০
১০২৮ বার পঠিত
সম্ভবত সাম্প্রতিক সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে কিছুটা যোগাযোগ ঘটেছে বলেই বিপত্তি। বলছি বিপত্তির কথা। কাল সকালে সেলফোন ডেকে উঠলো। ধরলাম। ওপাশে যিনি বললেন, ‘কবি অমুক বলছি’। রাতে ঠিকমত ঘুম হয়নি, মেজাজ এমনিতেই খিঁচড়ে রয়েছে। তবুও যথা সম্ভব বিনয়ের সাথে বললাম, ‘কবি শব্দটি কি আপনার নামের অংশ?’ বেচারা প্রচন্ড খেপে গেলেন। ‘আপনি মানুষকে ইনসাল্ট করেন’ বলেই দুম করে লাইন কেটে দিলেন।
এখন সাংবাদিকতার বিপত্তিটা বলি। আজকের ঘটনা। মানে আঠেরো নভেম্বর দুই হাজার বিশ খ্রিস্টাব্দ। সকালে ডেকে উঠা সেলফোনটা ধরতে পারিনি। দেখলাম ল্যান্ডফোন নম্বর। যেহেতু এখনো ল্যান্ডফোন শুধু বেঁচে আছে সরকারী অফিসগুলোতে, তাই জরুরি মনে করেই ‘কলব্যাক’ করলাম। ওপাশ থেকে বয়স্ক কণ্ঠের একজন তার পরিচয় দিলেন। দিলেন তাও নামের আগে সেই ‘কবি’ সাহেবের মতন ‘পদবি’ সহযোগে। গতকালের অভিজ্ঞতায় আর জিজ্ঞেস করা হলো না পদবিটা নামের অংশ কিনা। যিনি ফোন দিয়েছেন তিনি একটি সাংবাদিক সংগঠনের নেতা। না, মেইনস্ট্রিম কোন সংগঠন নয়। আমাদের দেশে নানা ধরণের সংগঠন রয়েছে না। সম্প্রতি দেখলাম একটি পলিটিক্যাল সংগঠনের নামের আগে বিধবা জুড়ে দিয়ে সংগঠন খোলা হয়েছে। অনেকেই এমন সংগঠনগুলিকে ‘দোকান’ নামে আখ্যায়িত করেন। সে রকমই আর কী। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে হলেও ওই ‘সাংবাদিক সংগঠন’টির সাথে যৌবনের একটা সময় আমি না বুঝেই যুক্ত হয়েছিলাম। ছিলাম সোকল্ড নির্বাহী কমিটিতেও।
ভদ্রলোকের সাথে যখন কথা বলছিলাম, তখন তিনি বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন আমি তাকে চিনেছি কিনা। সম্ভবত তাকে সালাম দেয়া হয়নি বলেই তিনি ধারণা করছিলেন তাকে আমি চিনতে পারিনি। পারলে তো সালাম দেয়ার কথা। তার কথার টোন জানাচ্ছিল আমি বেয়াদবি করেছি। উল্টো আমি প্রশ্ন করলাম, আমাকে তিনি চিনেছেন কিনা কিংবা আমি কোথায় কাজ করছি এবং কি করছি। বেচারা থমকে গেলেন। আমি জানতাম, তিনি বলতে পারবেন না। কারণ এসব মানুষ সাংবাদিকতার মূলধারার কেউ নন। প্রশ্ন করলে হয়তো আজকের প্রধানতম খবরের বিষয়েও জানাতে পারবেন না। তাদের কাজ হলো একটি সংগঠন খুলে সোজা কথায় ধান্ধাবাজি করা। তাই তাদের কাউকে খুব একটা চেনা এবং জানার প্রয়োজন হয়ে ওঠে না। তাদের দরকার নাম আর সংখ্যার, কাজের নয়।
এমন ভুঁইফোড় সংগঠনের সংখ্যা গুনে শেষ করা যাবে না। রাজনীতি থেকে শুরু করে সাংবাদিকতা এমনকি সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও এমন সংগঠনের অভাব নেই। এদের যন্ত্রণায় মূলধারায় যারা কাজ করেন তাদের প্রায়ই বিব্রত হতে হয়। হতে হয় প্রশ্নের সম্মুখিন। এই প্রশ্নের কথা বলতে গিয়ে আজকের দ্বিতীয় বিপত্তির কথা বলি। একজন সিনিয়র বন্ধুর সাথে বিষয়টি শেয়ার করতে গেলাম। আমি যে ওই সংগঠনে ছিলাম সেটা জেনে তিনি প্রথমে বিস্মিত পরে হাসিতে ভেঙে পড়লেন। হাসতে হাসতে প্রশ্ন করলেন সেখানেও আপনি ছিলেন? কি একটা অবস্থা। তাকে বোঝাই কীভাবে যৌবনে মানুষ নানা রকম ভুল করে, তার মধ্যে এটিও একটি ছিলো। দড়িকে সাপ ভেবে ভুল করেছিলাম।
আমি না হয় ভুলটা বুঝেছিলাম বলে সরে আসতে পেরেছিলাম। কিন্তু এখনো তো এমন ভুলের জালে অনেকেই জড়াচ্ছেন। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত। ইচ্ছাকৃতদের নিয়ে কথা নেই। অনিচ্ছাকৃত যারা জড়াচ্ছেন তাদের নিয়েই কথা। সংগঠনে জড়ানোর আগে নিজে যোগ্য হয়ে ওঠাটা জরুরি। সংগঠন কাউকে যোগ্য করে না, বিশেষ করে মেধাভিত্তিক কাজে। মাসলবাজি করতে গেলে হয়তো সংগঠন প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায়। কলমবাজিতে তেমনটা প্রয়োজন হয় না। আর হলে সেই কলমবাজি পরিণত হয় ধান্ধাবাজিতে। খবর, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা সব হয়ে ওঠে স্তুতিবাক্য, শক্তি-বন্দনা।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন