০
১৩৭৯ বার পঠিত
বাংলা ট্রিবিউনের খবর অনুযায়ী ‘দেশ টিভির পরিচালক আরিফ হাসানের কানাডায় বাড়ি, অঢেল সম্পদ’ রয়েছে। গণমাধ্যমটির খবরের উৎস দুর্নীতি দমন কমিশন অর্থাৎ দুদক স্বয়ং। এই ভদ্রলোকের (?) বিরুদ্ধে ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি, অবৈধ সম্পাদ অর্জন, অর্থ পাচার ও সিন্ডিকেট পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে তার বিদেশ যাত্রায় জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তার দুর্নীতিকৃত টাকার নানা অংক প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমটি। এটা নতুন কিছু নয়। এ দেশে এমন অসংখ্য আরিফের উত্থান ঘটেছে গত এক দশকে। জিরো থেকে অসংখ্য মানুষ গত এই এক দশকে ফুলে-ফেঁপে হিরোতে পরিণত হয়েছেন। ক্যাসিনোকান্ডের জিকে শামিমরা তারই একেকজন।
অপরদিকে রয়েছে পুরো বিপরীত চিত্র। গরীব মানুষ আরো গরীব হয়েছে। চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা, সন্তানের খাবার না জোটাতে পেরে সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা, ঋণের দায়ে কৃষকের আত্মহনন- এমন অসংখ্য খবর গণমাধ্যমের প্রকাশিত হচ্ছে। মুশকিল হলো গণমাধ্যমে এ খবরগুলো যাচ্ছে অনুল্লেখ্য স্থানে। ফলে এগুলো এড়িয়ে মানুষের চোখে পড়ছে মেগা প্রকল্পের মেগা ছবি আর সংবাদ। আমরা দেখছি অগ্রগতির বিশাল কর্মযজ্ঞ।
অন্যদিকে শুধুমাত্র সিলেক্টেড কিছু দুর্নীতি প্রকাশিত হচ্ছে, হাইলাইটেড হচ্ছে। যা অনেকটা কর্তার ইচ্ছায় কর্মের মতন। নির্দিষ্ট কিছু সূত্র থেকে নির্দিষ্ট কিছু খবর। এতে মাধ্যমগুলির নিজস্ব কোনো অনুসন্ধান নেই। ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম যারে বলে, তার কোনো প্রয়োগ নেই। ‘সিলেক্টেড দুর্নীতি’ বিষয়টি এজন্যই বলা।
দুই.
উনিশ’শ তেহাত্তরের কিছু খবর ছিলো এ রকম, বরিশালের স্বরূপকাঠিতে ইন্দেরহাট পুলিশ ক্যাম্প এবং স্থানীয় দুইটি ব্যাংক দিন-দুপুরে লুট। এতে নিহত হয় চার পুলিশসহ পাঁচ জন। একই দিনে চাটমোহর থানা আক্রান্ত হয়। এ দিনের দুপুরে চট্টগ্রামের একটি ব্যাংক লুট হয়। রাতে লুট হয় পাথরঘাটার দুইটি রেঞ্জার অফিস। লুট হয় এই অফিসে রাখা বনরক্ষীদের অস্ত্রসমূহ। এসবই এক দিনের ঘটনা।
এগুলো হলো অ্যানালগ জামানার অপরাধ। যেমন চট্টগ্রাম ব্যাংক থেকে মাত্র তেহাত্তর হাজার টাকা নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মাঝখান থেকে খুন হয়ে যান পাঁচজন মানুষ। আর ডিজিটাল জামানায় ব্যাংক লোটার জন্য, ডাকাতির প্রয়োজন পড়ে না, উল্টো ব্যাংক খোলার প্রয়োজন হয়। মানুষের আমানতের টাকা লোপাট করে অবশেষে হাপিশ হয়ে যাওয়া যায়। যেমন আরিফ হাসান সাহেব লোপাট করেছেন। উনাদের লুটে নেওয়া টাকার তুলনায় অস্ত্র নিয়ে ব্যাংক লুটতে যাওয়া তেহাত্তর হাজারের তুলনা স্রেফ হাস্যকর এবং ক্ষেত্রে বিশেষে লজ্জাস্করও বটে। আরিফ সাহেবদের সরাসরি মানুষকে জানে মেরে লুটতে হয় না। স্লো পয়জনের মতন, তাদের লুট প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে হাজার মানুষ মরে যায়।
তেহাত্তরে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিলো কাগজগুলো তখন লিখতে বাধ্য হচ্ছিল, ‘আগে রাত্রির অন্ধকারে যা ঘটতো এখন ঘটছে দিনের বেলাতেই’, এমনটা। আর এখনের জামানায় দিনের বেলায় তো অবশ্যই। আর ঘটছে মানুষ এবং যন্রেিনর চোখের সমুখে, তাও হাসিমুখে। অপরাধটাও এখন অপরাধীদের জন্য আনন্দময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আনন্দের সাথে তারা ‘মারো তো গন্ডার, লুটো তো ভান্ডার’, এই ফর্মুলা অনুসরণ করছেন। জয়তু এমন ফর্মুলা!
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন