৪
২২৬৬ বার পঠিত
আজ প্রায় আট বছর হতে চললো, ধর্ম নামক জিনিসটিকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছি। এককালে ধার্মিক ছিলাম, নিয়মিত ধর্মকর্ম করতাম। যখন ধর্মকর্ম করতাম, অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে করতাম। কেন করতাম জানি না। আল্লাহকে রাজি-খুশি করার চাইতে নিজে কিছু একটা অর্জন করার প্রেরণাই বেশি কাজ করতো বোধ হয়।
যেমন, একবার প্রতিজ্ঞা করলাম, টানা চল্লিশ দিন কোন ওয়াক্তের নামাজ ক্বাজা করবো না, জামাতের সাথে আদায় করবো। তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। পড়াশোনার ব্যস্ততার মাঝেও ঠিকই প্রতিজ্ঞা রেখেছিলাম। স্কুলের টিফিনের সময় যখন সহপাঠিরা খেলাধুলায় মত্ত তখন শিক্ষকদের সাথে আমি প্রার্থনাকক্ষে। চল্লিশদিন পার হওয়ার পর মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি কাজ করেছিল – আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছি ভেবে যতটা, তার চেয়ে বেশি নিজের প্রতিজ্ঞা রাখতে পেরেছি বলে। সেই সন্তুষ্টির প্রতিক্রিয়ায় কিছুদিন পরেই আমি নামাজে অনিয়মিত।
তবে অন্য এভারেজ ধার্মিকদের চেয়ে আমার মনন সবসময়ই আলাদা ছিল। খুব বেশি যুক্তিবাদী ছিলাম সবসময়। সবকিছু নিয়েই প্রশ্ন করতাম, বিনা তর্কে কিছুই মেনে নিতাম না। পুরোপুরি মুক্তমনা ছিলাম কি না জানি না, তবে যুক্তিবাদী ছিলাম এটুকু বলতে পারি। শুধুমাত্র ধর্মই ছিল একমাত্র পবিত্র জিনিশ, যার ব্যাপারে যুক্তির প্রয়োগ করতাম না। পবিত্রতার আড়ালে ঢাকা পড়তো ধর্মের সকল কুৎসিত ও অযৌক্তির রূপ। অনেক সহপাঠিকেই দেখেছি, তারা ততটা ধার্মিক না হলেও অন্ধবিশ্বাস প্রবল। শুধুমাত্র ধর্ম বিষয়েই নয়, অন্যান্য বিষয়েও কোন কিছু যাচাই-বাছাই না করেই এরা বিশ্বাস করে বসে, যা হাজার যুক্তি-প্রমাণ দিয়েও খন্ডানো যায় না। কলেজে থাকতে এক সহপাঠিকে আনারস ও দুধ একসাথে খাইয়ে দেখিয়েছি এতে কেউ মারা যায় না। তবুও তার এই বিষয়ক অন্ধ-বিশ্বাস ভাঙেনি। অথচ পাইনএপেল আইসক্রিম এখনো তার অত্যন্ত প্রিয়।
ধর্ম সম্পর্কে সকল মোহের অবসান ঘটলো বুয়েটে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়। ঠিক কখন এটা ঘটেছে বলতে পারবো না, তবে লেভেল-২, টার্ম ১ শেষ করতে করতেই বুঝলাম আমার দুর্বল ঈমান পুরোপুরি তীরোহিত হয়েছে। সামাজিকতা রক্ষার্থে শুক্রবার মসজিদে গেলেও, বয়ানের সময় বিধর্মী ইহুদি-নাসারা-মুশরিকদের অভিশম্পাতদানকারী ইমামের কথায় সবাই মাথা ঝুকালেও আমার কাছে তা কদর্য মনে হতে লাগলো। আস্তে আস্তে ধর্ম থেকে পুরোপুরি বেড়িয়ে আসতে সক্ষম হলাম।
আমার এই নিস্কৃতির পেছনে কাজ করেছে আমার অত্যন্ত যুক্তিবাদী, জিজ্ঞাসু ও অনুসন্ধিৎসু মন। আজ মনে হয়, সবার পক্ষে ধর্ম থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়, কারণ সবার মন যুক্তিকে সত্যকে গ্রহণ করতে পারে না। তারা পাইনএপেল আইসক্রিম খেয়ে যায়, আর বলে যায় দুধ+আনারস=বিষ। ব্যাপারটা হয়তো সহজাত। তাই পৃথিবী নিকট ভবিষ্যতে ধর্মমুক্ত হবে এই আশা দুরাশা মাত্র। ধর্মের সংক্রমণ হতে পুরোপুরি সুস্থতার জন্য আরো কয়েকটি এনলাইটমেন্ট যুগ পেরোতে হবে মানবজাতিকে।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন
আগস্ট ১৫, ২০১২; ৯:০৮ পূর্বাহ্ন
আপনার যুক্তিবাদী লেখায় নবযুগ ব্লগের পাঠককূলে আলোকায়নের ছোয়া লাগুক।
আগস্ট ১৫, ২০১২; ১০:৩৯ অপরাহ্ন
পুরাই কঠিন লেখা। কুসংসকারের বিরুদ্ধে যুক্তির ধারালো শানিত অস্ত্র।
তবে হ্যা। মানুষই একমাত্র প্রাণী, যা কুসংস্কারে ডুবার প্রবৃত্তি সমৃদ্ধ — The flipside of our being the most intelligent.
আগস্ট ১৫, ২০১২; ১১:৪৮ অপরাহ্ন
স্বাগতম – মানব ধর্মে!
আগস্ট ১৬, ২০১২; ৭:২৮ পূর্বাহ্ন
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম থেকে মুক্তির পর আমরা কি বোকা হয়ে যাই, মুর্খ হয়ে যাই । কারন সমাজের আট দশটা মানুষের মত হতে পারি না।