৭
১৪০০ বার পঠিত
ফরাসি কিছুই জানি না। অথচ কানাডার কয়েকটি প্রদেশে বিশেষত কুইবেক ও নিউ ব্রন্সউইকে ফরাসি ছাড়া চলা বেশ কষ্টকর; এবার কানাডার আটলান্টিক উপকূল সংলগ্ন প্রদেশগুলো বেড়াতে গিয়ে সেটা টের পেয়েছি।
কুইবেক প্রদেশ লাগোয়া পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট শহর ‘এডমন্সটন’। নিউ ব্রন্সউইকের এ শহরটি কুইবেকের মতোই ফরাসি ভাষাভাষী। ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট সব কিছুতেই ফরাসি-ছাপ। দোকানপাটে ফরাসিই চলে। তবে অনেকেই ইংরেজি জানে। ফলে আমার মতো ফরাসি ভাষায় গণ্ডমূর্খদের তেমন অসুবিধে নেই। তবে মাঝে মধ্যেই পরতে হয় চরম মুশকিলে। কখনো কখনো সেটা বেশ বিব্রতকরও বটে।
রাত ৯টায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ করেই একদিন কিছু দরকারি কেনাকাটার জন্যে ওয়ালমার্টে যেতে হলো। তখন ৯ টা বাজতে ৫মিনিট বাকী। দাম দিতে কাউন্টারের কাছে আসতেই দেখলাম এক অল্পবয়সী সেলসগার্ল কাউন্টারের বাইরে দাঁড়িয়ে আমাকে ফরাসিতে কিছু বলছে।
আমি ভাবলাম, অনেক কাউন্টারে আবার ক্যাশ নেয় না; মেয়েটি হয়তো সেটাই বলছে। আমি ইংরেজিতে বললাম, আই উইল পে ক্যাশ ( আমি ক্যাশ দিয়ে দাম দেবো )।
মেয়েটি স্মিত হেসে ইংরেজিতে বললো, আসলে আমি বলছি, তুমিই আমার লাস্ট কাস্টমার।
আমিও এক চোট হেসে নিলাম বোকার মতো। মেয়েটি বললো, প্রতিদিন দু’একজন শুধু ইংরেজি জানা কাস্টমার পাই।
আমি বললাম, আমাকে নিয়ে তিন-চারজন পেলে আজকে।
(২)
ছাত্রজীবনেও দেখেছি আমার বন্ধুরা যারা সারাক্ষণ ইংরেজি গান শোনে, তাদের কতোজন গানের কথা বোঝে বিশেষত র্যাপ গান, সেটা নিয়ে সন্দেহ ছিল। অনেককেই জিজ্ঞেস করে দেখেছি, বেশীরভাগ কিছুই বোঝে না অথচ সারাক্ষণ বোঝার ভান করছে।
এতবছর ইংরেজি ভাষাভাষী দেশে থেকেও আমার আজও ইংরেজি গানের কথা বোঝা হলো না। এবার দীর্ঘ ড্রাইভিং-এ ছেলে সারাক্ষণ কানে মাইক্রোফোন লাগিয়ে গান শুনছে। আমি বললাম, আমিও একটু শুনি। তবে কথা বুঝবো না অধিকাংশই। তবুও ঘুমের ঝিমুনিটা তো কেটে যাবে!
আমার ইংরেজি গান না-বোঝার স্বীকারোক্তি শুনে ছেলে একটু আশ্চর্যই হলো।
একটি গান অনেকক্ষণ বাজিয়ে দিয়ে বললো, বাবা, তোমার কী সব ইংরেজি গান এই ফরাসি গানের মতোই মনে হয়?
আমি বললাম, আরে, এটা তো আমি ইংরেজি গান মনে করেই এতোক্ষণ শুনছিলাম!
ছেলে হো হো করে হেসে উঠলো। ছেলে বুঝল, বাবার কাছে ইংরেজি আর ফরাসির মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। তবুও ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুনেই যেতে হচ্ছে তার বাবাকে। বেচারা! শেষমেষ বলল, ঠিক আছে তোমার রবীন্দ্রসংগীতই শোন।
(৩)
হ্যালিফ্যাক্স নোভা স্কোসিয়া প্রদেশের রাজধানী শহর। আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে অবস্থিত এ শহরটি বেশ পুরাতন। তাই পুরণো স্থাপত্যকলা শহরজুড়ে। তাছাড়া শহরের ডাউন টাউনের মধ্যে এতো সুন্দর করে সাজানো বিশাল উদ্যান অন্য কোথাও দেখা যায় না, কানাডার অন্য কোন শহরে তো নয়ই। যাই হোক, আজকের এ লেখা হ্যালিফ্যাক্স-এর সৌন্দর্য নিয়ে নয়; কিছু ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ।
আমার কলেজ জীবনের বন্ধু অমল থাকে হ্যালিফ্যাক্স-এ। টিলার উপরের বিশাল বাড়িতে ছেলে বউ আর এক কুকুর নিয়ে সাজানো ওদের পরিবার। এখানকার কুকুরগুলো যেরকম বাৎসল্যপরায়ণ হয়, অমলদের কুকুর ‘পাবলো’ও তেমনই। সারাক্ষণ পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ায় আশেপাশে। আদর চেয়ে সবার গায়ে গা লাগায়। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু আমি।
সেই ছোটবেলায় কুকুরের কামড়ের পর যন্ত্রণাদায়ক ইঞ্জেকশন নেয়ার স্মৃতি এখনো ঘুরেফিরে ওই বন্ধুবৎসল প্রাণীটির প্রতি ভয়াবহ ভয়ের উদ্রেক করে। তাই সচেতনভাবেই ‘পাবলো’কে এড়িয়ে চলি। কুকুরটিও সেটি বুঝে আমার কাছে আসার চেষ্টা করেনি একবারও। আশে পাশে ঘোরে, চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে তার প্রতি আমার মনোভাবের কোন পরিবর্তন হয়েছে কীনা।
তিনদিনের অবস্থানে আমার মনোভাবের তেমন পরিবর্তন হয়নি দেখে বেচারা একটু মনোক্ষুণ্ণই ছিল। সেটা বোঝা গেল ওদের ওখান থেকে ফিরে আসার আগের দিন বিকেলে। কুকুর নিয়ে হাঁটতে বেড়িয়েছি সবাই। একটু সুযোগ পেয়েই ‘পাবলো’ এমনভাবে আমাকে তাড়া করলো যে, আমি প্রাণভয়ে দৌঁড়ুচ্ছি। পেছনে পাবলো আর তাকে ধরার জন্যে অমলের স্ত্রী ও অমল। অনেক কষ্টে রক্ষা পেলাম।
পরে জানলাম, কুকুরটি তার স্বভাববিরুদ্ধভাবে এ তাড়াটি করেছে। বুঝলাম, দু’দিনে তার প্রতি যে অবজ্ঞা আর অবহেলা দেখিয়েছি, নিরীহ ও আত্মসচেতন প্রাণীটির মধ্যে একপ্রকার ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে আর তার বহিঃপ্রকাশই এটা।
বুঝলাম শুধু মুখের ভাষা নয়, ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যমই হলো অন্তর্গত মনোভাব ও সেটা বহিঃপ্রকাশের শারীরিক ভাষা। মানুষ তো বটেই- প্রাণীরাও বোঝে আমরা কে, কীভাবে- কার সাথে কীরকম মনোভাব নিয়ে চলছি-ফিরছি- দিনাতিপাত করছি।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন
আগস্ট ৮, ২০১৭; ১২:০৫ পূর্বাহ্ন
কিছুকিছু ইংরেজি গানের কথা বুঝতে পারি। সাবটাইটেল থাকলে আরও ভালো করে বুঝতে পারি।
আগস্ট ৮, ২০১৭; ১২:২৫ পূর্বাহ্ন
অনেক ইংরেজি গানের কথাই বোঝা যায় কিন্তু র্যাপ গানের কথা সাবটাইটেল ছাড়া অসাধ্য।।।
আগস্ট ৮, ২০১৭; ১০:০৫ পূর্বাহ্ন
যারা গাইছে তাদের কত কষ্ট হয় ভাবুন তো।
আগস্ট ৮, ২০১৭; ১:১৫ পূর্বাহ্ন
মনের ভাব প্রকাশের শতকরা ৯৫ ভাগই নন-ভার্বাল, শারীরিক ভাব-ভঙ্গী দিয়ে প্রকাশ করা যায়।
আগস্ট ৮, ২০১৭; ১০:১৬ পূর্বাহ্ন
সেটাও তো ইউনিভার্সাল নয়। সকলের বোঝার মতো একটা ভাষা খুব দরকার আজকের যুগে। সেটা হয়ত ছবির ভাষাই হবে।
আগস্ট ৮, ২০১৭; ১০:১৭ পূর্বাহ্ন
আচ্ছা, ফরাসী কুকুর কি ইংরেজ কুকুরের ভাষা বোঝে? এই ব্যাপারটা নিয়ে কিছু রিসার্চ হয়নি?
আগস্ট ৯, ২০১৭; ৬:৫৫ অপরাহ্ন
কুকুর বন্ধুত্ব পাতাতেও পিছু নেয়…