখানা প্রবন্ধ লিখেছিলেন “The Basic Laws of Human Stupidity” শিরোনামে। বলদামি বিষয়ে এমন অন্তর্ভেদী ও ত্রিকালদর্শী রচনা পৃথিবীতে আর দুইটি নেই। তিনি বলদামির মোট ৫টি যুগান্তকারী মূলধারা দিয়েছেন। তবে তার আগে চিপোল্লার মতে পৃথিবীতে যে ৪ প্রকার মানুষ আছে সেটা জেনে নেয়া প্রয়োজন।
১) উপায়হীন:
ধরুন আপনি এমন একটা কাজ করলেন যে আরেকজনের লাভ হোলো কিন্তু আপনার হোলো ক্ষতি। যেমন যদু গরীব – সে তার গরুটি বাজার দামের চাইতে অনেক কমে মধুর কাছে বিক্রি করে দিলো কারণ ঘরে খাওয়ার কিছু নেই। মধু গরু বিক্রি করে লাভবান হোলো। যদু এক্ষেত্রে হোলো উপায়হীন (Helpless)।
২) চাল্লুবান্টি:
যেমন যদুর এক খানা বাছুর ছিলো। সে বাছুরকে মোটাতাজা করে বড় করলো, বিক্রি করলো মধুর কাছে – বাজার দামে, লাভ সহকারে। মধুও মোটাতাজা গরু বাজারে গিয়ে বিক্রি করে লাভ করলো। এক্ষেত্রে যদু ও মধু উভয়ই লাভবান – যদু হোলো চাল্লুবান্টি (Intelligent)।
৩) বোকাচোদা বা গাণ্ডু:
মধুর একটা গরু আছে। গরুটার যেন কোভিড না হয় সে লক্ষ্যে যদু, কাউকে না জানিয়ে রাতের বেলা চুপি চুপি পাশের বাড়ীতে গিয়ে মধুর গরুকে প্রচুর হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট খাইয়ে মেরে ফেললো। এক্ষেত্রে যদু, মধুর ক্ষতি করলো কিন্তু এই ক্ষতি থেকে যদু নিজে কোনো লাভ করতে পারলো না। এক্ষেত্রে যদুকে আমরা বলবে বোকাচোদা বা গাণ্ডু (Stupid)।
৪) ছাত্রলীগ:
মধুর একটা গরু আছে। যদু, মধুর গরুটি নিয়ে নিলো এবং খেয়ে ফেললো। এক্ষেত্রে যদুর লাভ হোলো কিন্তু মধুর হোলো ক্ষতি। আমরা বলবো যে যদু হোলো ছাত্রলীগ (Bandit)।
দেখুন যে চিপোল্লার শ্রেণীবিন্যাস কিন্তু শুধু লাভ ও ক্ষতিকে কেন্দ্র করে । তিনি কিন্তু “ইনটেন্ট”কে কোনো মর্যাদাই দিলেন না। আর “কনফিডেন্স”কে ধর্তব্যেই আনলেন না। উপরের তিন নম্বর উদাহরণটি আরেকবার খেয়াল করুন। ধরা যাক যে উক্ত উদাহরণের যদুর পিএইচডি আছে কিংবা যদু একজন ক্লিনিশিয়ান। সেক্ষেত্রে যদু যে আত্মবিশ্বাস সহকারে গরুকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট খাওয়াবে সে আত্মবিশ্বাস কিন্তু পরবর্তীতে সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়বে এবং এই ধারণার উদ্ভব হবে যে গরুটি যে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেটে মারা গেলো – এটা বুঝি গরুরই দোষ। এক্ষেত্রে যদু যে বোকাচোদা – সে উপসংহারে আমরা আসতেই পারি – অবশ্যই আসবো – কিন্তু আত্মবিশ্বাসের প্রাবল্য যে যদুকে একটু অন্য ধরনের বোকাচোদায় পর্যবসিত করছে এই দিকটা কিন্তু অনেকেই খেয়াল করবেন না। য়ুনিভার্সিটি ডিগ্রি ও আত্মবিশ্বাসের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির কারণে বলদামির ফলাফল সুদূরপ্রসারী হয়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে আমরা এই কনসেনসাসে আসতেই পারি যে য়ুনিভার্সিটি ডিগ্রীর আতিশয্যে যে বলদ আত্মবিশ্বাসী, তিনি হলেন গাণ্ডু। আর যে বলদ তার কৃতকর্মের ব্যাপারে সন্দিহান তিনি হলেন বোকচোদ। আপনাদের প্রিয় লেখক নাসিম তালেব গাণ্ডুদেরকেই IYI (ইন্টেলেকচুয়াল য়েট ইডিয়েট) নাম দিয়েছেন।
অনুরূপ “ইনটেন্ট”ও বলদামি সম্পাদনে একটি গুরুতর ভ্যারিয়েবল – হয়তো আপনি খেয়াল করেন নি।
চিপোল্লা মনে করবেন যে যদু অনেক রাতে লুকিয়ে মধুর বাড়ীর গোয়াল ঘরে যাচ্ছে। কতো ঝুঁকি! গরু উত্তেজিত হয়ে লাথি মারতে পারে, ক্ষুধার্ত বাছুর যদুকে নিজের মা মনে করে বসলে অত্যন্ত করুণ পরিণতির ঝুঁকি আছে, আবার মধুও চোর মনে করে যদুকে পেটাতে পারে। যদুর যে চিন্তা পদ্ধতি – সে অনুযায়ী একমাত্র সম্ভাব্য লাভ হোলো কোভিড থেকে গোরক্ষা। সামান্য গরুর মঙ্গলে যে এতোটা উতলা তার উদ্দেশ্যের ব্যাখ্যা হতে পারে সহজাত মহত্ত্ব অথবা সে মোদীভক্ত সংঘী।
দেখুন চিপোল্লা যেহেতু বাঙালি নন সেহেতু তার মাথায় এ ধরণের ভ্রান্তি চাগিয়ে ওঠাটাই স্বাভাবিক। একজন বাঙালিই শুধু – সত্যি বলছি, শুধুমাত্র একজন বাঙালিই পারবে বুঝতে যে যদু আসলে নানান কারণে ও হরেক উদ্দেশ্যে মধুর গোয়ালঘরে ঢুকতে পারে রাতের বেলায়। একজন দগ্ধ বাঙালি হিসেবে নিম্নলিখিত চারটি সম্ভাব্য কারণ পেশ করে আমি আপনাকে সমৃদ্ধ করবো।
১. এমন অনেক যদু আছে যারা কোনো কারণ ছাড়া, কোনো চিন্তা না করে শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র “মনে হওয়ার” প্রেক্ষিতে (মানে কাজটি করা যায়) গোয়ালঘরে ঢুকে পড়বে মধুর গরুর জন্যে। উমবের্তো ঠিক এদেরকেই সিম্পলটন বলেছেন।
২. টিভি দেখে যদুর মনে প্রশ্ন জেগেছে আচ্ছা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট খেলে কি পেশাব হলুদ হয় ? এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটির ফয়সালার জন্য যদু অনায়াসে গরুকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট খাওয়াতে পারে।
৩. ট্রাম্পের ওপর তার অনেক অভিমান – ট্রাম্প কেন আগামী এলেকশানে জিতবে – সেই রাগেও যদু গরুকে ট্যাবলেট খাওয়াতে পারে।
৪. অত্যন্ত মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েও যদু এই ট্যাবলেটবাজি করতে পারে, যা আপনার কগনিশান ও কল্পনার বাইরে। যেমন আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে যদুর মাথায় একটা মহৎ বুদ্ধির সঞ্চার হয়েছে যে মধুর গরুকে একশ ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর সেই দুধ যারাই খাবে তাদের সবার শরীরেই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ঢুকে যাবে এবং মাত্র একটি গরু থেকে তার এলাকার শত শত মানুষ কোভিড মুক্ত হয়ে যাবে। আপনারা জানেন যে প্রত্যেক বাঙালি জন্ম থেকেই ঐকিক নিয়মে প্রচণ্ড তাগড়া হয়।
সুতরাং আপনি বুঝে ফেললেন যে চিপোল্লার ক্লাসিফিকেশানে “ইনটেন্ট” বিষয়টাকে যথাযথ গুরুত্ব না দেয়ায় বাঙালি বোকাচোদাদের সাড়ম্বর বৈচিত্র সবসময় নির্দিষ্ট করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে আপনাদের প্রিয় লেখক ফাহাম আব্দুস সালাম, বৈপ্লবিক “চুতিয়া-চোদনা কন্টিনিউয়াম” ব্যবহার করে থাকেন, যা আপনাদের কাজে আসতে বাধ্য। তার মতে, বোকাচোদা যখন ব্যাড ভাইবস এ ঋদ্ধ তখন সে চুতিয়া আর যখন সে গুড ভাইবসএ আক্রান্ত তখন সে চোদনা। নীচে তা চিত্রিত হোলো।
শুধু তাই না, মহান গাণ্ডু লাকাঁ আপনার য়ে – মানে ডিং ডং এর গাণিতিক এক্সপ্রেশান জানাচ্ছেন Penis = =√-1 এই সমীকরণ দিয়ে। আপনাদের যাদের য়ে মানে ডিং ডং নেই; মানে আমার পাঠিকারা – আপনাদের পেনিস এনভির গাণিতিক মান এক্ষেত্রে হোলো -1 । লাকাঁর মতে।
যেকোনো বিষয়কে গণিতবদ্ধ করার এই বলদামি আমি লক্ষ্য করেছি যে অত্যন্ত ফলদায়ক। জায়গা-বেজায়গায় একটা সিগময়ডিয়াল কার্ভ এঁকে কিছু সমীকরণ লিখে দিলেই সব সত্যি মনে হয়। আমিও লাকাঁ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বলদামির মান নির্ণয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমীকরণ লিখে ফেললাম কনফিডেন্স (C) কে X এবং ইনটেন্ট (I) কে Y axis এ রেখে। আশা করছি আমার বুলশীট একোয়েশান, গণিতের ইতিহাসে বলদামির মাইলফলক হিসেবে টিকে থাকবে। নীচে তা বিস্তৃত হোলো:
এবার আসুন আমরা বলদামির যে ৫টি মূল সূত্র আছে সেগুলো আলোচনা করি। বলদামির প্রথম ল হোলো “Always and inevitably everyone underestimates the number of stupid individuals in circulation.” বলদামির প্রথম সূত্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চিপোল্লা আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে যাকে আপনি আগে যাকে বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ মনে করেছিলেন হঠাৎই আপনি আবিষ্কার করবেন যে সে আসলে নির্ভেজাল গাণ্ডু। তিনি আরো বলছেন যে কোনো সংখ্যা দিয়ে সমাজে সচল গাণ্ডুদের প্রাক্কলন সম্ভব না কারণ যেই সংখ্যাই তিনি আরোপ করুন না কেন সেটা আন্ডারএস্টিমেশান হবে।
দ্বিতীয় ল বলছে: “The probability that a certain person be stupid is independent of any other characteristic of that person.” শুধু এই একটি সূত্রের জন্যই চিপোল্লা অমরত্ব লাভ করেছেন। খেয়াল করুন যে তিনি বলছেন এক অতিপ্রাকৃত চক্রান্তে প্রকৃতি, মনুষ্য সমাজে গাণ্ডু পিপলের অনুপাত নিয়ন্ত্রণ করে। আহ! লাজওয়াব! একেই বলে প্রজ্ঞা আর সাহসের যুগলবন্দী। তিনি বলছেন যে নোবেল লরিয়েটদের মধ্যে আপনি যে রেশিয়োতে গাণ্ডু পাবেন সে একই রেশিয়োতে গাণ্ডু পাবেন – ধরেন মিলিটারিতে বা একাডিমিয়ায়। কারণ আপনার পিএইচডি, নোবেল পাওয়া বা জেনারেল (মেজর অথবা মাইনর) হওয়াটা এই নিশ্চয়তা দিতে পারে না যে আপনি গাণ্ডু নন। এই কথা বলতে সাহস লাগে রে ভাই! প্রমাণ হিসেবে আমি ২০১৩ সালের রসায়নে নোবেল প্রাপ্ত মাইকেল লেভিটের কথা বলতে পারি। এই ভদ্রলোক ২০২০ এর ২০শে মার্চ জানাচ্ছেন যে কোভিডের সংক্রমণ কমে আসছে এবংএই প্যানডেমিক শেষের পথে। দেখুন যে তার এই আশাবাদে তার নিজের কোনো লাভই হোলো না অথচ ইজরেলের কেউ কেউ হয়তো তার আশ্বাসবাণীতে ডগমগ হয়ে বীচে গিয়ে অসুখটা ধরিয়ে নিয়ে এসেছিলো। অর্থাৎ লেভিট অন্যের ক্ষতি করলেন কিন্তু নিজের লাভ হোলো না। তাই তিনি গাণ্ডু।
সারা পৃথিবীর মানুষ যে এখনো শর্দি-কাশি হোলে প্রচুর ভিটামিন সি খায় – এটা মূলত এক ব্যক্তির অন্ধবিশ্বাসের কারণে। মানুষটি যে কেউ না – পৃথিবীর একমাত্র নোবেল লরিয়েট যিনি দুবার এককভাবে নোবেল পেয়েছিলেন – প্রথমবার কেমিস্ট্রিতে, পরেরবার শান্তি। উত্তেজিত হয়ে আপনি বলে বসতে পারেন যে দুবারের নোবেল লরিয়েট লাইনাস পলিংও গাণ্ডু কারণ তিনি পৃথিবীর যাবতীয় শারীরিক সমস্যা এমন কি ক্যানসারের সমাধানও ভিটামিন সি’র মধ্যে পাওয়া যাবে বলে নসীহত করতেন। তিনি নিজে দিনে ১৮০০০ মিগ্রা ভিটামিন সি খেয়েছেন এবং অন্যদের দিনে ৩০০০ মিগ্রা পর্যন্ত খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যদিও স্বাভাবিক মানুষের দিনে ১০০ মিগ্রা ভিটামিন সি হলেই চলে।
দিনে ১৮০০০ মিগ্রা ভিটামিন সি খেলে কিন্তু আপনার কোনো ক্ষতি হয় না (আর্থিক ক্ষতি হয় কিন্তু সেটা অতি সামান্য – নেগলিজেবল )। কিন্তু এই যে গাঁজাখুরি গল্প পলিং বললেন বই লিখে – এর মাধ্যমে তিনি কিন্তু প্রচুর টাকা কামিয়েছেন। চিপোল্লার ক্লাসিফিকেশানে আপনার সামান্য ক্ষতি হোলো বটে – কিন্তু পলিং এর লাভ হয়েছে প্রচুর – সুতরাং তিনি ছাত্রলীগ। আবার আপনি তাকে চাল্লুবান্টিও বলতে পারেন কারণ তার পরামর্শে ভিটামিন সি খাওয়া শুরু করলে অন্তত দৈনিক ১০০ মিগ্রা তো আপনার কাজে লাগছে। সেক্ষেত্রে আপনার লাভ – তারও লাভ।
চিপোল্লার বিবেচনাবোধটি একবার খেয়াল করুন। তিনি বলছেন বলদামির দ্বিতীয় ল’টি হচ্ছে আয়রন ল – অর্থাৎ কোনো অবস্থাতেই এর কোনো ব্যত্যয় হবে না।
আপনি যেখানেই যান, যেই যুগেই যান – পৃথিবীতে ছেলে ও মেয়ের অনুপাত প্রায় ৫০:৫০ হবে এবং ছেলের সংখ্যা সামান্য বেশী হবে। চিপোল্লা বলছেন যে প্রকৃতি ঠিক একইভাবে সমাজে গাণ্ডুদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে। আমি কিন্তু এক্ষেত্রে চিপোল্লার সাথে একমত হতে পারলাম না। তিনি যে বাংলার দেশে কোনোদিনও যে আসেন নি তাই প্রমাণ করলেন। তিনি একটা জিনিস ভুলে যাচ্ছেন যে প্রকৃতি অনেক কিছুই করতে চায় কিন্তু প্রকৃতিও ক্লান্ত হয়, তার ক্ষমতারও সীমা-পরিসীমা আছে – নাকি?
আমার দেশে আসলে তিনি নির্ঘাৎ বলতেন যে আয়রন ল হোলো প্রথমটি – যেই নাম্বারই আপনি প্রস্তাব করুন – এর চেয়ে গাণ্ডু বেশী আছে।
তিনি বিখ্যাত হয়েছেন মূলত তৃতীয় বিধি দিয়ে। এই বিধি দিয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন গাণ্ডু কে? The third (and golden) basic law
A stupid person is a person who causes losses to another person or to a group of persons while himself deriving no gain and even possibly incurring losses. আমরা এ বিষয়ে যদু ও মধুর কর্মকাণ্ড ধর্তব্যে এনে বিস্তারিত আলোচনা ইতোমধ্যে করে ফেলেছি দেখে সরাসরি চতুর্থ ধারায় চলে যাচ্ছি।
Non-stupid people always underestimate the damaging power of stupid individuals. In particular non-stupid people constantly forget that at all times and places and under any circumstances to deal and/or associate with stupid people always turns out to be a costly mistake. এই বিধিটি বুঝতে হলে আমাদের আগে বুঝতে হবে ছাত্রলীগ কে? এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ধরুন ওপরের চতুর্থ উদাহরণে ছাত্রলীগ যদু,মধুর গরুটি নিয়ে গিয়ে নিজের গোয়াল ঘরে রেখে দিলো। এই ক্ষেত্রে মধুর ক্ষতি = যদুর লাভ। আপনার যতোই রাগ হোক, এক্ষেত্রে কিন্তু টেকনিকালি শুধুমাত্র ট্রান্সফার অফ ওয়েলথ হয়েছে। এবং ছাত্রলীগ কী করে, যেহেতু আপনি তা আগে থেকেই জানেন – এখানে কোনো ওয়াও ফ্যাক্টর নাই। অর্থাৎ ছাত্রলীগের ঐতিহ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মপদ্ধতি জানা থাকার কারণে আপনি কিন্তু যথাযথ প্রস্তুতি নিতে পারছেন।
জগতে এরকম পারফেক্ট ছাত্রলীগ কম। সাধারণত যে ঘটনাটা ঘটবে সেটা হোলো যদু, মধুর কাছে যাবে এবং বলবে যে তাকে এক কোটি টাকা দিতে হবে। মধু বলবে যে তার কাছে এক কোটি টাকা নেই। তারপর যদু, মধুর পা কেটে নিয়ে বিজয় মিছিল করবে ও যাওয়ার সময় মধুর পকেট থেকে পাঁচশ টাকা নিয়ে যাবে। এখন আপনিই বলুন মধুর পা’র মূল্য কি মাত্র পাঁচশ টাকা?
এটা কিন্তু ছাত্রলীগের একটা মৌলিক সমস্যা। তারা আরেকজনের অনেক ক্ষতি করছে কিন্তু নিজের যথেষ্ট লাভ হচ্ছে না (মধুর ক্ষতি > যদুর লাভ)। আমি বলবো যে যথাযথ দিকনির্দেশনার অভাবে তারা পারফেক্ট ব্যান্ডিট হয়ে উঠতে পারছে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।
তথাপি আপনি প্রস্তুত থাকতে পারছেন। যেকোনো রিজনেবল মানুষ, ছাত্রলীগের আচরণের যৌক্তিকতা অনুধাবন করতে পারে। আপনি যতোই গালিগালাজ করুন, ছাত্রলীগের আচরণ সম্পূর্ণ বোধগম্য ও প্রত্যাশিত। ফলত ছাত্রলীগ দেখামাত্র আপনি পালিয়ে যেতে পারছেন।
কিন্তু গাণ্ডুপিপলের ক্ষেত্রে এই প্রস্তুতি নেয়া যায় না। তারা আপনার ক্ষতি করবে কোনো কারণ ও যুক্তি ছাড়া। গাণ্ডু হুট করে এসে আপনার পা কেটে নিয়ে জয় বাংলা বলতে বলতে আনন্দ-মিছিল করবে কারণ আপনার বাবা পাকিস্তানে পড়াশোনা করেছেন ও পিটিভিতে উর্দুতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এক্ষেত্রে যখন আপনি বুঝবেন যে আপনি গাণ্ডু দ্বারা আক্রান্ত তখন দুটো ঘটনা ঘটবে বলে চিপোল্লার মত: ১. আপনি ঘটনার আকস্মিকতায় সম্পূর্ণ হতবিহ্বল হয়ে যাবেন এবং ২. আপনি বুঝেই উঠতে পারবেন না যে কীভাবে প্রত্যাঘাত করা যায় কারণ গাণ্ডুর আক্রমণ কোনো যৌক্তিকতার কাঠামো মানে না (তাছাড়া আপনার এখন একটা পাও নেই – পাল্টা ধাওয়া দেবেন কীভাবে)।
আপনি মনে করতে পারেন যে এরকম আক্রমণের শিকার শুধু উপায়হীনরাই হয়। মোটেই না। বুদ্ধিমান ও ছাত্রলীগও – সমানভাবে গাণ্ডু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে এবং ঠিক একই ধরনের ক্ষতির শিকার হতে পারে। যেমন ধরুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের এক কর্মী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আরেক ছাত্রকে হাতুড়ি পেটা করে পঙ্গু করে ফেলে। এই ঘটনায় হতবিহবল হয়ে ছাত্রলীগও অনুযোগ করেছে যে এই গাণ্ডু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন যে বুদ্ধিমান মানুষেরা প্রায়ই একটা ভুল করেন যে তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার কিংবা সাধারণ মহৎ উদ্দেশ্যে গাণ্ডুদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। চিপোল্লা বলছেন যে এধরণের কর্মপদ্ধতি সর্বাত্মকভাবে বিপর্যয়কর কারণ ১. বুদ্ধিমানরা বলদামির মূল বৈশিষ্ট্য বুঝতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হন এবং ২. গাণ্ডু পিপল তাদের প্রতিভা প্রদর্শনের অবারিত সুযোগ পান। উদাহরণ হিসেবে বিএনপি কর্তৃক লুৎফুজ্জামান বাবরকে কাজে লাগানো এবং RAB প্রতিষ্ঠার কথা স্মরণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।
আমি মনে করি যে চিপোল্লার প্রজ্ঞা এতোটাই বুলান্দ যে শুধুমাত্র ঐশ্বরিক মাপকাঠিতেই সঠিক বলতে হয় যখন তিনি বলেন যে বুদ্ধিমান মানুষেরা সবসময় গাণ্ডুদের ক্ষতি করার সক্ষমতাকে আন্ডারএস্টিমেট করে। সভ্যতার ইতিহাস যে আসলে একটা লম্বা ট্র্যাজি-কমেডী – তার কারণও এই আন্ডারএস্টিমেশান – আমার অনুমান।
পঞ্চম বিধানে এসে তিনি আসল কথাটা ছেড়ে দিলেন।
A stupid person is the most dangerous type of person. A stupid person is more dangerous than a bandit.
তিনি আপনাকে ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধার (মাইক্রো ডোমেইন) উপরে উঠে সামাজিক বা রাষ্টীয় কল্যাণের (ম্যাক্রো ডোমেইন) কথা বিবেচনা করতে বলছেন। কল্পনা করুন যে সংসারে সবাই পারফেক্ট ছাত্রলীগ। এক্ষেত্রে এ ওকে ঠ্যাক দিবে – ও একে ঠ্যাক দিবে। এক্ষেত্রে অবিরত ওয়েলথ ট্রান্সফার ঘটতে থাকবে। অনেকে ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিন্তু সামষ্টিকভাবে সমাজে তার প্রভাব হবে কম – কারণ আপনার এক কোটি টাকা এক কোটি টাকাই থাকবে – শুধু সেটা পেঙ্গুইন কোটে ঢুকে যাবে।
এর মধ্যে আপনি একটা গাণ্ডুকে ঢুকিয়ে দেন সে বলবে, আসুন আমরা মুজিববর্ষ করি – সে বলবে “যতোক্ষণ বুখে আছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা – ততোক্ষণ গলায় ঢুকবে কুন বালের কোরোনা?” তারপর সে কোটি কোটি টাকা দিয়ে লেজারম্যান বানাবে, মুজিবের ব্যানারে রাস্তাঘাট ঢেকে দিবে আর যখন কোভিডের প্রসঙ্গ আসবে সে বলবে, “এই বালের ভাইরাস ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে টিকতেই পারবে না।” এটাই হচ্ছে গাণ্ডুতার আকরিক বৈশিষ্ট্য। যেহেতু মুজিবশতবর্ষ একশ বছরে একবার আসে এই যুক্তিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকাকে বিপদে ফেলাটাকে সে গ্রহণযোগ্য মনে করে। কারণ সে ভিন্ন ভিন্ন বিচিত্র আনরিলেটেড জিনিস মাপবে একই য়ার্ডস্টিক দিয়ে। সে বলবে, তিন গ্লাস সূর্যালোক থেকে এক গ্লাস জোসনা বেশী মনোহরী কিংবা তার নিজের জীবন থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দশ ভরি বেশী মূল্যবান। আপনি বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবেন আর সে বুক ফুলিয়ে বলবে “এটাই সাইন্স”।
গাণ্ডু আপনার এমন ক্ষতি করবে যা ছাত্রলীগও পারবে না কারণ ঐ যে বললাম ছাত্রলীগকে আটকানোর রাস্তা আপনার জানা, অন্তত পালাতে পারবেন। কিন্তু গাণ্ডুকে কোনো বাঁধ দিয়ে আপনি আটকাতে পারবেন না। বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাস পড়াশোনা করে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে তিন গাণ্ডু একত্র হলে তাদের বলদামি আপনি যোগফলে মাপতে পারবেন না, মাপতে হবে গুণফল দিয়ে। এটাও বলদামির আকরিক বৈশিষ্ট্য।
অনেকেই বলদামিকে জ্ঞানের বা বুদ্ধিমত্তার বিপরীত হিসেবে ধারণা করেন। যদিও কোনো বাঙালির এই ভুল হওয়ার কোনো যৌক্তিকতাই নেই – তবু এই ভ্রান্তি সমাজে খুবই জনপ্রিয়। বস্তুত গাণ্ডুতা একমেবাদ্বিতীয়ম। এর সাথে জগতের কোনো বিশ্বাস ও ধারণার বৈপরীত্য হয় না। জ্ঞান বা বুদ্ধিমত্তার বিপরীত হোলো অজ্ঞানতা – গাণ্ডুতা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। না-জানা-মানুষ কিছুই করবে না। তাদের অক্ষমতাজনিত ক্ষতি, লিনিয়ার প্রোগ্রেশানে আগায়। আপনি জানেন যে আপনার অফিসের সিম্পলটন ভোন্দার মতো তাকিয়ে থাকে, কোনো কাজ করে না। তার অক্ষমতাজনিত ক্ষতি কতোটা হবে – আপনি পুরোপুরি ওয়াকেফ। কিন্তু গাণ্ডুর দ্বারা আপনার ক্ষতি হবে লগারিদমিক স্কেইলে। কারণ গাণ্ডু খুবই উদ্যোমী, সে ব্যস্ত, সবসময় কিছু করতে চায়। না জানাকে কোনো কিছু করা বা ঐ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার পেছনে কোনো প্রতিবন্ধকতাই মনে করে না সে। শুধু নিজের অজ্ঞতা ছাড়া পৃথিবীর সব ব্যাপারে সে নিশ্চিত। সে তার অজ্ঞতাকে কম্পেনসেইট করতে চায় বজ্রকঠিন কনভিকশান দিয়ে। যেহেতু তার “মনটা ভালো” – সেহেতু সে সব কিছু করার অধিকার রাখে।
আপাত দৃষ্টিতে গাণ্ডুর ‘অস্থিরতা’ আপনার সামনে হাজির হবে ‘কৌতূহল’ হিসেবে। আপনি মনে করবেন যে ‘কৌতূহল’ যেহেতু বুদ্ধির সিঁড়ির প্রথম ধাপ সেহেতু পরিস্থিতি সম্ভাবনাময়। আপনি উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে আসবেন। যা আপনি জানতেও পারবেন না – এটাই ছিলো আপনার নিজের সর্বনাশের সিঁড়ির প্রথম ধাপ।
গাণ্ডুর ‘অস্থিরতা’ আর বুদ্ধিমানের ‘কৌতূহল’ দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস, ভাইডি!
ধরুন যে আপনি correlation ও causation এর পার্থক্য কী জানতে চান; গাণ্ডুও চায়। আপনি প্রথমে এক সেট ভ্যারিয়েবল কীভাবে আরেক সেট ভ্যারিয়েবলের সাথে সংযুক্ত তার ফান্ডামেন্টাল এজাম্পশনগুলো পরীক্ষা করছেন। এই কাজ করতে গিয়ে দেখলেন যে আপনি স্যাম্পল ডিস্ট্রিবিউশান ব্যাপারটা ভালোভাবে বুঝতে পারছেন না। কেউ আপনাকে সাহায্য করলো – আপনি আলাদাভাবে সেটা শিখলেন। দেখুন যে আপনার জানার যে ক্ষেত্র, সেখানে বিভিন্ন জায়গায় যে ফাঁকগুলো আছে সেগুলো ভরে ভরে প্রথমে আপনি একটা বডি অফ নলেজ তৈরী করলেন। তারপর correlation কীভাবে হয় সেটা বুঝবেন এবং কেন correlation হলেই যে causation হবে না সেই বিষয়টা এপ্রোচ করলেন। এক্ষেত্রে আপনার জার্নি হোলো অজ্ঞানতা > জ্ঞান > নতুন জ্ঞান সৃষ্টি (সবসময় না) অথবা জ্ঞানের এপ্লিকেশন।
গাণ্ডু বিষয়টা মোটেও এভাবে দেখে না। গাণ্ডুর জার্নি হোলো অজ্ঞানতা > জ্ঞানের এপ্লিকেশন। কীভাবে?
গাণ্ডু বলবে সে correlation ব্যাপারটা জানে না। তাকে আপনি প্রথমে এক সেট ইনফরমেশান দেখিয়ে বোঝাতে শুরু করলেন যে দেখো সমাজে অশিক্ষার পেছনে অনেকগুলো ভ্যারিয়েবল যেমন দারিদ্র্য, স্কুলের অভাব, শিক্ষকের অভাব এসব কিছুই কাজ করছে। এগুলো প্রত্যেকটাই, একটা প্যারামিটার অর্থাৎ ‘অশিক্ষা’ কে প্রভাবিত করছে – মানে দারিদ্র্য বাড়লে অশিক্ষা বাড়ে এবং দারিদ্র্য কমলে অশিক্ষাও কমে – কাজেই এরা কোরিলেটেড। বিষয়টা যেন সে আরো ভালোভাবে বোঝে সেজন্য আপনি আরেক সেট ডেটা বের করলেন। এখানে আপনি দেখাচ্ছেন যে মানুষের তৈরী জলবায়ু পরিবর্তনে কীভাবে অনেকগুলো ভ্যারিয়েবল যেমন কার্বন এমিশান, গাছ কাটা, কনজিউমারিজম – এসব কাজ করছে। এখানেও আপনি কোরিলেশান দেখিয়ে দিলেন ডেটা ধরে ধরে।
গাণ্ডু মাথা নাড়াবে – আপনি আশ্বস্ত হবেন কিন্তু সর্বনাশ যা হওয়ার ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। গাণ্ডু মনে মনে অশিক্ষার সাথে কার্বন এমিশান, গাছ কাটা, কনজিউমারিজম সব কিছুকে যুক্ত করে পত্রিকায় কলাম লিখে ফেলেছে। কারণ আপনি আপনার মনে যেই ফাঁকগুলো ইনফরমেশন দিয়ে ভরছিলেন, গাণ্ডু তার মনে সেই একই ফাঁকগুলো ভরছিলো তার আত্মবিশ্বাস দিয়ে।
শুধু তাই না – গাণ্ডু যেহেতু খুবই উদ্যোমী ও পৃথিবী বদলে দেয়ার জন্য উদগ্রীব সে ইতোমধ্যে সরকারের কাছে প্রোজেক্ট প্রোপোজাল জমা দিয়ে ফেলেছে কীভাবে কার্বন এমিশান কমিয়ে এনে জাতিকে শিক্ষিত করে ফেলবে। আগেই বলেছি যে তিন গাণ্ডুর বলদামি গুণফলে বাড়ে, যোগফলে না।
মন্ত্রী, সচিব ও সাধাসিধা উদ্যমী গাণ্ডু তিনজনে মিলে ব্যস – বাস্তবায়িত করে ফেললো সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি।
সতর্ক হোন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন – আমি আপনার অকৃত্রিম শুভাকাঙ্ক্ষী বলে শুধু এতোটুকু পরামর্শ দিয়েই ক্ষান্ত হবো – এমনটা ভাববেন না। গাণ্ডুদের মোকাবেলা করতে হোলে আপনার হোলিস্টিক এপ্রোচ নিতে হবে। আশ্চর্জনকভাবে ফ্লোবেয়ার, একো, চিপোল্লা – সবাইই এক্ষেত্রে নীরব। বুদ্ধিমান মানুষদের এটা একটা মৌলিক সমস্যা যে তারা গাণ্ডুদের তাচ্ছিল্য করে এবং শেষমেশ আক্রান্ত হয়। এবং এভাবেই সব দেশে সবখানে “সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি” চালু হয়। বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী মানুষরা মনে করে যে তারা তাদের অনন্ত বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়ে গাণ্ডুতা নিবারণ করবে। এভাবে হয় না রে পাগলা! গাণ্ডু তো বুদ্ধি না থাকার কারণে গাণ্ডু হয় নাই – হয়েছে অসীম জজবার কারণে। ডালিম কুমারের প্রাণ ডালিমের দানায় আর গাণ্ডুর প্রাণ তার অফুরন্ত উদ্যমে। ওখানেই আপনাকে ছোবল দিতে হবে – বাঁচতে হলে জানতে হবে।
গাণ্ডুতাকে মোকাবেলা করতে ফাহামের তিন বিধি:
১. কখনোই গাণ্ডুতা সারাতে যাবেন না – কারণ আপনি তা পারবেন না।
২. একজন গাণ্ডুর সাথে কখনোই এঙ্গেইজড হবেন না – সম্ভব হলে দৌড়ে পালিয়ে যান।
৩. কিন্তু দুইজন গাণ্ডুর মিলন হতে দেখলে যেভাবেই পারুন – এই মিলনকে রুখে দিন – মহাকালের ওয়াস্তে।
প্রথমেই বলেছি, গাণ্ডুদের মাঝে যেন কোনোভাবেই সংহতি গড়ে না ওঠে – সেদিকে চোখ রাখতে হবে। খুবই বিপজ্জনক। মহাকাল, আপনার অস্তিত্ব থেকে কেবল এই একটি দায়িত্বই কামনা করে। একে সম্মান করুন। গাণ্ডুর উদ্যমী শুভকামনার আগুনে জ্বলে-পুড়ে সব ছারখার হয়ে যাবে – নিশ্চিত থাকুন। গাণ্ডুদের এক হতে দেবেন না এবং একাধিক গাণ্ডুর মিলিত উদ্যমকে ‘আগুন’ হিসেবে ট্রীট করবেন। আপনার একমাত্র কাজ – এখানে পানি ঢেলে দেয়া। শেষবারের মতো বলছি – সব সময় মনে রাখবেন।
গাণ্ডুতা গুণফলে বাড়ে – যোগফলে না।
ওয়াটারকালার: ফাহাম
ফোটোশপ: এপোলো ভাই