অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম – একটা কোথাও একটু যাওয়া দরকার। কিন্তু নানা কারণে তা হচ্ছিল না। তবে যা হওয়ার তা কিন্তু হঠাৎই হয় বা হয়েই যায় । এই যেমন হলো – কথায় আছে কাজ করে যাও ফলের আশা না করেই । কাজ অনুযায়ী ফল ফলবেই।
কাজ কি শুধুই কাজ ? ব্যবহার এবং জীবনবোধও কী নয় এক মহাকাজ?
পৃথিবী নিজেই যে এক চুম্বক একথা তো সবাই জানে। তার ভূ-চৌম্বকীয় টান তো আছেই তার উপরও সে নাকি প্রবল টানে সবাইকে আর সবকিছুকে টানে তার নিজের দিকে । তার আছে ভূ- টান, মানে মাধ্যাকর্ষণ। মাধ্যাকর্ষণ পায়ের নীচ বরাবর সিধে টানলেও কারো কারো ক্ষেত্রে তা যে টানে এপাশে ওপাশেও । যাদের টানে কেবল তারাই জানে সে বার্তাটি, আর পায় টেরটিও । সেইরকম এক অদ্ভুত এলোমেলো ভূ-টানেই এইবার সটান একেবারেই – ভুটান ।
যে পর্যটনের জন্য অন্ততপক্ষে মাস ছয়েক আগে থেকে সলতে পাকাতে হয়, তা করে ফেললাম মাত্র দু সপ্তাহের নোটীশেই । ম্যাজিক বা ভোজবাজি টাজি যা করার তা করেছে আমার ভাই ও বন্ধুরা । আমি ম্যাজিশিয়ান না । ম্যাজিশিয়ান তারা। তারা শুধু আমাকে তাদের সাথে পেতে চেয়েছিল আর আমি তাতে সম্মতিটি দিয়েছিলাম ।
তাতে ঘটনা যা ঘটার তা ঘটেছে, প্রায় যাকে বলে ” ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ে ” – এই কায়দায় একেবারে দেশ পেরিয়ে বিদেশ – ভুটানেই ।
কোলকাতা যখন মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে তখন এক সন্ধ্যায় পঞ্চপাণ্ডব যাত্রা করল স্বর্গের উদ্দেশ্যে ।
যুধিষ্ঠিরের কথাটি এখানে অনুল্লেখিত থাকবে । কারণ একথা সত্য যে, যুধিষ্ঠির চিরকাল ভাইদের গৌরবে গৌরবান্বিত হয়েছে । তাই ক্রমান্বয়ে ভীমসেন থেকে সহদেব পর্যন্ত সকল নামগুলো করা ফেলা যাক ।
রতন সরদার ( রতন), পাপ্পু বক্সী (রাম), রাজু সোনার (রাজু) ও কিরণ হেলা (কিরণ) । এঁরা সবাই কেন্দ্রীয় সরকারের চাকুরে । ভ্রমণ এঁদের ভিতরে একটা পাকাপাকি জায়গা করে ফেলেছে । হিল্লিদিল্লি কতইনা মুল্লি তারা ঘোরে । আর এবার তাদের কৃতবিদ্যার আয়াসলব্ধ ফলটির ভাগ পেয়ে গেল – নবাগত যুধিষ্ঠির । দাদাকে পেয়ে তাদের যে উৎসাহ আর আনন্দ তা লিখতে গেলে সে আর এক মহাভারত । একাধারে চার বন্ধু ও চার ভাইয়ের অদম্য উৎসাহ ও সহযোগিতায় এবার প্রবলভাবে টান এলো ভুটান থেকেই ।
আগেই বলেছি “ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ে ” কায়দায় সম্পাদিত হয়েছে সবকিছু ।
কিন্তু ছুড়ির যেখানে বিয়েটাই দরকার সেখানে পিছনের কায়দা কানুন জানা তার কাছে নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় ও বাড়তি ।
ছোট, বড় ও মাঝারি মিলিয়ে আঠারো জনের চাঁদের হাটের মাঝখানে বসার বিরল সৌভাগ্য দিতে পারে কেবলমাত্র এমন ভাই ও বন্ধুরাই ।
ভীমসেনটি আমার শহরের ও আমার পাড়ার মানুষ ও পারিবারিক সুহৃদ । বাকিরা সবাই এই প্রথম আমাকে দেখলো । কিন্তু কে বলবে, এই প্রথম তারা আমায় দেখলো !
” হু.. তারে আমি চোখে দেখিনি,
তার অনেক গল্প শুনেছি ।
গল্প শুনে তারে আমি অল্প অল্প ভালো বেসেছি। “
অনেককাল আগে কী সুন্দর করে কিশোর কুমার কথাগুলো বলেছেন ।
এমন তো হয়ই । গল্প শুনেও বেশি নাহলেও অল্প অল্প ভালোবেসে ফেলা যে যায় তার সদ্য প্রমাণ পাওয়া গেল এই ভাইদের ও বন্ধুদের কাছেই । তবে গল্প শোনানোর এই কাজটার পিছনে যাদের হাত তারা হল ভীমসেন রতন ও তস্য সহধর্মিণী কাকলি এবং তাদের রূপকথার মতো মেয়ে রূপকথা ।
শিয়ালদা স্টেশনে ভীড় কাটিয়ে কাটিয়ে ‘লাগেজ’ এর পাহাড় টানছি প্রথম দেখাতে ছুটে এলো রাম, রাজু ও কিরণ তিন বন্ধু ।
” ছাড়ো, ছাড়ো দাদা, আমরা থাকতে এ কাজ আর করতে হবে না। “- বলেই নিয়ে নিল সব ।
ঘৃণার ভাষা যেমন খুব সহজেই বোঝা যায় ঠিক তেমনি বা তারো থেকে আরো অনেক বেশি সহজেই বোঝা যায় ভালোবাসার ভাষা। তাই ছাড়তে হলো যে সবকিছুই তাদের হাতে ।
কিরণ ও কিরণের ছেলে আরিয়ান এবং মেয়ে অদিতি, রাজু ও রীণার ছোট মেয়ে তিয়ান এবং রতন ও কাকলির মেয়ে রূপকথা এই চারজন আমাদের কচিকাঁচা । তবে কচি হলে কী হবে কথা ফুটেছে তাদের দারুণ যা শোনার, বোঝার ও দেখার মতোই ।
তিয়ান ও অদিতিকে নিয়ে আলাদা একটা লেখা না লিখলে এনাদের কম গুরুত্ব দেওয়া হয় । আর এতো কম দাম দিলে তারাও যে আমাকে ছেড়ে কথা বলবে না তা আমি নিশ্চিত । তাই ইচ্ছা আছে ওদের নিয়ে কিছু লিখব ।
অদিতিকে যতবার বলি, ” তুই আমার মেয়ে ” – তার সংক্ষিপ্ত ও বলিষ্ঠ উত্তরটি হল – ” হু ” ।
আর তিয়ান ? সে মিলিটারি, তার যাকিছু সিদ্ধান্ত সব নির্ভর করে যুদ্ধের ফলাফলের উপর ।
বিনা যুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত সে নেয় না ।
পাপ্পু (রাম) ও আরতির দুই পুত্র ও ভাগ্নী যথাক্রমে শিবা, ডলু ও সারিকা এবং রাজু ও রীণার বড় মেয়ে তিতলি এরা হল আমাদের মাঝারি । এরাই এই সফরের তাজা বাতাস । এদের কেউ কেউ কলেজে পড়ে । কেউ কেউ এবারেই কলেজে ঢুকবে । এরা সব সময় হাসিমুখেই প্রস্তুত সবকিছুর জন্যই ।
কোন ভুমিকা বা ‘ইন্ট্রোডাকশন’ সেসব ছাড়াই তারা মাত্র পাঁচ মিনিট আগে দেখা ও চেনা আঙ্কেল ও আন্টির হয়ে গেল সব সুবোধ ভাইপো, ভাইঝি ও ভাগ্নী । শুধু কী করতে হবে এইটুকু বলার অপেক্ষা মাত্র।
কে বলে মানুষ মানুষের ভাষা বোঝে না ! আমি বলি- নিশ্চিত বোঝে। তবে বোঝার ও বোঝানোর আন্তরিক ইচ্ছাটা যদি থাকে । কংশের কারাগার সম কুসংস্কারের বন্ধ কারাগারে যদি সেই অনুভূতির অপমৃত্যু না ঘটানো হয়ে থাকে তাহলে সময়কালে সেসব মানবিক অনুভূতি কাজ করবেই করবে ।
আর যাদের ইতিমধ্যেই সে অনুভূতির অপমৃত্যু হয়েছে বা তা ঘটানো হয়েছে তারা আর তা কীভাবে ও কীকরে করবে বলুন ! সে দোষ তাদের না, দোষ তাদের যারা তা শেষ করেছে ।
সবার কথা তো হল, কিন্তু ঘরে ও বাইরে যে শক্তি ভুটানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং আরো অনেক বিরুদ্ধ টানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে সেই শক্তির কথা না বললে গল্পকার ও কথাকারকে তারাইবা ছাড়বে নাকি ! ভুলে যাবেন না –
“রাজা করিছেন রাজ্য শাসন,
রাজারে শাসিছেন রাণী।”
তাছাড়া যে যুগে পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য হতো সেযুগ শুধু বাসি হয়নি পুরো পচেও গেছে। এখন তার নাম করলে চা, জলখাবার সহ অন্যান্য সবকিছুই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হতে পারে ।
আবার “পথে নারী বিবর্জিতা ” – এসব কথা বলে টাকা বাঁচানোর চেষ্টা যেসব বীরপুরুষ করবে তাদের পিতৃপুরুষের নামটাও ভোলার ব্যাপক একটা সম্ভাবনা থেকে যায়।
আমি মোটেও বীরপুরুষ না, অতএব পান্ডবদের ক্রমানুসারে তাদের ঘরণীদেরও একটা বিবরণ পেশ করা বাধ্যতামূলক হয়েগেল আমার কাছে । এঁরা হলেন – রেবেকা (মীরা), কাকলি, আরতি, রীণা এবং কিরণ ।
মজার কথা ও দারুণ এক কথা হলো ‘কিরণ কথা’ । এখানে কিরণের জন্য যে কিরণ ছড়ায় তার নামও কিরণ । অপূর্ব এক মিল কিরণে কিরণে কিরণঢালা এই বসুধায়। তবে মজার আরো একটু বাকি আছে বইকি – স্বামীস্ত্রী দুই কিরনের বাবাদের নামও নাকি এক । অর্থাৎ কিরণদের প্রত্যেকেরই পিতা ও শ্বশুর দুই বাবার নাম এক। অদ্ভুত যা তা সবসময় পুরোপুরি অদ্ভুত বা অবাস্তব হবে তা না । কখনো কখনো তা বাস্তবও বটে ।
এইরকম এক জমাট বাহিনী নিয়ে এবার এক রাজার দেশে যাওয়া ও এক স্বর্গের পথে পা বাড়ানো ।
এই যাত্রার দু একটি ফল আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করব পরপর দু এক সপ্তাহ । বিশেষত আমার যেসব বন্ধু ভীষণভাবে অনুরোধ রেখেছেন এ বিষয়েই তাঁদেরই জন্য তো বটেই এবং অন্যান্যদের জন্যও অবশ্যই ।
দুই.
ধাতব অজগর সারারাত প্রাণপণ দৌড়েও ‘হাসিমারা’ স্টেশনে পৌঁছাতে পারলো না ঠিক সময়ে। নির্ধারিত সময়ের থেকে মাত্র পাঁচ ঘন্টা দেরিতে সে পৌঁছালো হাসিমারাতে। ততক্ষণে পূর্ব নির্ধারিত ভ্রমণসূচির গুরুত্বপূর্ণ কিছু সময় পেরিয়ে যাওয়ায় দলের সবার মুখের হাসিটিও যেন মারা গেল । সূচী অনুযায়ী সেই দিনটি ও পরের দিনটি ছিল ডুয়ার্সের জন্য । ফলে মূল্যবান পাঁচটি ঘন্টা গেল একেবারেই জলাঞ্জলি। বাকি সাতদিন অবশ্য বরাদ্দ রইলো ওয়াংচু রাজার দেশের জন্য ।
জলদাপাড়ার একেবারেই লাগোয়া – জঙ্গল ও লোকালয় যেথা একাকার সেইরকম এক আরণ্যক পরিবেশে ‘লোকনাথ কটেজ ‘ – এ গিয়ে উঠলাম সন্ধ্যার ঠিক আগে আগেই । বৃষ্টি হচ্ছে যখন তখন । তবে হাল্কা আর মিহি । তাকে অগ্রাহ্য করাও যায়। মাটি নরম আর ভিজে ভিজে । লোকনাথ -এর ম্যানেজারের কাছে শোনা গেল – গত রাতে এক ভয়ঙ্কর দাঁতাল দু একটা ক্ষুদে সহ মোট একুশ জনের একটা বাহিনী নিয়ে কটেজ ও তার চারপাশ পরিদর্শন করে গেছে এবং আজ রাতেও যদি তারা ওই একই কাজের জন্য আসে তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই ।
এমনিতে কটেজের ঘর ও বাথরুমের দরজা গুলোতে দেওয়া আছে – লেপার্ড, বাইসন, গন্ডার ও হাতির নিখুঁত সব প্রমাণ সাইজের ফটোগ্রাফ বা আলোকচিত্র । তাতে দিনের বেলা নিজেকে বেশ শিকারী শিকারী বলে মনে হলেও রাতের কথা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তখন ঘরের জানালা, দরজা ও দেওয়ালের দিকে কেউ আর শুতে চায় না । ইটের দেওয়ালের আধুনিক বাড়িকেও তখন আর যথেষ্ট নিরাপদ মনে হয়না ।
আসলে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা এমন এক বোধ ও অনুভুতি তাকে পুরোপুরি নির্ভরতা দেওয়ার যোগ্য বাড়ি আজও কোথাও তৈরি হয়নি । এমনকি রাজা বাদশাহদের গড়, কেল্লা বা দুর্গোতে অবস্থান করেও অদ্যাবধি কেউ নিজেকে কোনদিনও পুরোপুরি নিরাপদ মনে করেনি । তার কারণ হল ওই – ভয় । কথায় বলে – ভয় রাখার যোগ্য কোন জায়গা নেই । তবুও পরিশ্রান্ত জনের চোখ বুজে আসে স্নায়বিক ক্লান্তি এবং দীর্ঘ রেলযাত্রার পরিশ্রমের ধকল ও প্রতিক্রিয়ায় ।
পরদিন সকালবেলাতেই আছে যে জলদাপাড়া অভয়ারণ্যেই ‘ কার সাফারি’!
ঘুম ভেঙ্গে গেল । কিম্বা বলা যায় ঘুম ভেঙ্গে দিল একজোড়া ‘কপার স্মিথ বারবেট ‘ । জঙ্গলের দুই প্রান্তে বসে এই দুই বিহঙ্গ একে অপরকে এমন ভদ্রভাবে ডাকছে যে তাতে কোন ভদ্রলোকের পক্ষে আর ঘুমানো সম্ভব না।
কার সাফারি হলো। কিন্তু, তা তেমন জমলো না । ময়ূর ময়ূরী, হরিয়াল ও ধনেশ পাখি দেখা হল প্রচুর। আর কেবলমাত্র একটি একশৃঙ্গ গন্ডার। এই অভয়ারণ্যে এইবার হল আমার পঞ্চমবার। বিগত চারবার যা দেখার সব দেখেছি বলে ব্যক্তিগত দুঃখটা তেমন হল না । তবে যারা নতুন ও এই প্রথম এলো তাদের বঞ্চনা যেন কিছুতেই মানতে পারিনা। যদিও জানি বন্যপ্রাণ দেখতে পাওয়া একটা ‘ চান্স ফ্যাক্টর ‘ তবু্ও।
তবে মনে হলো এবার যেন বাকিদের অভাবটা পূরণ করলো গাছের ডালের ও মাটিতে চরা ময়ূর ময়ূরীরাই। বেশি বেশি করে দেখা গেল তাদেরকেই।
জলদাপাড়ার হলং বাংলোর চার কুনকি তাদের নিজের নিজের কচি কচি ছানাদের সঙ্গে নিয়েই চলেছে ” এলিফ্যান্ট সাফারি ” – র ডিউটি করতে। পিঠে জনা আটেক ছোটবড় সওয়ারী। হাওদায় বসে দুলতে দুলতে জঙ্গল দেখছে তারা । তাদের এক চোখে ভয় ও অন্য চোখে আনন্দ । সব ছেড়ে হাতি মায়ের সাথে থাাকা সেই হাতির বাচ্ছাদের উৎসাহটি দেখার মতো। মায়ের সাথে থেকে আমোদ করতে করতে চার বিচ্ছু চিনে নিচ্ছে রাস্তাঘাট সবকিছু।
ওরাই তো হবে আগামী দিনের জঙ্গল ‘গাইড”।
দুপুরের খাওয়াটা খেয়ে তবেই ছাড়লাম লোকনাথকে । কমবেশি পঁচিশ কিলোমিটার দূরে ভারত ভুটান সীমান্ত জয়গাঁ ও ফ্রুন্টসোলিং যাচ্ছি।
যাত্রাপথের দু পাশে ডুয়ার্সের সেই পরিচিত নয়নাভিরাম চা বাগান। পথে পড়ল তোর্ষা । মানে তোর্ষা নদী । দেখলাম তাকে । যদিও তার আসল রূপ দেখার সময় এ নয়। তা দেখতে হলে আসতে হবে শ্রাবণ কিম্বা ভাদ্রে। তবু্ও মনে পড়েগেল তোর্ষা কেন্দ্রিক ভাওয়াইয়া গান-
“তোর্ষা নদীর উথাল পাথাল –
কারবা চলে নাও,
নারীর মন মোর উথাল পাথাল –
কারবা চলে নাও।”
এ সেই ভয়ঙ্করী তোর্ষা যার উপর দিয়ে নাও বেয়ে যাওয়ার সময় মাঝিমাল্লার প্রিয়জনের বা প্রিয়ার বুকে কাঁপন ধরে আর জাগে ভয় । রাক্ষসী তোর্ষা যেন তার প্রিয় বন্ধুর কোন অনিষ্ট না করে !
তোর্ষার দেশের মানুষ, উত্তরবঙ্গের লোকগান ও ভাওয়াইয়ার প্রখ্যাত শিল্পী কুচবিহার কন্যা জহুরা বেগম আমার এই মাধ্যমের একজন বন্ধু । অনেক গান শুনিয়েছেন । মাঝে মাঝে খোঁজও নেন । মনে পড়লো তাঁর কথা । তাঁকে জানালাম তাঁর দেশে আমার আনাগোনার কথা। সংবাদ জেনেগেল উত্তরবঙ্গের আরো অনেক বন্ধুও । অনেকের থেকে আন্তরিক ডাক এলো -” চলে আসুন বা চলে এসো ” । কোথাও যাওয়ার জো নেই । চলেছি যে “হোয়াইট হাউস ” – এ ।
জয়গাঁতে হোটেল ‘হোয়াইট হাউস ‘ এ রাত্রিবাস । পরদিন ভুটান ইমিগ্রেশন অফিসের ছাড়পত্র হাতে নিয়ে ঢুকতে হবে রাজার দেশে।
আমার চার ভাই ও বন্ধুদের সৌজন্যে তো বটেই এবারের এই ভ্রমণ নিয়ে যা কিছু লিখব তাতে ভাগ থাকবে সব কচিকাঁচা, মাঝারি এবং তাদের মা, জেঠিমা ও কাকিমাদেরও। কেননা তাদের সম্মিলিত সহযোগিতায়, প্রচেষ্টায় ও সহাবস্থানে সার্থক হয়েছে ভুটানের এবারের টান।
ফেরার সময় তারা নিজেরাও অনুভব করেছে মানুষে মানুষের সেই বন্ধন ও প্রবল সেই টানকেই। একটি মানবিক সমাজের জন্য যার প্রয়োজন ছিল, আছে এবং চিরকাল থাকবে বলে আমি মনেকরি ।
মানুষ বাঘ না, মানুষ ভাল্লুকও না । মানুষে মানুষে ব্যবধান, ভ্রান্ত ধারণা ও ভুল বোঝাবুঝিটি আছে মেলামেশা ও চেনাজানার অভাব এবং অপ্রতুলতার কারণেই । তাই চেনো এবং জানো অপরকে। সেইসাথে নিজেকে চেনাও এবং জানাও অন্যদেরকেও ।
আজ এই পর্যন্তই। আগামীতে লিখবো ‘রাজার দেশ, স্বর্গের দেশ‘।