০
১৬৩৯ বার পঠিত
শাস্ত্রমতে শশক, মৃগ, বৃষ ও অশ্ব হরেকরকম পুরুষ আছে এই দুনিয়ায়। কিন্তু শাস্ত্র আর দুনিয়াদারি এক জিনিস না।
পুরুষ -১
এরা মনে করে স্ত্রীজাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষের সেবা ও মনোরঞ্জনের জন্য। নিজ স্ত্রী ও সন্তানের গুরুত্ব এরা কখনও বোঝেনা। এরা ভাইয়ের সন্তানকে বেশী ভালোবাসে আর মা’র জন্য জীবন উৎসর্গ করে। এইসব পুরুষের যৌবনের শুরুটা খুব ভালো কাটে। অর্থ ও সামর্থ্য শেষ হয়ে আসলে এদের জীবন কুকুরের মত হয়ে উঠে। এসব পুরুষের স্ত্রীরা অচিরেই গৃহত্যাগ করে… যারা টিকতে পারে, তারা শেষ জীবনে স্বামীকে চরম শাস্তি দেয়।
পুরুষ -২
এরা বিবাহের পর স্ত্রী ছাড়া কিছুই বোঝে না, স্ত্রীর মা-বাবা তার মা-বাবা, বোন-ভাই তার বোন- ভাই। বিবাহের পর এই পুরুষদের স্মৃতিবিভ্রম ঘটে, তারা নিজ ভাই-বোন-মা-বাবা কাউকে চিনতে পারেনা। এদেরও যৌবনকাল খুব সুখে কাটে, শরীর ভেঙে পড়লে স্ত্রী -সন্তানের কাছে সে বোঝা হয়ে যায়।
পুরুষ -৩
এরা খুব ভদ্র ও শান্ত টাইপ। এদের যৌনজীবন শুরু হয় গৃহকর্মী দ্বারা। মাথা ঠাণ্ডা এই পুরুষগুলি জীবনে উন্নতি লাভ করে এবং এদের ভাগ্যে থাকে পরমা সুন্দরী স্ত্রী। এরপরও এদের যৌনজীবনে গৃহকর্মীর অনুপ্রবেশ ঘটেই। এরা সবকিছু থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারলেও এই বিশেষ দুর্বলতাটির জন্য সবসময় একটা আন্তঃচাপে থাকে। জগতের কাছে এরা খুব ভালো মানুষ, একমাত্র পরিবারের লোকেরাই তার প্রকৃত রূপ জানতে পায়। এ জাতের পুরুষ মৃত্যু অবধি সুখময় জীবন যাপন করে।
পুরুষ -৪
এসকল পুরুষ স্ত্রী জাতির ওপর বিশেষ দূর্বল থাকে। কিন্তু বিয়ে করা বউয়ের ওপর অন্য পুরুষ দুর্বল হয়ে যেতে পারে- একথা ভেবে নানা আশংকায় ভোগে। কেউ কেউ নিজ স্ত্রীকে গৃহবন্দী করে রাখে। কেউ কেউ নিজ স্ত্রীকে নারী স্বাধীনতার নাম করে সাজসজ্জা, অলংকার বর্জন এমনকী স্ত্রীর সুন্দর চুল কাটতে প্ররোচিত করে। এইসব পুরুষেরা নিজ স্ত্রীকে হয় পর্দায় রাখে অথবা তাকে আকর্ষণহীন এক রূপে মানুষের কাছে উপস্থিত করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো… সেসকল নারীজাতিকে দেখে সুখ লাভ করবে কিন্তু তার নারীকে কেউ দেখবে না বা দেখেও দেখবে না।
পুরুষ -৫
এ জাতের পুরুষ নারী থেকে দূরবর্তী স্থানে থেকে নারীর চিন্তায় বিভোর হয়ে সাহিত্য রচনা করে। পরবর্তীতে নারী সংস্পর্শে এসে এদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। এ পুরুষ প্রেয়সীকে দিতে চায় বেলীফুলের মালা আর প্রেয়সী চায় হিরা- জহরত। বাসর রাত এ পুরুষের জন্য কালরাত। অনেকটা এরকম-
পুরুষ: (নববধূর ঘোমটা খুলতে খুলতে) তুমি সন্ধ্যার মেঘ মালা… তুমি আমারো সাধের সাধনা… তুমি আমারি…
নববধূ: আমি জানি, আমার এখন কী করতে হবে
পুরুষ: (চকিত কাব্যিক নয়নে চেয়ে) কী গো!
নববধু: কাপড় খুলতে হবে। …!
এরপর এই পুরুষ হয় বাসর রাতেই গৃহত্যাগী হবেন, নতুবা কিছুদিন অন্তর অন্তর।
পুরুষ -৬
এ জাতের পুরুষ ভাবে একরকম আর এদের জীবন হয় অন্যরকম। তাই স্ত্রী দ্বারা জীবনেও সুখ লাভ করতে পারেনা। মূলত এদের স্ত্রী যেমনটি হয় তারা চায় তার বিপরীত। তাই তারা সুখের (ক্ষণস্থায়ী) সন্ধানে বাহিরে যায়। এরা মা ও স্ত্রী দু’পক্ষের কষাঘাতে জর্জরিত থাকে… তাই এ চাপ থেকে মুক্তি পেতে বিচিত্র সুখলাভে নেশা, পানি ও চামড়া গ্রহণ করে। এরা দুখী অথচ ভোগবাদী।
পুরুষ -৭
এ জাতের পুরুষ মায়ার বাধনের সন্ধানে থাকে। এক বাধন ছুটতে না ছুটতে অন্য বাধনে জড়িয়ে পড়ে। তারা মনে করে জগৎ হলো ফুলের বাগান, এ বাগানে নানা ফুলের নানা সুবাস। প্রতিটা ফুলের সুগন্ধ নেয়াই তাদের পাথেয়। এরা জাতে ভ্রমর। এদের অদৃষ্টে অন্তত একবার গণপিটুনি থাকে।
পুরুষ -৮
এ পুরুষ কর্মকেই জীবনের উদ্দেশ্য বলে জানে। এরা নিজ কর্ম নিজেই সম্পাদন করে, কারো সাহায্যের আশায় থাকেনা। এমনকী নিজ স্ত্রীকেও যাতনা দিতে চায় না। তারা মনে করে শ্রমই সব… এ হাত যতদিন আছে ততদিন কারো সাহায্যপ্রার্থী হওয়া অনাবশ্যক। এসকল পুরুষের মূল মন্ত্র, ‘যার কেউ নাই… তার হাত আছে’।
পুরুষ -৯
এরা সর্বকামবাদী। এদের কাছে রিস্তা ও লিঙ্গভেদ বলে কিছু নাই। এরা নীতিতে দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথম ধারাটি মনে করে জগৎ প্রেমময়, শুধু প্রেয়সী নয়- প্রেয়সীর বোন, মা, খালা, চাচী, মামী, সখী সবই প্রেমানন্দ নদী… যাতে অবগাহন সম্ভব।
অন্য ধারাটি পুং, স্ত্রী, উভ কিংবা ক্লীবলিঙ্গ … এদের মধ্যে কোন বিভেদ জানে না। কল্পনা বেগমের ভাষায়-
‘এরার কাছে বেট্ঠাইনও যা বরকীও তা। এরা বেকতেরেই বালা পায়।’
সকল পুরুষ থেকে এ জাতের পুরুষ বিপদজনক। অন্দরমহল থেকে গোয়ালঘর সবই এদের থেকে দূরে রাখতে হবে।
মূল ভাবনা: কল্পনা বেগম (আমার সাহায্যকারী বুয়া)
অলংকরণ ও ভাষান্তর (মুমিসিংগা থেকে): পাপিয়া জেরীন
ছবি: ধ্রুব চন্দ্র রায়।
ই-মেইলে যোগাযোগ করুন