০
১৭৩৩ বার পঠিত
নারী স্বাধীনতা বলে একটা কথা প্রায়ই উচ্চারণ করে ‘নারীবাদী’ সমাজ। মনে হয় নারীকে একটা আলাদা জাতি হিসাবে নারীরাই চিহ্নিত করে করে, যে তারা কেবল-ই নারী তারা ‘মানুষ’ নয়। এইভাবে নিজের আত্মপরিচয়কে অবমাননা নারীরাই করে। বিকৃত ধর্মে যেমন মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। একইভাবে পুরুষে-নারীতে ভেদাভেদ তৈরি করতে নানা ছল-চাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। প্রাচীন যুগে দাসী বেচাকেনা হতো। আজও কোনো কোনো জায়গায় এই চল রয়েছে। স্বামী সেবা, পতি সেবা, জননী, জায়া, ভগ্নী, নানানরূপে কেবল নারীর উদ্দেশে যেভাবে আদেশ-উপদেশ। পরিশেষে, স্বর্গ অথবা বেহেস্ত নামক জায়গার প্রলোভন দেখিয়েছে পুরুষের ক্ষেত্রে ততোটা না।
এই বিভেদ বা বিভাজন তা পৌরাণিক ধর্ম, কিংবা হিন্দু, বা মুসলিম সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নারীর স্থান থেকে স্থানান্তরের নিক্ষেপ করার কারণও বিকৃত ধর্মীয় অনুশাসনের জের। কতো হিন্দু নারী স্বামী মৃত্যুর পরে যে ‘কাশী’ নির্বাসনে গিয়ে দূর্বিসহ জীবন কাটায় তার পরবর্তী খবর কেউ জানে না। একইভাবে মুসলিমদের অবস্থান আরো ভয়াবহ। নারী নির্যাতনের ছোট একটা উদাহরণ দিই-
“তোমাদের পত্নীগণ তোমাদের জন্য শষ্যক্ষেত্র স্বরূপ, সুতরাং স্বীয় শষ্যক্ষেত্রে আগমন করো যে দিক দিয়ে ইচ্ছা“ ( সুরা আল বাকারা ২৮৬-রুকু ৪)।
বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থে আছে একটার বেশী স্বামী গ্রহণ করতে পারবে না। স্বামীদের বহু স্ত্রী থাকলেও স্ত্রীদের জন্যে একটা শ্বামী। আর পুরুষের পতিতালয়ে যাবার অবাধ অধিকার। নারীরা কেবল চারণক্ষেত্র। পুরুষ যেভাবে খুশি নারীদেহ ভোগ করতে পারবে। স্ত্রীর ইচ্ছে অনিচ্ছার কোনো মূল্য নেই। সেইকথাই বার বার সুবিধাভোগী ধর্মগ্রন্থ রচয়িতা, ঠাকুর দেবতা, ইশ্বর, আল্লাহর নাম দিয়ে বলা হয়েছে। পুরুষকে প্রলোভিত করা হয়েছে। এবং তাতে তারা সুবিধাভোগী দল ইস্পিৎ লক্ষ্যে পৌছাতে সক্ষম হয়েছে। আজ তাই বিভিন্ন আকার দিয়ে মানুষ তাদের পুজো করে, নিরাকারে এবাদত। পরকাল নামক অচেনা জগতের হাতছানিতে প্রলোভিত। কী নিদারুণ প্রবঞ্চনার ইতিবৃত্ত তারা রচনা করে গেছেন। মানবের স্বীয় মানবিক চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ থেকে তারা সুচতুরভাবে সরিয়ে দিয়েছে। কিছুসংখ্যক মহামানব! আজ যখন কেউ সেই অন্ধকার কুয়াশাচ্ছন্ন যুগের চিন্তা ভাবনাকে সরিয়ে নিজ শিক্ষা, বিবেক ভাবনা দিয়ে চলতে চাইছে। তখন ই তাদেরকে শাস্তি দেবার ব্যাবস্থা হচ্ছে। মানুষের চিন্তা চেতনাকে এইভাবেই লুণ্ঠন করা হয়েছে।
জনৈক শিক্ষক যিনি বিদেশ থেকে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে বর্তমানে কর্মরত। ক্লাসরুমে একদিন তিনি কথায় কথায় বলছিলেন,
কেবল নিজ দেশ নয় আমি নারী বিধায় বিদেশে থাকাকালীনও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল
একজন তিরিশোর্ধ বয়সী নারীর অভিভাবক দেখা যায় বারো বছরের বালককে। দৈহিক সামাজিক এবং ধর্মীয়ভাবে তাকে অভিভাবকত্ব এনে দিয়েছে। শুধুমাত্র সে নারী বিধায়। পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করলে যে ধরনের সমাদর পায় একজন নতুন মা, কন্যা সন্তান প্রসবের পরে ততোটাই ধিকৃত হতে হয়। অথচ কন্যা হোক পুত্র হোক জন্ম দেবার জন্যে দায়ী পুরুষের ই, x-y ক্রোমোজম নারীর কিন্তু নেই, নারীর কেবল xx যখন নারী x পুরুষের x মিলিত হয় তখন জন্ম নেয় কন্যা সন্তান। নারীর কিন্তু নেই কোন y। আর পুরুষের y এবং নারীর x মিলিত হয় তখন জন্মগ্রহণ করে পুত্র সন্তান। সমগ্র পরীক্ষাটা তো মনুষ্য নিয়ন্ত্রিত নয়। এখানে কাউকেই দায়ি করা উচিত না। তবু মেয়ে সন্তান জন্মদানের অপরাধে ওই মেয়ের স্বামীকে আর একটা বিয়ে করার জন্যে প্ররোচিত করতে থাকে তার মা, ভগ্নী ( তারাও কিন্তু নারী ) একজন নারী হয়ে নারীর কষ্ট অনুধাবন করে না তারা। বিভিন্ন ধর্মের বিধান ঘাটলে দেখা যায়, পুরুষের চাইতে নারীর স্থান কেবল নীচেই না, নারী সবক্ষেত্রে নিষেধের বেড়াজালে বন্দি। একবার এক বৌদ্ধ মন্দিরে দেখেছিলাম একটা বিশেষ এলাকাজুড়ে লোহার গেইট লাগানো, ভেতরে সব মূর্তি দেখা যাচ্ছে। সামনে একটা ছোট সাইন বোর্ড, তাতে লেখা-
মহিলা ও কুকুরের প্রবেশ নিষেধ!
অনেকের হয়তো মনে হবে- ভালো মন্দ যাই লিখি না কেনো, নারী নিয়ে এতো শতো কথার দরকার কী। এতো বহুকাল ধরেই শুনে আসছি। আধুনিক নারী সংগঠন আরো গলা ফাটিয়ে মরছে এ আর নতুন কী! এতোকিছুর পরেও বৈষম্য দূর হয় না। বাহ্যিক চেহারা বদল হয়েছে মাত্র। আর কিছুই বদলায়নি। কেননা সকল সমস্যার উৎপত্তিস্থল তো বিকৃ্ত ধর্মগ্রন্থগুলো। পৃথিবীর যতো দ্বন্দ্ব, অশান্তি, কলহ; এসবের শেকড়কে চোখ বন্ধ করে কয়েকভাগে ভাগ করা যায়- ধর্মবাদ, বর্ণবাদ, ব্যাক্তিগত মালিকানার কারণে ক্ষমতার দাপট এবং নারী ও পুরুষ। শুধুমাত্র ক্ষমতা পাবার লোভে দিনের পর দিন ধর্মকে বিকৃত করে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে গেছে তারা। ব্যাক্তিগত মালিকানার কারণে নারীও হচ্ছে বঞ্চিত। পিতৃগৃহ হোক বা স্বামীগৃহ হোক। এমনকী রাজনীতিতেও রয়েছে ভেদাভেদ। আজও বন্ধ হয়নি ধর্ষণ নামক পৈশাচিক নির্যাতন। স্কুল পড়ুয়া মেয়েটি বাড়ী ফিরে গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করছে। প্রতিনিয়ত তথাকথিত মামা, কাকা জ্যাঠা নামধারী কতো পুরুষের হাতে কিশোরী মেয়েরা কোনো না কোনোভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। আভ্যন্তরীণ এসব অত্যাচারের কয়টা খবরই বা আসে! নাবালিকা মেয়েগুলো লজ্জায়-ভয়ে মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে পারে না, পাছে তাকে না আবার পাপী, নষ্টা, অ-সতী, কুলটা শব্দে ভুষিত হতে হয়। এরপরেও আমরা দাবি করি পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, নারী স্বাধীন হচ্ছে। নারীর প্রথম আবাসস্থল নিজ পিতৃগৃহ। এখানেই নারীর প্রতি বৈষম্যের সুচনা ঘটে। নারীর প্রতিভাকে মূল্যায়ন করতে হবে। এবং সভ্যতার ভারসাম্য রক্ষায় তাকে কাজেও লাগাতে হবে। নারী এখনও যেনো শরিয়াহর শিকার না হয়।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন