মডারেট মুসলিম সমাজের ধরি মাছ না ছুঁই পানি টাইপের জনগণ যখন বর্তমানের র্যাডিক্যাল মুসলমানদের পৃথিবীজুড়ে নানান সহিংস জঙ্গি কর্মকাণ্ড এবং হত্যাকাণ্ডে দেখে দেখে ব্যথিত-দুঃখিত হচ্ছেন, এবং যারা ভাবছেন- এই কাজটি সঠিক হয়নি, এটা সহি ইসলাম নয়। আমার এই পোস্টটি সেইসব- শান্তিপ্রিয় হালাল-হারাম’কে নিজের সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা মডারেট মুসলমানদের উদ্দেশে লেখা।
দেখুন, যাদেরকে আমরা এমন সহিংস জঙ্গি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে দেখি, আমরা কী কখনো ভেবে দেখি তারা কেন এমন?
আমার ধারনা- আমরা খুব তলিয়ে ভেবে দেখিনা। আমরা কিছু কমন কথাই মনে করি।
যেমনঃ তারা ব্রেন ওয়াশড, অথবা তারা ইসলামকে বোঝেনি, অথবা ইসলাম শান্তির ধর্ম ইত্যাদি। আমার ধারনা এই কথাগুলো ওরাও জানে। আপনার আমার মতো ওরাও এইসব কথা শুনেই বড় হয়েছে। কারণ ওরা বাইরের কেউ নয়। ওরা আপনার আমার ভাই, আপনার আমার সন্তান, আপনার আমার বন্ধু। এরা আমাদের সমাজের, পরিবারেরই ছেলে।
ওরাও মাকে ভালোবাসে, বাবাকে শ্রদ্ধা করে, প্রেমিকাকে ভালোবাসে, বন্ধুর জন্য জান দিতে প্রস্তুত থাকে। ওদেরও শাপলা ফুল, কদম ফুল ভালো লাগে। বৃষ্টি নামলে ভিজতে নামে। শীতকালে পিঠা খায়। পুকুরে সাঁতার কাটে। জোৎস্না রাতে উদাস হয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। ওরাও ওদের দেশকে ভালোবাসে আপনার আমার মতোই।
তবে আপনার আমার সাথে ওদের একটু তফাৎ আছে। সেটা হচ্ছে- ওরা বড় বেশি আবেগী মানুষ।
আপনারা লক্ষ করে থাকবেন, আবেগী মানুষগুলো একটু অন্তর্মূখী হয়। নিজের কথা খুব একটা খুলে প্রকাশ করতে পারেনা। কিন্তু যাদেরকে একবার আপন ভাবে, তার জন্য তারা সবকিছুই বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকে। এমনকী নিজের জীবনটাও। মানুষ স্বভাবতই কোন না কোনও একটি আদর্শে বাঁচতে চায়। এই সভ্যতায় একটি মানুষও বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না- যার একজনও মেনটর নেই। অথবা- যে কারো ফলোয়ার নয়। তেমন ওরাও সেটা খোঁজে। যেমন কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে চে’ এর ফ্যান হয়। কেউ মাওসেতুং এর। কেউ বা শাহরুখ খানের জন্যে পাগল হয়ে থাকে। এই ঘোর যারা রবীন্দ্রনাথকে প্রভু জ্ঞান করেন তাদেরও তেমন। যারা আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপির ভক্ত তাদেরও একই। শফি হুজুরের অথবা পীরের মুরিদ সবার জন্যেই প্রযোজ্য।
একটা আদর্শ চাই সবার। একজন গুরু চাই। মানুষ যেমন ভালোবাসতে চায়- তেমনি ভক্তি করাও মানুষের মজ্জাগত। ঠিক সেভাবেই ওরা হয়তো ইসলামকেই আদর্শ বলে মেনে নেয়। মানুষ যখন কোন কিছুর প্রতি ভক্ত হয়ে যায় তখন সে সেটাকে প্রবলভাবে আঁকড়ে ধরে। এরমধ্যেই জীবনের সকল লক্ষ্য খুঁজে পেতে চায়। আর ইসলাম সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই তারা ভালো ভালো কথা শুনে বড় হয়। বর্তমান সমাজে নৈতিকতা, বিশ্বাস, শান্তি, স্থিতিশীলতার যে প্রগাঢ় একটি শূন্যতা যাচ্ছে তাতে যেমন আমরা সবাই দিনশেষে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ভাবি- জীবন কী এভাবেই কেটে যাবে? ওরাও সেই একই অস্থিরতা লালন করে। যেহেতু আমাদের পত্রিকা আমাদের টিভি, আমাদের ওয়াজ মাহফিল, আমাদের পরিবার থেকে সবসময় আমরা একটি মুসলিম-বান্ধব পরিবেশ পেয়ে থাকি, তাই হয়তো তাদের জন্য সেইদিকে আগ্রহী হয়ে ওঠা কিছুটা সহজ হয়।
অসুখ হলে মা দোয়া পড়ে ফু দিচ্ছে। বাবার মৃত্যুতে সবাই মিলাদ পড়ছে। পত্রিকায় ইসলাম ধর্মের নানান মাহত্বপূর্ণ লেখা পাচ্ছে। টিভিতে আযান হচ্ছে- ইসলামিক টক শো হচ্ছে। শুক্রবারে সবাই জুম্মা পড়তে যাচ্ছে। এইসব আরো অনেক নিত্য প্রবহমান ঘটনা তাদের মনের মধ্যে একটি আস্থার জায়গা সৃষ্টি করে দিচ্ছে। তখন যদি কোন বড় ভাই, অথবা কোনও ইসলামিক স্কলার তাদের দিকে একটু মনোযোগ দিয়ে, তাদেরকে স্নেহ দিয়ে, সম্মান করে ইসলামের পথে চলে আসার ডাক দেয়, তারাতো নাড়া খাবেই। এই বয়সটাই যে এমন। একটু ভালোবাসা, একটু সম্মান, একটু ভালো করে কথা শোনার জন্য- মন ব্যাকুল হয়ে থাকে। হয়তো বাসায় মা রাগারাগি করে। বাবা বকা দেয়। বন্ধুর সাথে হয়তো ঝগড়া হয়েছে। প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। পকেটে একটা পয়সা নাই। কিংবা টাকার অভাব নেই- কিন্তু পারিবারিক বন্ধনহীন ছেলে। পরিবারে অনৈতিকতাই শুধু পেয়েছে। সে যাই হোক না কেন- তাদের মধ্যে একটা শূন্যতাবোধ, নিজেকে প্রমাণ করার এক সুতীব্র ইচ্ছের জায়গাতে যখন কেউ কোমলতার আঙ্গুল বুলায় তাকে আপন লাগতেই পারে। তার কথা ভালো লাগবেই। আর যারা সাধারণত ইসলামিক দাওয়াতের কাজটি আমাদের সমাজে পরিচালনা করেন তারা সকলেই মিষ্টভাষি। তাদের ব্যবহার খুব নমনীয় ও কোমল হয়ে থাকে।
এই ব্যবহার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে ওই ছেলেরা যখন ইসলামধর্ম চর্চা শুরু করে তখন পুরোপুরি ডেডিকেটেড হয়েই করে। ফাঁকি দেয় না। কারণ নিজের আদর্শকে সবাই সাধারণত নিজের অন্তরের কাছে খুব উঁচু স্থানই দেয়। তখন তারা আসলে কী শেখে? তারা শেখে- ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যেখানে- কীভাবে নমাজ পড়তে হবে, কীভাবে চলতে হবে, ঘুমাতে হবে, খেতে হবে, কথা বলতে হবে, কাপড় পড়তে হবে, এমনকী স্ত্রী সহবাসের নিয়মটাও তারা শেখে। তারা শোনে ইসলাম একসময় পুরো পৃথিবী শাসন করতো, খলিফায়ে রাশেদিনদের জীবন কেমন অনাড়ম্বর ছিল, তারা কত সৎ ছিল! নবী মুহাম্মদ কত মহান, উদার ছিলেন। উম্মতের জন্য তিনি কত কেঁদেছেন এমন আরো এমন অনেককিছু যা আপনারাও জানেন কম বেশি। তারা প্রচুর হাদিস শোনে। সেগুলো নিয়ে নিজেরা আলাপ করে। ইসলাম ব্যতীত তাদের আর কোনও প্রসঙ্গ তাদের কাছে প্রয়োজনীয় থাকে না। তারা এখানেই যেহেতু সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন পাচ্ছে তাই তাদের জীবনের প্রায় সব কিছুকেই তারা ইসলামিকরণ করে ফেলতে থাকে। কারণ ছেলে এই অস্থির সময়ে একটি আদর্শ পেয়ে গেছে। পেয়ে গেছে নিজের গুরুত্ব। নিজেকে সাহাবীদের মতন মহান জীবন আদর্শে পরিচালনা করার পথ।
তখন যদি তাদেরকে বলা হয় এই দেশের শাসন বিধর্মীদের শাসন। এখানে ইহুদি নাসারাদের শাসন চলছে। আমাদেরকে ইসলাম কায়েম করতে হবে। এই দেশের দুর্ভাগা মুসলমানদেরকে পরিত্রাণ করতে হবে। কারণ এটাও দ্বীনের কাজ। এটাই রাসুলের পথ। নবী এটাই বলেছেন হাদিসে কোরানে। আল্লাহ্ এটাই লিখেছেন কোরানে। তখন তারা উত্তেজিত হয়। প্রবল একটা আবেগের স্ফূরণ হয়। কারণ এই পথ বিপ্লবের। এই পথ জিহাদের। এই পথ শহীদের। এই পথ সরাসরি জান্নাতের। জীবনে এই একবার নিজেকে প্রমাণ করার নেশা। নিজেকে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ জায়গার দেখার নেশা, এরচেয়ে বড় ঘোর- বড় নেশা জগতে নেই। কারণ এদের বয়স কম। এরা সাধারণ পথে পড়াশোনা করে, চাকুরী করে, ব্যবসা করে, সংসার করে এই সমাজে আর পাপ বাড়াতে চায় না। কারণ এটা মহান জীবন নয়। এটা পাপের এটা দুনিয়ার জীবন। অথচ এই বিপ্লব এই আন্দোলন তাদেরকে দেখাচ্ছে জান্নাতের অনন্ত প্রতিশ্রুতি। তারা উদ্বুদ্ধ হতে থাকে। তাদেরকে ইসলামের নানান যুদ্ধ, জেহাদের হিরোইজমের গল্প শোনানো হয়। কোরানের আয়াত দেখানো হয়। যা সত্যি কোরানে লিপিবদ্ধ। তাদেরকে বিধর্মীদের হত্যা, নাস্তিকদের হত্যার নানান আয়াত দেখানো হয়। তারা দেখে সত্যি এটা আল্লাহ্ চান। এটাই ছিল মূলে। আদিতে। এটাই আমাদের বর্তমানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তারা তখন সব ভুলে নিজেকে সেই মহান পথে বলি দিতে প্রস্তুত করে। এই সাইকোলজিক্যাল অবসেসন সমস্ত বিপ্লবীদের ভিতরেই কাজ করে। তারা আদর্শের মূলে ঢোকে। তারা এস্কেপিস্ট না। তারা নিউট্রাল না। তারা তাদের আদর্শের জায়গায় মৌলবাদী।
কারণ কোরান যদি বলে-
১.
“যখন নির্দেশ দান করেন ফেরেশতাদিগকে তোমাদের পরওয়ারদেগার যে, আমি সাথে রয়েছি তোমাদের, সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমূহকে ধীর-স্থির করে রাখ। আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়।”
( সূরা ৮- আয়াত ১২)
২.
“অত:পর যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের গর্দানে মার, অবশেষে যখন তাদেরকে পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেধে ফেল। অত:পর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করবে! একথা শুনলে। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের কতককে কতকের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান। যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়, আল্লাহ্ কখনই তাদের কর্ম বিনষ্ট করবেন না।”
( সূরা ৪৭- আয়াত ৪ )
৩.
“আর তাদেরকে হত্যা কর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুত: ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই কর। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি।
( সূরা২- আয়াত ১৯১ )
৪.
“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাও এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করুক আর জেনে রাখ, আল্লাহ্ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।”
( সূরা ৯- আয়াত ১২৩)
৫.
“তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুত: আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।”
( সূরা ২- আয়াত ২১৬ )
৬.
“যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্ত-পদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।”
( সূরা ৫- আয়াত ৩৩ )।
৭.
“সুতরাং যদি কখনো তুমি তাদেরকে যুদ্ধে পেয়ে যাও, তবে তাদের এমন শাস্তি দাও, যেন তাদের উত্তরসূরিরা তাই দেখে পালিয়ে যায়; তাদেরও যেন শিক্ষা হয়।
( সূরা ৮- আয়াত ৫৭)
৮.
“তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ্ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিজিয়া প্রদান করে।
( সূরা ৯- আয়াত ২৯)
তারাতো এটা করবেই। কারণ আপনারা যারা ইসলামকে একটি শান্তিপ্রিয় ধর্ম বলে মানেন তারা কখনো কোরানে কী লেখা আছে সেটা পড়ে দেখেন না। আমার বিশ্বাস- এই নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে আশি ভাগই আরবির বাংলা জানেন না। তারা বাংলাতেও কোরান কম পড়তে চান। কারণ আরবিতে পড়লে ‘সওয়াব’ বেশি। অথচ কতশত হুজুর তাদের ওয়াজে জেহাদের জন্য ডাক দিচ্ছে আপনারা সেসব লক্ষ করেন না। তারা কিন্তু পড়েই ডাকছেন। তারা কিন্তু আপনার আমার মতন না। তারা আরবি জানেন। তারা বুঝেই ডাকছেন যেটা তারা পড়েছেন তার ভিত্তিতে।
এখন দেখুন। যে ছেলেটা তার মাকে রেখে, বাবাকে রেখে, বোনকে রেখে, প্রেমিকাকে রেখে নিজেকে শহীদ করবার জন্যে সেই আত্মত্যাগে গেলো তার সততা তো প্রশ্নাতীত। বরং প্রশ্নবিদ্ধ আপনার ইসলাম চর্চা। কারণ আপনি সেই ইসলামের কথা বলছেন- যেটা সুফিবাদের হাত ধরে আমাদের এই বাংলায় এসেছে। যেই সুফিবাদ মেইনস্ট্রিম ইসলাম একসেপ্ট করেনি কোনদিনই। ইসলামে মধ্যমপন্থার কোনো সুযোগ নেই। লক্ষ করে দেখুন- ইসলামিক কান্ট্রিগুলোর শাসন। আপনি যদি বিশ্বাস করেই থাকেন কোরান হাদিসই চূড়ান্ত কথা, তবে সেটা আপনার পড়ে দেখা নৈতিক দায়িত্ব। পড়ুন। জানুন। নিজেদের মধ্যে যাকে মনে হয় সে ইসলাম বোঝে তার সাথে আলাপ করুন। প্রশ্ন করুন। কেন জঙ্গিদেরকে দোষ দিচ্ছেন? ইসলামে এসব আছে কী নেই সেটা- যে কোন বড় ইসলামিক স্কলারকে জিজ্ঞেস করুন। যেসব তরুণ অরুণ প্রাণ অস্তাচলে গেলো তাদের কতোজনকে দোষ দেবেন?
আপনারা কী ভাবেন- সহজ সরল আফগান ট্রাইবের তালেবানরা আরবি বোঝে না? তাদের পরিবার নেই? মা নেই? সন্তান নেই? আইসিস ইসলাম বোঝে না? তারা আপনার আমার মতো আরবিতে অজ্ঞ? ইরাকী জেহাদিরা ইসলাম বোঝে না?
বোঝে ভাই বোঝে। এটা ওদের ইতিহাস। ওদের সংস্কৃতি। ওদের নেটিভ ল্যাঙ্গুয়েজ। ওরা আপনার আমার চেয়ে অনেক ভালোই বোঝে, তাই – সমস্ত পৃথিবীতে ইসলাম কায়েম করতে চায়। আর এখন চাইছে- আপনার আমার ভাই- আমাদের সন্তান- আমাদের বন্ধুরা। তাই তাদেরকে বুঝতে গেলে সমালোচনা করতে গেলে আপনাকে আগে নিজের ধর্মে এইসব বিষয়ে সহি হাদিসে- এবং কোরানে কী বলা আছে সেসব জানা ফরজ। কারণ আগের যুগ নেই যে তারা ঘোড়ায় চড়ে তরবারি নিয়ে এসে যুদ্ধ করবে। তারা এখন আধুনিক মারণাস্ত্র ব্যবহার করবে। টার্গেট কিলিং করবে, তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার- তারা খলিফায়ে রাশেদিনদের সময়ে ফিরে যেতে চায়। কারণ তারা বিশ্বাস করে সেটাই সত্যযুগ। তাদের ইসলাম তাদেরকে সেটাই শিখিয়েছে যুগে যুগে। তারা এই দেশেও শরিয়া আইন কায়েম করতে চাইছে। তারা চাইছে শতভাগ মুসলিম দুনিয়া।
তারা তাদের দায়িত্বে ‘সৎ’। আপনি আপনার দায়িত্ব দেখান। জানুন বুঝুন। তারপর হয় মানুন আর নয়তো ইসলাম ত্যাগ করুন। আপনার ঘরের লোককে বোঝান এই ধর্মে কী লেখা। আর যদি বোঝাতে না পারেন তাহলে- তাদের হাতে নিহত হোন। কিংবা দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও রিফুজি হয়ে আশ্রয় চান। এর মাঝামাঝি থাকার দিন বিশ্বের অনেক দেশেই শেষ হয়ে গেছে। এদেশে- সেটা আপনারা এখন দেখতে পাচ্ছেন। এর শেকড় আজকে প্রোথিত নয়। আমাদের অজ্ঞতা আর নির্লিপ্ততার কারণে এই শেকড় আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে- বহুদূর প্রোথিত। বব ডিলনের একটি বিখ্যাত গানের কিছু লাইন বলি-
Yes, how many times must a man look up
Before he can see the sky ?
Yes, how many ears must one man have
Before he can hear people cry ?
Yes, how many deaths will it take till he knows
That too many people have died ?
The answer my friend is blowin’ in the wind
The answer is blowin’ in the wind.
আপনার সমর্থন, আপনার নীরবতা জঙ্গিদের পথ তৈরি করছে। যদি নিজের দেশের সংস্কৃতিকে ভালো না বাসেন। যদি নিজের ইতিহাস না জানেন। যদি নিজের স্বকীয়তাকে সম্মান করতে না পারেন তাহলে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় একটি গানের দুইটি লাইন মনে করিয়ে দেই-
এই দিন দিন না আরো দিন আছে
এই দিনেরে নিবে তারা সেই দিনেরও কাছে…
যেই দ্বীন এখন আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সিরিয়া, ইরাকে চলছে…
সবাইকে আমার আন্তরিক ভালোবাসা।