পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তনের জনগণের সংগ্রাম ছিল ধারাবাহিক, যার সূচনা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অব্যাবহিত কাল ১৯৪৮ সাল থেকেই, ভাষার প্রশ্নে শুরু হয়েছিল। কিন্ত ১৯৭১ সালে আকষ্মিক তা পরিবর্তিত হলো গেরিলা যুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধে। আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি সহ সকল রাজনৈতিক দল এবং তাদের সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মীদের উচ্ছসিত অংশগ্রহনে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ৮ কোটি বাঙালিকে এনে দিয়েছিলো একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ঐ যুদ্ধে পাকিস্তান এবং পাকিস্তানি সৈন্যদের সমর্থন করেছিলো মুসলিম লীগ, জামায়েত-ই-ইসলাম, নেজামে ইসলাম সহ তৎকালিন উগ্র ইসলামি দল সমূহ ও তাদের সমর্থক উগ্র ইসলামি ছাত্র সংগঠনগুলো। তাদের চিন্তা চেতনায় তারা মনে করেন পাকিস্তান তথা পশ্চিম পাকিস্তান ইসলামি রাষ্ট্র, মুসলমানদের নৈতিক দায়িত্ব হওয়া উচিত পাকিস্তানিদের সমর্থন দেয়া। আর সেই সমর্থন দিতে গিয়ে গোলাম আজম, সাকা চৌধুরী, নিজামী, সাঈদী গং বাংলাদেশের স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধকে “গন্ডগোল” আখ্যা দিয়ে বাঙালিদের তথা মুক্তিযোদ্ধাদের মারার জন্য সংগঠিত করলো ‘রাজাকার’, ‘আলবদর’, ‘আলশামস’, ‘মুজাহিদ’ বাহিনী! যারা মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার, আত্মিয়স্বজনদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে, তাদের হত্যা করেছে, লুটপাট করেছে তাদের এবং হিন্দু, বৌদ্ধ খৃস্টানদের ঘবাড়ি! ধর্ষণ করেছে তাদের স্ত্রীকন্যাদের। এসব তারা করেছিলো ইসলামী জিহাদের নিয়মকানুন এবং বিভিন্ন যঘন্য ফতোয়া জারির মাধ্যমে! যা ছিল রীতিমত মানবতা বিরোধী পৈশাচিক, নির্মম, লোমহর্ষক।
যুদ্ধকালীন মানবতা বিরোধী অপরাধের সেইসব দায়ে অবশেষে একদিন ফাঁসী হল সাকা চৌধুরী এবং মুজাহিদের। লক্ষ লক্ষ শহিদের আত্মা শান্তি পেলো কিনা তা আমরা যদিও না বুঝতে পারি কিন্তু এটা নিশ্চিত বোঝা যায় যে শহিদদের সন্তান-সন্ততি পরিবার সদস্য আত্মিয়স্বজনরা খুশি হয়েছেন, খুশি হয়েছেন বাংলার আপামর মানুষ। দু:খি হয়েছেন দন্ডিতদের স্ত্রীপুত্র স্বজন, যা নিতান্তই স্বাভাবিক। আর শোকাভিভুত হয়েছেন জনগণের একটি ক্ষুদ্রাংশ যারা এই রাজাকারদের মৌলবাদী চিন্তা চেতনার অনাদর্শের চর্চা ও সমর্থনকারী সেই জামাত-শিবিরের অসংখ্য সদস্য এবং বিএনপির জামাতঘেষা অংশের অসংখ্য মানুষ! “জনগণ”-এর এই অংশের এক বিশাল সংখ্যা সংখ্যার দিক থেকে হেলাফেলার নয় মোটেই।
বাংলাদেশের প্রায় ৯৩ ভাগ মোসলমান মানুষের মধ্যে ইসলামের প্রতি আসক্তি অবশ্যই ১০০% নয়! গতানুগতিক সামাজিক ধারায় জন্মমূহুর্তেই আজান শুনে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মুসলিম সমাজের শিশু মানুষটি শৈশব থেকেই আরবী শব্দ ও উচ্চারণে আজান শুনে, আরবী সুরা কালাম, কায়দা সিপারা কোরান শুনে ও শিখে, নানা আরবী শব্দের প্রাত্যাহিক চর্চায় শৈশব পেরিয়ে, কৈশর পেরিয়ে পরিণত বয়োসে পদার্পনের সাথে সাথে কেউ কেউ দাড়ি রেখে, নিয়মিত মাথায় টুপি পরে, হিজাব, বোরখা পরে, হাতে তসবি নিয়ে ফরহেজগার হয়ে যান বটে, তবে অধিকাংশ মানুষই তা হন না! সেই অধিকাংশরা তাই বলে ইসলামের বাইরে চলে যাননা। বরং ইসলামের, নবি মোহাম্মদের কেউ বদনাম করলে তারা সেই ফরহেজগারদের চাইতেও অধিক ক্ষেপে যান বদনামকারীর কিংবা মন্তব্যকারীর উপর! হয়ে ওঠেন উগ্র, হিংস্র। এই শ্রেণীর মোসলমানদের একটি অংশ ফরহেজগার শ্রেণীর বয়ান, ওয়াজ, হাদিস- ব্যাখ্যা, ফতোয়া ইত্যাদিকে পুঁজি করে তাদের ধর্মবোধকে শানিত করার লক্ষ্যে ভাবপ্রবণ ও ক্ষেত্রবিশেষে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন! তাদেরই আবেগে সৃষ্ট ধর্মীয় রাজনীতি, মৌলবাদি জঙ্গি সংগঠন সমুহ। তাদের ভাব ও আবেগ আপ্লুত হয় যখন তারা পড়েন (কোরান, হাদিস), ওয়াজ শোনেন, দেখেন, বোঝেন যে, ধর্ম প্রচারের পুরষ্কার অভাবনীয়, যেমন দৌড়ে পুলসিরাত পার হওয়া, ডাইরেক্ট বেহেশতে যেতে পারা, ৭২ হুর-গেলেমান পাওয়া, নহরে সরাবন তহুরা, হা করলেই বেহেশতি সুস্বাধু ফল মুখে চলে আসা, বৃক্ষ-পল্লবের থেকে সুমধুর সঙ্গীত ভেসে আসা ইত্যাদি, (টেলিভিশন জাতীয় কিছু অবশ্য বিবরণে পাইনি, এইসব সন্নিবেশনকালীন আবিষ্কৃতই হয়নাই) তখন তারা সেই পুরষ্কারের লোভে উন্মাদ হয়ে যান। তারা হয়তো বোঝেননা তাদের উন্মাদনা! তারা ভাবেন এটা তাদের দায়িত্ব!
গোলাম আজম,নিজামী, মুজাহিদ, ফকা,সাকারা সেই দায়িত্ববোধ থেকেই ৭১ সালে পাকিস্তান রক্ষার ঈমানি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যা, লক্ষ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমহানী করেছেন, লুটপাট করেছেন, অগ্নি সংযোগে ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছেন! তাদের সেই অবস্থান থেকেতো তারা ভুল করেননি বরং তাদের ইসলাম অনুযায়ী ইসলামী দায়িত্ব পালন করেছিলেন! তাই মুসলমানদের ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা উচিৎ। সেজন্যেই তারা তাদের ভুল স্বিকার করেননাই মৃত্যুর মুখোমুখি এসেও! “সাকা- মোজাহিদ ভুল স্বিকার করে ক্ষমা প্রার্থনা… করেছেন” বলে ফাঁসীর পূর্ব মূহুর্তে যে সংবাদ শোনা গিয়েছিল তা পরে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে বিস্ময়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে! হতে পারে শেষ রক্ষা হচ্ছেনা বুঝতে পেরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন, কিন্তু সেটা প্রাণে বাঁচার স্বার্থেই করেছিলেন, ভুল মেনে নেয়ার জন্য নয়!
নিজেদের পাকিস্তানপ্রীতি তাদের এমনই যে সেটাই তাদের দম্ভকে, তাদের মনোবলকে স্থায়ী রেখেছে। আর এই পাকিস্তান-প্রীতি মানেই ইসলাম প্রীতি, মুসলিম প্রীতি, যা ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিতে অন্যায়ও নয়, ভুলও নয়!
‘জনগণ’ এর একটা ক্ষুদ্র অংশ তাদের এই পাকিস্তানপ্রীতিকে সমর্থন করেছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়। মুসলিম লীগের কিছু মানুষ, জামাতের অধিকাংশ মানুষ এবং তার সাথে মানসিক দিক থেকে মৌলবাদী বিচ্ছিন্ন কিছু মানুষ জামাত-মুসলিম লীগের যুদ্ধকালীন বাহিনী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, আলমুজাহিদ ইত্যাদি গড়ে তুলেছিলো পাক- বাহিনীর নেতৃত্বে! ঘোষনা করেছিলো জিহাদকালীন বিভিন্ন ফতোয়া। মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ সমর্থক, মুক্তমনা বুদ্ধিজীবি ছিল তখন তাদের আক্রমণের টার্গেট। তার সাথে আরেক মাত্রা যোগ হয়েছিল লুঙ্গি প্যান্ট খুলে মুসলিমত্ব পরীক্ষা করে দেখা! হিন্দু এবং অমুসলিম বধ এবং হিন্দু নারী ধর্ষন, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন হত্যা এইসবই ছিলো তখন গোলাম আজম, কামারুজ্জামান, মুজাহিদ, ফকা চৌধুরী, সাকা চোধুরী, সাঈদী প্রমুখের এবং তাদের অনুসরণকারীদের (জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ) ঈমানি দায়িত্ব! ‘পাকিস্তান রক্ষা’ প্রকারান্তরে ‘ইসলাম রক্ষা’ হিসেবে তাদের দায়িত্ববোধে প্রবিষ্ট হয়। কাজেই এটাকে “ধর্মের নামে মানবতা বিরোধী কর্মকান্ড” বলার মধ্যে আমি মুসলিম সম্প্রদায়গত দিক থেকে এক ধরনের আত্মপ্রবঞ্চনা খুঁজে পাই! “ধর্মের নামে” কেনো বলা হয় বুঝিনা, যেখানে প্রকৃতই ইসলাম অনুমোদন করে এই ভুমিকাকে! আসলে ওরাইতো সেই অর্থে “প্রকৃত মুসলমান”! বাকি সবাই আমরা সামাজিকভাবে মুসলমান! প্রকৃত মুসলমানরাইতো ইসলামের বিধিবিধান, হজরত মোহাম্মদ এর সুন্নত, আক্বিদা ইত্যাদি মোতাবেক জীবন অতিবাহিত করেন! আমরা ( সামাজিক মোসলমান কিংবা নামে মোসলমান) কেউ কেউ শুক্রবারে জুম্মা, সবেবরাতে, শবেকদরে মসজিদে রাত্রী যাপন, ঈদে-চান্দে জামাতে নামাজ পড়ার জন্য চকমকে পোশাক পরে আতর লাগিয়ে জায়নামাজ কাঁধে মসজিদে বা ঈদগাহে যাওয়া, মাঝে মাঝে মিলাদে শরীক হওয়া, ওয়াজ মাহফিলের সামিয়ানার নিচে চাদর গায়ে দিয়ে ভাবে গদগদ হয়ে বসে রাত কাটানো ইত্যাদি ছাড়া ইসলামের তেমন কিছুই করিনা। তবে ইসলাম এবং আল্লাহ-রাসুলের কোনো অসঙ্গতি সম্পর্কে কেউ যদি কোনো যৌক্তিক মন্তব্য বা সমালোচনা করেন, মুসলিম অথবা বিধর্মী যে কেউ, তাহলে প্রকৃত মোসলমানরা (জঙ্গি, উগ্রপন্থি, জিহাদি,ধর্ম-সন্ত্রাসি প্রভৃতি) যেমন ফানাফিল্লাহ হয়ে ওঠেন, উন্মাদ হয়ে ওঠেন, হাতে কিরিচ চাপাতি নিয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দেন, আমরা অনেকেই তেমনটা না করলেও কিছুটা হলেও তাদেরকে ভেতরে ভেতরে সমর্থন করি! তা হলে আমরা কিসের, কেমন মুসলমান! তারাইতো “প্রকৃত মুসলমান”! আমরা না মানলেও- তারা মরে গেলে শহিদ, জীবিত থাকলে গাজি! ইসলামী নিয়মানুযায়ী তাদের নসিবেই বেহেশত অবধারিত!
১৯৭১ সালের২৫ মার্চ থেকে ১৪ ডিসেম্বর এই ৯ মাসের “গন্ডগোল”কে তাই “প্রকৃত মুসলিম”রা কাফের বাঙালির বিরুদ্ধে ইসলামী জিহাদ হিসেবে মুসলিম পাকিস্তানীর পবিত্র ও ঈমানী দায়িত্ব মনে করেই কাঁধে রাইফেল আর মনে ঘৃণা, বিদ্বেষ, উগ্র জোশ ধারন করেছিলেন! তা হলে কি তারা ভুল করেছিলেন!
না! তাদের নীতিগত দিক থেকে মোটেই না!
অপর পক্ষে সেই ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধকে হিন্দু, মুসলিম, খৃষ্টান, বৌদ্ধ বাঙালিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তির লড়াই হিসেবে গণ্য করে হাতে নিয়েছিলেন স্টেনগান, রাইফেল, এস এল আর, গ্রেনেড ইত্যাদি আর মনে ধারন করেছিলেন মানবতা, অসাম্প্রদায়িকতা, সমাজতন্ত্র, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার সংকল্প। সেক্ষেত্রে ধর্ম কিংবা সম্প্রদায় ভেদাভেদের কোনো প্রশ্নই ছিলনা!
সেই প্রেক্ষাপটে বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধকালীনই দুই বিবাদমান সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল যে, এই সত্যকে পাশ কাটানোর কোনোই অবকাশ নেই যে, আমি মূলত: এই আলোচনায় তাই বোঝাতে চাইছি! সে’ক্ষেত্রে ধর্ম ই এই বিবাদের কারণ যে, তা’তেও সন্দেহ থাকার কারণ দেখিনা। এবং সেই ধর্ম যে ‘ইসলাম’ তাও স্পষ্ট। হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ধর্মাবলম্বিরা এক্ষেত্রে বরং ভুক্তভুগিই হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে মূলত: হিন্দুরাই লাঞ্চিত ও খুন হয়েছে সর্বাধিক। বহু হিন্দু শিখ ভারতীয় সৈন্যও নিহত হয়েছিলো।
অন্য দিকে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে “টেরোরিস্ট” হিসেবে পরিচিতি ক্ষেত্রে “প্রকৃত মুসলমান”রাই প্রতিষ্ঠিত! আল-কায়েদা, বোকো হারাম, তালেবান, জামাত, আই এস ইত্যাদি ইসলামী সংগঠনগুলো ইসলামী আইন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিহাদে লিপ্ত থেকে ঘোষনা করে যাচ্ছে যে তারাই প্রকৃত ইসলামি! তাই তারা কাফের বধের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা করবে ‘ইসলামী আইন’ এবং ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ ( আই এস)!
সুতরাং সরল সমিকরণে এটাই মনে হয় যে ঐসকল সাংগঠনিক ইসলামী প্রতিষ্ঠানে যারা সদস্য-সমর্থক, তারাই কেবল প্রকৃত ইসলামী। বাংলাদেশে তাই জামাত, শিবির ইত্যাদিসহ আন্তর্জাতিক উল্লেখিত সংগঠন সমুহের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল ইসলামভিত্তিক সংগঠনগুলোতে যুক্ত মানুষরাই “প্রকৃত মোসলমান”!
ফাঁসীপ্রাপ্ত সাকা চৌধুরী এবং মরহুম মুজাহিদ সেরকমেরই প্রকৃত মুসলিম, তাই তাদের মৃত্যুতে বলতেই হয়- ইন্না লিল্লাহি অ ইন্না ইলাহি রাজেউন!
আমরা যারা সাধারন মুসলিম, সামাজিক মুসলিম তারা তাহলে ইসলামী নিয়মে কোন পর্যায়ে আছি! আমার কেবলই মনে হয়- না ঘরকা, না ঘাটকা! আমরা না মানছি এদের প্রকৃত মুসলমান, না করছি ইসলামের প্রকৃত চর্চা! ইসলামি আদর্শেই এরা সব কিছু করছে অথচ আমরা তাদের বলছি-জঙ্গি, আতংকবাজ, দুষ্কৃতিকারী, যুদ্ধাপরাধি ইত্যাদি! আবার আমরাই ইসলামের কোনো বিধানের সমালোচনাও সইতে পারিনা। কেউ কেউ ফানা ফিল্লাহ হয়ে যাই!
আমরা ইসলামীও থাকতে চাই আবার অসাম্প্রদায়িক, মানবিকও হতে চাই! এ কেমন দ্বন্দ্ব!
ধর্ম সঠিকভাবে করলে ‘জঙ্গি’, ধর্ম না করার সিদ্ধান্ত নিলে ‘নাস্তিক’, মাঝামাঝি থাকলে ‘ভন্ড’! আবার ‘জঙ্গী’ কিংবা ‘নাস্তিক’ দুটোই মারাত্মক পরষ্পরবিরোধি! অন্য দিকে ‘জঙ্গী’র চাইতে ‘নাস্তিক’ সামাজিকভাবে (বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে) অধিক ঝুকিপূর্ণ অবস্থান! মুক্তচিন্তার মানুষদের তাই এ এক চরম সংকটজনক অবস্থান!
হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ধর্মেও ‘প্রকৃত ধর্ম’ চর্চাকারীকে চরম ধার্মিক কিংবা ‘প্রকৃত ধার্মিক’কে চরম হতেই হয়! ভারতে ‘শিব সেনা’ প্রভৃতি ধর্মভিত্তিক সংস্থার ‘প্রকৃত ধার্মিক’রা মুসলিম ‘জঙ্গি’দের মতোই। বার্মায় ‘প্রকৃত বৌদ্ধ’ রা ‘জঙ্গি’রুপে মেরেছে, মারছে অগনিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের! আর খৃষ্টানদের হলকাস্টতো ভুবন বিখ্যাত কালো ইতিহাস!
সকল কিছুর প্রেক্ষিতে কি মনে হয়না, কি প্রয়োজন এই ধর্মাধর্মের, যা মানুষের চেতনাকে বিভ্রান্ত করে, মানুষকে করে তোলে হিংস্র অমানবিক পশুতুল্য!