০
৬৬৫ বার পঠিত
ভগবান, ঈশ্বর ও ব্রহ্ম
ভগবান, ঈশ্বর ও ব্রহ্ম এক নয়। শব্দগুলির অর্থের পার্থক্য আছে। এখানে বিষয়টি খুব সংক্ষেপে বলব। আজকাল কিছু কিছু স্বঘোষিত মুক্তমনা ব্যক্তি এই শব্দগুলি নিয়ে খুবই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছেন, যা বিরক্তিকর এবং যুক্তিবাদী আন্দোলনের পক্ষে ক্ষতিকারক।যেমন ওরা বলেন ভগ মানে যোনি, তাহলে ভগবান মানে ‘যোনিবান’। কেউ কেউ বলেন যে, তাহলে ভগবান মানে তো মেয়েদেরই বুঝতে হবে। প্রকৃতপক্ষে ভগবান শব্দে ভগ মানে স্ত্রীযোনি (vagina) বুঝলে হবে না। ভগ শব্দের আরও অনেকগুলি অর্থ আছে। এখন পদ্যাভিধান ‘বর্ণসঙ্গীত’ থেকে ‘ভগবান’ পদাবলী উদ্ধৃত ক’রে ভগবান শব্দের ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক অর্থ ব্যাখ্যা করছি। ঈশ্বর ও ব্রহ্ম শব্দের অর্থ সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনাও এতে পাবেন। আস্তিক-নাস্তিক বিতর্কে এই শব্দগুলির ভিতরে প্রবেশ করা খুবই দরকারী।
ভগবান
ভগ মানে হল আত্মম্ভরি যেখানে গমন করে,
লিঙ্গ যেমতি যোনির ভিতরে যায় জননের তরে।
স্ত্রী যোনিতে হয় বীর্য্য নিষেক, উহা ভগ হয় তাই।
কারখানা করে পণ্য জনন, ভগর তুলনা পাই।
ভগ মানে জ্ঞান, ইচ্ছা, যত্ন, বীর্য্য প্রভৃতি হয়;
যার ভগ আছে লোকে মান করে তাকে ভগবান কয়।
ভগ দিয়ে কত ধনসম্পদ তিনি বানাইয়া যান,
ষড়ৈশ্বর্য্যবান হন যিনি তাঁকে বলি ভগবান।
নারীকেন্দ্রিক সমাজে ভগিনী ভগের মালিক হয়,
উৎপাদনের উপায়সমূহ উহাদের ভাগে রয়।
”ভগবান পদবাচ্য হলেও ওরা ভগবান নয়”,
তবু ভগিনীরা ভগবানদের পূর্ব্বসূরী যে হয়।
পিতৃতন্ত্র এলে পরে দেশে তবে ভগবান এল,
ধনসম্পদ হলে পরে তবে লোকে ভগবান হল।
কশ্য়প, ভৃগু আদি ভগবান এলেন প্রাচীন কালে,
সেই ধনীদের সম্মান করে লোকে ‘ভগবান’ বলে।
জগৎ কীভাবে সৃষ্টি হইল, ভাবিত প্রাচীন লোক;
এই জগতের মালিকানা নিয়ে উহারা করেনি শোক।
সমাজের বুকে ব্যক্তিপুঁজি বা মালিকানা এলে পর,
দিনদুনিয়ার মালিক আসিল, এল জগদীশ্বর।
ভগবান আর ঈশ্বর দুই কথা ঠিক এক নয়,
তবে ভগবান প্রভু হয়ে গেলে তাকে ঈশ্বর কয়।
সবকিছু যদি তত্ত্বে মিলাও ব্রহ্ম বলিব তায়,
ভগবান আর ঈশ্বর তার অংশ হইয়া যায়।
ভগবান শব্দে ভ মানে আত্মম্ভরি, গ মানে গমন, ভগ মানে উৎপাদনের উপায় বুঝুন। এই নিয়মে ভগবান মানে উৎপাদনের উপায়সমূহের (যথা কারখানার) মালিক। ভগ মানে স্ত্রীযোনিও (vagina) হয়। ভগবানের ভগ ও ইংরেজী VAGina শব্দের VAG-এর অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক রয়েছে। ক্রিয়াভিত্তিক নিয়মে ভগ মানে কারখানা হতে পারে, সেক্ষেত্রে কারখানার মালিকরা ভগবান। কারখানা ও যোনির ক্রিয়াভিত্তিক মিল হল দুইই উৎপাদনের উপায় — কারখানা থেকে পণ্যদ্রব্য এবং যোনি থেকে সন্তান উৎপন্ন হয়। কাঁচামালে মেধাশ্রমের পুর দিয়ে উৎপন্ন দ্রব্যকে সন্তানের সঙ্গে তুলনা করা চলে।
এবার ঈশ্বর মানে বলি। ঈশ্বর মানে প্রভু, স্বামী, রাজা ইত্যাদি। পৃথিবীতে আগে এসেছে মানুষ, তারপরে ভগবান, তারপরে ঈশ্বর। ভগবান মানে ধনবান আর ঈশ্বর মানে প্রভু বলে দুই শব্দের অর্থ এক হয় না। তবে ধনবান যদি প্রভুগিরি করে তবে ভগবান মানে ঈশ্বর হতে পারে। অবশ্য শুধু অনেক টাকা হলেই কেউ ভগবান হয়ে যায় তা নয়। শাস্ত্র মতে ভগবান হতে হলে ঐশ্বর্য্য, বীর্য্য, যশঃ, সৌভাগ্য, জ্ঞান, বৈরাগ্য ইত্যাদি ষড়ৈশ্বর্য্য লাগে। আর ঈশ্বর মানে জগদীশ্বরও (জগতের স্রষ্টা ও নিয়ামক) হয়, তবে বাহ্য জগতে দৃশ্য জগদীশ্বর নাই। অবশ্য কেউ কেউ মনোজগতে জগদীশ্বরের ধারণা করতে পারেন বলে শোনা যায়, তবে সেটা খুবই শক্ত ব্যাপার।
এবার ব্রহ্মের কথা বলি। ব্রহ্ম মানে তত্ত্বজ্ঞান। এ হল ভগবান, ঈশ্বর এসবের চেয়ে আরো উচ্চমার্গের ব্যাপার। ইংরেজীতে একে বলতে পারেন theoretical knowledge। যিনি সেই জ্ঞান অর্জ্জন করেছেন তাঁকে ব্রহ্মজ্ঞানী বলে। যেমন ধরুণ আইনষ্টাই, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকুমার রায় — এরা হলেন গিয়ে ব্রহ্মজ্ঞানী বা ব্রাহ্মণ। এখানে পৈতার কোনো ব্য়াপার নাই।
যারা বলেন যে, ভগবান আছে প্রমাণ ক’রে দিলে ৫০,০০০ টাকা বা তদনুরূপ অর্থ প্রদান করবেন তারা এখন সেই অর্থ প্রদান করার জন্য আমার ইনবক্সে যোগাযোগ করতে পারেন। কম ক’রে দিলেও দিতে পারেন। আমি নরনারায়ণের সেবায় সেই টাকা খরচ করে দেব। ধন্যবাদ।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন