মানুষের কমনসেন্স থিংকিং দিয়ে, আধুনিক রাষ্ট্রের কমপ্লেক্স প্রবলেমগুলোকে যদি সমাধান করা যাইত তবে পৃথিবীতে কোন অভাব অনটন থাকতো না, প্রতিটি রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষ হ্যাপিলি এভার আফটার জীবন যাপন করতো।
কৃষকের ধানের মুল্যের বিষয়টা খুবই কমপ্লেক্স একটা ইস্যু। একদিক থেকে, আপনি ১০ টাকায় চাল না দিতে পারলে হাসিনারে গাইল দেন, আরেকদিকে ১৫ টাকায় ধান বেচে দেশের আড়াই কোটি কৃষকের জীবিকা বিপন্ন হইলে- রাষ্ট্র ফেইল করছে দাবী করেন। তখন আপনি বলেন, তাইলে রাষ্ট্র সব ধান কিইনা নিক বেশী দামে কিনে কম দামে বেচুক।
কমনসেন্সে ফাইন আইডিয়া, কিন্ত বাংলাদেশে রিয়ালিটি হচ্ছে, বর্তমানে দেশে প্রায় চারশত লাখ মেট্রিক টন ধান গম ভুট্টা বা দানাদার শস্য উৎপাদন হয়। মানে, চারকোটি ম্যাট্রিক টন। পার কেজিতে, ২৫ টাকায় কিনে ১৫ টাকায় বেচলে, প্রতি মেট্রিক টনে ভর্তুকি দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। তাই, চার কোটি ম্যাট্রিক টনে ভর্তুকি দিতে হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
এই চল্লিশ হাজার কোটি টাকাও কিন্ত সরকার আল্টিমেটলি এই কৃষক, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত জনগণকে ট্যাক্স করে আদায় করবে। এবং এগেন প্রতিটি ইকনোমিক ডিসিশানকে, প্রতিটি রাষ্ট্রের ম্যানেজমেন্ট সক্ষমতা, দুর্নীতি, রাজনীতি সবকিছুই মাথায় রেখে নিতে হয়। কৃষককে মরণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে সরকার যদি দেশের সকল দানাদার খাদ্যকে, একটা ফিক্সড রেটে কিনে কম মুল্যে বেচতে যায়- কোন গ্যারেন্টি নাই যে, সেই সুবিধা কৃষকের কাছেই যাবে। র্যাদার আমরা এই রাষ্ট্রকে যেভাবে চিনি তাতে আমরা জানি, নিশ্চিতভাবে জনগণের ট্যাক্সের এই টাকা সুনির্দিষ্ট কিছু লোকের পকেটেই ঢুকবে।
এগেইন, কৃষককে বাচাতে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রাইস সাপোর্ট দেয়া খুব কঠিন কিছু না। কিন্ত স্যাডলি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিগত দশকের উন্নয়ন মূলত, ঋণ কেন্দ্রিক। লুটের এই সরকার প্রতিটা প্রোজেক্ট ঋণ করে চালায়। সে বর্তমানে আয় থেকেপ্রায় ৭০% থেকে ৮০% ব্যয় বেশী করে। যেইটা আমার হিসেবে পাঁচ বছরের এভারেজে পৃথিবীতে সর্বোচ্চ।
সত্যি যদি আমাদের ডেভেলপমেন্ট হতো রাষ্ট্রের কাছে যথেষ্ট আয় থাকতো তবে, এইটা করা সম্ভব ছিল। চায়না, ইউএসএ এইটা করে।
এবং কৃষককে বাচাতে যদি প্রাইস সাপোর্ট দিতেই হয় তবে, একটা ইনেফিসিয়েন্ট কমপ্লেক্স ম্যাকানিজমে না গিয়ে, কৃষককে সরাসরি ৪০ হাজার কোটি দেয়াটাতে কৃষক আরো বেশী বেনেফিটেড হবে। ভারত এই কাজটা এখন করছে। কৃষকদের কারড দিয়ে দিয়েছে, সরাসরি, সেই কার্ডে টাকা দিচ্ছে।
কিন্ত, আমি প্রথমে কমপ্লেক্সিটি নিয়ে আলাপটা শুরু করেছি। যেইটা বলতে চাইতেছিলাম যে, চালের দাম নিয়ে কৃষকের সাফারিং বাংলাদেশের জন্যে ইউনিক কোন প্রবলেম না।এবং এশিয়ান সকল রাষ্ট্রের আরবান এলিটসরা মাত্র দুই জেনারেশান আগে কৃষক পরিবার থেকে আসছে- তাই, কৃষকদের সাফারিং এর প্রতি একটা সিম্প্যাথি এবং তাদের সাপোর্ট দেয়ার ম্যাকানিজম সাউথ এবং সাউথ ইষ্ট এশিয়ার প্রতিটা দেশে আছে। এবং প্রতিটা দেশে কৃষককে বিভিন্ন ভাবে সাপোর্ট দেয়া হয়।
কিন্ত, এই খানে ম্যাকানিজম সহজ করার জন্যে সরাসরি টাকা দেয়া বা কিনে নেয়া বাদেও আরো কিছু কাজ করার আছে। সবার আগে বোঝার ইস্যু হচ্ছে, কৃষককে কেন চালের দাম কম পায় তার মূল ইস্যুটা বোঝা- বুঝলে আপনি সেই মত পলিসি ম্যাকানিক্ম মার্কেট ম্যাকানিজম এবং ইন্টারভেনশান তৈরি করতে পারবেন।
কৃষকের চালের দাম না পাওয়ার প্রধান কারন, অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকের নিজস্ব পুঁজি খুব সীমিত। ফলে, যখন ধান কাটা হয় সেই সময়ে সারা দেশে খুব অল্প সময়ে ধান বেচার একটা চাপ তৈরি হয়। যেইটার সুবিধা নেয় মিলার, শর্ত টাইম ইনভেস্টর, , পুজিপতি এবং ফারিয়ারা- যাদের হাতে ক্যাশ টাকা আছে ।
এইটা অলমোস্ট কোরবানির সময়ের চামড়ার মুল্যের মত একটা ইস্যু। কৃষক যেহেতু বিভিন্ন ভাবে ঋণ নিয়ে, তার ধান চাষ করে তাকে, উতপাদনের সাথে সাথে ধান বেচে দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে। এবং সেই মূল্য নিয়ে, তাকে আবার আগামী সিজনের উৎপাদনের খরছ যোগানোর চাপ থাকে। একই সাথে তার পারিবারিক এবং অনান্য খরছ তো আছেই।
ফলে এই সময়ে, যার হাতে টাকা আছে, সেই কিং। এবং এই সময়ে মজুতদারেরা কম দামে ধান কিনে মজুত করে।
এখন কৃষক যদি, ধান উৎপাদিত হওয়ার পরে, তার মজুত ধরে রাখতে পারে, তবে, তারা মূল্য বাড়ার জন্যে অপেক্ষা করতে পারে। আমি ছোট কালে প্রতিটা বাশায় চালের গুদাম দেখেছি, যেইটা একটা গোল টিনশেড ঘর। যেইটা এখন আর কৃষকের নাই। এইটা ফার্স্ট এবং ফান্ডামেন্টাল প্রবলেম। যেইটা আমাদের দেশের কোন অর্থনৈতিক চিন্তায় দেখিনা। সবাই খালি বলতে থাকে, সরকার ধান কেন, ধান কেনো।
এই খানে, যে সলিউশান অফার করা হচ্ছে, তাতে কৃষকের কোন এম্পাওয়ারমেন্ট নাই। ইউ সি, একজন কৃষক আপনার আমার থেকে ভালো জানে, কিভাবে মার্কেট থেকে বেটার রেট নিতে হবে। কিন্ত প্রান্তিক কৃষক ধান উদপাদনের সাথে সাথে বেচার যে বাধ্যবাধকতায় থাকে, তাতে সে মার্কেটে কোন ধরনের বারগেনিং পাওয়ার অর্জন করেন।
যে বারগেনিং পাওয়ারটা থাকে, মিলারদের কাছে যারা ব্যাংকের কাছ থেক বড় অনেকের ঋণ পায়। ব্যাংক, এই ঋণটা দেয় কারন ব্যাংক জানে, মিলার খুব কম দামে ধান কিনতে পারেছে সে লাভ টা করবেই। কারণ, মিলারের ব্যাংক মজুতটা দেখতে পারে, টাকাটা কিভাবে খাটানো হচ্ছে সেইটা দেখতে পারে, তাই সে এই ঋণে রিস্ক দেখে না।
এই খানে কৃষি ব্যাঙ্কিনের প্রশ্নটা চলে আসে। এইখানে আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কন্সেপ্ট হচ্ছে, ফিউচার মার্কেট। ভারতে ফিউচারস মার্কেট আছে, ফিউচারস মার্কেট হচ্ছে এমন একটা মার্কেট যেখানে আপনি। আপনার আজকের স্টক তিন মাস পরের ডেটে সেল করলেন। কেন করলেন? কারণ ফিনান্সের প্রশ্ন, রিস্কের প্রশ্ন এবং সিজনাল এই প্রাইস ফলকে ম্যানেজ করার জন্যে। এইটা বায়ার সেলার সবার জন্যে সুবিধা। ফিউচারস মার্কেটের আরেকটা সুবিধা হচ্ছে, একজন কৃষক ফিউচারসের যদি কোন প্রোডাক্ট বেচে তবে, ব্যাংক সেই সেলের এগেন্সট কৃষককে ঋণ দিতে পারে।
ভারতে ফিউচারস মার্কেট চলু হয়েছে অনেক বছর। বাংলাদেশে ফিউচার মার্কেট ডেভেলপ করার মত ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাসিটি এই গারবেজ ইন গারবেজ আউট থিওক্রেটিক মেধাহিন প্রশাসনের নাই। আইডিয়াটা অনেক দিন ধরেই মার্কেটে আছে। আর একটা ইম্পরট্যান্ট জিনিশ হচ্ছে, কৃষকের ঋণ মউকুফ করা।
বাংলাদেশের মত ভারতেও রাজনীতিবিদদের কৃষকের সেন্টিমেন্ট মাথায় রাখতে হয়। এবং ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বিজেপি কংগ্রেস সহ বিভিন্ন সরকার, ১৮ টি রাজ্যে মোট ১০ বিলিয়ন ডলার মানে, ৮০ হাজার কোটি টাকার ঋণ মাফ করেছে। সূত্র নীচে:
(১) BBC Reality Check: India election 2019: Should farmers’ debts be written off?
(২) Reuters FINANCIALS: India’s Madhya Pradesh state to waive up to $5.3 billion in farm debts
এইটাই বাংলাদেশের সাথে ভারতের ডেভেলপমেন্টের পার্থক্য ভারতের পলিটিক্সে কৃষকের সাফারিংকে আমলে নেয়া হয়েছে এবং সরকার সাবস্টেন্সিয়াল স্টেপ নিছে এবং বাংলাদেশে শুধু উন্নয়নের বাগাড়ম্বর আর লুট। কৃষকের ঋণ মাফ করলে, যেইটা হয় সেইটা হচ্ছে কৃষকের হাতে তখন পুঁজি থাকে। মার্কেটে প্রাইস পরে গেলে, যেইটা ধান কাটার মউশুমে অবধারিত ভাবে হয় তখন কৃষক মার্কেটকে ফাইট দিতে পারে।
এই মুহূর্তে পুরো বাংলাদশের সমিতি গুলোতে ঋণ হচ্ছে, ৬০ হাজার কোটি টাকা। এবং বছরে মোট কৃষি ঋণ হয় প্রায়- ২০ হাজার টাকা। সরকার যদি কোন বছরে এই পুরো টাকাটা মাফ করে দেয়, তবে, পুরো বাংলার অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে।
একটা দেশের সত্যিকারের ডেভেলপমেন্ট হলে, সরকারের এই সক্ষমতা অর্জন করার কথা। বাংলাদেশ সরকারের সেই মানসিকতা নাই। তারা ব্যুরোক্র্যাটদের বেতন বাড়াবে কিন্ত জনগণের কোন ভার রিলিফ করবেনা, যেইটা ইন্ডিয়া করে।
সেকেন্ড, যেইটা এই প্রশ্নের সাথে রিলেটেড সেইটা হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের নামের যে বস্ত আছে, তাকে ফিড করার জন্যে সরকার নাগরিকের উপরে বিভিন্ন রকম ইন্ডাইরেক্ট ট্যাক্স চাপায় দিছে, যে কারণে, বাংলাদেশের উদপাদন খরছ আজকে ভারত বা অন্য দেশ থেকে বেশী। এই বিষয়ে ইরির একটা গবেষণা নিয়ে বছর দুই এক আগে আলোচনা করেছি।
গ্লোবালি এই মুহূর্তে চালের দাম, টন প্রতি ৩৫০ ডলার থেকে ৪০০ ডলার। মানে, পার কেজি ৩২ টাকার কাছাকাছি। এইটা এফওবি রেট। ৩২০ থেকে ৩৫০ চালের ইকুইলিব্রিয়াম রেট। বিগত অনেকগুলো বছর ধরে, সিজনাল উঠানামা এবং বিভিনরকম প্রাইস শকের পরে, চালের দাম এই জায়গায় এসে পৌছায়। ৩০ টাকার মত।
এখন এই দামে সারা দুনিয়াতে কৃষক সাস্টেন করতে পারে কিন্ত বাংলাদেশে উচ্চ দ্রব্য মূল্য উচ্চ ইনপুট কষ্টের কারণে, কৃষক এই দামেও খুব বেশী প্রফিট করতে পারে না। তার ডিস্পজেব্ল ইনকাম কম থাকে। ফলে যেইটা দরকার একটা ছোট সরকার যেইটা তার নিজের অযোগ্য প্রশাসনকে সার্ভ করার জন্যে ট্যাক্স বাড়িয়ে, মানুষের খরচ বাড়িয়ে, ইনপুট কস্ট বাড়িয়ে ডিস্পজেবল ইনকাম কমিয়ে দিয়ে সিলেক্টিভক্লি কিছু গ্রুপকে ইনেফেক্টিভ কোন ম্যাকানিজমে এমন কোন সাপোর্ট দেবে না, যেইটা ম্যানেজ করার সক্ষমতা রাষ্ট্র অর্জন করে নাই।
আর কৃষক কে, এইটা কীভাবে নির্ধারণ করবেন?
- ভুমির মালিক নাকী প্রান্তিক কৃষক।
- সেইটা কে নির্ধারণ করবে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নাকি দুর্নীতিগ্রস্থ ইউএনও।
- ধান যদি কিনে নেন তাইলে, সব্জি উৎপাদকরা বা সরিষা উৎপাদকরা কী দোষ করলো?
এবং এই ধরনের সিম্পাথেটিক ইনসেন্টিভ যদি খুব বেনেফসিয়াল হয় তবে দেখা যাবে, কৃষক অন্য সব্জি ফেলে ধান উৎপাদন করতেছে এবং উৎপাদন এবং চাহিদার সাথে মিসম্যাচ হচ্ছে।
দা রিয়ালিটি ইজ, এইটা জাস্ট ইম্পসিবল টু ডু। সরকারের ইন্টেন্ট যতই ভালো হোক। আর আমাদের সরকার এবং প্রশাসনের ইন্টেন্টেই তো ঘাপলা। তাই আসলে সিস্টেমকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যেন,
পুরো রাষ্ট্রই এমন ম্যাকানিজমে চলে যেন, কম মুল্যে উৎপাদনের পরেও, কম মুল্যে বেচার পরেও যেন, কৃষক এবং ভোক্তা উভয়েই বেনেফিটেড হয়।
এবং কৃষককে ঋণ দিতে হবে যেন সে মার্কেটকে টেক্কা দিতে পারে। এবং কৃষক এক এমাপয়ারড করার জন্যে কৃষকের ঋণ মৌকুফ করতে হবে, স্বাধীনতার ৪৭ বছরে বাংলাদেশের এক বারো কৃষি ঋণ মৌকুফ করা হয় নাই, এইটা একটা জাতীয় লজ্জা।
কিন্ত পপুলিস্ট ভাবনা হইলো সরকারকে বলো সব ধান কিনে, সব ধান বেচে ফেলতে, এই গুলো ইম্প্রেক্টিকাল ভাবনা।
সরকারকে এমন স্টেপ নিতে হবে, যেন সেইটা সরাসরি ইন্টেন্টেডের গ্রুপের হতে পৌছায়, যেইটা এইক্ষেত্রে বলেছি, যদি সাপোর্ট দিতেই হয় তবে যে কৃষকের হাতে ধান আছে, তাকে সরাসরি অর্থ দেয়া এবং যারা অলরেডি ঋণ খেলাপি তাদের ঋণ মওকুফ করা।
দেশের সকল কৃষকের কাছ থেকে বেশী মুল্যে ধান কিনে, কম মুল্যে ডিস্ট্রিবিউট করার কমনসেন্স চিন্তার বেনেফিসিয়ারি হবে এই গোপালি প্রশাসন এবং স্থানীয় লেভেলে আওয়ামী নেতারা, কৃষক নয়।