৪১০ বার পঠিত
ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে যে ভীতির মিথ; তা সর্বৈব মিথ্যা একটি প্রচলিত গল্প। যে কোন নির্বাচনে ধর্ম-ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোট ২ থেকে ৩ শতাংশ। অর্থাৎ এই দলগুলোর কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই সাধারণ মানুষের কাছে। অথচ এই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক জুজু প্রদর্শনী চলছে দীর্ঘকাল। সাধারণ মানুষকে ভয়ের মাঝে রাখতেই রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও কলামিস্টরা এই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের জুজু দেখায়। নীতি নির্ধারকরা নিজেদের ভ্রান্তিগুলো লুকিয়ে রাখতে এই কট্টরপন্থীর জুজু সামনে এগিয়ে দেয়।
মূলধারার বড় দলের রাজনীতিকরাই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর অবাস্তব প্রস্তাবগুলোকে প্রশ্রয় দিয়ে বড় করে। এই প্রশ্রয়ের ফুঁ-তে তৈরী ছোট-বড় ভীতির বেলুনগুলো আকাশে উড়ে বেড়ায়। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি থেকে তৈরী সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক দল, আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা আগাছার মতো; মাঝে মাঝে এদের ছেঁটে দিয়ে রাষ্ট্রের বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কৃতিত্ব নেবার প্রয়োজনেই আগাছার প্রতি যুগপত এই সমীহ ও কঠোরতার অভিনয়।
মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো নাগরিক সমাজের মুক্তচিন্তাকে সন্দেহের চোখে দেখে। রাজনীতির মূলধারায় থাকায় মুক্তচিন্তাকে সরাসরি বাধা দেয়া রাজনীতিকদের জন্য বিব্রতকর হয়। মুক্তচিন্তাকে বাধা দেবার ফুট সোলজার হিসেবে ধর্ম-ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে তাই সযত্নে লালন করেছে মূলধারার বড় রাজনৈতিক দলগুলো। মুক্তচিন্তাভিত্তিক সমাজ বিকশিত হওয়া মানেই গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চাহিদা বিকশিত হওয়া। এ বিকাশকে ঠেকিয়ে রাখতে সর্বদলীয় হাডুডু খেলার মাঝ দিয়েই তাই টিকে থাকে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল।
বিএনপির রাজনীতিক মাহমুদুর রহমান ব্লগারদের লেখা তার “আমার দেশ” পত্রিকায় প্রকাশ করে হেফাজতকে উস্কে দেন। জাতীয় পার্টির রাজনীতিক এরশাদ হেফাজত নেতার হস্তমুবারক চুম্বন করে হেফাজতের ব্রান্ডিং করেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা “খাস জমি” উপহার দিয়ে হেফাজতকে ক্ষমতায়িত করে। হেফাজত প্রধান ফতোয়া দিয়ে বসেন, নাস্তিক কতল করা ওয়াজিব। এই যে ত্রি-দলীয় ছোট ছোট পাসে হেফাজত নামের ফুটবলটি দাপিয়ে বেড়ালো; তার মাঝ দিয়ে মুক্তচিন্তার বিকাশের পথটি রুদ্ধ হলো। এটি কাংক্ষিত ছিলো তিনটি রাজনৈতিক দলের কাছে। কারণ শাসন-ত্রাসন জারী রাখতে তাদের প্রয়োজন ভীতির জুজুতে বসবাসকারী প্রশ্নহীন সমাজ।
মূলধারার রাজনৈতিক দলের নেতারা যেমন প্রত্যাশা করেন, সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার ছাত্ররা তাদের রাজনৈতিক দলের ক্যাডার হবে। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের ফুট সোলজার তৈরীর প্রয়োজনে সাধারণ শিক্ষা-ব্যবস্থাকে ক্রমে ক্রমে অত্যন্ত দুর্বল করে তুলেছে ক্ষমতায় পর্যায়ক্রমে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা আবার প্রত্যাশা করেন, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ছাত্ররা তাদের দলের ক্যাডার হবে। বড় দলগুলোর কাছে নিজেদের দর-কষাকষির শক্তি ধরে রাখতে ফুট সোলজার তৈরীর প্রয়োজনে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্রমে ক্রমে অত্যন্ত দুর্বল করে রেখেছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো। ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকা বড় রাজনৈতিক দলগুলোও ভোটের আগে উন্নয়নের তাবাররুক বিতরণের মতো মাদ্রাসায় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে ধর্ম-ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে খুশী রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়।
যুগের পর যুগ সাধারণ মানুষের সন্তানদের “কুরবানি” ও “বলি” দেবার এই আদিম পদ্ধতিটি টিকে আছে বড় রাজনৈতিক দল ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর যৌথ প্রচেষ্টায়।
সংগীত-নৃত্য ইত্যাদির বিরুদ্ধে ফতোয়া দেওয়ার কাজটি ধর্ম-ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নিয়মিতভাবে করে থাকে। ২ শতাংশ মানুষের সমর্থন নিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিকগুলো কথিত শরিয়া আইন প্রচলনের একটা কল্পনা নিয়ে ঘুরে। এই স্বপ্ন কোনদিনই পূরণের নয়। ফলে তাদের ফতোয়া বিশাল কোন ঝুঁকিপ্রদ নয় যে কোন ক্ষেত্রেই।
কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে মূলধারার বড় রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মীরা একই ধাঁচের ফতোয়া দিলে। ২ শতাংশ জনসমর্থনের মালিক ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতারা অনগ্রসর চিন্তাপ্রসূত বিদ্বেষ ওয়াজ মেহেফিল-এ প্রকাশ করলে যে ঝুঁকি তৈরি হয়; তার চেয়ে অনেক বেশী ঝুঁকি তৈরি হয় মূলধারার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ জনসমর্থনের মালিক বড় রাজনৈতিক দলের নেতারা ধর্মীয় পোষাক পরে বিদ্বেষ প্রকাশক বা ধর্মের সুড়সুড়ি দেয়া ওয়াজ-মেহেফিলে নিজেরাই নেমে পড়লে। দুর্নীতির পাহাড়গুলোকে ধর্মের আলখাল্লা দিয়ে ঢেকে রাখতে বড় রাজনৈতিক দলের নেতাদের এই যে যেমন খুশী মোল্লা সাজো প্রতিযোগিতাটিই সমাজের জন্য সবচেয়ে অশুভ সংকেত।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন