৬
১৭৪২ বার পঠিত
প্রায়শই আমি এদেশীয় বামদের মধ্যে ছাগু টাইপ লোকদের আনাগোনা দেখি যারা খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে দাবিও করে তারা মার্ক্সিস্ট আবার তারা মুসলমানও। এসব ছাগুদের ভাষ্য অনুযায়ী মার্ক্সবাদের সাথে ধর্মের কোন বৈরী সম্পর্ক নেই।
আসলেই কী ব্যাপারটা তাই? নিরপেক্ষভাবে এবার তা একটু বিশ্লেষণ করে দেখি। গতানুগতিক ধর্ম, বিশেষতঃ খ্রিস্টধর্ম সমন্ধে মার্ক্স-এর ধারনা ছিলো অধিকতর বিরূপ। তাঁর মতে, অন্যান্য ধর্মের মতো খ্রিস্টধর্ম সব অবাঞ্ছিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন করেছে।
বুর্জোয়া চেতনা ধর্মীয় রূপ ও সমর্থন লাভ করেছে খ্রিস্টধর্মে। যে সকল ব্যাক্তিগত সম্পদ এবং এর অবাধ অফেন্সিভ আচরণ সব অনর্থের মূল খ্রিস্টধর্ম তাকে অনুমোদন করেছে। খ্রিস্টধর্ম অনুসারে মানুষ যখন যে অবস্থায় থাকে তা ঈশ্বর ইচ্ছাতেই থাকে এবং আমরা যেসব দুঃখ-বঞ্চনা ও অন্যায়-অবিচার দ্বারা সমাজকে কলুষিত হতে দেখি সেসবের মধ্যেও একটা মহৎ ঐশ্বরিক পরিকল্পনার আভাস পাওয়া যায়। জগত ও জীবনে সম্পর্কে এ খ্রিস্ট্রিয় ধারণা মার্ক্স পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেন। শুধু ক্রিশ্চানিটি অথবা এর ট্রিনিটি নয় বরং অন্যান্য ধর্মে বর্ণিত ঈশ্বর ধারণাকেও তিনি বাতিল করে দেন। তাঁর মতে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য বিভিন্নসময় বিভিন্নমহল থেকে যেসব যুক্তি হাজির করা হয়, এগুলোর সবই অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। মার্ক্স দেখাতে চান যে, অতীতে দেবদেবী বা ঈশ্বরের ধারণার একটি সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে। যেমন, কিতাবুল মোকাদ্দেস/ ওল্ড টেস্টামেন্ট/ তাওরাত অনুসারে ইহুদিদের ঈশ্বর; জেহোভার মধ্যে ইহুদি জাতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আবার যেমনটা ছিলেন গ্রিক হিরো (!) হারকিউলিসের বাবা জিউস ছিলেন জীবনসম্পর্কিত গ্রিক ধারণার প্রতীক। ঠিক তদ্রুপ মা মেরি/মরিয়মের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে মধ্যযুগীয় নারীর আদর্শ।
আর ইসলামের কথা তো না বললেই নয়,এতে আল্লাহ এবং তার বিধানের মাধ্যমে তৎকালীন আরবের প্রকৃত অমানবিকতা ও বর্বর আচরণগুলো ফুটে উঠেছে।
মার্ক্স বলেন যুক্তির নিরিখে বিচার করলে জগত যে এক বা একাধিক উদ্দেশ্যবাদী সত্তা দ্বারা পরিচালিত তা বিশ্বাস করা যায় না। পূণ্য পুরষ্কৃত হবে এবং পাপ তিরষ্কৃত হবে, এই বিশ্বাসকেও মার্ক্স অযৌক্তিক বলে প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর মতে,
“এ ধারণাগুলো স্রেফ শৈশবকালের কল্পনার ফলশ্রুতি এবং একইসঙ্গে তা প্রাক-বৈজ্ঞানিক চিন্তা ও মানসিকতার পরিচায়ক।”
অর্থাৎ, মার্ক্স স্পষ্টতঃই বলেছেন, ধর্ম এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস একেবারে শিশু বাচ্চাদের মতো কল্পিত বিশ্বাসমাত্র। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ মানুষের ধর্মদর্শনে এক বিরাট পরিবর্তন সাধন করে। এ মত পারলৌকিক জীবনের ওপর নির্ভর না করে বর্তমানের ব্যাপারে মনোযোগী হবার পরামর্শ দেয়। এখন বর্তমান যুগে মানুষের উচিত মরমীবাদ (Mysticism) এর পরিবর্তে বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তির অনুশীলন করা এবং ধর্মতত্ত্বের স্থলে বিজ্ঞান গ্রহণ করা। চার্চের পরিবর্তে তাকে এখন থেকে অনুসরণ করতে হবে বিজ্ঞ সর্বহারা নেতাদের বক্তব্য।
এককথায়, মানুষকে চুর্ণ করতে হবে সব ভুল-ভ্রান্তি ও অমূলক ধারণা এবং বর্জন করতে হবে সকল প্রকারের কুসংস্কারের আফিম এবং বাস্তবধর্মী মানসিকতা দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে জগতে তার অবস্থানকে। যদিও এই মাক্স-এর এই স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি আস্তিক্যভাবধারার লোকদের সাথে একেবারেই যায় না, তদুপরী দুই নৌকায় পা দিয়ে থাকার অভ্যাসটাও ভাববাদী-সাম্যবাদীদের গেলো না।
===========
তথ্যসূত্র:
১. Anti Durhing – Fredrich Engles
২. পুঁজি (Capital)- কার্ল মার্কস
৩. বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ- রাহুল সাংকৃত্যায়ণ
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন
জুলাই ২৬, ২০১২; ৭:৩৯ পূর্বাহ্ন
মার্ক্সবাদ থেকে মার্ক্স বাদ হয়ে আজ শুধু আছে সুবিধাবাদ। আসলে ইসলামী দেশে মার্ক্সবাদ ব্যর্থ। তাই পিঠ বাঁচাতে এরকম খিচুড়ীবাদ তৈরি করা ছাড়া উপায় নেই বামদের।
জুলাই ২৬, ২০১২; ১:৩১ অপরাহ্ন
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রচুর কার্ল মার্ক্স পড়েছিলাম। নিষিদ্ধ ঘোষিত কম্যুনিস্ট পার্টির কমরেডদের মুখে ডাইলেক্টিক্যাল এবং হিস্টরিক্যাল ম্যাটিরিয়ালিজমের তত্ত্ব জেনে কতই না অনুপ্রানীত হতাম বিশ্বে কম্যুনিজম প্রাচারের জন্য। কম্যনিজম জিহাদের জন্য প্রস্তুত হয়ে রইলাম। তখন কমরেড ভাইদের মুখে শুনতাম ইসলাম সহ অন্যান্য সব ধর্ম হচ্ছে কম্যুনিজমের বিজয়ের পথের অন্তরায়।
বাস্তব জীবনে সেই সব কমরেডদের দেখলাম কত ভণ্ড। কম্বোডিয়ার গনহত্যা, ইরাণের মোল্লাদের নিষ্টুরতার বিরুদ্ধে, বিশ্বব্যাপী ইসলামী সন্ত্রাশের বিরুদ্ধে, ৯/১১ সহ সর্বপ্রকার হত্যাকাণ্ডের পর সেইসব কমরেডরা নিশ্চুপ। তারপর দেখলাম, সেই সব বিশ্ববরেণ্য কমরেডরা নির্লজ্জের সাথে জীহাদি এবং ইসলামি হত্যাকারীদের সাথে হাত মিলাচ্ছে।
এরপর আর কি? দেখলাম আমাদের কমরেডদের আসল রূপ। আজ দেখছি চীনের কম্যুনিস্টরা কী পরিমাণ অর্থ চুরি করে বিদেশে পাচার করছে, নিজেদের সন্তান এবং ভাই বোনদেরকে ‘সাম্রাজ্যবাদী’দের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এই খোদ অস্ট্রেলিয়াতে এক বিশাল প্রাসাদসম অট্টালিকা খরিদ করেছে চীনের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত এক বিশাল পলিটব্যুরো সদশ্য। এই বড়ির মূল্য হচ্ছে ৩৭ মিলিয়ন মার্কিনী ডলার। এই সংবাদ আমি দেখলাম একমাত্র টাইম ম্যাগাজিনে।
এরপরেও কি মনে হয় বিশ্বে কম্যুনিস্টদের কোন স্থান থাকবে?
জুলাই ২৬, ২০১২; ৬:৩৪ অপরাহ্ন
absolute power corrupts absolutely.. irrespective of one is communist or otherwise.
Communist rules around the world that we have witnessed itself obviate this fact.
জুলাই ২৯, ২০১২; ৩:১৪ পূর্বাহ্ন
আমি নিজে দেখেছি আমাদের বাড়িতে দুই ভাই দুই দল সমর্থন করত। একজন চীন, অন্যজন মনে হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। তো এই নিয়ে মাঝে মাঝেই দু’জন তর্ক যুদ্ধে অবতীর্ণ হত। আমি অত-শত বুঝতাম না। কেবল দুইজনের (এক জন বেশী যুদ্ধং দেহী) যুদ্ধ মানে বাক যুদ্ধ দেখতাম। ছোট ছিলাম বিধায় ভাবতাম এরা এতো ঝগড়া করে কেন? মাথা ঘামাতাম না।
ওহ আর একটা ঘটনা না বলেই পারছিনা। ৭১ যখন স্বাধীনতার আবহাওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। রেডিওতে ইয়াহিয়ার বক্তব্য শেষ হয়। তখন আমার মেজো ভাইকে দেখি কী ভয়ে বেচারা তার মাও-সে-তুং বইগুলো নিয়ে লুকিয়ে ফেলল। সব বই পুকুরে। বাড়ির পেছনে এক পুকুর ছিল। সেখানে।
বড় ভাই তো বুয়েট এর হল এ। তার অভিজ্ঞতাও নিশ্চয় আরো করুণ হবে।
এরপরে নদীতে কত জল গড়াল। দেশ স্বাধীন হল। এখন কোথায় গেছে মাও-সে-তুং কোথায় গেছে কী।
আমার স্বামীর বন্ধু এবং বন্ধু স্ত্রী। কট্টর বাম করে। ইদানীং বামের নাম হয়েছে বাসদ, নাকি জাসদ হবে একটা।
তারা কেউ নামাজ, রোজা বিশ্বাস করে না। আমার স্বামী কিন্তু এমন একজন ধার্মীক নন। তবু এনাদের নামাজ পড়িয়ে ছেড়েছে। এখন তারা দিব্বি রোজা রাখে। আমি অবাক হয়। বিস্মিত হই।
এরা সবাই তাদের সন্তানদের ইংরাজী মাধ্যমের স্কুলগুলোতে পড়াচ্ছেন। আমি একদিন বন্ধুর স্ত্রী’কে জিজ্ঞেস করায় জানতে পারলাম বিদেশে পাঠানোর জন্য ইংরাজী মাধ্যমে পড়াচ্ছেন। তাদের সম্পদের অভাব নেই।
প্রিয় পাঠক নিশ্চয় ধৈর্যহারা হচ্ছেন। কী করি। এই ভূতের মুখে রাম-নামের কেচ্ছা অনেক আছে।
যেমন কিনা এক সময় ভারতে নকশাল বিখ্যাত হয়ে পড়ে। পরবর্তিতে নেতারাই বিশ্বাসঘাতকতা করে।
হায় রে দুনিয়া। এরপরে পাঠক বিচার করবেন। কী সত্য বললাম কী মিথ্যে বললাম।
আগস্ট ১, ২০১২; ১:৫৪ পূর্বাহ্ন
কম্যুনিজম এর তত্ব পড়তে ভালই লাগে। ভাবতেও ভাল লাগে। বাস্তবে ইমপ্লিমেন্টের করার কথা কখনোই চিন্তা করা সম্ভব না যদি সঠিকভাবে আমাদের বৈশিষ্ট্য বুঝতে পারে কেউ।
আগস্ট ১, ২০১২; ৩:০৯ পূর্বাহ্ন
হক কথা রঞ্জন১
বেস্ট ফিকশন ২০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হলে বেস্ট নন-ফিকশন বিক্রি হয় ১ মিলিয়ন বা তারও কম।